বিরোধী দলকে সংসদে যেতে হবে by ড. হারুনুর রশীদ

রাজনৈতিক দুটি পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান করছে। এটা কাম্য না হলেও বাংলাদেশে এ অবস্থা নতুন কিছু নয়। সুতরাং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, যা-ই বলুন না কেন, রাজনীতির ব্যাপারে এটা আমাদের কাছে পরিচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এ পরিস্থিতির কারণে যে কী দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, আমরা তা চিন্তা করি না।


আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা তেমনি দুর্বিষহ একটা পরিস্থিতি হিসেবে ওয়ান-ইলেভেন পেয়েছিলাম। সেই দুর্যোগের কথা আমরা কেন যে ভুলে যাই! আমরা সেই দুরবস্থা থেকে কিন্তু শিক্ষা নিতে পারিনি। আজকে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে মনে হতেই পারে, আমরা পেছনের দিকে যেতে চাইছি।
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কি, আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে অনেক পেছনে চলে এসেছি। তা না হলে দেখুন বিশাল জনসমর্থন নিয়ে একটি সরকার গঠন করা হলো এই দেশে ২০০৮ সালে। এমন সুন্দর নির্বাচন আর কয়টা হয়েছে বাংলাদেশে? দুনিয়ার মানুষ প্রশংসা করল সে নির্বাচনের। সরকার গঠিত হলো নির্বাচিতদের দিয়ে। অথচ নির্বাচিত বৈধ সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। আবার নির্বাচন হওয়ার পর যদি তারা পরাজিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। অথচ এখানে আমরা দেখতে পেলাম বিরোধী দল স্পষ্টভাবে দিনক্ষণ ঠিক করে দিল যে এত তারিখের পর আর সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাদের আর পাওয়াই যাবে না। এ কেমন কথা!
এ আলটিমেটাম দেওয়ার পরবর্তী ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। তাহলেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া যাবে। ডিসেম্বর মাসকে তারা টার্গেট করেছিল। দেখা গেল, এ সময় এসে তারা ঢাকায় আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করল। তারা রাজপথে কর্মসূচি দিল। রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু যে মুহূর্তে আলটিমেটামের সঙ্গে রাজপথের কর্মসূচি এবং সেনাবাহিনীতে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেল, তখনই মনে হতে পারে গোটা বিষয়ই একটি ছকের মাধ্যমে চলছে। আর সেই ছক পূরণ হতে দেওয়া কি দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে সম্ভব?
রাস্তায় যে মুহূর্তে আলটিমেটাম অনুযায়ী কথিত আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ই ডিসেম্বর মাসে আমাদের সেনাবাহিনীর কিছু পথভ্রষ্ট ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে বসল। আমাদের সৌভাগ্য, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেই ষড়যন্ত্র মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তা না হলে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পেঁৗছাত, তা বলা মুশকিল। কথা হলো দুটি ঘটনার সঙ্গে মিলের বিষয়টি।
পাশাপাশি দেশের বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে চলেছে একের পর এক। জাতীয় সংসদে তাদের দেখা যায় না। তাদের উদ্দেশ্য কী? আসলে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে, যেকোনো উপায়ে হোক যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা।
বিরোধী দল যা করছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি তা হতে পারে না। রাজনীতি করতে হলে সরকারি দলে যেমন বসতে হয়, তেমনি বিরোধী দলেও বসতে হবে। বিরোধী দলে গেলে তাদের জন্য খোলা মত প্রকাশের জায়গা হিসেবে জাতীয় সংসদও রয়েছে। তারা সংসদে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে।
অবস্থাটা বিশ্লেষণ করতে হবে। আবারও বলছি, সরকার উৎখাতের হুমকির মতো সময় বেঁধে দেওয়া, রাস্তায় লাঠি নিয়ে মিছিল করা, পুলিশকে আক্রমণ করা, একই সঙ্গে সেনানিবাসে যা ঘটল- সব মিলে এই পরিস্থিতি। এখনো আশা করি, বিরোধী দল জাতীয় সংসদে গিয়ে তাদের অবস্থান নেবে- গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এটাই।

লেখক : প্রোভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.