ট্রানজিট :সুয়েজ ও পানামা খালে টোল ভালোই আদায় হয়-সমসময় by আতাউস সামাদ

১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কোল কন্ট্রোলার (ঈড়ধষ ঈড়হঃৎড়ষষবৎ) ভারতের কাছ থেকে কয়লা কিনতে গিয়ে জ্বালানিটির দাম ঠিক করার যে এক ফর্মুলা দেখেছিলেন, তা অন্তত তার কাছে অভূতপূর্ব হওয়ায় তিনি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। সেই কাহিনী সমকাল পত্রিকার এই 'সমসময়' কলামে লিখেছিলাম।


ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল যে, অস্ট্রেলিয়া বা পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ কয়লা আমদানি করলে তার জন্য পরিবহন খরচ যা হতো, ভারত থেকে কয়লা পরিবহন খরচ তার চেয়ে অনেক কম পড়বে। কারণ ভারতের খনি বা সরবরাহ ডিপো আর বাংলাদেশের গন্তব্যস্থলের মধ্যে দূরত্ব ওই দুই দেশের যে কোনোটির সঙ্গে দূরত্বের চেয়ে অনেক কম। এই যুক্তিটি দেখিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করেছিল, ভারত থেকে কয়লা কেনার ফলে ভৌগোলিক নৈকট্যের দরুন পরিবহন বাবদ বাংলাদেশের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তার অর্ধেক কয়লার দামের সঙ্গে যোগ করা হোক। এতে ভারত কিছু পাবে, বাংলাদেশেরও ক্ষতি হবে না। লিখেছিলাম, যতদূর মনে পড়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই ফর্মুলার নাম দিয়েছিল 'ঝযধৎরহম ঃযব ঢ়ৎড়ীরসরঃু নবহবভরঃ' (নৈকট্যের সুবিধা ভাগ করে নেওয়া) বা তেমন কিছু। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সেইবার কী রফা হয়েছিল এখন ঠিক করে বলতে পারব না। তবে এটুকু মনে আছে যে, এই চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছু বেশি দিতে হয়েছিল ভারতকে।
কাহিনীটির অবতারণা করেছিলাম বাংলাদেশের ট্রানজিট নীতি প্রসঙ্গে। এখন দেখছি আমাদের দেশের ব্যবসায়ী মহলের কোনো কোনো অংশ এবং দু'চারজন সরকারি কর্মকর্তাও ওই একই ধরনের চিন্তা থেকে বলছেন যে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পণ্য পরিবহন হলে ভাড়া বাবদ ভারতীয়দের অনেক সাশ্রয় হবে। তার কারণ, বাংলাদেশের দেওয়া করিডোর অথবা তাদের ভাষায় ট্রানজিট পথ দিয়ে অনেক কম দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় পণ্য সে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই দেশেরই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে (ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ড) পেঁৗছে যাবে। বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এ ক্ষেত্রে ভারতের উচিত হবে ওইভাবে দূরত্ব হ্রাস পাওয়ায় পরিবহন ব্যয়ের সাশ্রয় হওয়া অর্থের একটা অংশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।
তবে এই প্রস্তাবে খুশি নন বাংলাদেশেরই কেউ কেউ। এমন নাখোশ একজন মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা, বহুদিনের প্রবাসী তবে এখন ঢাকা নিবাসী ড. গওহর রিজভী। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় পড়লাম (মনে হলো কোনো একটি টেলিভিশন চ্যানেলেও দেখলাম), গত সোমবার তিনি ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতকে ট্রানজিট (মতান্তরে করিডোর) সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে ওই প্রক্রিয়ায় অর্জিত তাদের ব্যয় সাশ্রয়ের একটা অংশ বাংলাদেশের দাবি করা ঠিক হবে না। এ রকম দাবি যুক্তিযুক্ত নয় বলেও তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা খববের কাগজে পড়লাম। এ রকম প্রস্তাব সম্পর্কে ড. গওহর রিজভী বলেন, সুয়েজ খাল তৈরি হওয়ার ফলে বহু জাহাজকে এখন কেপ অব গুড হোপ হয়ে আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে চলাচল করতে হয় না। তার বদলে এগুলো সুয়েজ খাল দিয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে আফ্রিকার উত্তর দিয়েই যেতে পারে। এই পথে দূরত্ব অনেক কম। মালবাহী জাহাজগুলোর অনেক খরচ সাশ্রয় হচ্ছে এর ফলে। কিন্তু তাই বলে কি এসব জাহাজ তাদের ওই লাভের অংশ মিসরকে দিয়ে দিচ্ছে? না, তা তো নয়!
তবে বাস্তব অবস্থা বা ব্যবস্থা ড. গওহর রিজভী যেমনটা বোঝাতে চাইছেন আদৌ তেমন নয়। কারণ কোনো জাহাজই বিনা ব্যয়ে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে পারে না। মালবাহী জাহাজ তো নয়ই। উইকিপিডিয়া সূত্রে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি তথ্য জানতে পারলাম। আজ পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে সুয়েজ খালের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মিসরের সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের (ঝঁবু ঈধহধষ অঁঃযড়ৎরঃু) হাতে। এই কর্তৃপক্ষ সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী প্রতিটি জাহাজের কাছ থেকে টোল (ঃড়ষষ) বা মাসুল আদায় করে থাকে। এই টোল হিসাব করার পদ্ধতি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। সেই ব্যাখ্যা সুয়েজ ক্যানেল অথরিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। যারা জাহাজের ব্যবসা করেন তারা ওই হিসাব সহজেই বুঝতে পারেন। উইকিপিডিয়ায় আরও দেখলাম যে, ২০০৮ সালে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে একুশ হাজার জাহাজের কাছ থেকে ৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (অর্থাৎ ৫৮৩ কোটি মার্কিন ডলার) টোল সংগ্রহ করেছে। ওই বছর বিশ্বের সব পণ্যবাহী জাহাজের শতকরা সাড়ে সাত ভাগ সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করেছে। তার মানে হচ্ছে, ১২০ দশমিক ১১ মাইল (১৬৪ কিলোমিটার) দীর্ঘ সুয়েজ খাল বিশ্বের অনেকের কাছেই প্রয়োজনীয় এবং তারা লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযোগকারী এই খাল ব্যবহার করার জন্য টোল দিতে প্রস্তুত। তারা দিচ্ছেও। আর সুয়েজ খাল থেকে এই আয় মিসরের জাতীয় আয়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে উল্লেখ করা যায়, ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সুয়েজ খালের কর্তৃত্ব মিসরের হাতে ছিল না। তা ছিল একটি ইঙ্গ-ফরাসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত তথাকথিত এক আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে। কিন্তু ওই বছর প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তারপর ব্রিটেন ঘোষণা করে যে, তারা মিসরের আসোয়ান বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য তারা দেবে না। মিসরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসের তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তুলছিলেন বিধায় ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র বিরূপ হয়ে ওই কৌশল নিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নাসের তখন মিসরের সীমান্তের ভেতরে তৈরি করা সুয়েজ খালটি জাতীয়করণ করেন এই বলে যে, সুয়েজ খালের আয় দিয়েই তিনি নীল নদের মুখে আসোয়ান বাঁধ প্রকল্প নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করবেন। এরপর ব্রিটেন, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য পাঠিয়ে সুয়েজ খাল দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্বমত তাদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় তারা সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। তারপর থেকে সুয়েজ খাল মিসরের জাতীয় সম্পদ হিসেবে রয়েছে এবং মিসরের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। তাহলে বাংলাদেশ তার ভূমির ওপর দিয়ে ভারতকে করিডোর (মতান্তরে ট্রানজিট) দিলে তার পরিবর্তে মাশুল এবং অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করবে না কেন? কেন বাংলাদেশ পণ্য পরিবহনের সুবিধা প্রদানকে, তার মাধ্যমে এবং যে দেশ বা যাকেই দেওয়া হোক না কেন, জাতীয় আয়ের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য হারে সংযোজনের জন্য ব্যবহার করবে না। সে রকমভাবে ব্যবহার করলে তা বাংলাদেশের অসভ্যতা বা এ দেশের অযৌক্তিক ও অন্যায় আচরণ বলে বিবেচিত হবে কেন? আমাদের দেশের সরকারে উচ্চপদে অবস্থানকারী কিছু সম্মানিত ব্যক্তি যদি আমাদের 'লজ্জিত' হতে বা তাদের নজরে 'অন্যায় আচরণ' হতে বিরত থাকতে বলে চলেন এখনও, তাহলে তার উত্তরে এবার আমাদেরও শিরদাঁড়া সোজা করে উত্তর দিতে হবে, 'আপনাদের কথা মানি না, স্যার! কারণ, আপনারা যা করছেন তা ভুল। দয়া করে আমাদের আর ভুল বোঝাবার চেষ্টা করবেন না।'
এ প্রসঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযোগকারী বিশ্বের অপর বিখ্যাত জলপথ প্রায় ৪৮ মাইল দীর্ঘ পানামা খালের কথাও উল্লেখ করি। সুয়েজ খালের চেয়েও অনেক কঠিন ছিল পানামা খাল নির্মাণ করার কাজ। সুয়েজ খাল তৈরি করার সময় পরিশ্রম ও অসুখে বহু শ্রমিক মারা যান। পানামা খালেরও সে রকম অশ্রুসিক্ত ইতিহাস আছে। প্রথমে ফরাসিরা পানামা খাল তৈরির কাজে হাত দেয়। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেনি। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসে। পানামা দেশটিকে কলম্বিয়ার অধীনতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল নির্মাণের দায়িত্ব ও এর নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নেয়। পানামা স্বাধীন দেশ বলে পরিচিত হলেও পানামা খাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। সেই ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পানামা খাল এলাকায় মার্কিন সৈন্যরা নিয়োজিত ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও পানামার প্রেসিডেন্ট টোরিনোসের মধ্যে এক চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে মার্কিন সৈন্যরা পানামা খালের কর্তৃত্ব পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। আমার আজও মনে পড়ে, মার্কিন সৈন্যরা পানামা খাল ছেড়ে যাওয়ার পর বহু পানামাবাসী মন্তব্য করেছিলেন, 'এবার আমরা প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম।' বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্নম্ন রাখার কর্তব্যের কথা অহরহ মনে করতে হচ্ছে।
পানামা খাল দিয়ে বহু জাহাজ চলাচল করে। ২০০৮ সালে পানামা খাল পারাপার করেছে ১৪ হাজার ৭০২টি জাহাজ। পানামা খাল ব্যবহারকারী জাহাজ এ জন্য টোল দেয়। ২০০৯ সালে টোল বাবদ পানামা খাল থেকে সে দেশের আয় হয়েছে প্রায় দুই বিলিয়ন (দুইশ' কোটি) মার্কিন ডলার। খাল এলাকায় কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। আধুনিক দুনিয়ার একটি প্রকৌশল বিস্ময় হিসেবে পরিচিত এবং সুয়েজ খালের মতোই বিশ্বে নৌচলাচল ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেওয়া পানামা খাল দেখতে বহু পর্যটক যান সারা বছর। সবকিছু মিলিয়ে পানামা খাল প্রকল্প থেকে যা আয় হয় তাকে বিভিন্ন রিপোর্টে 'পানামার জাতীয় আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব, যদি এবং যখন আমরা বাংলাদেশের জলপথ, রেলপথ ও সড়কপথকে ট্রানজিট বা করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেব, সেই সময় আমরাও ন্যায়সঙ্গতভাবে সেসব সুবিধা প্রদান হতে আমাদের জাতীয় আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকবে এমন পরিমাণ আয় হতে হবে বলে দাবি করতে পারি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো নাফটা (ঘড়ৎঃয অসবৎরপধহ ঋৎবব ঞৎধফব অমৎববসবহঃ) নামক চুক্তি করে চলাচল, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ক্ষেত্রে উদারীকরণ করে অনেক উপকার পেয়েছে। হধভঃধহড়.িড়ৎম ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, ১৯৯৪ সালে নাফটা চুক্তি হওয়ার পর থেকে ওই চুক্তির তিন সদস্য দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য বেড়েছে তিনগুণ এবং ২০০৮ সালে ওই বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ওই তিন দেশের মধ্যে আজকাল প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য বিনিময় হয়। কী প্রক্রিয়ায় তারা এ রকম ঈর্ষণীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ করেছে আমরা সে তথ্য সংগ্রহ করে ও বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি, আমরা বাস্তবে তেমন কিছু করতে পারি কি-না। তবে তা না করেও বলা চলে যে, নাফটা দেশগুলোতে বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেসব নীতি অনুসৃত হচ্ছে, আমাদের দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশটিতে তা হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার বৃহৎ প্রতিবেশীকে করিডোর বা ট্রানজিট দিয়ে ওই ধাঁচের বা তুলনার যোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে ফেলবে_ এটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। তাহলে আসুন সবাই মিলে খোঁজ করি যুক্তিগ্রাহ্য এবং ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত পন্থা কী।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সে রকম কিছু অনুসন্ধান করে দেখছেন কি? তা তো মনে হয় না! কারণ, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে মনমোহন সিং ও শেখ হাসিনার যৌথ বিবৃতিতে দেখলাম, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ভারতে পণ্য চলাচলের উদ্দেশ্যে জলপথ, রেলপথ ও সড়ক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা অতি সত্বর সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। অতএব, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের করিডোর (ভাবান্তরে ট্রানজিট) প্রদান এখন একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরিণত বিষয়। বাকি বিশ্বে কোথায় কী ঘটছে সে খবর নেওয়ার প্রয়োজন বর্তমান সরকারি মহল অনুভব করছে কি-না আমাদের জানা নেই। সে খবর তো এমনকি আমাদের মহান জাতীয় সংসদকে জানানোর তোয়াক্কাও করছে না সরকার।
দুই প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে বলবৎ হয়ে যাওয়া 'উন্নয়নের জন্য কাঠামো চুক্তি'তেও সব ধরনের ট্রানজিট চালু করার জোর তাগিদ আছে। অনাদিকাল পর্যন্ত চালু রাখার ব্যবস্থা সংবলিত অদ্ভুত এই চুক্তিটিতে ভারত-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সহযোগিতার একটি শর্ত প্রায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে এবং কিছুটা চুপিসারে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি খুবই শঙ্কিত বোধ করছি, আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী তার হাতে পাওয়া এই সুবিধাটি জানি অস্ত্র হিসেবে কখন ব্যবহার করতে উদ্যত হয়! এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার আগে বর্তমান সরকার বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণ এবং জাতীয় সংসদকে এ সম্পর্কে কিছুই জানাননি বা আস্থায় নেননি। কাজটা খারাপ হয়েছে। চুক্তিটি মানার কোনো দায় দেশবাসীর নেই।

আতাউস সামাদ :সাংবাদিক ও কলাম লেখক
 

No comments

Powered by Blogger.