চারদিক-অটিস্টিক শিশুদের জন্য শুভকামনা by আসিফ কবীর
ভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধী ২০০৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ব্র্যাকের কার্যক্রম পরিদর্শনে। তখন ছিল আমাদের রাজনীতিক ও তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের ভাবমূর্তির বড় সংকটকাল। অপর দিকে রাজিব-সোনিয়া তনয় রাহুল এখানে এসেছিলেন নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বিশাল সহায়হীন
জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তোলার মডেল পরিদর্শনে। সচেতন নাগরিকমাত্রই প্রত্যাশা করেছিল যে আমাদের নেতা-নেত্রীদের পুত্র-কন্যারাও জনমুখী ও দেশসেবামূলক কাজে এগিয়ে আসবেন।
আজ ২৫ জুলাই ও আগামীকাল ২৬ জুলাই ঢাকায় আয়োজিত ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিস ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন তেমনই একটি উদ্যোগ। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৩৫ জন ও বাংলাদেশের ১৭ জন বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকেরা যোগ দেবেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোক্তা সায়মা হোসেন। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। সায়মা হোসেন পারিবারিক পরিচয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী। উত্তর আমেরিকায় স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত সায়মা অটিজম বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যাগ্রস্তদের প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষায়িত শিক্ষা ও সামাজিকীকরণের কাজে প্রশিক্ষিত।
বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিশু অটিজমের শিকার হলেও অভিভাবকেরা তাদের চিকি ৎ সা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। এই সম্মেলন তাদের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের চেয়ে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধিশালী অনেক দেশও অটিজম বিষয়ে এত বড় সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কেবল প্রশংসনীয় নয়, অনুপ্রেরণা সঞ্চারিও। পারিবারিক পর্যায়ে সায়মা তাঁর মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি সাগ্রহে এই আয়োজনের দায়িত্ব নেন। এর ফলে বাংলাদেশের অটিজম সাপোর্ট ও আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অটিজমের একটি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার, আধুনিক বিশেষায়িত শিক্ষা সরঞ্জামে সমৃদ্ধ একাধিক শিক্ষাকেন্দ্র, চলতি সপ্তাহজুড়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে গোলটেবিল, কর্মশালার আয়োজন ইত্যাদি আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন।
মনের তাগিদ থেকেই মানুষ মানবিক ও সেবাধর্মী কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে। গেল শতকের ষাটের দশকে প্রখ্যাত কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস কিংবা জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া রূপক আশ্রয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল মনের তাগিদেই।
এসব মহ ৎ কাজ বাইরে থেকে কেউ চাপিয়ে দিয়ে করাতে পারে না।
ভারতের অটিজম চিকি ৎ সা কার্যক্রমের সফল উদ্যোক্তা কংগ্রেসের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ অটিস্টিক শিশুদের মাদার হিসেবে খ্যাত পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার ফাহমিদা মির্জা, শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডি মাদাম শিরস্থি রাজাপক্ষে, মালদ্বীপের সেকেন্ড লেডি ইহাম হুসেন, বাংলাদেশের সায়মা হোসেন প্রমুখ অপার মানবিক বোধের টানে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন।
বিগত দিনে অটিজমের সমস্যায় আক্রান্ত সামর্থ্যবান পরিবারের বহু শিশুরও ভুল চিকি ৎ সায় মৃত্যু হয়েছে। বহু শিশু কৈশোর পেরোনোর আগে অন্যদের কাছে নিগৃহীত, উপেক্ষিত, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হয়ে আরও সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সেই সব সন্তানহারা মা-বাবা বা নিগ্রহের শিকার বালক-বালিকার অভিভাবক এই সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ সপ্তাহ থেকে অর্থপূর্ণ সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন। এ-সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশ নিয়ে অভিভাবক ও প্রশিক্ষকেরা এ-জাতীয় সমস্যায় আক্রান্তদের পরিচর্যায় দক্ষতা লাভ করবেন। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ-সম্পাদকীয় পাঠে অটিজমে আক্রান্তদের অভিভাবকেরা নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কারের পাশাপাশি মানসিক সহায় লাভ করবেন। সমাজে অটিজমের ব্যাপারে সংবেদশীলতা বহুগুণে বাড়বে।
আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে দেখলে বলতে পারি, অটিজম সমস্যাগ্রস্তদের অভিভাবকত্বকারীরা কমবেশী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। রাজনীতিবিদেরা উপমহাদেশে সেবা, ত্যাগ ও মানবিকতার উদাহরণ আরও তৈরি করবেন বলে আমাদের সবার প্রত্যাশা। যেকোনো সমাজে রাজনীতিক ও রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের প্রভাব অনেক বেশি। তাঁরা ভালো উদ্যোগ নিলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়। আবার তাঁরা খারাপ কাজ করলে সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। এর অর্থ এই নয় যে, অন্যরা এ ধরনের সেবামূলক কাজ করবেন না। অবশ্যই করবেন। ভালো কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনেক মহ ৎ উদ্যোগ নানা সমালোচনার শিকার হয়।
বড় আয়োজনের বিশাল সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি সমস্যাও কম নয়। বিশেষ করে এ ধরনের সম্মেলন বাংলাদেশে প্রথম হওয়ায় আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে প্রতিবেশীসহ সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও শুশ্রূষায় বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের অটিস্টিক শিশুদের জন্য রইল শুভকামনা।
আসিফ কবীর
আজ ২৫ জুলাই ও আগামীকাল ২৬ জুলাই ঢাকায় আয়োজিত ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিস ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন তেমনই একটি উদ্যোগ। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৩৫ জন ও বাংলাদেশের ১৭ জন বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকেরা যোগ দেবেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোক্তা সায়মা হোসেন। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। সায়মা হোসেন পারিবারিক পরিচয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী। উত্তর আমেরিকায় স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত সায়মা অটিজম বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যাগ্রস্তদের প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষায়িত শিক্ষা ও সামাজিকীকরণের কাজে প্রশিক্ষিত।
বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিশু অটিজমের শিকার হলেও অভিভাবকেরা তাদের চিকি ৎ সা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। এই সম্মেলন তাদের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের চেয়ে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধিশালী অনেক দেশও অটিজম বিষয়ে এত বড় সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কেবল প্রশংসনীয় নয়, অনুপ্রেরণা সঞ্চারিও। পারিবারিক পর্যায়ে সায়মা তাঁর মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি সাগ্রহে এই আয়োজনের দায়িত্ব নেন। এর ফলে বাংলাদেশের অটিজম সাপোর্ট ও আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অটিজমের একটি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার, আধুনিক বিশেষায়িত শিক্ষা সরঞ্জামে সমৃদ্ধ একাধিক শিক্ষাকেন্দ্র, চলতি সপ্তাহজুড়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে গোলটেবিল, কর্মশালার আয়োজন ইত্যাদি আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন।
মনের তাগিদ থেকেই মানুষ মানবিক ও সেবাধর্মী কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে। গেল শতকের ষাটের দশকে প্রখ্যাত কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস কিংবা জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া রূপক আশ্রয়ী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল মনের তাগিদেই।
এসব মহ ৎ কাজ বাইরে থেকে কেউ চাপিয়ে দিয়ে করাতে পারে না।
ভারতের অটিজম চিকি ৎ সা কার্যক্রমের সফল উদ্যোক্তা কংগ্রেসের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ অটিস্টিক শিশুদের মাদার হিসেবে খ্যাত পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার ফাহমিদা মির্জা, শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডি মাদাম শিরস্থি রাজাপক্ষে, মালদ্বীপের সেকেন্ড লেডি ইহাম হুসেন, বাংলাদেশের সায়মা হোসেন প্রমুখ অপার মানবিক বোধের টানে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন।
বিগত দিনে অটিজমের সমস্যায় আক্রান্ত সামর্থ্যবান পরিবারের বহু শিশুরও ভুল চিকি ৎ সায় মৃত্যু হয়েছে। বহু শিশু কৈশোর পেরোনোর আগে অন্যদের কাছে নিগৃহীত, উপেক্ষিত, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হয়ে আরও সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সেই সব সন্তানহারা মা-বাবা বা নিগ্রহের শিকার বালক-বালিকার অভিভাবক এই সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ সপ্তাহ থেকে অর্থপূর্ণ সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন। এ-সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশ নিয়ে অভিভাবক ও প্রশিক্ষকেরা এ-জাতীয় সমস্যায় আক্রান্তদের পরিচর্যায় দক্ষতা লাভ করবেন। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ-সম্পাদকীয় পাঠে অটিজমে আক্রান্তদের অভিভাবকেরা নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কারের পাশাপাশি মানসিক সহায় লাভ করবেন। সমাজে অটিজমের ব্যাপারে সংবেদশীলতা বহুগুণে বাড়বে।
আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে দেখলে বলতে পারি, অটিজম সমস্যাগ্রস্তদের অভিভাবকত্বকারীরা কমবেশী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। রাজনীতিবিদেরা উপমহাদেশে সেবা, ত্যাগ ও মানবিকতার উদাহরণ আরও তৈরি করবেন বলে আমাদের সবার প্রত্যাশা। যেকোনো সমাজে রাজনীতিক ও রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের প্রভাব অনেক বেশি। তাঁরা ভালো উদ্যোগ নিলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়। আবার তাঁরা খারাপ কাজ করলে সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। এর অর্থ এই নয় যে, অন্যরা এ ধরনের সেবামূলক কাজ করবেন না। অবশ্যই করবেন। ভালো কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনেক মহ ৎ উদ্যোগ নানা সমালোচনার শিকার হয়।
বড় আয়োজনের বিশাল সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি সমস্যাও কম নয়। বিশেষ করে এ ধরনের সম্মেলন বাংলাদেশে প্রথম হওয়ায় আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে প্রতিবেশীসহ সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও শুশ্রূষায় বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের অটিস্টিক শিশুদের জন্য রইল শুভকামনা।
আসিফ কবীর
No comments