বহে কাল নিরবধি-বিড়ম্বিত পেনশনজীবীরা সমাজের এক উপেক্ষিত শ্রেণী by এম আবদুল হাফিজ
আমার লেখালেখির শুরুর দিকে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে 'An everygrowing Social Under Class' শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখে বন্ধু ও পরিচিত মহলের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম এবং অন্তত মাসখানেক টেলিফোনে অম্ল-মধুর অভিনন্দন এসেছিল। নিবন্ধটি ছিল পেনশনার বা পেনশনজীবীদের দৈন্য এবং প্রাত্যহিক জীবনের টানাপড়েনকে ঘিরে।
বিগত সিকি শতাব্দী ধরে বাংলা বা ইংরেজিতে যা কিছু লিখেছি এবং সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে পরিশ্রম করেছি, তা আজ পণ্ডশ্রম মনে হয়। কেননা একনজর দেখার পর আর ওই লেখাগুলো সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করিনি। তাই এখন ওই লেখাগুলো আর খুঁজে পাই না। খুঁজে পাই না পেনশনজীবীদের বিড়ম্বনাকে উপজীব্য করে 'নন্দিত' ওই লেখাটিও। তবে এটুকু মনে আছে যে সামান্য অর্থের বিনিময়ে একজন মানুষের জীবনকে আগাম বিক্রি করে দেওয়ার অসহায়ত্বের কথা তাতে উঠে এসেছিল।
জীবন নিজেই একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার মধ্যে আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি। যেকোনো পেশায় চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের রীতি প্রচলিত আছে। অতঃপর তাঁর জীবনধারণের একমাত্র নির্ভরতা সরকার প্রদত্ত অবসর-ভাতার ওপর। বলাবাহুল্য, এই ভাতাটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য একটি স্থির আয়। কিন্তু আমরা জীবনের যেসব বিষয় নিয়ে পরিবেষ্টিত তার কোনোটাই স্থির নয়। এমনকি পেনশনারকে প্রদত্ত অর্থের মানটিও স্থির নয়। মুদ্রাস্ফীতির দাপটে কোনো একসময় দেখা যাবে যে এর কোনো মূল্যই নেই। অথচ জীবনের চাহিদা কিন্তু প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে দায়দায়িত্ব। আরো অনেকেই ক্রমে তাঁর আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সন্তান-সন্ততির লেখাপড়া, তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও বিবাহ-পার্বণ ইত্যাদি নিয়ে এক অসহায় পেনশনার জীবনযুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই পর্যুদস্ত।
তাই পেনশনারকে তাঁর বিগত জীবনের সঙ্গে নূ্যনতম সংগতি রাখতে কিছু না কিছু করতেই হয়, যাতে সামান্য হলেও কিছু বাড়তি আয়ের সংস্থান হয়। এমনিতেই সরকারি বা বেসরকারি চাকরির যে মহার্ঘতা এবং চাকরিপ্রত্যাশীদের যে ক্রমবর্ধমান স্ফীতি, তাতে একজন পেনশনারের জন্য যেকোনো মানের চাকরি সোনার হরিণ। এরই মধ্যে আবার অনেককেই তাঁদের 'কানেকশনে'র জোরে মোটা বেতনের বেসরকারি চাকরি করতে দেখেছি। কিন্তু যাদের কানেকশন নেই বা চাটুকারিত্বের 'গুণ'ও নেই, তাদের বেহাল অবস্থা। সম্ভবত সেই শ্রেণীকে উদ্দেশ করেই জীবনানন্দ দাশের এই পঙ্ক্তিমালা :
"ব্যবসার মারপ্যাঁচ বোঝে না সে
'শেয়ার মার্কেটে নামলে কেমন হয়' জিজ্ঞেস করলে আমাকে
হায়, আমাকে!
'লাইফ ইনস্যুরেন্সের এজেন্সি নিলে হয় না' শুধায়
লটারির টিকিট কিনলে কেমন হয়?"
এমনই সব বিভ্রান্ত অনুসন্ধান জীবনের হিসাবে অঙ্ক মেলাতে অক্ষম এক পেনশনারের। চাকরি জীবনের আর্থিক সঞ্চয় খুব একটা না থাকলেও মান-মর্যাদার সঞ্চয় হয়েছে ঢের। সেটা রক্ষা করাও বিপত্তি। শরীরে না চাইলেও রিকশা বা বাসে চড়তেও রাজি, কিন্তু অফিসে একসময়ের বড় সাহেবের তো তা মানাবে না। তাই পুরনো বা রিকন্ডিশন্ড একটি মোটর গাড়ি ছাড়া চলে কী করে? এবারও বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছি। সেখানে তো আর পাবলিক বাহনে যাওয়া যায় না! যাওয়া যায় না লক্কড়-ঝক্কড় কোনো প্রাইভেট কারেও। যদি সে 'কার' হাজার মানুষের ভিড়ে কোনো অঘটন ঘটিয়েই ফেলে, লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না?
তা ছাড়া সাধ্য না থাকলেও তো আর সাধের ঘুড়ি ওড়াতে নিষেধ নেই। এই স্থির আয়ের নিম্নবিত্তদেরও অবসর বয়সে আদরযত্নের অনেক প্রত্যাশী আছে। আছে তাদের হাজারো বায়না যা পেনশনের অর্থ দিয়ে মেটানো যায় না। তাই রূপসী বাংলার কবি সৃষ্ট এক অক্ষম পেনশনারের নানা খেদোক্তি এবং এক অন্তহীন অক্ষমতা ও অসহায়ত্ব।
অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পরই লেখালেখিতে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম_যতটা না রোজগারের পথ খুঁজতে, তার চেয়ে তা অধিক ছিল জমে থাকা অনেক কথা বলতে পারার তাগিদে। চাকরিকালীন বিধিনিষেধের গণ্ডির মধ্যে থেকে জীবন ও সমাজ নিয়ে যা বলা সম্ভব ছিল না, তারই কিঞ্চিত প্রকাশ ঘটাতে। যেহেতু সদ্য অবসর গ্রহণ করেছি, সে সময়ই বুঝেছিলাম ভালো হোক, মন্দ হোক চাকরিকালীন জীবনযাত্রার একটি ছকের মধ্যে আবদ্ধ ছিলাম। বাইরে এসে দেখলাম, জীবন আরো কত কঠিন_শুধু আর্থসামাজিকভাবেই নয়, নতুন একটি সংগ্রামের ক্ষেত্র দর্শনেও। তাই নিজের এবং সমগ্র পারিপার্শ্বিক নিয়ে একটি নতুন বোধোদয় না হয়ে পারেনি। 'An everygrowing social under class' সে সময়ের লেখা। অসামান্য কিছুই নয়। কিন্তু বোধোদয়ে মিল থাকায় অনেকেই হয়তো তাদের অনুভূতির প্রতিধ্বনি শুনে থাকবেন লেখাটির মধ্যে।
অবসর জীবনের সমস্যা বহুমাত্রিক। এ পর্যায়ে পেঁৗছে একজনের মূল্যায়ন ভিন্ন। তাঁকে আবার নতুন করে সামাজিক সম্পর্কের সমীকরণগুলো কষতে হয়। পদমর্যাদার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যিনি চমৎকৃত হন, তিনিই আবার পদমর্যাদার সঙ্গে (অব.) এর সংযোজনে নিরুৎসাহী হন। বিচিত্র নয় কি? কী চাকরিতে, কী অবসরে আমি তো এমন করে নিক্তিতে ওজন হতে চাইনি। তবু তা-ই হতে হয়। আমি যত বড় সক্রেটিস বা এরিস্টটল হই না কেন, আমাকে বিকিয়ে যেতে হয় টাকা-আনা-পাইয়ের হিসাবে। অবসর জীবনের এটিই বাস্তবতা।
সমস্যা হয় উৎসব-পার্বণে। অবশ্য পেনশনজীবীদেরও স্বগোত্রীয় আছে নিম্নবিত্তদের মধ্যে। যা-ই করা হোক, যেমনভাবেই করা হোক, তাঁদের আয়ও সম্প্রসারণের উপায় নেই। যখন উৎসবের ডঙ্কা বাজে মগজের মধ্যে অভিনব নতুন চিন্তার উদ্দাম হয়, যা অবশ্যই উৎসবকে উপভোগের নয়_উৎসবের সমাগত ঝামেলাকে কোনোমতে পাড়ি দেওয়ার। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে গণমৃত্যুর হার কমেছে, বেড়েছে এই হতদরিদ্র দেশেও মানুষের আয়ুষ্কাল। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অবসর জীবনের বিড়ম্বনা সওয়ার সময়কাল। শুধু তা-ই নয়, এই শ্রেণীভুক্ত মানুষের সংখ্যাও এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে এদের কল্যাণে কিছু করার সরকারি কোনো বাস্তবসম্মত উপায়ের সম্ভাবনা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
সরকার বা যেকোনো কর্তৃত্ব প্রত্যক্ষভাবে চাকরিতে বহালদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে উৎসর্গকৃত। অতীত, বাতিল বা নিঃশেষিত শক্তির জন্য তাদের দায়দায়িত্ব নেই। এটাই স্বাভাবিক। তবু যদি দেশ ও সমাজের অবস্থা স্বাভাবিক থাকত পেনশনারদের মতো উপেক্ষিত শ্রেণীগুলো হয়তো তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারত। কিন্তু তেমন কোনো সম্ভাবনাও দৃষ্টিগোচর হয় না। বাজারদরের অগি্নশর্মা রূপ ছাড়াও ডেমাক্লিসের তরবারির মতো আমাদের ঘাড়ের ওপর ঝুলে আছে ইউটিলিটি সার্ভিসেসের প্রস্তাবিত বর্ধিত হার। একমাত্র সান্ত্বনা যে আমাদের মতো এই উপেক্ষিত কাতারে শামিল হচ্ছে ও হবে অনেকের বিশাল মিছিল।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলামিস্ট
জীবন নিজেই একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার মধ্যে আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি। যেকোনো পেশায় চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের রীতি প্রচলিত আছে। অতঃপর তাঁর জীবনধারণের একমাত্র নির্ভরতা সরকার প্রদত্ত অবসর-ভাতার ওপর। বলাবাহুল্য, এই ভাতাটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য একটি স্থির আয়। কিন্তু আমরা জীবনের যেসব বিষয় নিয়ে পরিবেষ্টিত তার কোনোটাই স্থির নয়। এমনকি পেনশনারকে প্রদত্ত অর্থের মানটিও স্থির নয়। মুদ্রাস্ফীতির দাপটে কোনো একসময় দেখা যাবে যে এর কোনো মূল্যই নেই। অথচ জীবনের চাহিদা কিন্তু প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে দায়দায়িত্ব। আরো অনেকেই ক্রমে তাঁর আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সন্তান-সন্ততির লেখাপড়া, তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও বিবাহ-পার্বণ ইত্যাদি নিয়ে এক অসহায় পেনশনার জীবনযুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই পর্যুদস্ত।
তাই পেনশনারকে তাঁর বিগত জীবনের সঙ্গে নূ্যনতম সংগতি রাখতে কিছু না কিছু করতেই হয়, যাতে সামান্য হলেও কিছু বাড়তি আয়ের সংস্থান হয়। এমনিতেই সরকারি বা বেসরকারি চাকরির যে মহার্ঘতা এবং চাকরিপ্রত্যাশীদের যে ক্রমবর্ধমান স্ফীতি, তাতে একজন পেনশনারের জন্য যেকোনো মানের চাকরি সোনার হরিণ। এরই মধ্যে আবার অনেককেই তাঁদের 'কানেকশনে'র জোরে মোটা বেতনের বেসরকারি চাকরি করতে দেখেছি। কিন্তু যাদের কানেকশন নেই বা চাটুকারিত্বের 'গুণ'ও নেই, তাদের বেহাল অবস্থা। সম্ভবত সেই শ্রেণীকে উদ্দেশ করেই জীবনানন্দ দাশের এই পঙ্ক্তিমালা :
"ব্যবসার মারপ্যাঁচ বোঝে না সে
'শেয়ার মার্কেটে নামলে কেমন হয়' জিজ্ঞেস করলে আমাকে
হায়, আমাকে!
'লাইফ ইনস্যুরেন্সের এজেন্সি নিলে হয় না' শুধায়
লটারির টিকিট কিনলে কেমন হয়?"
এমনই সব বিভ্রান্ত অনুসন্ধান জীবনের হিসাবে অঙ্ক মেলাতে অক্ষম এক পেনশনারের। চাকরি জীবনের আর্থিক সঞ্চয় খুব একটা না থাকলেও মান-মর্যাদার সঞ্চয় হয়েছে ঢের। সেটা রক্ষা করাও বিপত্তি। শরীরে না চাইলেও রিকশা বা বাসে চড়তেও রাজি, কিন্তু অফিসে একসময়ের বড় সাহেবের তো তা মানাবে না। তাই পুরনো বা রিকন্ডিশন্ড একটি মোটর গাড়ি ছাড়া চলে কী করে? এবারও বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছি। সেখানে তো আর পাবলিক বাহনে যাওয়া যায় না! যাওয়া যায় না লক্কড়-ঝক্কড় কোনো প্রাইভেট কারেও। যদি সে 'কার' হাজার মানুষের ভিড়ে কোনো অঘটন ঘটিয়েই ফেলে, লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না?
তা ছাড়া সাধ্য না থাকলেও তো আর সাধের ঘুড়ি ওড়াতে নিষেধ নেই। এই স্থির আয়ের নিম্নবিত্তদেরও অবসর বয়সে আদরযত্নের অনেক প্রত্যাশী আছে। আছে তাদের হাজারো বায়না যা পেনশনের অর্থ দিয়ে মেটানো যায় না। তাই রূপসী বাংলার কবি সৃষ্ট এক অক্ষম পেনশনারের নানা খেদোক্তি এবং এক অন্তহীন অক্ষমতা ও অসহায়ত্ব।
অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পরই লেখালেখিতে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম_যতটা না রোজগারের পথ খুঁজতে, তার চেয়ে তা অধিক ছিল জমে থাকা অনেক কথা বলতে পারার তাগিদে। চাকরিকালীন বিধিনিষেধের গণ্ডির মধ্যে থেকে জীবন ও সমাজ নিয়ে যা বলা সম্ভব ছিল না, তারই কিঞ্চিত প্রকাশ ঘটাতে। যেহেতু সদ্য অবসর গ্রহণ করেছি, সে সময়ই বুঝেছিলাম ভালো হোক, মন্দ হোক চাকরিকালীন জীবনযাত্রার একটি ছকের মধ্যে আবদ্ধ ছিলাম। বাইরে এসে দেখলাম, জীবন আরো কত কঠিন_শুধু আর্থসামাজিকভাবেই নয়, নতুন একটি সংগ্রামের ক্ষেত্র দর্শনেও। তাই নিজের এবং সমগ্র পারিপার্শ্বিক নিয়ে একটি নতুন বোধোদয় না হয়ে পারেনি। 'An everygrowing social under class' সে সময়ের লেখা। অসামান্য কিছুই নয়। কিন্তু বোধোদয়ে মিল থাকায় অনেকেই হয়তো তাদের অনুভূতির প্রতিধ্বনি শুনে থাকবেন লেখাটির মধ্যে।
অবসর জীবনের সমস্যা বহুমাত্রিক। এ পর্যায়ে পেঁৗছে একজনের মূল্যায়ন ভিন্ন। তাঁকে আবার নতুন করে সামাজিক সম্পর্কের সমীকরণগুলো কষতে হয়। পদমর্যাদার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যিনি চমৎকৃত হন, তিনিই আবার পদমর্যাদার সঙ্গে (অব.) এর সংযোজনে নিরুৎসাহী হন। বিচিত্র নয় কি? কী চাকরিতে, কী অবসরে আমি তো এমন করে নিক্তিতে ওজন হতে চাইনি। তবু তা-ই হতে হয়। আমি যত বড় সক্রেটিস বা এরিস্টটল হই না কেন, আমাকে বিকিয়ে যেতে হয় টাকা-আনা-পাইয়ের হিসাবে। অবসর জীবনের এটিই বাস্তবতা।
সমস্যা হয় উৎসব-পার্বণে। অবশ্য পেনশনজীবীদেরও স্বগোত্রীয় আছে নিম্নবিত্তদের মধ্যে। যা-ই করা হোক, যেমনভাবেই করা হোক, তাঁদের আয়ও সম্প্রসারণের উপায় নেই। যখন উৎসবের ডঙ্কা বাজে মগজের মধ্যে অভিনব নতুন চিন্তার উদ্দাম হয়, যা অবশ্যই উৎসবকে উপভোগের নয়_উৎসবের সমাগত ঝামেলাকে কোনোমতে পাড়ি দেওয়ার। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে গণমৃত্যুর হার কমেছে, বেড়েছে এই হতদরিদ্র দেশেও মানুষের আয়ুষ্কাল। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অবসর জীবনের বিড়ম্বনা সওয়ার সময়কাল। শুধু তা-ই নয়, এই শ্রেণীভুক্ত মানুষের সংখ্যাও এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে এদের কল্যাণে কিছু করার সরকারি কোনো বাস্তবসম্মত উপায়ের সম্ভাবনা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
সরকার বা যেকোনো কর্তৃত্ব প্রত্যক্ষভাবে চাকরিতে বহালদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে উৎসর্গকৃত। অতীত, বাতিল বা নিঃশেষিত শক্তির জন্য তাদের দায়দায়িত্ব নেই। এটাই স্বাভাবিক। তবু যদি দেশ ও সমাজের অবস্থা স্বাভাবিক থাকত পেনশনারদের মতো উপেক্ষিত শ্রেণীগুলো হয়তো তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারত। কিন্তু তেমন কোনো সম্ভাবনাও দৃষ্টিগোচর হয় না। বাজারদরের অগি্নশর্মা রূপ ছাড়াও ডেমাক্লিসের তরবারির মতো আমাদের ঘাড়ের ওপর ঝুলে আছে ইউটিলিটি সার্ভিসেসের প্রস্তাবিত বর্ধিত হার। একমাত্র সান্ত্বনা যে আমাদের মতো এই উপেক্ষিত কাতারে শামিল হচ্ছে ও হবে অনেকের বিশাল মিছিল।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও কলামিস্ট
No comments