কক্সবাজার সৈকত-সমুদ্র চুরিতেও নীরব কর্তৃপক্ষ
সমুদ্র অসীম। অগাধ জলরাশি তার। প্রাণিজ সম্পদ বিপুল। তলদেশ ও সৈকতে বালুর মজুদও অনেক। সম্ভবত এ বিবেচনা থেকেই কক্সবাজারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সৈকত থেকে নির্বিচারে বালু তুলে চলছে। এ কাজের জন্য কোনো অনুমতি নেই, বৈধতাও নেই।
কিন্তু প্রকাশ্যে অনেক শ্রমিক নিয়োগদান এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা কীভাবে এ কাজ করে যাচ্ছে? কাজের ধরন দেখে মনে হয় যে পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো সমুদ্র চুরির আয়োজন। সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জেলা ও পৌরসভা প্রশাসনের কর্তৃত্বও বহাল। পরিবেশ অধিদফতরের চোখ-কানও খোলা থাকার কথা। তাদের কারও কি এভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন নজরে আসেনি? মঙ্গলবার সমকালে 'কক্সবাজারে সাত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা' শিরোনামের খবরে বলা হয়, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ মামলা দায়ের করেছেন। এ সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গঠিত। নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু সৈকতের রক্ষণাবেক্ষণের ভার যাদের হাতে, তারা নীরব কেন? ১৪ আগস্ট অবৈধভাবে বালু তোলার সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ একজন কর্মীকে আটক করেছে। যে সাতটি প্রতিষ্ঠান সৈকত থেকে দিনের পর দিন বালু তুলে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করে চলেছে, এর কোনোটির মালিকানা তাদের রয়েছে বলে মনে হয় না। স্পষ্টতই আশপাশে থাকা রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুঁটির ওপর হাত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টিকে ঝিকে মেরে শিক্ষা দেওয়া হিসেবে দেখা চলে কি? সেটা ঘটলে অবশ্য মন্দের ভালো। কিন্তু অবৈধভাবে বালু তোলায় জড়িতরা কোনো কিছু পরোয়া করছে বলে মনে হয় না। এতে সৈকতের ক্ষতি হচ্ছে। সমুদ্রেও তার বিরূপ প্রভাব না পড়ে পারে না। সমুদ্র অবশ্যই অসীম। কিন্তু পরিবেশ সচেতনতার যুগে সবাই স্বীকার করে নিচ্ছে যে, অগাধ জলরাশির ওপরও ইচ্ছামতো সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া চলে না। এমনটি করতে গেলে সমুদ্রের যত না, তার চেয়ে ঢের ঢের বেশি ক্ষতি মানুষের। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আমাদের যেসব ব্যক্তি দায়িত্বে রয়েছেন তারা এ বিষয়ে সচেতন হবেন, এটাই প্রত্যাশা। তাদের পক্ষে কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও রয়েছে।
No comments