মৈত্রীবন্ধন-সীমানা ছাড়িয়ে সুরের মূর্ছনা by অমর সাহা
গত আনন্দে আমরা শুনেছি মৈত্রীবন্ধন নিয়ে বাংলাদেশের শিল্পীদের অভিজ্ঞতার কথা। এবার শুনব একই বিষয় নিয়ে ভারতের শিল্পীদের অভিজ্ঞতার কথা। ২৬ ফেব্রুয়ারি, রোববার। কলকাতার ঐতিহাসিক প্রিন্সেপ ঘাটের মুক্ত মঞ্চ।
পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার্সের পাশ ঘেঁষে, একেবারে হুগলি নদীর তীরে। ওপর থেকে চলে গেছে দ্বিতীয় হুগলি বা বিদ্যাসাগর সেতু। তার নিচেই ইতিহাসের সেই প্রিন্সেপ ঘাট। অপূর্ব সাজে মঞ্চ। আলোকমালায় সজ্জিত। এদিনের শিল্পী বাংলাদেশ ও ভারতের দুই খ্যাতিমান শিল্পী পার্বতী বাউল আর ফরিদা পারভীন। পার্বতী বাউল ভারতের এক নামী বাউল শিল্পী আর ফরিদা পারভীন উপমহাদেশের প্রখ্যাত লালনসংগীতশিল্পী। হাজারো দর্শক মঞ্চজুড়ে। মঞ্চে উঠে আসেন পার্বতী বাউল। শুভেচ্ছা জানান মৈত্রীবন্ধন উৎসবের আয়োজক টাইমস অব ইন্ডিয়া ও প্রথম আলোকে। বলেন, ‘আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। আনন্দিত। এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে। আমি মনে করি, এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান দৃঢ় করবে আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে, ভালোবাসাকে।’ তারপর শুরু করেন একের পর এক গান। বাউল, পদাবলিসহ নানা গান। এক ঘণ্টার গান। এরপর বাংলাদেশের শিল্পী ফরিদা পারভীন আর পার্বতীর কণ্ঠে ভেসে এল লালনের সেই বিখ্যাত গান, ‘মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে’।
২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছিল এই মৈত্রীবন্ধন উৎসব। চলেছে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অনুষ্ঠান হয়েছে কলকাতার ঐতিহাসিক টালিগঞ্জ ক্লাবের উন্মুক্ত মঞ্চ, প্রিন্সেপ ঘাট আর নজরুল মঞ্চে।
পার্বতী বাউল কলকাতার মেয়ে হলেও থাকেন কেরালায়। এখন অনুষ্ঠান করছেন দক্ষিণ ভারতের পদুচেরিতে। তিনিই পদুচেরি থেকে ফোনে প্রথম আলোকে বললেন, ‘মৈত্রীবন্ধন উৎসবে যোগ দিতে পেরে কত যে আনন্দিত হয়েছিলাম, তা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছি না! দুই দেশের মৈত্রীবন্ধনের জন্য তো হাতিয়ার হিসেবে সংগীতের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব ঐতিহ্য লোকগীতি, পল্লিগীতি, লালনগীতি, ভাটিয়ালি, বাউল, ভাওয়াইয়া, জারি-সারি—সবকিছুকেই আমরা এই মৈত্রীবন্ধনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।’
পার্বতী বাউল আরও বললেন, ‘কোনো দিন বাংলাদেশে যাইনি। আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয়ই যাব। বাংলাদেশ দেখতে বড্ড ইচ্ছে আমার।’
২৩ ফেব্রুয়ারি টালিগঞ্জ মঞ্চে দ্বৈত কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন লোপামুদ্রা মিত্র ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। লোপামুদ্রা বললেন, ‘সেদিন ছিল আমার জীবনের এক গর্বের দিন। আমি রবীন্দ্রসংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে এক মঞ্চে গান করতে পেরে কী যে গর্ব অনুভব করেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না! রেজওয়ানা দিদি আমার অনেক বড়। এ সুযোগ তো জীবনে বারবার আসে না। আমি ঢাকায় গিয়েছি। ঢাকার রাস্তায় সবকিছু বাংলায় দেখে আমি এক অদ্ভুত উত্তেজনায় কেঁপেছি। ভেবেছি, এই তো প্রকৃত বাংলা। আমার কাছে পৃথিবী এক। মানুষ এক। আমি চাই, আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় করতে।’
দ্বিতীয় দিনে প্রিন্সেপ ঘাটের অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাস আর বাংলাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। মঞ্চে উঠে পঙ্কজ উদাস বললেন, ‘টাইমস ও প্রথম আলোর এই এক মহৎ উদ্যোগ। এতে করে আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মৈত্রীবন্ধনের এক নতুন বার্তা দেবে।’ পঙ্কজ উদাসের জন্ম গুজরাটের জেটপুরে। এখন থাকেন মুম্বাইতে।
পরদিন প্রিন্সেপ ঘাট মঞ্চে ছিল কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পী উষা উথুপের গান। সেই পরিচিত স্টাইলে গান গেয়ে মাত করে দেন তিনি দর্শকদের। পপ সংগীতশিল্পী উষা উথুপের মুম্বাইতে জন্ম হলেও এখন থাকেন কলকাতায়। তিনি বললেন, ‘এই উৎসবই আমাদের দুই দেশের মধ্যে নতুন করে মৈত্রীবন্ধনের এক বার্তা দেবে। এই বার্তা পৌঁছবে আমাদের দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে। দীর্ঘজীবী হোক আমাদের এই মৈত্রীবন্ধন।’ উষা উথুপের মনমাতানো গানের পর মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের আরেক প্রথিতযশা শিল্পী রুনা লায়লা।
মৈত্রীবন্ধন উৎসবের পঞ্চম দিনে ছিল কলকাতার ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু ও বাংলাদেশের মাইলসের মনমাতানো গান। চন্দ্রবিন্দুর শিল্পী উপল বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীরে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের গানকে আটকে রাখা যায় না। গানের আবেদন বিশ্বব্যাপী।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গান কোনো সীমানা মানে না। চলে যায় এক সীমানা থেকে আরেক সীমানায়। কাঁটাতার বা সীমান্তের বেড়াও বাঁধ মানাতে পারে না গানকে। এই গান দিয়েই আমরা আমাদের মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করব।’ চন্দ্রবিন্দুর পর এদিন গান পরিবেশন করে বাংলাদেশের ব্যান্ড মাইলস।
শেষ দিনের অনুষ্ঠানও ছিল সেই নজরুল মঞ্চে। এদিন কলকাতার ব্যান্ড ক্যাকটাসের সংগীতে মুগ্ধ হয় কলকাতাবাসী। ক্যাকটাসের সঙ্গে এদিন আরও গান করে বাংলাদেশের ব্যান্ড জেমসের নগর বাউল। ক্যাকটাসের শিল্পী শিবাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগীতই আমাদের দুই দেশের মৈত্রীবন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। কারণ, সংগীত কোনো সীমানা মানে না। সংগীতের মূর্ছনা চলে যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে; পৃথিবীর সর্বত্র। এক সীমানা থেকে অন্য সীমানায়।’
২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছিল এই মৈত্রীবন্ধন উৎসব। চলেছে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অনুষ্ঠান হয়েছে কলকাতার ঐতিহাসিক টালিগঞ্জ ক্লাবের উন্মুক্ত মঞ্চ, প্রিন্সেপ ঘাট আর নজরুল মঞ্চে।
পার্বতী বাউল কলকাতার মেয়ে হলেও থাকেন কেরালায়। এখন অনুষ্ঠান করছেন দক্ষিণ ভারতের পদুচেরিতে। তিনিই পদুচেরি থেকে ফোনে প্রথম আলোকে বললেন, ‘মৈত্রীবন্ধন উৎসবে যোগ দিতে পেরে কত যে আনন্দিত হয়েছিলাম, তা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছি না! দুই দেশের মৈত্রীবন্ধনের জন্য তো হাতিয়ার হিসেবে সংগীতের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব ঐতিহ্য লোকগীতি, পল্লিগীতি, লালনগীতি, ভাটিয়ালি, বাউল, ভাওয়াইয়া, জারি-সারি—সবকিছুকেই আমরা এই মৈত্রীবন্ধনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।’
পার্বতী বাউল আরও বললেন, ‘কোনো দিন বাংলাদেশে যাইনি। আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয়ই যাব। বাংলাদেশ দেখতে বড্ড ইচ্ছে আমার।’
২৩ ফেব্রুয়ারি টালিগঞ্জ মঞ্চে দ্বৈত কণ্ঠে গান গেয়েছিলেন লোপামুদ্রা মিত্র ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। লোপামুদ্রা বললেন, ‘সেদিন ছিল আমার জীবনের এক গর্বের দিন। আমি রবীন্দ্রসংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে এক মঞ্চে গান করতে পেরে কী যে গর্ব অনুভব করেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না! রেজওয়ানা দিদি আমার অনেক বড়। এ সুযোগ তো জীবনে বারবার আসে না। আমি ঢাকায় গিয়েছি। ঢাকার রাস্তায় সবকিছু বাংলায় দেখে আমি এক অদ্ভুত উত্তেজনায় কেঁপেছি। ভেবেছি, এই তো প্রকৃত বাংলা। আমার কাছে পৃথিবী এক। মানুষ এক। আমি চাই, আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন আরও দৃঢ় করতে।’
দ্বিতীয় দিনে প্রিন্সেপ ঘাটের অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাস আর বাংলাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। মঞ্চে উঠে পঙ্কজ উদাস বললেন, ‘টাইমস ও প্রথম আলোর এই এক মহৎ উদ্যোগ। এতে করে আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মৈত্রীবন্ধনের এক নতুন বার্তা দেবে।’ পঙ্কজ উদাসের জন্ম গুজরাটের জেটপুরে। এখন থাকেন মুম্বাইতে।
পরদিন প্রিন্সেপ ঘাট মঞ্চে ছিল কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পী উষা উথুপের গান। সেই পরিচিত স্টাইলে গান গেয়ে মাত করে দেন তিনি দর্শকদের। পপ সংগীতশিল্পী উষা উথুপের মুম্বাইতে জন্ম হলেও এখন থাকেন কলকাতায়। তিনি বললেন, ‘এই উৎসবই আমাদের দুই দেশের মধ্যে নতুন করে মৈত্রীবন্ধনের এক বার্তা দেবে। এই বার্তা পৌঁছবে আমাদের দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে। দীর্ঘজীবী হোক আমাদের এই মৈত্রীবন্ধন।’ উষা উথুপের মনমাতানো গানের পর মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের আরেক প্রথিতযশা শিল্পী রুনা লায়লা।
মৈত্রীবন্ধন উৎসবের পঞ্চম দিনে ছিল কলকাতার ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু ও বাংলাদেশের মাইলসের মনমাতানো গান। চন্দ্রবিন্দুর শিল্পী উপল বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীরে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের গানকে আটকে রাখা যায় না। গানের আবেদন বিশ্বব্যাপী।’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গান কোনো সীমানা মানে না। চলে যায় এক সীমানা থেকে আরেক সীমানায়। কাঁটাতার বা সীমান্তের বেড়াও বাঁধ মানাতে পারে না গানকে। এই গান দিয়েই আমরা আমাদের মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করব।’ চন্দ্রবিন্দুর পর এদিন গান পরিবেশন করে বাংলাদেশের ব্যান্ড মাইলস।
শেষ দিনের অনুষ্ঠানও ছিল সেই নজরুল মঞ্চে। এদিন কলকাতার ব্যান্ড ক্যাকটাসের সংগীতে মুগ্ধ হয় কলকাতাবাসী। ক্যাকটাসের সঙ্গে এদিন আরও গান করে বাংলাদেশের ব্যান্ড জেমসের নগর বাউল। ক্যাকটাসের শিল্পী শিবাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগীতই আমাদের দুই দেশের মৈত্রীবন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। কারণ, সংগীত কোনো সীমানা মানে না। সংগীতের মূর্ছনা চলে যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে; পৃথিবীর সর্বত্র। এক সীমানা থেকে অন্য সীমানায়।’
No comments