সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত নিতে হবে-চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তাদের ভ্রমণবিলাস

জার্মানি থেকে কেনা ৪২ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দেখার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চার সদস্যের একটি দল ১৪ নভেম্বর সে দেশের সমুদ্রবন্দর হামবুর্গে গেছে। কিন্তু যে যন্ত্রপাতি তারা দেখতে গিয়েছে, সেগুলো দুই সপ্তাহ আগেই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ৩০ টন ওজনের ভারী কন্টেইনার উত্তোলনে সক্ষম ছয়টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার।


যন্ত্রপাতি চলে আসার পর সেখানে প্রতিনিধিদলের কাজটা কী? ভ্রমণবিলাস? সে জন্য রাষ্ট্র কেন খরচ বহন করবে? বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) খায়রুল মোস্তফা বলেছেন, কেনা যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজে যে খুচরা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে, প্রতিনিধিদল সেগুলো দেখে আসবে।
আপাতদৃষ্টিতে ওই প্রতিনিধিদলের জার্মানি সফরের ব্যয় যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দিলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। কেননা, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের দরপত্রেই বন্দর কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয় ও প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিনিধিদলে প্রথমে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী অঞ্জন কান্তি চৌধুরীর নাম থাকলেও পরে তাঁকে বাদ দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাহলে কি যন্ত্রপাতি পরীক্ষার কাজটি প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ে উপসচিব মহোদয়ই ভালো বোঝেন? এ ধরনের তুঘলকি কাণ্ড নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে হরহামেশাই ঘটে।
আরও চমকপ্রদ ঘটনা হলো, স্ট্রাডেল ক্যারিয়ারগুলো বন্দরে পৌঁছালেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিজ্ঞ পরিদর্শক দল বিদেশ থেকে ফিরে এসে মানসম্মত বলে সনদ দেওয়ার পরই এগুলো কাজে লাগানো হবে। কী অদ্ভুত যুক্তি! যন্ত্রপাতি দেশে চলে আসার পর জনগণের করের অর্থে বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। চুক্তিতে যদি যন্ত্রপাতি পরিদর্শনের কথা থেকেও থাকে, তারা আগে কেন গেল না? এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি। প্রয়োজনে যন্ত্রপাতি দেখার নামে ভ্রমণবিলাসে তারা যে অর্থ ব্যয় করেছে, তা-ও ফেরত নিতে হবে। যন্ত্রপাতি আসার আগে প্রতিনিধিদল জার্মানি গেলেও না হয় সফরের পক্ষে যুক্তি দেখানো যেত।

No comments

Powered by Blogger.