বি. রামন-জিংজিয়ানের দূত
চীনের জিংজিয়ান প্রদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইস্টার্ন তুর্কিস্তান বা আইএমইটি; এবং তারা পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। পাকিস্তান পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রের মতে, চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে টেলিফোন করে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ৫ তারিখ জিংজিয়ানের রাজধানী উরুমকিতে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী সামনে রেখে এ ফোন করা হয়েছে। এই ফোনের পর পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মহাপরিচালক লে. জে. আহমেদ সুজা পাশা বেইজিংয়ে গেছেন উরুমকিতে সম্ভাব্য হুমকির উদ্বেগ নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে। উল্লেখ্য, আইএমইটি আল-কায়েদার একটি সহযোগী সংগঠন।
চীনে আইএমইটির হুমকি
ক. ২০০৮ সালের ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাইভেট কনসালট্যান্সি এজেন্সি দাবি করেছে, তারা একটি তিন মিনিটের অলিম্পিক স্পেসিফিক ভিডিও মেসেজ পেয়েছে, যা পাঠিয়েছেন জনৈক সাইফুল্লাহ। তিনি নিজেকে তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টির (টিআইপি) সদস্য বলে দাবি করেছেন। তিনি সেই মেসেজে অলিম্পিকে সহিংসতার হুমকি দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে দাবি করেছেন, ২০০৮ সালের মে মাসে তাঁর সংগঠন সাংহাইয়ে এবং ইউনানের কুনমিংয়ে বাসে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
খ. ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস চ্যানেল এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আইএমইটির প্রচারণাবিষয়ক সংগঠন সইট আল ইসলাম একটি ভিডিও টেপ ছেড়েছে, যার শিরোনাম 'পারসিসট্যান্স অ্যান্ড প্রিপারেশন ফর জিহাদ'। এতে সংগঠনের বর্তমান নেতা শেখ আবুল হক এবং প্রয়াত নেতা হাসান মকদুমের বিবৃতি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য জিহাদ একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বর্তেছে।
গ. একটি ইসলামী ওয়েবসাইটে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টির নেতা হিসেবে উলি্লখিত আবদুল হক আল তুর্কিস্তানির পক্ষে বলা হয়েছে, মুসলমানরা যেন চীনের স্বার্থে আঘাত হানে। চীনাদের হত্যা ও জিম্মি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ইস্টার্ন তুর্কিস্তানের ভাইদের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করা যায়।
প্রকৃত আইএমইটি
এ অঞ্চলে ইসলামী মৌলবাদের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে। স্থানীয় মেয়র একটি মসজিদ তৈরির অনুমতি না দেওয়ায় একদল মুসলমান যুবক পূর্বাঞ্চলীয় শহর নামানগানের কমিউনিস্ট পার্টির সদর দপ্তর দখল করে নেয়। এ প্রতিবাদের আয়োজন করেছিল কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়ে মোল্লা হওয়া ২৪ বছরের যুবক তহির আবদুহালিলোভিচ ইয়ুলদুশেভ এবং সাবেক সোভিয়েত প্যারাট্রুপার জুমাবই আহমেদজানোভিচ খোজায়েভ। এরা পরবর্তী সময়ে ইসলামী রেনেসাঁ পার্টি বা আইআরপির সদস্যে পরিণত হয়। আইআরপি উজবেকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র করার দাবিকে সমর্থন না দেওয়ায় এরা নিজেরাই একটি দল গঠন করে, যার নাম আদোলাত (বিচার) পার্টি। প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভ দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন তারা তাজিকিস্তানে চলে যায়। এরপর খোজায়েভ স্থানীয় যুদ্ধে শরিক হয় এবং ইয়ুলদাশেভ চলে যায় চেচনিয়ার জিহাদে অংশগ্রহণ করতে। এরপর ১৯৯৫ সালে সে পাকিস্তানে চলে আসে এবং পেশোয়ারে জিহাদি সংগঠনগুলো তাকে আশ্রয় দেয়। এখানেই সে আদোলাত পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখে আইএমইউ; এবং পাকিস্তান, সৌদি আরব ও তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পেতে থাকে। ১৯৯৬ সালে ওসামা বিন লাদেন জালালাবাদ থেকে সুদানের রাজধানী খার্তুমে চলে গেলে ইয়ুলদাশেভ সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে ঢোকে। অন্যদিকে তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধ অবসানের পর খোজায়েভ কিছুদিনের জন্য ট্রান্সপোর্ট অপারেটরের কাজ করে। তারপর আফগানিস্তান থেকে হিরোইন পাচারে জড়িয়ে পড়ে বলে শোনা যায়। পরবর্তী সময়ে সেও সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে ঢুকে আইএমইউতে যোগ দেয় এবং একজন নেতায় পরিণত হয়। আইএমইউ হেরোইন পাচার থেকে প্রচুর আয় করতে থাকে। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবান কাবুল দখল করলে একটি প্রেস কনফারেন্স করে তারা আইএমইউয়ের সংস্কার করে। খোজায়েভ হয় দলের আমির এবং ইয়ুলদাশেভ দলের কমান্ডার। ১৯৯৮ সালে আইএমইউ আল-কায়েদার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ফ্রন্টে যোগ দেয়।
৯/১১-এর আগে আইএমইটির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে তালেবানের পতনের পর তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয় উত্তর ওয়াজিরিস্তানে। সেই প্রশিক্ষণ শিবির ঘনিষ্ঠভাবে তৎপর থাকে ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তানের সঙ্গে। আইএমইটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান এবং মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বাধীন আফগান তালেবানের সঙ্গে।
তালেবান ও চেচেনদের মতো ইউঘুরে এখনো আত্মঘাতী বোমা হামলার পথ অবলম্বন করেনি। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে ২২ উইঘুরবাসী আইএমইটি সদস্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গ্রেপ্তার হয়ে গুয়ানতানামো কারাগারে প্রেরিত হয়।
লেখক : ভারতের সাবেক অতিরিক্ত ক্যাবিনেট সচিব
ভারতের আউটলুক থেকে কিয়দংশ ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
চীনে আইএমইটির হুমকি
ক. ২০০৮ সালের ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাইভেট কনসালট্যান্সি এজেন্সি দাবি করেছে, তারা একটি তিন মিনিটের অলিম্পিক স্পেসিফিক ভিডিও মেসেজ পেয়েছে, যা পাঠিয়েছেন জনৈক সাইফুল্লাহ। তিনি নিজেকে তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টির (টিআইপি) সদস্য বলে দাবি করেছেন। তিনি সেই মেসেজে অলিম্পিকে সহিংসতার হুমকি দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে দাবি করেছেন, ২০০৮ সালের মে মাসে তাঁর সংগঠন সাংহাইয়ে এবং ইউনানের কুনমিংয়ে বাসে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
খ. ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস চ্যানেল এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আইএমইটির প্রচারণাবিষয়ক সংগঠন সইট আল ইসলাম একটি ভিডিও টেপ ছেড়েছে, যার শিরোনাম 'পারসিসট্যান্স অ্যান্ড প্রিপারেশন ফর জিহাদ'। এতে সংগঠনের বর্তমান নেতা শেখ আবুল হক এবং প্রয়াত নেতা হাসান মকদুমের বিবৃতি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য জিহাদ একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বর্তেছে।
গ. একটি ইসলামী ওয়েবসাইটে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টির নেতা হিসেবে উলি্লখিত আবদুল হক আল তুর্কিস্তানির পক্ষে বলা হয়েছে, মুসলমানরা যেন চীনের স্বার্থে আঘাত হানে। চীনাদের হত্যা ও জিম্মি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ইস্টার্ন তুর্কিস্তানের ভাইদের বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করা যায়।
প্রকৃত আইএমইটি
এ অঞ্চলে ইসলামী মৌলবাদের প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে। স্থানীয় মেয়র একটি মসজিদ তৈরির অনুমতি না দেওয়ায় একদল মুসলমান যুবক পূর্বাঞ্চলীয় শহর নামানগানের কমিউনিস্ট পার্টির সদর দপ্তর দখল করে নেয়। এ প্রতিবাদের আয়োজন করেছিল কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়ে মোল্লা হওয়া ২৪ বছরের যুবক তহির আবদুহালিলোভিচ ইয়ুলদুশেভ এবং সাবেক সোভিয়েত প্যারাট্রুপার জুমাবই আহমেদজানোভিচ খোজায়েভ। এরা পরবর্তী সময়ে ইসলামী রেনেসাঁ পার্টি বা আইআরপির সদস্যে পরিণত হয়। আইআরপি উজবেকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র করার দাবিকে সমর্থন না দেওয়ায় এরা নিজেরাই একটি দল গঠন করে, যার নাম আদোলাত (বিচার) পার্টি। প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভ দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন তারা তাজিকিস্তানে চলে যায়। এরপর খোজায়েভ স্থানীয় যুদ্ধে শরিক হয় এবং ইয়ুলদাশেভ চলে যায় চেচনিয়ার জিহাদে অংশগ্রহণ করতে। এরপর ১৯৯৫ সালে সে পাকিস্তানে চলে আসে এবং পেশোয়ারে জিহাদি সংগঠনগুলো তাকে আশ্রয় দেয়। এখানেই সে আদোলাত পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখে আইএমইউ; এবং পাকিস্তান, সৌদি আরব ও তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পেতে থাকে। ১৯৯৬ সালে ওসামা বিন লাদেন জালালাবাদ থেকে সুদানের রাজধানী খার্তুমে চলে গেলে ইয়ুলদাশেভ সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে ঢোকে। অন্যদিকে তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধ অবসানের পর খোজায়েভ কিছুদিনের জন্য ট্রান্সপোর্ট অপারেটরের কাজ করে। তারপর আফগানিস্তান থেকে হিরোইন পাচারে জড়িয়ে পড়ে বলে শোনা যায়। পরবর্তী সময়ে সেও সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে ঢুকে আইএমইউতে যোগ দেয় এবং একজন নেতায় পরিণত হয়। আইএমইউ হেরোইন পাচার থেকে প্রচুর আয় করতে থাকে। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবান কাবুল দখল করলে একটি প্রেস কনফারেন্স করে তারা আইএমইউয়ের সংস্কার করে। খোজায়েভ হয় দলের আমির এবং ইয়ুলদাশেভ দলের কমান্ডার। ১৯৯৮ সালে আইএমইউ আল-কায়েদার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ফ্রন্টে যোগ দেয়।
৯/১১-এর আগে আইএমইটির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে তালেবানের পতনের পর তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয় উত্তর ওয়াজিরিস্তানে। সেই প্রশিক্ষণ শিবির ঘনিষ্ঠভাবে তৎপর থাকে ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তানের সঙ্গে। আইএমইটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান এবং মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বাধীন আফগান তালেবানের সঙ্গে।
তালেবান ও চেচেনদের মতো ইউঘুরে এখনো আত্মঘাতী বোমা হামলার পথ অবলম্বন করেনি। ৯/১১-পরবর্তী সময়ে ২২ উইঘুরবাসী আইএমইটি সদস্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গ্রেপ্তার হয়ে গুয়ানতানামো কারাগারে প্রেরিত হয়।
লেখক : ভারতের সাবেক অতিরিক্ত ক্যাবিনেট সচিব
ভারতের আউটলুক থেকে কিয়দংশ ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments