শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তিন দশক by সুভাষ সিংহ রায়
আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তিন দশক পূর্ণ হলো। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুণ একটি অসাধারণ কবিতা (পথে পথে পাথর) লিখেছেন। কবিতার কয়েকটি লাইন হচ্ছে_ 'শেখ হাসিনা, আপনার বেদনা আমি জানি;/আপনার প্রত্যাবর্তন আজও শেষ হয়নি।
/বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে/ আপনি পা রেখেছেন মাত্র।/আপনার পথে পথে পাথর ছড়ানো/পাড়ি দিতে হবে দুর্গম গিরি/কান্তার মরু পথ।'
আজ ২০১১ সালে দেশ-বিদেশে রাজনীতি-সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রাধান্যের কথা বলেন এবং লেখেন। তিনি সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু; সব রাজনৈতিক আন্দোলন, তৎপরতা, প্রশংসা-নিন্দার লক্ষ্য এবং উপলক্ষ। এটাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাম দেওয়া যেতে পারে_'শেখ হাসিনা ফ্যাক্টর'। ২০০১ সালের নির্বাচন যে নীলনকশার নির্বাচন ছিল, তা কিন্তু ওই সময় জ্ঞানী-গুণীরাও মানতে চাননি। পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কর্মসূচিতে জ্ঞানী-গুণীদের সমর্থন প্রমাণ করে, শেখ হাসিনাই সঠিক ছিলেন। তা ছাড়া শেখ হাসিনা দেশে না এলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে পড়ত। কোনো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হতো না, সংসদীয় রাজনীতির কথা কেউ হয়তো বলত না।
১৯৮১ সালের ২০ মে শেখ হাসিনার সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সংবর্ধনা সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, '...আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। আপনাদের ডাকে সব কিছু ছেড়ে এসেছি। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এই জীবন দান করতে চাই।'
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরব্যাপী নব্য বর্গিদের শোষণ-বঞ্চনা-অবহেলার শিকার কৃষক ভাইদের সামনে নতুন করে আশার আলো জ্বলে ওঠে। সার সংকট নিরসন এবং সময়মতো সব ধরনের কৃষি উপকরণ কৃষক ভাইদের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেওয়ার জন্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আন্তমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার বিতরণব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। তদুপরি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার সারসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরেই ১০০ কোটি টাকার একটি ভর্তুকি তহবিল গঠন করে। ভর্তুকি মূল্যে পর্যাপ্ত সার সরবরাহের পাশাপাশি সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা রোধের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারের বাফার স্টক গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতি সত্ত্বেও সেচব্যবস্থা যাতে সচল থাকে, সে জন্য সরকার বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রগুলোতে সারা রাত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রগুলো যাতে ডিজেলের অভাবে বন্ধ না হয়, এ ব্যাপারেও গ্রহণ করা হয় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। মূলধন বা নগদ অর্থের অভাবে যাতে কৃষক ভাইদের হালের বলদ, সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করতে না হয়, সে জন্য দ্রুত সহজ শর্তে পর্যাপ্ত কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় তিন লাখ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরেই বাম্পার ফলন হয়। পূর্ববর্তী বিএনপি শাসনামলের তুলনায় কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম খাদ্যশস্যের উৎপাদন দুই কোটি (দুই কোটি তিন লাখ ৩৭ হাজার) টন ছাড়িয়ে যায়। কৃষি খাতে এই সাফল্য কৃষকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ সঞ্চার করে। অতীতের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে সরকার কৃষি খাতের এ সাফল্যের ধারাকে অব্যাহত রাখা এবং গতিশীল করার লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করে। খাদ্যনিরাপত্তা তৈরির জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর শেখ হাসিনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা হয়। এ বছর কৃষিঋণ খাতে ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রকৃত বর্গাচাষিদের ঋণের আওতায় আনা হয়। সেবারই প্রথম বর্গাচাষিদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ দানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য এ বছর তিন লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষির মধ্যে বীজ ও সার সহায়তা বাবদ ৩৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। কৃষকরা যাতে কৃষি উপকরণসহ সব সরকারি সহায়তা সহজভাবে পেতে পারেন, সে জন্য আমরা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড চালু করেছি। এক কোটি ৮২ লাখ কৃষককে কৃষিকার্ড দেওয়া হচ্ছে। সেচকাজে ডিজেল ব্যবহারকারী প্রায় এক কোটি বোরোচাষিকে কার্ডের ভিত্তিতে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। কৃষকদের মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
বিগত সরকারের সময় যে চালের দাম ছিল ৪৫ টাকা, বর্তমান সরকার সেই চালের দাম ১৮-২০ টাকায় কমিয়ে আনতে পেরেছিল, যা বর্তমানে ২২ টাকা। ১১৫ টাকার সয়াবিন তেল এখন ৮০ টাকা। ৪৫ টাকার আটা এখন মানুষ ২৪ টাকায় কিনতে পারছে। গত আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৫৯ ভাগে রেখে এসেছিল। এবার সরকার গঠনের সময় তা ছিল ১১ ভাগের ওপরে। মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ ভাগে কমিয়ে আনা গেছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অন্তরীণ করে রেখেছিল এবং তারও আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় তাঁকে দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছিল। প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হলেও তিনি ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালের ৩০ আগস্ট সিলেটের কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ডের ৪ নম্বর কূপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। ওই ভাষণের কিছুটা অংশ এই পরিসরে উপস্থাপন করছি_'বর্তমান গ্যাস চাহিদার (১৯৯৬ সাল) বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। বর্ধিত হারে চাহিদা মেটানো হলে এবং আগামীতে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে ২০১২-২০১৫ সালের মধ্যেই মজুদ গ্যাস নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তেল, গ্যাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের নিজস্ব উদ্যোগে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি।' ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে গ্যাসের অবস্থা রেখে এসেছিল, এখনো সেই অবস্থা বহাল রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালে এসে দেশে গ্যাস সংকট দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। আর গ্যাস সংকট থাকলে বিদ্যুৎ সংকট থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আসলে শেখ হাসিনার মতো দেশপ্রেমিক আর কোনো সরকারপ্রধান আসেননি। যারা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চায়, শেখ হাসিনা তাদের মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন। তাই সাম্প্রদায়িক শক্তি শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, 'করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না, করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না, করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ।' সত্যি সত্যিই করাপ্ট শিক্ষিত সমাজ শেখ মুজিবকে পছন্দ করত না। তারা এবং তাদের উত্তরসূরিরা শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে না। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়_'সংকটের আবর্তে নিমজ্জমান অবস্থা থেকে দেশ পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র ব্রত।' বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে না এলে বাংলাদেশকে কেউ একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাতে পারত না। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগিয়ে তুলে দিন বদলের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন।
লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
svuassingho@gmail.com
আজ ২০১১ সালে দেশ-বিদেশে রাজনীতি-সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রাধান্যের কথা বলেন এবং লেখেন। তিনি সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু; সব রাজনৈতিক আন্দোলন, তৎপরতা, প্রশংসা-নিন্দার লক্ষ্য এবং উপলক্ষ। এটাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাম দেওয়া যেতে পারে_'শেখ হাসিনা ফ্যাক্টর'। ২০০১ সালের নির্বাচন যে নীলনকশার নির্বাচন ছিল, তা কিন্তু ওই সময় জ্ঞানী-গুণীরাও মানতে চাননি। পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কর্মসূচিতে জ্ঞানী-গুণীদের সমর্থন প্রমাণ করে, শেখ হাসিনাই সঠিক ছিলেন। তা ছাড়া শেখ হাসিনা দেশে না এলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে পড়ত। কোনো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হতো না, সংসদীয় রাজনীতির কথা কেউ হয়তো বলত না।
১৯৮১ সালের ২০ মে শেখ হাসিনার সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সংবর্ধনা সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, '...আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। আপনাদের ডাকে সব কিছু ছেড়ে এসেছি। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এই জীবন দান করতে চাই।'
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরব্যাপী নব্য বর্গিদের শোষণ-বঞ্চনা-অবহেলার শিকার কৃষক ভাইদের সামনে নতুন করে আশার আলো জ্বলে ওঠে। সার সংকট নিরসন এবং সময়মতো সব ধরনের কৃষি উপকরণ কৃষক ভাইদের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেওয়ার জন্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আন্তমন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার বিতরণব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। তদুপরি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার সারসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরেই ১০০ কোটি টাকার একটি ভর্তুকি তহবিল গঠন করে। ভর্তুকি মূল্যে পর্যাপ্ত সার সরবরাহের পাশাপাশি সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা রোধের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারের বাফার স্টক গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতি সত্ত্বেও সেচব্যবস্থা যাতে সচল থাকে, সে জন্য সরকার বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রগুলোতে সারা রাত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রগুলো যাতে ডিজেলের অভাবে বন্ধ না হয়, এ ব্যাপারেও গ্রহণ করা হয় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। মূলধন বা নগদ অর্থের অভাবে যাতে কৃষক ভাইদের হালের বলদ, সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করতে না হয়, সে জন্য দ্রুত সহজ শর্তে পর্যাপ্ত কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় তিন লাখ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরেই বাম্পার ফলন হয়। পূর্ববর্তী বিএনপি শাসনামলের তুলনায় কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম খাদ্যশস্যের উৎপাদন দুই কোটি (দুই কোটি তিন লাখ ৩৭ হাজার) টন ছাড়িয়ে যায়। কৃষি খাতে এই সাফল্য কৃষকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ সঞ্চার করে। অতীতের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে সরকার কৃষি খাতের এ সাফল্যের ধারাকে অব্যাহত রাখা এবং গতিশীল করার লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করে। খাদ্যনিরাপত্তা তৈরির জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর শেখ হাসিনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা হয়। এ বছর কৃষিঋণ খাতে ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রকৃত বর্গাচাষিদের ঋণের আওতায় আনা হয়। সেবারই প্রথম বর্গাচাষিদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ দানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য এ বছর তিন লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষির মধ্যে বীজ ও সার সহায়তা বাবদ ৩৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। কৃষকরা যাতে কৃষি উপকরণসহ সব সরকারি সহায়তা সহজভাবে পেতে পারেন, সে জন্য আমরা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড চালু করেছি। এক কোটি ৮২ লাখ কৃষককে কৃষিকার্ড দেওয়া হচ্ছে। সেচকাজে ডিজেল ব্যবহারকারী প্রায় এক কোটি বোরোচাষিকে কার্ডের ভিত্তিতে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। কৃষকদের মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
বিগত সরকারের সময় যে চালের দাম ছিল ৪৫ টাকা, বর্তমান সরকার সেই চালের দাম ১৮-২০ টাকায় কমিয়ে আনতে পেরেছিল, যা বর্তমানে ২২ টাকা। ১১৫ টাকার সয়াবিন তেল এখন ৮০ টাকা। ৪৫ টাকার আটা এখন মানুষ ২৪ টাকায় কিনতে পারছে। গত আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৫৯ ভাগে রেখে এসেছিল। এবার সরকার গঠনের সময় তা ছিল ১১ ভাগের ওপরে। মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ ভাগে কমিয়ে আনা গেছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অন্তরীণ করে রেখেছিল এবং তারও আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় তাঁকে দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছিল। প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হলেও তিনি ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৬ সালের ৩০ আগস্ট সিলেটের কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ডের ৪ নম্বর কূপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। ওই ভাষণের কিছুটা অংশ এই পরিসরে উপস্থাপন করছি_'বর্তমান গ্যাস চাহিদার (১৯৯৬ সাল) বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। বর্ধিত হারে চাহিদা মেটানো হলে এবং আগামীতে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে ২০১২-২০১৫ সালের মধ্যেই মজুদ গ্যাস নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তেল, গ্যাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের নিজস্ব উদ্যোগে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি।' ২০০১ সালে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে গ্যাসের অবস্থা রেখে এসেছিল, এখনো সেই অবস্থা বহাল রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালে এসে দেশে গ্যাস সংকট দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। আর গ্যাস সংকট থাকলে বিদ্যুৎ সংকট থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আসলে শেখ হাসিনার মতো দেশপ্রেমিক আর কোনো সরকারপ্রধান আসেননি। যারা বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চায়, শেখ হাসিনা তাদের মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন। তাই সাম্প্রদায়িক শক্তি শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, 'করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না, করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না, করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ।' সত্যি সত্যিই করাপ্ট শিক্ষিত সমাজ শেখ মুজিবকে পছন্দ করত না। তারা এবং তাদের উত্তরসূরিরা শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে না। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়_'সংকটের আবর্তে নিমজ্জমান অবস্থা থেকে দেশ পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র ব্রত।' বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে না এলে বাংলাদেশকে কেউ একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাতে পারত না। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগিয়ে তুলে দিন বদলের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন।
লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
svuassingho@gmail.com
No comments