পরিবেশ সূচক-আঞ্চলিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জরুরি

২০১২ সালের পরিবেশগত দায়িত্বশীলতা সূচকে (এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স-ইপিআই) বাংলাদেশ ২০১০ সালের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেও আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ সামান্যই। ১৩৯ থেকে ১১৫ অবস্থানের সংখ্যাগত দূরত্ব বেশি হলেও গুণগত পার্থক্য খুব একটা নেই।


এটা ঠিক, ইয়েল ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের যৌথ প্রযোজনায় প্রকাশিত ওই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত (১২৫) ও পাকিস্তান (১২০) আমাদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে রয়েছে চীনও। কিন্তু এর কারণ দেশগুলোর শিল্পখাতের অগ্রগতি। বাংলাদেশ কি শিল্প ক্ষেত্রে তাদের মতো অগ্রগতি দেখাতে পারছে? আলোচ্য সূচকে নেপাল (৩৮) ও শ্রীলংকার (৫৫) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও মনে রাখতে হবে। দেশ দুটি এগিয়ে যেতে পারলে আমরা পারব না কেন? পরিবেশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা আমাদের জন্য নিছক কোনো সূচকে অবস্থানের বিষয়ও নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে বিপন্ন দেশগুলোর প্রথম সারিতে থাকা বাংলাদেশের শুভ ভবিষ্যৎ পরিবেশ সুরক্ষার গতি-প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত। আমরা আশা করি, এই সূচক দেশে পরিবেশ সুরক্ষামূলক কার্যক্রমে গতি আনবে। একই সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার আঞ্চলিক ব্যবস্থার দিকেও নজর দিতে বলব। আলোচ্য সূচক নির্ধারণে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে বায়ু ও পানি অন্যতম প্রধান। দুর্ভাগ্যবশত এ দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে উজানের দেশগুলোর দূষণ বহন করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি প্রধান নদীধারা_ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মিলনস্থল হওয়ার কারণে সেগুলোর দীর্ঘ গতিপথের দূষণগত প্রভাব বাংলাদেশে এসে পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে যে ধুলো ও ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থ জমা হয়, হিমালয়ের প্রাকৃতিক প্রাচীরের কারণে তাও বাংলাদেশের ওপর এসে জমা হয়। আঞ্চলিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। বৈশ্বিক উদ্যোগও জরুরি। কারণ দেশ বিভক্ত হলেও গ্রহ তো অভিন্ন। এক দেশে পরিবেশ বিনষ্টের প্রভাব অপর দেশে পড়তে বাধ্য। যেসব কারণে আমাদের বায়ু বিষাক্ত হয়ে পড়ছে, তা চিহ্নিত ও মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে ইপিআই সূচক সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

No comments

Powered by Blogger.