আইলাদুর্গতদের বাসস্থান-দেয়ালবিহীন খুপরি কাদের জন্য?
আইলাদুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য খুলনা জেলার চারটি উপজেলায় ৭২৫টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর ঘূর্ণিঝড় সহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই ঘরগুলো তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই ঘর তৈরি কেবল লোক দেখানোর জন্যই।
কারণ নির্মিত ৭২৫টি ঘরের মধ্যে হাতেগোনা কিছু ঘরে আইলাদুর্গতরা বসবাস করতে পারছেন। অপরিকল্পিত নির্মাণ এর জন্য দায়ী। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের প্রতিটি ঘরের কেবল পাকা মেঝে ও ছাদ নির্মাণ করেছে, চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করেনি। যে ঘরের দেয়াল নেই সেই ঘরে আইলাদুর্গতরা থাকবেন কীভাবে? এই প্রশ্ন নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভাবেনি, এমনকি সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর কেন ভাবেনি সেটা বোঝা কঠিন। এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া জরুরি। চারপাশের দেয়াল ছাড়া ঘর তৈরির অর্থায়ন হয়েছে নাকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোই দেয়াল ছাড়া ঘর তৈরি করেছে তার তদন্ত করতে হবে। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় যাদের ঘর ভেঙে গেছে তাদের ভাগ্যের এখনও পরিবর্তন হয়নি। আইলাদুর্গতরা আশা করেছিলেন, সরকারের পদক্ষেপে তারা চার দেয়ালের আশ্রয় খুঁজে পাবেন। কিন্তু এখনও তাদের কোনোমতে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে বাস করতে হচ্ছে। সরকার থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তার সুফল ভোগ করেননি দুর্গতরা। তাদের অধিকাংশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর। ফলে ঘরের দেয়াল তৈরি করে সেখানে বসবাসের সামর্থ্য তাদের নেই। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, দেয়াল না থাকায় অধিকাংশ ঘরেই কেউ বসবাস করে না। ঘটনা সম্পর্কে সবাই অবহিত, কিন্তু এর সমাধানে কেউ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, আইলাদুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য যেসব ঘর তৈরি করা হয়েছে অবিলম্বে তা বসবাস উপযোগী করে তোলা জরুরি। এ জন্য সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। লোক দেখানো কিছু করার চেয়ে আইলাদুর্গতদের পুনর্বাসনে কার্যকরী কিছু করা জরুরি।
No comments