সহজ-সরল-অবশ্যই হিগস বোসনের চেয়ে বড় আবিষ্কারক আমরা! by কনকচাঁপা
বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী না হয়েও আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা নীতি ভালোই বুঝি। অনুভবও করি! কিন্তু এত সময় পরে বৈজ্ঞানিকরা সেটা একটু ঝালিয়ে নিতে চাইছেন! আলোর বেগ সর্বোচ্চ ধরে নিয়ে সময়ের ওপর দাঁড়িয়ে যে বিশ্বাস, তা বোধ হয় টলমল পায়ে নড়েচড়ে উঠছে। নিউট্রিনো নামক কণার দ্রুততম চলাফেরায় আপেক্ষিকতার বিশ্বাসে ফাটল ধরছে! আর গত বছরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারের দাবি (মিনমিনে কণ্ঠে) করছে সার্ন নামক ইউরোপের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র। তাঁরা নাকি 'ঈশ্বর কণা'!
আবিষ্কারের পথে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে! হিগস বোসন কণার সম্ভাব্য আবিষ্কারক যুক্তরাষ্ট্রের পিটার হিগস ও ভারতের সত্যেন্দ্রনাথ বোস (তিনি নাকি আসলে বাংলাদেশি) এই ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের অনুমানকারী। এটা ধরতে পারলে মানে আবিষ্কার করতে পারলে পৃথিবীর, সৌরজগতের, সময়ের ও আলোর চলাচলতির, বিগ ব্যাংয়ের রহস্য তো পানিভাত হবে-হবেই, আরো কত কিছু যে জানা যাবে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এই যে গবেষণা কেন্দ্রে যারা গবেষণা করে বিজ্ঞানী হিসেবে এত বড় বড় খেতাব পাচ্ছেন, পাচ্ছেন মানুষের ভালোবাসা- ইতিহাসের খাতায় বা স্বর্ণাক্ষরে নামফলক লেখার মতো গর্বিত ভাবনা- তা কি আমাদের দেশের বড় বড় আবিষ্কারকরা পাচ্ছেন? তাঁরা আবিষ্কার করলেন পয়োবর্জ্যের থিকথিকে লেগুনে মাছ চাষ করলে মোটামুটি অল্প দামে সবার হাতে ঘরে ঘরে মাছ পৌঁছানো যায়! তারা আবিষ্কার করলেন, ফরমালিন দিয়ে পচনশীল মাছকে দিনের পর দিন অবিকল রাখা যায়- তারা আবিষ্কার করলেন ফল নয়, গাছে স্প্রে করেও ফলকে দিনের পর দিন পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়! ইরি চালকে চিকন ছাঁচে ফেলে নাজিরশাইল বানানো যায়, ইটের গুঁড়া মিশিয়ে মরিচের গুঁড়াকে আরো টকটকে লিউকোপিনসমৃদ্ধ করা যায়, তরমুজে রং ইনজেক্ট করে আরো সুন্দর করা যায়। দারুচিনিতে অর্জুনের ছাল মিশাল দেওয়া যায়, পোস্তাদানায় সুজি মেশানো যায়, বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে সাধারণ তেলকে ঝাঁজযুক্ত সরিষার তেল বানানো যায় এবং সে তেল নাকে দিয়ে অন্যের জমিকে অবৈধভাবে কিনে 'বৈধ শান্তিতে' বৈদেশেও ঘুমানো যায়- এগুলো কি বড় কোনো আবিষ্কার নয়? ছোটখাটো হলেও আমাদের জীবনে এ আবিষ্কার তো উপ বা অপকার করেই চলছে। কিডনি ড্যামেজ-ব্রেইন হ্যামারেজ-ক্যান্সার-আলসার কত সুন্দর সুন্দর নামের অসুখ আমরা পাচ্ছি! কী সব যাচ্ছেতাই নামের আমাশয়, অম্ল, পেট খারাপ, বদহজম ইত্যাদি অসুখ হচ্ছিল। এই আবিষ্কারকরাই তো এত মধুর মধুর নামের অসুখ বাংলাদেশে এনে দিলেন। মৃত্যু তো এমনিও হবে, ওমনিও হবে। ডায়রিয়ায় মৃত্যু হলে মৃত্যুও তো লজ্জা পাবে! যাক সর্বকালের সর্বসেরা ও বর্ষসেরা আবিষ্কারক হিসেবে (আর কেউ মর্যাদা দিক বা না দিক) আমি ঘোষণা দিলাম তাঁকে, যিনি দুধ ছাড়াই দুধ বানাচ্ছেন অবিকল দুধের মতো। যা কি না খেতে ও দেখতে অবিকল গরুর খাঁটি দুধের মতো। পাবনা নিবাসী এই ব্যক্তি নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন একটি চ্যানেলের অনুসন্ধিৎসু ক্যামেরার সামনে। সেখানে ছানার পানিই একমাত্র দুধের উত্তরাধিকারী। সেটাকে সম্বল করেই তিনি খাবার সোডা-রং-নুন-চিনি ইত্যাদি দিয়ে অবিকল দুধ বানাচ্ছেন! ভেবে দেখুন, আমাদের দেশে এক ফোঁটা দুধের অভাবে কত শিশু মারা যায় (গত বছর আমরা মহান এক ব্যক্তির কথায় জেনেছি, কোনো মৃত্যুই অকাল মৃত্যু নয়) সেখানে সর্বংসহা এই বাংলাদেশের শিশুরা যদি একটু সহ্য করে এই দুধ নামক 'ভয়ংকর দুধ' হজম করে নেয়, তবে ওই ব্যক্তিটিকে কি 'বাংলাদেশ পদক' দেওয়া যায় না? খাদ্যে আসল-নকল-ভেজাল নজরদারি অধিদপ্তর (যদি থেকে থাকে) কি এই পদকের ব্যাপারে ভেবে দেখবে? এবং পদকটি অবশ্যই মরণোত্তর হবে না- তার জীবদ্দশায়ই তাকে বিশেষভাবে হস্তান্তর করার ব্যাপারেও ভাবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ রইল!
লেখক : সংগীতশিল্পী
লেখক : সংগীতশিল্পী
No comments