বঙ্গোপসাগরের এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার দাবি করে পাওয়া গেছে এক লাখ ১১ হাজার-সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলা-বাংলাদেশের পক্ষে রায়
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে মামলায় বাংলাদেশের অনুকূলে রায় হয়েছে। জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইনবিষয়ক আদালত (ইটলস) গতকাল বুধবার এক ঐতিহাসিক রায়ে বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল নিবিড় অর্থনৈতিক এলাকা (ইইজেড) এবং এর পরবর্তী মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকারের আইনগত স্বীকৃতি
দিয়েছেন। ফলে বঙ্গোপসাগরের জলরাশি এবং তলদেশের সম্পদরাজিতে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
আদালতে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ রায়কে বাংলাদেশের বিশাল বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার দাবি করে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার সাগর এলাকা পেয়েছে।'
জার্মানির হামবুর্গে রায় ঘোষণার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গৌরবময় ও আনন্দের দিন। বঙ্গোপসাগরের জলরাশি এবং তলদেশের সব প্রাণিজ ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের নিরঙ্কুশ অধিকার আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করেছি। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্যতাভিত্তিক সমুদ্রসীমার দাবিকে সমুন্নত রেখেছেন। মিয়ানমারের প্রস্তাবিত সমদূরত্ব পদ্ধতি, যা কি না বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকাকে ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করে ট্রাইব্যুনাল ইকুইটির (ন্যায্যতা) ভিত্তিতে দুই দেশের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।'
ইটলসে বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার মামলায় হোসে লুইস জেসাসের সভাপতিত্বে বিচারক ছিলেন ২৩ জন।
২১-১ ভোটে গতকাল চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বারবার বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
হামবুর্গ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে ই-মেইলে কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমাদের তিনটি দাবি ছিল। এগুলো হলো ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র সাগর এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইল নিবিড় অর্থনৈতিক এলাকা (ইইএজড) এবং বর্ধিত মহীসোপান (আউটার কনটিনেন্টাল শেলফ)। বাংলাদেশ তার দাবি অনুযায়ী ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র সাগর এলাকা পেয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ ন্যায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল ইইজেড পেয়েছে।'
ওই কর্মকর্তা বলেন, "ইইজেড এলাকায় আমরা এখন আর অন্য দেশের জোন দ্বারা অবরুদ্ধ নই। সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। রায়ে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে আমাদের বর্ধিত মহীসোপানের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে একই এলাকায় মিয়ানমারের ইইজেড ও আমাদের বর্ধিত মহীসোপান পড়েছে। ওই এলাকায় মিয়ানমার 'ওয়াটার কলাম'-এর (মাটি থেকে পানি পর্যন্ত) অধিকার পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পেয়েছে ওই এলাকার মাটি ও এর তলদেশের সম্পদের অধিকার।"
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত ছিল। ফলে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সমুদ্রসম্পদ আহরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, 'আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়।'
দীপু মনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে 'টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইমস জোন অ্যাক্ট' পাস করে। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আলোচনাও ১৯৭৪ সালে শুরু করা হয়।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো সাগরে এবং সাগরের সম্পদে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। ২০০১ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুসমর্থন করে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারই ওই আইনের অধীনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের জন্য ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
দীপু মনি বলেন, 'আজকে আমরা আমাদের প্রচেষ্টার সুফল পেয়েছি। আমাদের এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য আমি এই দেশের আপামর জনসাধারণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।'
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও আনক্লজ অনুবিভাগের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম বলেন, ভারত ও মিয়ানমার সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের যে দাবি করে, তাতে বাংলাদেশ যে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হবে তা আদালতে তুলে ধরা হয়। সমুদ্রতীরবর্তী সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যদি একই সরল রেখায় থাকে, তাহলে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের তীরে ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই এ ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের দাবি করে বাংলাদেশ।
খুরশেদ আলম বলেন, 'দেরিতে হলেও আমরা আমাদের দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেছি। সমুদ্রতটে আমাদের অবস্থানের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন বিরোধের যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হয়েছে, সেসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি। সমদূরত্বের ভিত্তিতে আমরা কিভাবে বঞ্চিত হব সেটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছি।' তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে মামলার ক্ষেত্রেও এ রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ রায়ের ফলে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাসের জন্য ব্লক ইজারা-জটিলতারও অবসান হবে। আদালত মিয়ানমারের দাবি মানলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এলাকা ১৩০ ন্যটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যেত। এ ছাড়া ২০০ ন্যটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের কোনো অধিকার নেই বলে মিয়ানমার দাবি করেছিল। মিয়ানমার উত্থাপিত সব দাবিই আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, মিয়ানমারের জন্যও একটি বিজয়। কেন না, এই রায়ের মাধ্যমে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দীর্ঘদিনের একটি বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটিয়েছে। এখন উভয় দেশই নিজ নিজ এলাকায় সম্পদ আহরণের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি এই আইনি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারকেও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে অনুকূল রায় পাওয়াকে বাংলাদেশের বিরাট অর্জন হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এটা শুধু মহাজোট সরকারের একক অর্জন নয়, দেশের জনগণের অর্জন। গতকাল বুধবার রায় ঘোষণার পরই ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার এ বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই উদ্যোগ নেয় এবং সে উদ্যোগ আজ (গতকাল) সফল হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে পাওয়া রায় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
যেভাবে গড়াল মামলা
আদালতে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ রায়কে বাংলাদেশের বিশাল বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার দাবি করে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার সাগর এলাকা পেয়েছে।'
জার্মানির হামবুর্গে রায় ঘোষণার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গৌরবময় ও আনন্দের দিন। বঙ্গোপসাগরের জলরাশি এবং তলদেশের সব প্রাণিজ ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের নিরঙ্কুশ অধিকার আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করেছি। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্যতাভিত্তিক সমুদ্রসীমার দাবিকে সমুন্নত রেখেছেন। মিয়ানমারের প্রস্তাবিত সমদূরত্ব পদ্ধতি, যা কি না বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকাকে ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করে ট্রাইব্যুনাল ইকুইটির (ন্যায্যতা) ভিত্তিতে দুই দেশের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।'
ইটলসে বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার মামলায় হোসে লুইস জেসাসের সভাপতিত্বে বিচারক ছিলেন ২৩ জন।
২১-১ ভোটে গতকাল চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বারবার বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
হামবুর্গ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে ই-মেইলে কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমাদের তিনটি দাবি ছিল। এগুলো হলো ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র সাগর এলাকা (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইল নিবিড় অর্থনৈতিক এলাকা (ইইএজড) এবং বর্ধিত মহীসোপান (আউটার কনটিনেন্টাল শেলফ)। বাংলাদেশ তার দাবি অনুযায়ী ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র সাগর এলাকা পেয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ ন্যায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল ইইজেড পেয়েছে।'
ওই কর্মকর্তা বলেন, "ইইজেড এলাকায় আমরা এখন আর অন্য দেশের জোন দ্বারা অবরুদ্ধ নই। সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। রায়ে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে আমাদের বর্ধিত মহীসোপানের কথাও বলা হয়েছে। সেখানে একই এলাকায় মিয়ানমারের ইইজেড ও আমাদের বর্ধিত মহীসোপান পড়েছে। ওই এলাকায় মিয়ানমার 'ওয়াটার কলাম'-এর (মাটি থেকে পানি পর্যন্ত) অধিকার পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পেয়েছে ওই এলাকার মাটি ও এর তলদেশের সম্পদের অধিকার।"
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত ছিল। ফলে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সমুদ্রসম্পদ আহরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, 'আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়।'
দীপু মনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে 'টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইমস জোন অ্যাক্ট' পাস করে। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আলোচনাও ১৯৭৪ সালে শুরু করা হয়।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো সাগরে এবং সাগরের সম্পদে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। ২০০১ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুসমর্থন করে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারই ওই আইনের অধীনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের জন্য ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
দীপু মনি বলেন, 'আজকে আমরা আমাদের প্রচেষ্টার সুফল পেয়েছি। আমাদের এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য আমি এই দেশের আপামর জনসাধারণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।'
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও আনক্লজ অনুবিভাগের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম বলেন, ভারত ও মিয়ানমার সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের যে দাবি করে, তাতে বাংলাদেশ যে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হবে তা আদালতে তুলে ধরা হয়। সমুদ্রতীরবর্তী সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যদি একই সরল রেখায় থাকে, তাহলে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের তীরে ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই এ ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের দাবি করে বাংলাদেশ।
খুরশেদ আলম বলেন, 'দেরিতে হলেও আমরা আমাদের দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেছি। সমুদ্রতটে আমাদের অবস্থানের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন বিরোধের যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হয়েছে, সেসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি। সমদূরত্বের ভিত্তিতে আমরা কিভাবে বঞ্চিত হব সেটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছি।' তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে মামলার ক্ষেত্রেও এ রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ রায়ের ফলে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাসের জন্য ব্লক ইজারা-জটিলতারও অবসান হবে। আদালত মিয়ানমারের দাবি মানলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এলাকা ১৩০ ন্যটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যেত। এ ছাড়া ২০০ ন্যটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের কোনো অধিকার নেই বলে মিয়ানমার দাবি করেছিল। মিয়ানমার উত্থাপিত সব দাবিই আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, মিয়ানমারের জন্যও একটি বিজয়। কেন না, এই রায়ের মাধ্যমে উভয় দেশ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দীর্ঘদিনের একটি বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটিয়েছে। এখন উভয় দেশই নিজ নিজ এলাকায় সম্পদ আহরণের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি এই আইনি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারকেও ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে অনুকূল রায় পাওয়াকে বাংলাদেশের বিরাট অর্জন হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এটা শুধু মহাজোট সরকারের একক অর্জন নয়, দেশের জনগণের অর্জন। গতকাল বুধবার রায় ঘোষণার পরই ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার এ বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই উদ্যোগ নেয় এবং সে উদ্যোগ আজ (গতকাল) সফল হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে পাওয়া রায় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
যেভাবে গড়াল মামলা
No comments