একটি রক্তের ফোঁটার আহ্বান by মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান
মুজাহিদের ক্যান্সার হয়েছে শুনেই ধপাস করে সোফায় বসে যাই। হুয়ায়ূন আহমেদ ও হুগো শাভেজের একই ভাগ্য_ হায় ! ভীষণ এক কষ্ট গলার কাছে আটকে আছে। নোমান ও মহি ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের কেবিনে মুজাহিদকে আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় দেখতে পেলাম। আমাকে দেখেই ও সোজা হয়ে বসল। ওর মাথায় হাত রাখলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাইয়া, কেমন লাগছে?' ও বলে, 'ভাইয়া ভালো।' চেহারায় ক্লান্তির ছোঁয়া লাগলেও আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। খুব স্বাভাবিকভাবেই ও বলে চলে, 'অপারেশনের পর আপাতত ভালো লাগছে। তবে পরের চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা বিদেশে যেতে বলেছে। অপারেশনে টিউমার ধরা পড়েছে। বায়োপসি রিপোর্ট খারাপ এসেছে।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে আমার একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়া মেধাবী, বিনয়ী, ছোট ভাইটির জীবনে আঘাত হানা এক ভয়াল ঝড় আমার মস্তিষ্ককে যেন শূন্য করে দিয়েছে। বিয়ে হয়েছে। একটি পুত্রসন্তান এসেছে তাঁর বুকজুড়ে। এক বিশাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল নবীন বিচারক মুজাহিদের। নিয়তির ঝড়ের মুখোমুখি আজ তিনটি জীবন।
ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা প্রয়োজন। আজিজ ভাই, মুনতাসীর, ওসমান ভাই ও জসীমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলাম। কীভাবে এগোবো বুঝতে পারছি না। বিচারক হিসেবে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা_ এই প্রথম ভয়াবহভাবে অনুভব করলাম। অনেকেই পরামর্শ দিল, চট্টগ্রামের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি আছেন, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। কেউ বলল, 'তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া দরকার নেই, তার চেয়ে বরং পত্রিকায় নিউজ দেওয়া হোক_ যার ইচ্ছা হয় সে এগিয়ে আসবে। এখনও মানুষ মানুষকে ভালোবাসে।' ফারুকীর কাছে শুনলাম, বান্দরবানে আসাদ ভাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সবাইকে মবিলাইজ করার জন্য। রায়হান জানাল, 'ভাইয়া আমি ছুটি নিয়ে চলে এসেছি। যদি কিছু করা যায় মুজাহিদের জন্য!' খাগড়াছড়ির খবর নিলাম। সেখানে মামুনের অশ্রুপতন অনেকেই শুনতে পেয়েছে। হাতিয়া থেকে ফারুকী নামের এক উজ্জ্বল আলো সবখানে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার তীব্র আবেদন_ মুজাহিদকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতে চাই না। স্থির স্বভাবের আজিজ ভাই বললেন, 'ভাই, আমাকে একটা এসএমএস ড্রাফট করে দেন।' চাপা স্বভাবের জসীম বলল, 'কখন যে কী হয় মানুষের জীবনে। যা-ই করতে হোক না কেন, আমরা মুজাহিদের সঙ্গে আছি।' ঢাকায় আদনান, কেশব ও রেজার সঙ্গে আলাপে খুঁজে পেয়েছি_ সুতীব্র ভালোবাসা। বিভিন্ন জেলায় কথা হয়েছে। বাঁশখালীতে মুরাদ একাই অনেক দূর এগিয়েছে। সন্দ্বীপে আবু হান্নান ভাইয়ের চোখের নোনা জল বঙ্গোপসাগরকেও হার মানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে হেলাল স্যার মুজাহিদের অসুস্থতার কথা শুনে মন খারাপ করেছেন। তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলাপ করেছেন। 'আমার' বলতে কিছু নেই, সবকিছুই যেন আমাদের। সবাই মিলে যেন একটি রক্তের ফোঁটা। এই রক্তের ফোঁটা যেন পুরো বাংলাদেশকে আহ্বান করছে_ শুধুই ভালোবাসার দিকে, শুধুই জীবনের দিকে। যে জীবন কেবল বেঁচে থাকতে চায় না, বরং সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চায়।
বিচারক বলে সরাসরি সাহায্য চাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও একটি দৈনিকে সম্মানিত বিচারকগণ নিজেদের বিচারিকসত্তাকে মানবিক সত্তাতে বিস্তৃত করেছেন। 'একজন বিচারককে বাঁচানোর স্বপ্ন ...' শিরোনামের লেখাটির প্রতিটি বর্ণ ভালোবাসায় মোড়ানো। আসাদ ভাই ফেসবুকে যথার্থই লিখেছেন : 'বৃক্ষের বিস্তার আছে, হৃদয়েরও বিস্তার আছে। খুব কম লোকই বিস্তারিত হতে পারে। একজন ভাইয়ের বিপদে অন্য ভাইবোনেরা দেখিয়ে দিল আদিগন্ত তাদের বিস্তার। হলফ করে বলতে পারি ... সুদিন অপেক্ষা করছে। প্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা পারবে। তোমাদের দ্বারাই সম্ভব।'
অফিসে পাঠানো চিঠিতে মুজাহিদের স্ত্রী তাদের এগারো মাস বয়সী পুত্রসন্তানের কথা উল্লেখ করে স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। বোন সুমি, মুজাহিদ শুধু তোমার স্বামীই নয়, ও তো আমাদেরই ভাই। তোমাদের পুত্র আমাদেরই সন্তান। তার জন্য রক্ষিত 'ভালোবাসার উদার জমিন' কখনও সংকীর্ণ হওয়ার নয়।
মুজাহিদের ভাই জানিয়েছেন, সর্বপ্রথম বিচারপতি মামনুন রহমান এক লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন। এই সংবাদ খুব দ্রুত সারাদেশের নবীন বিচারকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। টাকার পরিমাণ বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে জানার আগেই স্যার টাকাটা জমা করে দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ে বলতে ইচ্ছা করছিল_ আর এত কষ্ট দিবেন না, প্লিজ। মুজাহিদ, তুমিও নিশ্চয় পড়েছ তার অনেক লেখা। তার আত্মবিশ্বাস তোমার মাঝেও দেখতে পাই। তোমাদের দু'জনের মতো একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাশক্তিধর সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে অনেকটা মুখের ওপর শয়তান বলে সম্বোধন করা অনেক সাহসের ব্যাপার। এর চেয়েও বড় সাহসের ব্যাপার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা।
ভালোবেসে এগিয়ে আসুন, করুণা করে নয়।
আজিজ ভাই, কেশব, আদনান, পারভেজ ও সালামরা লিখেছে_ 'স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মুজাহিদ সেই স্বপ্নেরই মানুষ। আমরা তাকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। তার জীবন আবার আনন্দ-হাসিতে ভরে উঠুক। দুরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করে মুজাহিদ এই পৃথিবীতে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। বিচারকের আসনে বসে সত্য ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রাখবেন। তার মেধা ও দক্ষতা মানুষের ন্যায়বিচার পেতে সহায়ক হবে।
মুজাহিদের জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : 'ফারজানা সুমি, হিসাব নম্বর ১১৯-১২২০০০৩০৯৫-৫, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, প্রবর্তক মোড় শাখা, চট্টগ্রাম।'
মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান : মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সিএমএম কোর্ট, চট্টগ্রাম
ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা প্রয়োজন। আজিজ ভাই, মুনতাসীর, ওসমান ভাই ও জসীমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলাম। কীভাবে এগোবো বুঝতে পারছি না। বিচারক হিসেবে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা_ এই প্রথম ভয়াবহভাবে অনুভব করলাম। অনেকেই পরামর্শ দিল, চট্টগ্রামের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি আছেন, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। কেউ বলল, 'তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া দরকার নেই, তার চেয়ে বরং পত্রিকায় নিউজ দেওয়া হোক_ যার ইচ্ছা হয় সে এগিয়ে আসবে। এখনও মানুষ মানুষকে ভালোবাসে।' ফারুকীর কাছে শুনলাম, বান্দরবানে আসাদ ভাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সবাইকে মবিলাইজ করার জন্য। রায়হান জানাল, 'ভাইয়া আমি ছুটি নিয়ে চলে এসেছি। যদি কিছু করা যায় মুজাহিদের জন্য!' খাগড়াছড়ির খবর নিলাম। সেখানে মামুনের অশ্রুপতন অনেকেই শুনতে পেয়েছে। হাতিয়া থেকে ফারুকী নামের এক উজ্জ্বল আলো সবখানে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভালোবাসার তীব্র আবেদন_ মুজাহিদকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিতে চাই না। স্থির স্বভাবের আজিজ ভাই বললেন, 'ভাই, আমাকে একটা এসএমএস ড্রাফট করে দেন।' চাপা স্বভাবের জসীম বলল, 'কখন যে কী হয় মানুষের জীবনে। যা-ই করতে হোক না কেন, আমরা মুজাহিদের সঙ্গে আছি।' ঢাকায় আদনান, কেশব ও রেজার সঙ্গে আলাপে খুঁজে পেয়েছি_ সুতীব্র ভালোবাসা। বিভিন্ন জেলায় কথা হয়েছে। বাঁশখালীতে মুরাদ একাই অনেক দূর এগিয়েছে। সন্দ্বীপে আবু হান্নান ভাইয়ের চোখের নোনা জল বঙ্গোপসাগরকেও হার মানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে হেলাল স্যার মুজাহিদের অসুস্থতার কথা শুনে মন খারাপ করেছেন। তিনি তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলাপ করেছেন। 'আমার' বলতে কিছু নেই, সবকিছুই যেন আমাদের। সবাই মিলে যেন একটি রক্তের ফোঁটা। এই রক্তের ফোঁটা যেন পুরো বাংলাদেশকে আহ্বান করছে_ শুধুই ভালোবাসার দিকে, শুধুই জীবনের দিকে। যে জীবন কেবল বেঁচে থাকতে চায় না, বরং সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চায়।
বিচারক বলে সরাসরি সাহায্য চাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও একটি দৈনিকে সম্মানিত বিচারকগণ নিজেদের বিচারিকসত্তাকে মানবিক সত্তাতে বিস্তৃত করেছেন। 'একজন বিচারককে বাঁচানোর স্বপ্ন ...' শিরোনামের লেখাটির প্রতিটি বর্ণ ভালোবাসায় মোড়ানো। আসাদ ভাই ফেসবুকে যথার্থই লিখেছেন : 'বৃক্ষের বিস্তার আছে, হৃদয়েরও বিস্তার আছে। খুব কম লোকই বিস্তারিত হতে পারে। একজন ভাইয়ের বিপদে অন্য ভাইবোনেরা দেখিয়ে দিল আদিগন্ত তাদের বিস্তার। হলফ করে বলতে পারি ... সুদিন অপেক্ষা করছে। প্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা পারবে। তোমাদের দ্বারাই সম্ভব।'
অফিসে পাঠানো চিঠিতে মুজাহিদের স্ত্রী তাদের এগারো মাস বয়সী পুত্রসন্তানের কথা উল্লেখ করে স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। বোন সুমি, মুজাহিদ শুধু তোমার স্বামীই নয়, ও তো আমাদেরই ভাই। তোমাদের পুত্র আমাদেরই সন্তান। তার জন্য রক্ষিত 'ভালোবাসার উদার জমিন' কখনও সংকীর্ণ হওয়ার নয়।
মুজাহিদের ভাই জানিয়েছেন, সর্বপ্রথম বিচারপতি মামনুন রহমান এক লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন। এই সংবাদ খুব দ্রুত সারাদেশের নবীন বিচারকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। টাকার পরিমাণ বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে জানার আগেই স্যার টাকাটা জমা করে দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ে বলতে ইচ্ছা করছিল_ আর এত কষ্ট দিবেন না, প্লিজ। মুজাহিদ, তুমিও নিশ্চয় পড়েছ তার অনেক লেখা। তার আত্মবিশ্বাস তোমার মাঝেও দেখতে পাই। তোমাদের দু'জনের মতো একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাশক্তিধর সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে অনেকটা মুখের ওপর শয়তান বলে সম্বোধন করা অনেক সাহসের ব্যাপার। এর চেয়েও বড় সাহসের ব্যাপার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা।
ভালোবেসে এগিয়ে আসুন, করুণা করে নয়।
আজিজ ভাই, কেশব, আদনান, পারভেজ ও সালামরা লিখেছে_ 'স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মুজাহিদ সেই স্বপ্নেরই মানুষ। আমরা তাকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। তার জীবন আবার আনন্দ-হাসিতে ভরে উঠুক। দুরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করে মুজাহিদ এই পৃথিবীতে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। বিচারকের আসনে বসে সত্য ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রাখবেন। তার মেধা ও দক্ষতা মানুষের ন্যায়বিচার পেতে সহায়ক হবে।
মুজাহিদের জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : 'ফারজানা সুমি, হিসাব নম্বর ১১৯-১২২০০০৩০৯৫-৫, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, প্রবর্তক মোড় শাখা, চট্টগ্রাম।'
মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান : মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সিএমএম কোর্ট, চট্টগ্রাম
No comments