জুম্মদের অগ্রদূত by এস চাঙমা সত্যজিৎ
১৯৩৯ সালের এই দিনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্ম। আজ ৭২তম জন্মদিবস মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা)। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার সংগ্রামের প্রবক্তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতিসত্তাদের অগ্রদূত। সবার কাছে তিনি এমএন লারমা নামে পরিচিত।
তার ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্মস্থান রাঙামাটির মহাপ্রুম গ্রামে। মহাপ্রুম গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়া শুরু। এমএন লারমার পিতা মহাপ্রুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তীক্ষষ্ট বুদ্ধি ও দূরদর্শিতার ফলে তিনি ১৯৫৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে 'পাহাড়ি ছাত্র সমিতি' গঠন করেন। এই সমিতির পুরোধা ছিলেন এমএন লারমা। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য 'কাপ্তাই বাঁধ' আরম্ভ করলে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম দশ ভাষাভাষী ১৩টি জাতিসত্তার পক্ষে পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। এ প্রতিবাদের কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে তাকে গ্রেফতার করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত করা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র সমিতি ও পূর্ব পাকিস্তানের বাম ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে সরকার এমএন লারমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। জেলে আটক থাকা অবস্থায় তিনি বিএ পাস করেন। পরে এলএলবি পাসও করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে আইন পেশায় নিয়োজিত হয়ে চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানেও তিনি শিক্ষকতা করে কৃতিত্বের সঙ্গে সুনাম অর্জন করেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ভাষার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চল থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র রাঙামাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে 'ট্রাইবাল মুক্তি ফোর্স' নামে একটি বাহিনী গঠন করে রাঙামাটি শাহ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির সভাপতি ছিলেন বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা (এমএলএ) ও সাধারণ সম্পাদক হন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এমএন লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতিসত্তাদের পক্ষ হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে 'বাঙালিত্ব' প্রতিবাদে মুখর হন। তিনি তখন সংসদে বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তার বাঙালি হতে পারি না। একজন বাঙালি যেমন চাঙমা হতে পারে না, তেমনি একজন চাঙমা ত্রিপুরা, মারমা ও বাঙালি হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পটপরিবর্তন ঘটে ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৭ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দু'দলে বিভক্ত হলে জুম্ম জাতীয়তাবাদী দলে (বাত্ত্যা গ্রুপ) সশস্ত্র দলের আক্রমণে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর তার বড় শুভেন্দু প্রভাস লারমাসহ (বুলু) আটজন নেতাসহ শহীদ হন। ক্ষণজন্মা এ বীর পুরুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তা মানুষের হৃদয়ে চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্মস্থান রাঙামাটির মহাপ্রুম গ্রামে। মহাপ্রুম গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়া শুরু। এমএন লারমার পিতা মহাপ্রুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তীক্ষষ্ট বুদ্ধি ও দূরদর্শিতার ফলে তিনি ১৯৫৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে 'পাহাড়ি ছাত্র সমিতি' গঠন করেন। এই সমিতির পুরোধা ছিলেন এমএন লারমা। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য 'কাপ্তাই বাঁধ' আরম্ভ করলে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম দশ ভাষাভাষী ১৩টি জাতিসত্তার পক্ষে পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। এ প্রতিবাদের কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে তাকে গ্রেফতার করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত করা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র সমিতি ও পূর্ব পাকিস্তানের বাম ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে সরকার এমএন লারমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। জেলে আটক থাকা অবস্থায় তিনি বিএ পাস করেন। পরে এলএলবি পাসও করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে আইন পেশায় নিয়োজিত হয়ে চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানেও তিনি শিক্ষকতা করে কৃতিত্বের সঙ্গে সুনাম অর্জন করেন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ভাষার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চল থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র রাঙামাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে 'ট্রাইবাল মুক্তি ফোর্স' নামে একটি বাহিনী গঠন করে রাঙামাটি শাহ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির সভাপতি ছিলেন বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা (এমএলএ) ও সাধারণ সম্পাদক হন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এমএন লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতিসত্তাদের পক্ষ হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে 'বাঙালিত্ব' প্রতিবাদে মুখর হন। তিনি তখন সংসদে বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তার বাঙালি হতে পারি না। একজন বাঙালি যেমন চাঙমা হতে পারে না, তেমনি একজন চাঙমা ত্রিপুরা, মারমা ও বাঙালি হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পটপরিবর্তন ঘটে ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৭ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দু'দলে বিভক্ত হলে জুম্ম জাতীয়তাবাদী দলে (বাত্ত্যা গ্রুপ) সশস্ত্র দলের আক্রমণে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর তার বড় শুভেন্দু প্রভাস লারমাসহ (বুলু) আটজন নেতাসহ শহীদ হন। ক্ষণজন্মা এ বীর পুরুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তা মানুষের হৃদয়ে চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।
No comments