চরাচর-হারিয়ে যাচ্ছে হা-ডু-ডু by আলম শাইন
হা-ডু-ডু দেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। এটি গ্রামবাংলার অতি জনপ্রিয় খেলার মধ্যে একটি। ১৯৭২ সালে এ খেলাকে জাতীয় খেলা হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া হয়। খেলাটি শুধু বাংলাদেশ পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নেই। এটি সাফ গেইমসেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সাফ গেইমসে হা-ডু-ডু খেলার নামকরণ করা হয় 'কাবাডি'। এ খেলার নামকরণেও রয়েছে বেশ মজাদার ব্যাপার-স্যাপার। জানা যায়, 'হাঁটু' শব্দ থেকে হা-ডু-ডু নামের উৎপত্তি। যেহেতু খেলাটি শুরু করতে হয় হাঁটুর ওপর হাতের ভর রেখে, সেহেতু নামকরণটি যথার্থই মনে হয়।
সাফ গেইমসে অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে কাবাডিতে মেয়েরাও অংশগ্রহণ করছেন। সে ক্ষেত্রে মাঠের সামান্য হেরফের করতে হয়। পুরুষদের মাঠ লম্বায় সাড়ে ১২ মিটার আর চওড়ায় ১০ মিটার। অন্যদিকে মেয়েদের ক্ষেত্রে মাঠ লম্বা ১১ মিটার আর চওড়ায় আট মিটার। পার্থক্য শুধু এটুকুই। এ খেলার মাঠের ঠিক মাঝ বরাবর একটি সরল রেখার টান থাকে। এটিকে সীমান্তরেখাও বলা হয়। সীমান্তরেখার গুরুত্ব কাবাডি খেলায় অনেক বেশি। মূলত সীমান্তদাঁড়ি অতিক্রমের মধ্য দিয়ে খেলার পয়েন্ট হিসাব করা হয়। খেলাটির প্রতিদলে মোট ১২ জন খেলোয়াড় থাকেন। তবে একসঙ্গে সাতজন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করতে পারেন, বাকিরা অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে বসে থাকেন। কাবাডি খেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং বাহাদুরি হচ্ছে শ্বাস বা দম আটকে রাখা। যে খেলোয়াড় যত বেশি দম আঁটকে রাখতে পারেন তিনি তত বেশি কেরামতি দেখাতে পারেন অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে স্পর্শ করে নিরাপদে নিজ সীমানায় চলে আসার সুযোগ পান। আসার সময় তিনি যতজনকে স্পর্শ করলেন, তত পয়েন্ট অর্জন করতে সক্ষম হলেন। এই শ্বাস বা দমকে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করেন। অঞ্চলভেদে বোল, ডুগ, কপাটি, টেকটেক ইত্যাদি বলা হয়। যা-ই হোক, খেলাটি একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল এ দেশে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এটি উপমহাদেশব্যাপী জনপ্রিয় ছিল। এখনো যে জনপ্রিয়তা নেই তা কিন্তু নয়। তবে সত্তর-আশির দশকের মতো জনপ্রিয়তা এখন আর নেই, তা স্বীকার করতেই হয়। কারণ আছে অবশ্য। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে বর্তমান সময়ের যুব সম্প্রদায় ক্রিকেট ভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের কাছে এখন কাবাডি প্রাচীন আমলের খেলা। অনেকে খেলাটা খেলতে লজ্জাবোধও করেন। অথচ এটি আমাদের জাতীয় খেলা। শুধু জাতীয় উৎসবগুলোতে এটি এখন খেলা হয়। তাও আবার সরকারি পর্যায়ের লোকজন এর আয়োজন করেন। বলতে দ্বিধা নেই, কাবাডিকে ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন প্রশাসনের লোকজন। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে খেলাটি আজকাল খুব কমই খেলে থাকেন খেলোয়াড়রা। খেলার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সরকার ১৯৯৯ সালে কাবাডিকে আন্তস্কুল প্রতিযেগিতার অন্তর্ভুক্ত করেছে। শুধু তা-ই নয়, এ খেলার অগ্রগতির জন্য ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা 'এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন' গঠন করেন। ১৯৮০ সালে প্রথম কলকাতায় এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে মোটামুটি ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। তবে গ্রামবাংলা পর্যায়ে কাবাডি খেলার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। ধরে রাখতে পারছে না কেউ। এভাবে খেলাটির চর্চা বন্ধ হয়ে গেলে অচিরেই হয়তো আমরা জাতীয় খেলার সর্বনাশ ডেকে আনব। আশা করি, বিষয়টি ভেবে দেখবেন আমাদের খেলোয়াড়রা।
আলম শাইন
আলম শাইন
No comments