আলোর ইশারা-মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফর ও আলোচনার সম্ভাব্য বিষয় by আইনুন নিশাত

আমার লেখার প্রথমে একটা অনুরোধ করতে চাই। যারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন, যারা রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তাদের কাছে অনুরোধ লেখাটি না পড়ার জন্য। এ লেখা এমন সাধারণ পাঠকের জন্য, যাদের কৌতূহল আছে শিরোনামের বিষয়টি নিয়ে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা নিয়ে এখন খবরের কাগজে এবং টেলিভিশন টকশোতে অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা চলছে। তা হতেই পারে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা সভার ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে স্পেকুলেশনের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা অপ্রয়োজনীয়।
বলে নেওয়া দরকার, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। অর্থাৎ এর আগে ২০১০ সালের ১০-১৩ জানুয়ারি তাদের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছিল এবং সেখানে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, এবারের আলোচনাতেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে_ সেটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি ২০১০ সালের জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণাটি দেখি তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঘোষণাপত্রটি ওয়েবসাইটে আছে এবং যে কেউ ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন। এটি মোটেই গোপনীয় দলিল নয়। বলাবাহুল্য, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আগেও যেসব বৈঠক হয়েছে, ওই ঘোষণায় তারও ধারাবাহিকতা পাওয়া যাবে।
গত বছর জানুয়ারির যৌথ ঘোষণায় মোট ৫০টি অনুচ্ছেদ আছে। এর প্রথম ৯টি অনুচ্ছেদে রয়েছে ওই রাষ্ট্রীয় সফরে শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মসূচির বিবরণ। প্রসঙ্গত, নয়াদিলি্লতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাড়াও আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে আজমির শরিফ গিয়েছিলেন, যৌথ ঘোষণায় তারও উল্লেখ আছে। স্বাভাবিক কারণে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহাজোট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ইউপিএ-প্রধান সোনিয়া গান্ধীরও বৈঠক হয়। এ ছাড়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন। লক্ষণীয়, ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ আছে।
১০ থেকে ১৬_ এই সাত অনুচ্ছেদে দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা ইত্যাদি উদ্ধৃত হয়েছে। ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদটি আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এখানে দুই দেশ সম্মত হয়েছে যে, উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমন্বিত ও ফ্রেমওয়ার্ক দাঁড় করিয়ে পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, যোগসূত্রতা, পর্যটন ও শিক্ষা বিষয়ে যথাশিগগির সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এরপর থেকে অর্থাৎ ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে ৪৮ পর্যন্ত ৩২টি অনুচ্ছেদে পৃথক পৃথক বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। তবে এ অনুচ্ছেদগুলোকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করা যেতে পারে।
অনুমান করছি, দুই প্রধানমন্ত্রী এই ৩২টি অনুচ্ছেদের প্রতিটি বিষয় ধরেই আলোচনা করবেন এবং ১৯ মাস আগে গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন। তবে বলা প্রয়োজন, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চতম সভার আগে প্রথমে কর্মকর্তা পর্যায়ে এবং তারপর মন্ত্রী বা মন্ত্রী পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে থাকে। ফলে সেপ্টেম্বর মাসে যে ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে, তার প্রায় চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়ে থাকবে। কিছু জটিল বিষয়ে হয়তো প্রধানমন্ত্রীদের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। কাজেই বিষয়গুলো আমাদের জানা। জানি না সিদ্ধান্তগুলো কী হয়েছে? সেটা সেপ্টেম্বরে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরই জানা যাবে।
দেখা যাক, ৩২টি অনুচ্ছেদে কী কী বিষয় আলোচিত হয়েছে এবং সিদ্ধান্তগুলো কী কী? যদি ব্লক হিসেবে আলোচনা করি, তাহলে প্রথমেই আসবে পানি ব্যবস্থাপনা, যে বিষয়ে আমার প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে এবং ফেনী, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার_ এই সাতটি নদীর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছেন। তারা ইছামতি নদী ড্রেজিংয়ে সম্মত হন এবং মহানন্দা, করতোয়া, নাগর, কুলিক, আত্রাই, ধরলা এবং ফেনী_ এই নদীগুলো সংরক্ষণেও ব্যবস্থা নিতে রাজি হন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত ৯টি ড্রেজার জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়। এ ছাড়া টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারতের আশ্বাসের কথাও বলা আছে। ২৭ থেকে ৩০_ এই চারটি অনুচ্ছেদে বণিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি দেখতে গেলে কেবল তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রগতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাকি বিষয়গুলোতে অগ্রগতি না থাকাটা আমার কাছে বিস্ময়কর।
দ্বিতীয় ব্লক হতে পারে বিদ্যুৎ। ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে ভারত বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে সম্মত হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে সহযোগিতার কথা বলা হয়। এ লক্ষ্যে দু'দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয় প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে (৪৮)। এ ক্ষেত্রে বোধ করি কিছুটা অগ্রগতি আছে। ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। অনুমান করছি, সঞ্চালন লাইনের অভাবেই বিদ্যুৎ এখনও আসেনি। তবে যৌথ ব্যবস্থাপনায় নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা জানা গেছে। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে নৌচলাচল ও বন্দর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে।
তৃতীয় ব্লক, ২২-২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারতের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়ার অনুমতির কথা বলা আছে। অবশ্য একই সঙ্গে বাংলাদেশ ইঙ্গিত দিয়েছে, নেপাল ও ভুটানকেও একই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। আশুগঞ্জ বন্দরের মাধ্যমে একবারের জন্য অতি বড় আকারে মাল পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার কথাও বলা আছে। এ কাজের জন্য অবকাঠামোতে সংস্কার প্রয়োজন হলে ভারতের সে খরচ বহন করার কথা।
চতুর্থ ব্লকে ফেলা যেতে পারে ২৪-২৬ তিনটি অনুচ্ছেদকে। এগুলো হলো দুই দেশের ভেতরে রেল যোগাযোগের উন্নতিকরণ। আখাউড়া থেকে আগরতলা নতুন রেল নির্মাণ। রোহনপুর-সিংহাবাদ রেলসংযোগ উন্নত করে নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং রাধিকাপুর-বিরল রেলকে ব্রডগেজে রূপান্তর করে ভুটানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি আছে। ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবাহী রেল ও সড়ক যোগাযোগ সংক্রান্ত।
পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো। ৩২ থেকে ৩৭_ এই ছয়টি অনুচ্ছেদ এই ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি বাড়ানোর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা আছে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনগুলোকে উন্নত করা। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের ক্ষমতা বাড়ানো এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী স্থানে হাট-বাজার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে। বিভিন্ন খবরের কাগজের প্রতিবেদন থেকে যা দেখছি, এসব বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। কিছু কাজ হলেও নিয়মকানুন ও আইনের জটিলতায় অগ্রগতি আটকে থাকছে বা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক'দিন আগে সীমান্ত হাট নিয়ে প্রতিবেদন পড়ছিলাম। বাজারে কেবল স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তরিতরকারি বা পেঁয়াজ-রসুন আনতে দেওয়া হচ্ছে। অথচ একটি হাটের দিন স্থানীয় জনসাধারণ তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করে থাকে। অর্থাৎ একটি গ্রামীণ হাটও শুল্কসহ বিভিন্ন আইনি বাধায় কার্যকর হতে পারছে না। তাও প্রধানমন্ত্রীদের সিদ্ধান্তের দেড় বছর পর।
একটি ব্লকে আছে ভারতের প্রতিশ্রুত এক বিলিয়ন ডলার ঋণের কথা। ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে রেল ব্যবহার উন্নতিকল্পে বিভিন্ন ব্যবস্থা, বাস ক্রয় ও ড্রেজিং কাজে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। সপ্তম ব্লকে আমি ফেলতে চাই সীমান্ত চিহ্নিতকরণের বিষয়টি। ১৯-২১ অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু এটি। সেখানে রয়েছে ১৯৭৪ সালের স্থল সীমানা বিষয়ক চুক্তি, সমুদ্রসীমা চূড়ান্তকরণ এবং তিনবিঘা করিডোরের ওপর দিয়ে ভারতের ব্যবহারের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ। ১৯৭৪ সালের চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রগতি হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। ছিটমহল নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। খবরের কাগজের রিপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে, মনমোহন সিংয়ের সফরের আগেই এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তবে মনে হচ্ছে, যেন এই সফরের কারণেই উদ্যোগগুলো নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ জানুয়ারি ২০১০ সালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতেও অনেকটা সময় লাগছে।
অষ্টম ব্লক হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অপরাধী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ১৭ ও ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদের এ বিষয়ে দুই দেশের অঙ্গীকারের কথা বলা আছে। এক দেশ তাদের ভূমিকে অপর দেশের সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অপরাধীদের কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেবে না। এ ধরনের লোকজনকে আশ্রয় দেবে না।
যৌথ ঘোষণার নবম ব্লক হচ্ছে দু'দেশের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক। বৈশাখ মাসে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন তারই ফল। এ ছাড়া ভারত প্রতি বছর বাংলাদেশকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ৩০০টি বৃত্তি প্রদান করবে।
আমার পর্যালোচনায় দশম ব্লকটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ানো। ৪২ থেকে ৪৭_ এই ছয়টি অনুচ্ছেদে সার্ক ও বিম্স্টেকের কার্যকারিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের পদক্ষেপের কথা বলা আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতার কথা বলেছে। ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হলে ভারতের প্রার্থিতা বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সমর্থন দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদে ২০১১-১২ টার্মে নির্বাচনের জন্য ভারতকে সমর্থন করবে এবং ২০১৬-১৭ টার্মে বাংলাদেশের প্রার্থিতাকে ভারত সমর্থন করবে। অবশিষ্ট রইল ৪৮ নম্বরের অনুচ্ছেদ। দুই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অপরাধী হস্তান্তর, সন্ত্রাস ইত্যাদি বিরোধ সংক্রান্ত, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সংস্কৃতি বিষয়ে চুক্তিসহ যে পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার উল্লেখ আছে। ৪৯-৫০ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ধন্যবাদ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা আছে।
তাহলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার এজেন্ডায় স্বাভাবিকভাবে যেসব বিষয় আলোচনা হবে, তাতে কোনো চমক আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবেশী দু'দেশের মধ্যে এ সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার অগ্রগতি বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা ও ফলাফল জানার আগ্রহ রইল। তারা যদি চাপ না দেন তাহলে দেখা যাবে, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি অর্জনের দৃঢ়প্রত্যয় আরও দৃঢ়ভাবে অথবা পুনরায় ব্যক্ত করা হচ্ছে।
আজকের লেখা শেষ করছি একটি অনুধাবন দিয়ে। রাজনীতিবিদ পর্যায়ে সহযোগিতা এবং সমস্যা সমাধানের কথাগুলো কি কেবল মিষ্টি মিষ্টি কথা থাকবে, না কাজে রূপান্তরিত হবে? এ ক্ষেত্রে আমলা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা বিচার করার সময় এসেছে। ২০১০ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ বছর পর। তখনও হয়তো অনেক ভালো ভালো সিদ্ধান্ত লেখা হয়েছিল; জানুয়ারি ২০১০ সালেও ভালো ভালো সিদ্ধান্ত লেখা হয়েছে। আমরা আশা করব, দুই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কী করে ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয়েও কথা বলবেন।

অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত : পরিবেশ বিশেষজ্ঞ
 

No comments

Powered by Blogger.