চারদিক-পাতাঝরা দিনের বইমেলা
ফেব্রুয়ারি মানেই বইমেলা!—এমন দিন বুঝি শেষ। বই কেনা আর বইমেলায় মানুষের ঢল যেকোনো সময় হতে পারে।
যার প্রমাণ মিলল শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে হেমন্তের বইমেলায়। চতুর্থবারের মতো আয়োজন করা এই মেলা জমে উঠেছে বইপ্রেমীদের পদচারণে।
যার প্রমাণ মিলল শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে হেমন্তের বইমেলায়। চতুর্থবারের মতো আয়োজন করা এই মেলা জমে উঠেছে বইপ্রেমীদের পদচারণে।
চার বছরের ছোট্ট শিশু নাফিজ তিহামী। বইমেলায় এসেছে ছড়ার বই কিনতে। ব্যস্ততা থাকলেও পছন্দের বইগুলো কিনে নিতে সময় করে চলে এসেছেন তার মা-বাবাও। নাফিজের মা নুসরাত জাহান বললেন, ‘আসলে মেলায় এসে বই কিনতে ভালো লাগে। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় সেই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তাই হেমন্তের এই মেলায় এসেছি বেশ কিছু পছন্দের বই কিনে নিতে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ পরাগ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে বইমেলায় এসেছেন। আরিফের মতে, ‘বইমেলায় এলেই মন ভালো হয়ে যায়। তা ছাড়া নতুন বইয়ের গন্ধ খুব ভালো লাগে। আর ঘোরাঘুরি করার জন্যও বেশ নিরাপদ। কারণ এখানে খারাপ মানুষ কম আসে।’
লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন প্রডিজি খুলে নিয়ে তাতে বুঁদ হয়ে আছে সাগর। শেষ দুই পাতা পড়ে ফেলার আগেই তার কাছে গিয়ে বসলাম। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বইটি সে মেলা থেকে কিনে এখানেই পড়ে শেষ করবে। কারণ, পরদিন পরীক্ষা আছে। বাসায় গেলে মা কিছুতেই পরীক্ষার আগে বইটি পড়তে দেবেন না। কথা শুনে অবাক হলাম। বলে কি!
প্রিয় লেখকের বইয়ের তালিকা করে এনেছে দুই বোন অরণি আর শ্রাবণী। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে টাকা নিয়ে। বই কিনে নিজেদের জমানো টাকা শেষ। কিন্তু আরও চারটি বই যে কেনাই হয়নি। অরণি জানায়, ‘আবার একদিন আসতে হবে বলে মনে হচ্ছে। আবার রোজ রোজ বের হওয়া সমস্যা। কারণ, বাসা যে সেই উত্তরায়।’
মেলায় ২০টিরও বেশি স্টলের প্রতিটিতে সারা দিন লোকসমাগম চোখে পড়ার মতো। শাহবাগ বইপড়া সংঘ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশন ও বিক্রেতা সমিতি আয়োজন করেছে হেমন্তের এই বইমেলা। ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে মেলা। তবে সকালের চেয়ে বিকেলে লোক আসে বেশি, জানান বিক্রেতা বিভাস। মেলায় এসে নতুন নতুন অনেক বইয়ের সন্ধান পেয়েছেন ফয়সালের মতো কেউ কেউ। কেউ আবার নিয়ে যাচ্ছেন বইয়ের ক্যাটালগ। বেছে বেছে ভালো বইগুলো কিনে নেবেন সময় করে এসে। আহসান ফারুক তো মেলায় এসেই বোকা বনে গেছেন। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল অল্প কিছু বই থাকবে দোকানগুলোতে। অথচ হলো তার উল্টোটা। যে বইগুলো তাঁর দরকার, তার সবই প্রায় খুঁজে পেয়েছেন মেলায়। কিন্তু বেরসিকের মতো তিনি কি না প্রায় সাত দিন ধরে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছেন নীলক্ষেত থেকে বাংলাবাজার! তাই বলে সুযোগটা হাতছাড়া করেননি ফারুক। ফিল্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের ডজন খানেক বই কিনে ফেলেছেন তিনি। জানালেন, ‘এগুলো পড়তে পড়তে একুশের বইমেলা চলে আসবে। মেলায় এসে বই কেনার মজাই আলাদা। তাই প্রতি ঋতুতেই একটি করে বইমেলা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।’
সজীব তাঁর বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন একবার করে মেলায় ঘুরতে আসেন। সকালে ক্লাস শেষ করে বিকেলটা কাটান বইমেলায়। তা ছাড়া হেমন্তের বইমেলার পাশেই তাঁর প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা চলছে। সেখানে আবার প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক আয়োজন। সব মিলিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যাটা বেশ মজা করেই কাটছে তাঁদের।
মেলায় লোকসমাগম এবং বিক্রিবাট্টা বেশ ভালোই বলে জানান প্রথমা স্টলের বিক্রেতা। নানা বয়সের লোক জড়ো হয় রোজ বইমেলায়। তেমনি একজন সত্তরোর্ধ্ব ভদ্রলোক সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া বেলায়েত হোসেন। নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন কয়েক হাজার বইয়ের এক লাইব্রেরি। তবে সংগ্রহে থাকা বইয়ের প্রায় সবই পড়া শেষ। ফেব্রুয়ারি এলেই নতুন নতুন বই কিনে ফেলেন মেলা থেকে। তবে সেখানের তুলনায় হেমন্তের বইমেলাকে তিনি বেশি পছন্দ করেন। কারণ, এখানে সময় নিয়ে বেছে বেছে বই কিনতে পারেন।
তবে একাদশ শ্রেণীর চার সহপাঠী রমা, শাহেদ, আইরিন ও সুইটির মত ঠিক উল্টো। তাদের মতে, মেলা মানেই বড় পরিসর আর লোকের ভিড়ে পা ফেলা ভার। চারদিকে ধুলা আর বাঁশির প্যাঁ পোঁ শব্দ। মানুষের ভেতর দিয়ে বিলি কেটে নতুন বইটি হাতে নেওয়া। তাই পরিসর আরও বাড়ানো যেতে পারে।
কথায় কথায় আর ঘোরাঘুরিতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে মেলার সময়। কিন্তু তখনো বইপ্রেমী পাঠকে ভরে আছে গ্রন্থাগার চত্বর।
ইমাম হাসান
লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন প্রডিজি খুলে নিয়ে তাতে বুঁদ হয়ে আছে সাগর। শেষ দুই পাতা পড়ে ফেলার আগেই তার কাছে গিয়ে বসলাম। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বইটি সে মেলা থেকে কিনে এখানেই পড়ে শেষ করবে। কারণ, পরদিন পরীক্ষা আছে। বাসায় গেলে মা কিছুতেই পরীক্ষার আগে বইটি পড়তে দেবেন না। কথা শুনে অবাক হলাম। বলে কি!
প্রিয় লেখকের বইয়ের তালিকা করে এনেছে দুই বোন অরণি আর শ্রাবণী। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে টাকা নিয়ে। বই কিনে নিজেদের জমানো টাকা শেষ। কিন্তু আরও চারটি বই যে কেনাই হয়নি। অরণি জানায়, ‘আবার একদিন আসতে হবে বলে মনে হচ্ছে। আবার রোজ রোজ বের হওয়া সমস্যা। কারণ, বাসা যে সেই উত্তরায়।’
মেলায় ২০টিরও বেশি স্টলের প্রতিটিতে সারা দিন লোকসমাগম চোখে পড়ার মতো। শাহবাগ বইপড়া সংঘ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশন ও বিক্রেতা সমিতি আয়োজন করেছে হেমন্তের এই বইমেলা। ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে মেলা। তবে সকালের চেয়ে বিকেলে লোক আসে বেশি, জানান বিক্রেতা বিভাস। মেলায় এসে নতুন নতুন অনেক বইয়ের সন্ধান পেয়েছেন ফয়সালের মতো কেউ কেউ। কেউ আবার নিয়ে যাচ্ছেন বইয়ের ক্যাটালগ। বেছে বেছে ভালো বইগুলো কিনে নেবেন সময় করে এসে। আহসান ফারুক তো মেলায় এসেই বোকা বনে গেছেন। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল অল্প কিছু বই থাকবে দোকানগুলোতে। অথচ হলো তার উল্টোটা। যে বইগুলো তাঁর দরকার, তার সবই প্রায় খুঁজে পেয়েছেন মেলায়। কিন্তু বেরসিকের মতো তিনি কি না প্রায় সাত দিন ধরে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছেন নীলক্ষেত থেকে বাংলাবাজার! তাই বলে সুযোগটা হাতছাড়া করেননি ফারুক। ফিল্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের ডজন খানেক বই কিনে ফেলেছেন তিনি। জানালেন, ‘এগুলো পড়তে পড়তে একুশের বইমেলা চলে আসবে। মেলায় এসে বই কেনার মজাই আলাদা। তাই প্রতি ঋতুতেই একটি করে বইমেলা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।’
সজীব তাঁর বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন একবার করে মেলায় ঘুরতে আসেন। সকালে ক্লাস শেষ করে বিকেলটা কাটান বইমেলায়। তা ছাড়া হেমন্তের বইমেলার পাশেই তাঁর প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা চলছে। সেখানে আবার প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক আয়োজন। সব মিলিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যাটা বেশ মজা করেই কাটছে তাঁদের।
মেলায় লোকসমাগম এবং বিক্রিবাট্টা বেশ ভালোই বলে জানান প্রথমা স্টলের বিক্রেতা। নানা বয়সের লোক জড়ো হয় রোজ বইমেলায়। তেমনি একজন সত্তরোর্ধ্ব ভদ্রলোক সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া বেলায়েত হোসেন। নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন কয়েক হাজার বইয়ের এক লাইব্রেরি। তবে সংগ্রহে থাকা বইয়ের প্রায় সবই পড়া শেষ। ফেব্রুয়ারি এলেই নতুন নতুন বই কিনে ফেলেন মেলা থেকে। তবে সেখানের তুলনায় হেমন্তের বইমেলাকে তিনি বেশি পছন্দ করেন। কারণ, এখানে সময় নিয়ে বেছে বেছে বই কিনতে পারেন।
তবে একাদশ শ্রেণীর চার সহপাঠী রমা, শাহেদ, আইরিন ও সুইটির মত ঠিক উল্টো। তাদের মতে, মেলা মানেই বড় পরিসর আর লোকের ভিড়ে পা ফেলা ভার। চারদিকে ধুলা আর বাঁশির প্যাঁ পোঁ শব্দ। মানুষের ভেতর দিয়ে বিলি কেটে নতুন বইটি হাতে নেওয়া। তাই পরিসর আরও বাড়ানো যেতে পারে।
কথায় কথায় আর ঘোরাঘুরিতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে মেলার সময়। কিন্তু তখনো বইপ্রেমী পাঠকে ভরে আছে গ্রন্থাগার চত্বর।
ইমাম হাসান
No comments