আদমপুরের ভানুবিলে একদিন by আহমদ সিরাজ
কমলগঞ্জের আদমপুরের বাজারটি বেশ জমজমাট বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ বাজারে ক্ষুদ্র নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠী মণিপুরিসহ (বিষ্ণুপ্রিয়া, মিতৈ পাঙ্গান) বাঙালি জনগোষ্ঠীর একযোগে বাজারে প্রবেশ যেমন দৃশ্যমান হয় তেমনি বাজারের দোকানপাট ও নৃগোষ্ঠীর অবস্থানে মুগ্ধতা আছে।
এ আদমপুরের ভানুবিলে ১৯৩০-৩১ সালের দিকে ঐতিহাসিক ভানুবিল প্রজা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। এ বিদ্রোহে বর্ধিত খাজনার বিরোধ কেন্দ্র করে জমিদার নবাব আলী আমজাদ খান প্রজাদের বিরুদ্ধে হাতির বহর পাঠালে প্রজারা রুখে দাঁড়ালে হাতির বহরের সঙ্গে প্রজাদের এক লড়াই সংঘটিত হয়। প্রজারা পাহাড়ের চোখা মুলি বাঁশের আঘাতে হাতির বহরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। এ বিদ্রোহ কেন্দ্র করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি মিস উইলকিনসন ও কৃষ্ণ মেননের নেতৃত্বে তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল ভানুবিলে সরেজমিন তদন্তে আসে। সে আরেক অধ্যায়।
ভানুবিল গ্রামটি বেশ বড়, নিগূঢ় অবস্থান, নিস্তরঙ্গ জনপদ যেন। আমরা এসেছি বাঙালি মহিলাদের তাঁতের কাপড় উৎপাদন বা কাজ দেখতে। আমরা এখানে জেনে এসেছি তাঁতের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরিরা যুক্ত। শত শত বছর ধরে তাঁত তাদের যেমন ঐতিহ্যের অংশ তেমনি জীবিকার অংশ। আদমপুরের মণিপুরিদের পাশাপাশি বাঙালি মহিলাদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা চিত্তাকর্ষক ও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রথম দৃষ্টিতে তাদের অবস্থা নিঃস্ব মনে না হলেও তারা যে সবাই কর্মজীবী বিত্তহীন দিনমজুর পরিবারের কর্মজীবী মহিলা তা জানা গেল। তাদের স্বামীরা দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক ইত্যাদি। এ কাজেই সংসার চলে না। অর্ধাহার-অনাহারেও থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাদের বউরা উদ্যোগী হয়ে মণিপুরি গ্রামে গিয়ে তাঁতের কাজ শিখেছেন, তাঁতের যন্ত্র গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় মণিপুরিদের এ কাজে মানুষের প্রবল চাহিদা থাকায় তারা এটি সহজেই শেখতে পারেন। এক সময় গরিব স্বামীদের পুরো ভার বহন করতে হয়েছে। এখন তারা ঘরে বসে তাঁতের শাড়ি কাপড় তৈরি করেন। এগুলো বিক্রি করেন। এগুলো কিনে নেওয়ার জন্য গ্রামেই যেমন মহাজন আছেন তেমনি মণিপুরি মহাজনরাও কাপড় কিনে থাকেন। এখন এ ভানুবিল গ্রামটিতে ৬০টির মতো বাঙালি মহিলা তাঁত চালান, স্বামীদের আয়-রোজগার ও তাদের আয়-রোজগার মিলে সংসার মোটামুটি চলে। তবে এখানে যারা উদ্যোগী হয়ে তাঁতের কাজ শুরু করেছেন তাদের জীবনে ছোট ছোট দুঃখের কাহিনী আছে। তাঁতকর্মী সুন্দরী বেগম জানান, ছোটকালেই তিনি তাঁতের কাজটি শিখেছিলেন। কিন্তু বিয়ে হওয়ার কিছুদিন পর তার স্বামী মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়েন। নিজেই সাহস করে তাঁতের মেশিন কিনে কাজ শুরু করেন। তাঁতকর্মীরা জানালেন, পুঁজির অভাবে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, হিড প্রভৃতি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ আনেন। ঋণ ও সুদের কিস্তি দিতে দিতে যা লাভ হওয়ার তা তাদের হয় না। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ আনতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহাজনের কাছ থেকে আগাম ঋণও আনতে হয়। এ বিপদ না থাকলে তারা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারতেন।
স্কুলের ছোট ছোট মেয়েও এখন তাঁতের কাজটি শিখে নিয়েছে। তারা বাড়িতে মাকে সাহায্য করে। বাঙালি মহিলাদের এ কর্মযজ্ঞটির খবর এখনও বাইরে জানাজানির পর্যায় নেই। ভেতরে যারা আছেন তারাও জানেন না কমলগঞ্জ উপজেলায় বাঙালি কত মহিলা তাঁতের কাজটি জানেন কিংবা এ উপজেলায় তাদের কত মেশিন আছে। কাজ জানেন কিন্তু তাদের মেশিন নেই_ এমন তাঁতের কর্মী কতজন আছেন তাও জানা নেই। আমরা এখানে এসে যতটুকু জেনেছি_ কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়ন, ইসলামপুর ইউনিয়ন ও আলীনগর ইউনিয়নে বাঙালি মহিলারা তাঁতের কাজ করেন।
এখানের তাঁত কমলগঞ্জে মণিপুরিদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চিহ্নিত। এ ঐতিহ্যের বিকাশমান ধারায় বাঙালি মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন। আমাদের বিশ্বাস, মণিপুরি ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙালি মহিলাদের এ কাজে অংশগ্রহণ কমলগঞ্জের তাঁতশিল্পের জন্য একটি শুভবার্তা। এ উভয় জনগোষ্ঠীর হাত ধরাধরিতে তাঁতশিল্প আরও সমৃদ্ধ করে গড়া তোলা গেলে কমলগঞ্জ বাংলাদেশে তাঁতশিল্পের জগতে একটি চিহ্নিত উদাহরণ হবে।
ভানুবিল গ্রামটি বেশ বড়, নিগূঢ় অবস্থান, নিস্তরঙ্গ জনপদ যেন। আমরা এসেছি বাঙালি মহিলাদের তাঁতের কাপড় উৎপাদন বা কাজ দেখতে। আমরা এখানে জেনে এসেছি তাঁতের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরিরা যুক্ত। শত শত বছর ধরে তাঁত তাদের যেমন ঐতিহ্যের অংশ তেমনি জীবিকার অংশ। আদমপুরের মণিপুরিদের পাশাপাশি বাঙালি মহিলাদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা চিত্তাকর্ষক ও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রথম দৃষ্টিতে তাদের অবস্থা নিঃস্ব মনে না হলেও তারা যে সবাই কর্মজীবী বিত্তহীন দিনমজুর পরিবারের কর্মজীবী মহিলা তা জানা গেল। তাদের স্বামীরা দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক ইত্যাদি। এ কাজেই সংসার চলে না। অর্ধাহার-অনাহারেও থাকতে হয়েছে। কিন্তু তাদের বউরা উদ্যোগী হয়ে মণিপুরি গ্রামে গিয়ে তাঁতের কাজ শিখেছেন, তাঁতের যন্ত্র গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় মণিপুরিদের এ কাজে মানুষের প্রবল চাহিদা থাকায় তারা এটি সহজেই শেখতে পারেন। এক সময় গরিব স্বামীদের পুরো ভার বহন করতে হয়েছে। এখন তারা ঘরে বসে তাঁতের শাড়ি কাপড় তৈরি করেন। এগুলো বিক্রি করেন। এগুলো কিনে নেওয়ার জন্য গ্রামেই যেমন মহাজন আছেন তেমনি মণিপুরি মহাজনরাও কাপড় কিনে থাকেন। এখন এ ভানুবিল গ্রামটিতে ৬০টির মতো বাঙালি মহিলা তাঁত চালান, স্বামীদের আয়-রোজগার ও তাদের আয়-রোজগার মিলে সংসার মোটামুটি চলে। তবে এখানে যারা উদ্যোগী হয়ে তাঁতের কাজ শুরু করেছেন তাদের জীবনে ছোট ছোট দুঃখের কাহিনী আছে। তাঁতকর্মী সুন্দরী বেগম জানান, ছোটকালেই তিনি তাঁতের কাজটি শিখেছিলেন। কিন্তু বিয়ে হওয়ার কিছুদিন পর তার স্বামী মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়েন। নিজেই সাহস করে তাঁতের মেশিন কিনে কাজ শুরু করেন। তাঁতকর্মীরা জানালেন, পুঁজির অভাবে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, হিড প্রভৃতি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ আনেন। ঋণ ও সুদের কিস্তি দিতে দিতে যা লাভ হওয়ার তা তাদের হয় না। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ আনতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহাজনের কাছ থেকে আগাম ঋণও আনতে হয়। এ বিপদ না থাকলে তারা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারতেন।
স্কুলের ছোট ছোট মেয়েও এখন তাঁতের কাজটি শিখে নিয়েছে। তারা বাড়িতে মাকে সাহায্য করে। বাঙালি মহিলাদের এ কর্মযজ্ঞটির খবর এখনও বাইরে জানাজানির পর্যায় নেই। ভেতরে যারা আছেন তারাও জানেন না কমলগঞ্জ উপজেলায় বাঙালি কত মহিলা তাঁতের কাজটি জানেন কিংবা এ উপজেলায় তাদের কত মেশিন আছে। কাজ জানেন কিন্তু তাদের মেশিন নেই_ এমন তাঁতের কর্মী কতজন আছেন তাও জানা নেই। আমরা এখানে এসে যতটুকু জেনেছি_ কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়ন, ইসলামপুর ইউনিয়ন ও আলীনগর ইউনিয়নে বাঙালি মহিলারা তাঁতের কাজ করেন।
এখানের তাঁত কমলগঞ্জে মণিপুরিদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চিহ্নিত। এ ঐতিহ্যের বিকাশমান ধারায় বাঙালি মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন। আমাদের বিশ্বাস, মণিপুরি ঐতিহ্যের সঙ্গে বাঙালি মহিলাদের এ কাজে অংশগ্রহণ কমলগঞ্জের তাঁতশিল্পের জন্য একটি শুভবার্তা। এ উভয় জনগোষ্ঠীর হাত ধরাধরিতে তাঁতশিল্প আরও সমৃদ্ধ করে গড়া তোলা গেলে কমলগঞ্জ বাংলাদেশে তাঁতশিল্পের জগতে একটি চিহ্নিত উদাহরণ হবে।
No comments