খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা-পাকিস্তানে চলে যান
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে সরকার পরিবর্তন হবে না। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান। বাংলাদেশের মাটিকে কলুষিত না করে যেখান থেকে টাকা নিয়েছেন, সেই পাকিস্তানে চলে যান।'
গতকাল বুধবার বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ১৪ দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, 'সংবিধান সংশোধন করে অসাংবিধানিক পন্থায় যাতে কেউ কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় সরকার পরিবর্তন হবে না।' তিনি আরো বলেন, 'ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছেন খালেদা জিয়া। দুই নম্বর পথে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু যতই চেষ্টা করুন না কেন, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন ভুলে যান। সেটা আর হবে না।'
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এত দিন বলেছেন আমরা নাকি দেশ বিক্রি করি। এখন থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। এত দিন আপনি বিদেশি দালাল খুঁজে বেড়িয়েছেন। সমপ্রতি পাকিস্তানের আদালতে আইএসআইয়ের প্রধান বলেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় তাঁরা আপনাকে অর্থ দিয়েছিল। আপনি পরাজিত শক্তির দালালি করে, দেশকে বিক্রি করতে চান, জিম্মি করতে চান।'
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া আইএসআইয়ের টাকা নিয়েছেন, এখনো নিচ্ছেন। যেখান থেকে টাকা নিচ্ছেন সেই পাকিস্তানে চলে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের কাছে মাথা নত করার জন্য খালেদা জিয়ার লজ্জা হয় কি না তা-ও জানতে চান।
রাজাকারদের বাঁচাতে পারবেন না : 'যুদ্ধাপরাধীদের' পক্ষাবলম্বন করায় বিরোধীদলীয় নেতার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই মাটিতে রাজাকারদের ঠাঁই নেই, ওদের বাঁচাতে পারবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই ইনশাআল্লাহ।'
বিএনপির মহাসমাবেশের পর ১৪ দলের এই জনসভাকে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন জোট। সরকারের জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি, গণজমায়েতের মাধ্যমে দেশব্যাপী এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিল তারা। 'যুদ্ধাপরাধীদের' বিচারে বাধা, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভাকে জোটের পক্ষ থেকে জনসমুদ্রে পরিণত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যায়নি। এমনকি এই জনসভা থেকে ১৪ দলের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি ক্ষমতাসীন জোটপ্রধান। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সোমবারের দেওয়া আলটিমেটামেরও জবাব দেননি তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ভাষণ দেন। ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো ছাড়াও দেশের প্রায় সব জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে। নানা ধরনের ব্যানার, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমবেত হন জনসভাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষ দিকেও অনেক এলাকা থেকে মিছিল আসে। 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি' সংবলিত পোস্টার ও লিফলেটের পাশাপাশি সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীরা তাদের পছন্দের নেতার বিশাল বিশাল ছবি বহন করে।
আসা-যাওয়ার পালা : মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেই বিপুলসংখ্যক লোক আবার সমাবেশস্থল ত্যাগ করে। পুরো সময় সমাবেশস্থল স্থির ছিল না। আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিল নেতা-কর্মীরা। তবে জনসভায় লোকসমাগমে সন্তোষ প্রকাশ করেন ১৪ দলীয় নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রীও জনসভাকে জনসমুদ্র আখ্যায়িত করে বলেন, জনতার মহাসাগরে যে ঢেউ উঠেছে এই ঢেউয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
দেশের অর্থনীতি ভালো : প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে বলেন, 'দেশের অর্থনীতি ভালো, খালেদা জিয়ার অর্থনীতি খারাপ। কারণ চোরাই টাকায় অর্থনীতি বেশি দিন ভালো থাকে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দেশের টাকা চুরি করেছেন। তিনি ও তাঁর ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন।'
শেখ হাসিনা দাবি করেন, দেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।
খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন : বিরোধীদলীয় নেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া লেখাপড়া জানেন না। এ কারণে তিনি চান না দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক। তিনি ম্যাট্রিকও পাস করতে পারেননি। শুধু অঙ্কে আর উর্দুতে পাস করেছিলেন।' সরকারি টাকায় দুই ছেলেকে কী পড়িয়েছেন- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দুই ছেলে লুটপাট, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংয়ে গ্র্যাজুয়েট করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে খালেদার আন্দোলন : বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এবং স্বাধীনতার মাস মার্চকে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-আলবদরদের বাঁচানোর জন্য বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা ঢাকা অচল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয়েছে, তখন খালেদা জিয়া হত্যা, সন্ত্রাস, বোমা ও আগুন দিয়ে মানুষ খুন করে নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছেন।
উন্নয়ন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র : সভাপতির ভাষণে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া সেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের টাকা খেয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করবেন, তা হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব থাকলে দিন : আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে বলেন, 'যাঁদের আপনি রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন তাঁদের রক্ষা করার ক্ষমতা আপনার এবং আপনার দলের নেই। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা উত্থাপন করুন।'
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়া হবে : তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যেমন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছিল, এবারও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্গ গড়ে তোলা হবে।
অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ নেই : ৯০ দিনের আলটিমেটাম 'যুদ্ধাপরাধী' এবং বেগম জিয়ার দুই 'দুর্নীতিবাজ' সন্তানের বিচারের আলটিমেটাম কি না সে প্রশ্ন রেখে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। তাঁদের প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, তাঁরা কি তিন মাসের না কয় মাসের হবেন, তাঁরা জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন কি না তা সংসদে এসে পরিষ্কারভাবে বলুন।' তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হবে। গণতান্ত্রিক মতে অনির্বাচিত সরকারের এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর এলেই খালেদা জিয়া আকুল-ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কারণ এ মাসেই পাকিস্তানিরা বাঙালির কাছে পরাজিত হয়েছিল। আইএসআই থেকে অর্থ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তিনি ডিসেম্বর এবং মার্চ মাসকেই বেছে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, 'বিএনপির মহাসমাবেশে ১০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছিল। এই টাকার উৎস কোথায়?' এই টাকা আইএসআইয়ের কাছ থেকে নেওয়া কি না জানতে চান তিনি।
১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির আলটিমেটাম প্রসঙ্গে বলেন, '৯০ দিন নয়, ৯০০ দিনেও আপনাদের সেই অভিলাষ পূরণ হবে না।' অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে বিএনপির কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে এসে বলার আহ্বান জানান তিনি।
জোটের আরেক শরিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বেগম জিয়া ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চান। বিরোধীদলীয় নেতার আলটিমেটাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বেগম জিয়া নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাব দেননি, তিনি সরকার উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছেন। বিকল্প সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব দিলে ভাবতাম সঠিক পথে হাঁটছেন।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, '২০০৮ সালের পর দেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। কেউ এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বর্তমান সরকারের আমলে এসব নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন কেন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না?'
নূহ-উল-আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিলের উপস্থাপনায় জনসভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ন্যাপ নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল, মহিলা লীগের আশরাফুন্নেছা মোশারফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসার, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগের বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, 'সংবিধান সংশোধন করে অসাংবিধানিক পন্থায় যাতে কেউ কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় সরকার পরিবর্তন হবে না।' তিনি আরো বলেন, 'ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছেন খালেদা জিয়া। দুই নম্বর পথে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু যতই চেষ্টা করুন না কেন, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন ভুলে যান। সেটা আর হবে না।'
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এত দিন বলেছেন আমরা নাকি দেশ বিক্রি করি। এখন থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। এত দিন আপনি বিদেশি দালাল খুঁজে বেড়িয়েছেন। সমপ্রতি পাকিস্তানের আদালতে আইএসআইয়ের প্রধান বলেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় তাঁরা আপনাকে অর্থ দিয়েছিল। আপনি পরাজিত শক্তির দালালি করে, দেশকে বিক্রি করতে চান, জিম্মি করতে চান।'
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া আইএসআইয়ের টাকা নিয়েছেন, এখনো নিচ্ছেন। যেখান থেকে টাকা নিচ্ছেন সেই পাকিস্তানে চলে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে পরাজিতদের কাছে মাথা নত করার জন্য খালেদা জিয়ার লজ্জা হয় কি না তা-ও জানতে চান।
রাজাকারদের বাঁচাতে পারবেন না : 'যুদ্ধাপরাধীদের' পক্ষাবলম্বন করায় বিরোধীদলীয় নেতার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই মাটিতে রাজাকারদের ঠাঁই নেই, ওদের বাঁচাতে পারবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই ইনশাআল্লাহ।'
বিএনপির মহাসমাবেশের পর ১৪ দলের এই জনসভাকে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন জোট। সরকারের জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি, গণজমায়েতের মাধ্যমে দেশব্যাপী এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিল তারা। 'যুদ্ধাপরাধীদের' বিচারে বাধা, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভাকে জোটের পক্ষ থেকে জনসমুদ্রে পরিণত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যায়নি। এমনকি এই জনসভা থেকে ১৪ দলের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি ক্ষমতাসীন জোটপ্রধান। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সোমবারের দেওয়া আলটিমেটামেরও জবাব দেননি তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ভাষণ দেন। ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো ছাড়াও দেশের প্রায় সব জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে। নানা ধরনের ব্যানার, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমবেত হন জনসভাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষ দিকেও অনেক এলাকা থেকে মিছিল আসে। 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি' সংবলিত পোস্টার ও লিফলেটের পাশাপাশি সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীরা তাদের পছন্দের নেতার বিশাল বিশাল ছবি বহন করে।
আসা-যাওয়ার পালা : মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেই বিপুলসংখ্যক লোক আবার সমাবেশস্থল ত্যাগ করে। পুরো সময় সমাবেশস্থল স্থির ছিল না। আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিল নেতা-কর্মীরা। তবে জনসভায় লোকসমাগমে সন্তোষ প্রকাশ করেন ১৪ দলীয় নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রীও জনসভাকে জনসমুদ্র আখ্যায়িত করে বলেন, জনতার মহাসাগরে যে ঢেউ উঠেছে এই ঢেউয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
দেশের অর্থনীতি ভালো : প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে বলেন, 'দেশের অর্থনীতি ভালো, খালেদা জিয়ার অর্থনীতি খারাপ। কারণ চোরাই টাকায় অর্থনীতি বেশি দিন ভালো থাকে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দেশের টাকা চুরি করেছেন। তিনি ও তাঁর ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন।'
শেখ হাসিনা দাবি করেন, দেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।
খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন : বিরোধীদলীয় নেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া লেখাপড়া জানেন না। এ কারণে তিনি চান না দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক। তিনি ম্যাট্রিকও পাস করতে পারেননি। শুধু অঙ্কে আর উর্দুতে পাস করেছিলেন।' সরকারি টাকায় দুই ছেলেকে কী পড়িয়েছেন- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দুই ছেলে লুটপাট, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংয়ে গ্র্যাজুয়েট করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে খালেদার আন্দোলন : বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এবং স্বাধীনতার মাস মার্চকে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-আলবদরদের বাঁচানোর জন্য বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা ঢাকা অচল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয়েছে, তখন খালেদা জিয়া হত্যা, সন্ত্রাস, বোমা ও আগুন দিয়ে মানুষ খুন করে নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছেন।
উন্নয়ন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র : সভাপতির ভাষণে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া সেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের টাকা খেয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করবেন, তা হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব থাকলে দিন : আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে বলেন, 'যাঁদের আপনি রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন তাঁদের রক্ষা করার ক্ষমতা আপনার এবং আপনার দলের নেই। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা উত্থাপন করুন।'
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়া হবে : তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যেমন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছিল, এবারও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্গ গড়ে তোলা হবে।
অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ নেই : ৯০ দিনের আলটিমেটাম 'যুদ্ধাপরাধী' এবং বেগম জিয়ার দুই 'দুর্নীতিবাজ' সন্তানের বিচারের আলটিমেটাম কি না সে প্রশ্ন রেখে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। তাঁদের প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, তাঁরা কি তিন মাসের না কয় মাসের হবেন, তাঁরা জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন কি না তা সংসদে এসে পরিষ্কারভাবে বলুন।' তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হবে। গণতান্ত্রিক মতে অনির্বাচিত সরকারের এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর এলেই খালেদা জিয়া আকুল-ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কারণ এ মাসেই পাকিস্তানিরা বাঙালির কাছে পরাজিত হয়েছিল। আইএসআই থেকে অর্থ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তিনি ডিসেম্বর এবং মার্চ মাসকেই বেছে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, 'বিএনপির মহাসমাবেশে ১০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছিল। এই টাকার উৎস কোথায়?' এই টাকা আইএসআইয়ের কাছ থেকে নেওয়া কি না জানতে চান তিনি।
১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির আলটিমেটাম প্রসঙ্গে বলেন, '৯০ দিন নয়, ৯০০ দিনেও আপনাদের সেই অভিলাষ পূরণ হবে না।' অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে বিএনপির কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে এসে বলার আহ্বান জানান তিনি।
জোটের আরেক শরিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বেগম জিয়া ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চান। বিরোধীদলীয় নেতার আলটিমেটাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বেগম জিয়া নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তাব দেননি, তিনি সরকার উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছেন। বিকল্প সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব দিলে ভাবতাম সঠিক পথে হাঁটছেন।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, '২০০৮ সালের পর দেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। কেউ এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বর্তমান সরকারের আমলে এসব নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন কেন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না?'
নূহ-উল-আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিলের উপস্থাপনায় জনসভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ন্যাপ নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল, মহিলা লীগের আশরাফুন্নেছা মোশারফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসার, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগের বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ।
No comments