শেকড়ের ডাক-সড়ক নামের মরণ ফাঁদ ও আমাদের বিবেক বোধ by ফরহাদ মাহমুদ
টাকা আপন, মানুষ পর, যত পারিস টাকা ধর'_এটি বাস-ট্রাক-কোস্টারের গায়ে বহুল ব্যবহৃত একটি স্লোগান। ভাবতে অবাক লাগে, একটি সভ্য দেশে এ ধরনের একটি অনৈতিক ও অমানবিক স্লোগান কেমন করে যানবাহনের গায়ে লেখা যায় এবং কেমন করে তা প্রকাশ্যে ব্যবহৃত হয়! আশ্চর্যজনক এবং একই সঙ্গে দুঃখজনক যে আমাদের সড়কগুলোতে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের মানসিকতাও এই স্লোগানটির অনুরূপ।
তাদের কাছে মানুষের জীবনের যেন কোনো মূল্যই নেই। ভাবখানা এমন যে দুয়েকজন মানুষ মারা গেলে গেল_তাতে এমন কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়! চালকদের কাউকে কাউকে এমন যুক্তিও দিতে শুনেছি, 'রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই, আর তাতে মানুষ মারাও যেতে পারে।' তাদের কথাই ঠিক। দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। প্রতিদিনই পাঁচ-দশটি দুর্ঘটনার খবর থাকছে পত্রিকার পাতায়। প্রথম রোজার দিন নরসিংদীর শিবপুরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ১৬ জন প্রাণ হারালেন। তার কয়দিন আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৪৮ কিশোর শিক্ষার্থীর জীবন গেল। কমবেশি এ রকম শোকাবহ ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। প্রতিটি ঘটনায় সারা দেশের বিবেকবান প্রতিটি হৃদয় কাঁদলেও কাঁদে না শুধু চালকদের বা গাড়ির মালিকদের হৃদয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, বছর দুয়েক আগে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে এক মা ও তাঁর সন্তানের করুণ মৃত্যুর কথা। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন তাঁরা। ঘাতক চালককে ধরে পুলিশে দেওয়া হলেও তার দম্ভ কমেনি। সেই চালক থানায় বসে সাংবাদিকদের কাছে দম্ভ করে বলেছিল, রাস্তায় গাড়ি চালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। আমার মালিকের কাছে খবর গেলে তখনই আমাকে ছাড়িয়ে নেবে। হয়তো ছাড়িয়ে নিয়েছিলও। আমরা তো আর প্রতিটি ঘটনার পেছনে লেগে থাকি না শেষ পর্যন্ত কী হয় তা জানার জন্য।
চালকদের এই মানসিকতা এক দিনে তৈরি হয়নি। অধিকাংশ চালকই কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। রাস্তায় নেমেই কে কার আগে যাবে, কাকে কিভাবে আগে যেতে বাধা দেবে_সেই প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। সাবধানতা অবলম্বনের কোনো প্রয়োজনই নেই তাদের। এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরে অপর হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি চালাতে চালাতে গল্পগুজব করা, এমনকি যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া করার দৃশ্যও নতুন কিছু নয়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, চালকদের অধিকাংশেরই গাড়ি চালানোর মতো যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতাও নেই। অধিকাংশেরই কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। এরা জীবনে কখনো কোনো ড্রাইভিং স্কুলের চৌকাঠও মাড়ায়নি। আরেকজন চালকের কাছ থেকে কোনো রকমে স্টিয়ারিং ধরা শিখেই এরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। আর গাড়ির মালিকরাও খুঁজে খুঁজে এমন চালকদেরই নিয়োগ দেয়। একজন অভিজ্ঞ চালককে নিয়োগ দিতে গেলে একজন মালিককে মাসে বেতন দিতে হয় ১০ হাজার টাকার মতো। আর এ রকম একজন নবিশ চালক মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতনেই পাওয়া যায়। তাহলে ১২ মাসে ৬০ হাজার টাকা বেঁচে যায়। এই চালক যদি রাস্তায় মানুষ মারে, তাতে মালিকের কী? আর অবৈধ লাইসেন্স কিংবা লাইসেন্স না থাকলেই বা কী? কে দেখে তা। আর যদি ট্রাফিক সার্জেন্ট দেখেনওবা, তাহলে কয়েকটা টাকা দিলেই সব ম্যানেজ হয়ে যাবে, আর তা যাবে চালকের পকেট থেকে। আপনারা কেউ কখনো শুনেছেন, অবৈধ বা নকল লাইসেন্সধারী চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে?
দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ
বিশেষজ্ঞদের আলাপ-আলোচনা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অত্যধিক সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, দুর্বল আইন, আইনের প্রয়োগ এবং যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। শাস্তির ভয় না থাকায় গাড়িচালকরা রাস্তায় নিয়ম-কানুনের কোনো পরোয়াই করে না এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে কোনো বিষয় বলেই মনে করে না। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামেই আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ কিশোর ক্রিকেটারের মৃত্যু হয়েছিল। তখনো শোকে কেঁদেছিল চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। কিছুদিন আগে সেই মামলাটির রায় হয়েছে। যে দ্রুতগামী হিউম্যান হলারের ধাক্কায় সেদিন এত তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল, সেই চালকের মাত্র তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তার ওপর সেই চালককে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। হয়তো ভিন্ন কোনো নাম নিয়ে ভিন্ন কোনো জায়গায় সে নতুন করে মানুষ মারার প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে শিক্ষার্থীদের বহন করছিল একটি মিনি ট্রাক। ট্রাকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কারো চোখে তা পড়েনি। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ট্রাকটি যে চালাচ্ছিল, তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। তদুপরি দুর্ঘটনার সময় নবিশ চালকটি মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। এই দৃশ্যটি আমাদের অতি চেনা। ঢাকা শহরে খুব কম গাড়ি পাওয়া যাবে, যার চালক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলে না। রাস্তায় পথচারীরাও বেপরোয়া। রাস্তা পার হতে হঠাৎ করেই গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দেবে। এ সময় সামান্য মনোযোগের অভাবেও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এবং ঘটেও।
বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, অর্ধেকেরও বেশি গাড়ির চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। যেসব চালকের লাইসেন্স আছে, তাদেরও প্রায় ৮০ শতাংশ অনুমোদিত কোনো ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট থেকে চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়নি। রাস্তার নিয়ম-কানুন না জানা এবং গাড়ি ঠিকমতো চালাতে না পারা সত্ত্বেও কেবল অর্থের বিনিময়ে অনেকে লাইসেন্স পেয়ে যায়। এমনকি রাস্তার সংকেতগুলোও এরা ঠিকমতো চেনে না। ফলে এদের হাতে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তুলে দেওয়া, আর মানুষ মারার লাইসেন্স দেওয়া_সমান কথা। তা সত্ত্বেও কিছু অসাধু লোকের কারণে সরকারিভাবেই এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত আছে। আবার রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী গাড়িও অর্থের বিনিময়ে 'ফিটনেস সার্টিফিকেট' পেয়ে যায় এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ১৫ শতাংশই ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। চালকদের নিয়ে তো অনেক কথাই বললাম। কিন্তু যারা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে 'আনফিট' গাড়িকে 'ফিটনেস সার্টিফিকেট' দেয়, অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয়_তাদের নীতি-নৈতিকতা কোন পর্যায়ের? তাদের জন্য এ দেশে কী শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে এবং কবে, কখন তারা সে শাস্তি পেয়েছে?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, আলোচনা, বক্তৃতায় অনেক সুপরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অনুনয়-বিনয় করা হয়েছে, দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সবই যেন উলুবনে মুক্তা ছড়ানো। উন্নতির বদলে সড়ক পরিস্থিতির দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। মৃত্যুর কাফেলা কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। আর যাঁরা মারা না গিয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের দীর্ঘশ্বাস কেবল বাতাসকে ভারীই করছে। কিন্তু চালক, মালিক কিংবা অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিকতার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এরা ক্রমেই বিবেকহীন এক প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে। একটি স্বাধীন ও সভ্য দেশে এ অবস্থা চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি নিজেদের বিবেকবান দাবি করেন, তাহলে এ অবস্থার আশু প্রতিকার করা প্রয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক
চালকদের এই মানসিকতা এক দিনে তৈরি হয়নি। অধিকাংশ চালকই কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। রাস্তায় নেমেই কে কার আগে যাবে, কাকে কিভাবে আগে যেতে বাধা দেবে_সেই প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। সাবধানতা অবলম্বনের কোনো প্রয়োজনই নেই তাদের। এক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরে অপর হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি চালাতে চালাতে গল্পগুজব করা, এমনকি যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া করার দৃশ্যও নতুন কিছু নয়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, চালকদের অধিকাংশেরই গাড়ি চালানোর মতো যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতাও নেই। অধিকাংশেরই কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। এরা জীবনে কখনো কোনো ড্রাইভিং স্কুলের চৌকাঠও মাড়ায়নি। আরেকজন চালকের কাছ থেকে কোনো রকমে স্টিয়ারিং ধরা শিখেই এরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। আর গাড়ির মালিকরাও খুঁজে খুঁজে এমন চালকদেরই নিয়োগ দেয়। একজন অভিজ্ঞ চালককে নিয়োগ দিতে গেলে একজন মালিককে মাসে বেতন দিতে হয় ১০ হাজার টাকার মতো। আর এ রকম একজন নবিশ চালক মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতনেই পাওয়া যায়। তাহলে ১২ মাসে ৬০ হাজার টাকা বেঁচে যায়। এই চালক যদি রাস্তায় মানুষ মারে, তাতে মালিকের কী? আর অবৈধ লাইসেন্স কিংবা লাইসেন্স না থাকলেই বা কী? কে দেখে তা। আর যদি ট্রাফিক সার্জেন্ট দেখেনওবা, তাহলে কয়েকটা টাকা দিলেই সব ম্যানেজ হয়ে যাবে, আর তা যাবে চালকের পকেট থেকে। আপনারা কেউ কখনো শুনেছেন, অবৈধ বা নকল লাইসেন্সধারী চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে?
দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ
বিশেষজ্ঞদের আলাপ-আলোচনা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অত্যধিক সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, দুর্বল আইন, আইনের প্রয়োগ এবং যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। শাস্তির ভয় না থাকায় গাড়িচালকরা রাস্তায় নিয়ম-কানুনের কোনো পরোয়াই করে না এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে কোনো বিষয় বলেই মনে করে না। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামেই আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ কিশোর ক্রিকেটারের মৃত্যু হয়েছিল। তখনো শোকে কেঁদেছিল চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। কিছুদিন আগে সেই মামলাটির রায় হয়েছে। যে দ্রুতগামী হিউম্যান হলারের ধাক্কায় সেদিন এত তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল, সেই চালকের মাত্র তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তার ওপর সেই চালককে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। হয়তো ভিন্ন কোনো নাম নিয়ে ভিন্ন কোনো জায়গায় সে নতুন করে মানুষ মারার প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে শিক্ষার্থীদের বহন করছিল একটি মিনি ট্রাক। ট্রাকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কারো চোখে তা পড়েনি। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ট্রাকটি যে চালাচ্ছিল, তার ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। তদুপরি দুর্ঘটনার সময় নবিশ চালকটি মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। এই দৃশ্যটি আমাদের অতি চেনা। ঢাকা শহরে খুব কম গাড়ি পাওয়া যাবে, যার চালক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলে না। রাস্তায় পথচারীরাও বেপরোয়া। রাস্তা পার হতে হঠাৎ করেই গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দেবে। এ সময় সামান্য মনোযোগের অভাবেও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এবং ঘটেও।
বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, অর্ধেকেরও বেশি গাড়ির চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। যেসব চালকের লাইসেন্স আছে, তাদেরও প্রায় ৮০ শতাংশ অনুমোদিত কোনো ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট থেকে চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়নি। রাস্তার নিয়ম-কানুন না জানা এবং গাড়ি ঠিকমতো চালাতে না পারা সত্ত্বেও কেবল অর্থের বিনিময়ে অনেকে লাইসেন্স পেয়ে যায়। এমনকি রাস্তার সংকেতগুলোও এরা ঠিকমতো চেনে না। ফলে এদের হাতে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তুলে দেওয়া, আর মানুষ মারার লাইসেন্স দেওয়া_সমান কথা। তা সত্ত্বেও কিছু অসাধু লোকের কারণে সরকারিভাবেই এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত আছে। আবার রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী গাড়িও অর্থের বিনিময়ে 'ফিটনেস সার্টিফিকেট' পেয়ে যায় এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ১৫ শতাংশই ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। চালকদের নিয়ে তো অনেক কথাই বললাম। কিন্তু যারা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে 'আনফিট' গাড়িকে 'ফিটনেস সার্টিফিকেট' দেয়, অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয়_তাদের নীতি-নৈতিকতা কোন পর্যায়ের? তাদের জন্য এ দেশে কী শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে এবং কবে, কখন তারা সে শাস্তি পেয়েছে?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন চলছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, আলোচনা, বক্তৃতায় অনেক সুপরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অনুনয়-বিনয় করা হয়েছে, দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সবই যেন উলুবনে মুক্তা ছড়ানো। উন্নতির বদলে সড়ক পরিস্থিতির দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। মৃত্যুর কাফেলা কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। আর যাঁরা মারা না গিয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের দীর্ঘশ্বাস কেবল বাতাসকে ভারীই করছে। কিন্তু চালক, মালিক কিংবা অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিকতার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এরা ক্রমেই বিবেকহীন এক প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে। একটি স্বাধীন ও সভ্য দেশে এ অবস্থা চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি নিজেদের বিবেকবান দাবি করেন, তাহলে এ অবস্থার আশু প্রতিকার করা প্রয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক
No comments