ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় বাগান
ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় বাগানই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। বাগানের মাধ্যমে মশার খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে প্রাণীটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা যায়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে বান্দিয়াগ্রা জেলার নয়টি গ্রামে এই পরিকল্পনা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন গবেষকদের একটি দল। গবেষকরা বলছেন, সাধারণ গুল্ম থেকে ফুল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে বয়স্ক, নারী ও ক্ষতিকারক পোকামাকড় যেগুলোর মাধ্যমে সাধারণত ম্যালেরিয়া ছাড়ায়- সেসব পোকামাকড়ও মেরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ফুলের মধু ছাড়া 'নানী বা দাদী" মশা ক্ষুধায় মারা যায় শেষ পর্যন্ত। বয়স্ক স্ত্রী মশাদের মারতে পারলে ম্যালেরিয়ার বিস্তার রোধ করা সম্ভব। অ্যানোফিলিস প্রজাতির এসব মশা তাদের লালাগ্রন্থিতে ম্যালেরিয়ার জীবানু বহন করে এবং কোনো মানুষকে কামড়ালে রক্তে সেই জীবানু দিয়ে দেয়। জীবানুবাহিত ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। স্ত্রী মশাগুলোও উর্বর হয়ে পড়ে আর ভালো রক্ত খুঁজে এবং ডিমও তৈরি করে যেসব ডিমের মধ্যে ওই পরজীবী বাস করে। মাত্র দশদিনের মধ্যেই ম্যালেরিয়া জীবানুবাহিত নতুন আরেকটি মশা মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমণ করার জন্য উপযোগী হয়ে উঠে। মানুষের মধ্যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের পাশাপাশি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুলের মধুর ওপরও নির্ভর করে স্ত্রী মশাগুলো। মালির বান্দিয়াগ্রা জেলায় এমন কিছু ঝোপঝাড় আছে যা ম্যালেরিয়া জীবানু বহন করতে পারে এমন মশার চারণভূমি। মালির বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সাহায্য নিয়ে উদ্যান সংক্রান্ত একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালান, যেটার মাধ্যমে তারা দেখতে চেয়েছেন গাছের ফুল সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে স্থানীয় মশাগুলো মেরে ফেলা সম্ভব হয় কিনা। তারা নয়টি গ্রাম বেছে নেন। এর মধ্যে ছয়টি গ্রামে প্রচুর ফুল গাছ ও ফুলের ঝোপঝাড় এবং বাকি তিনটি গ্রামে তেমনভাবে ফুলের ঝোপঝাড় নেই। গ্রামগুলোতে আলোর মাধ্যমে মশা ধরার ব্যবস্থাও করেন তারা। বাগানের মাধ্যমে মশা সংকলন বন্ধ করা যায় কিনা সেটা দেখাও উদ্দেশ্য ছিল। গ্রামগুলো থেকে ফুল ছেঁটে ফেলার পর অন্তত ৬০ শতাংশ মশা কমে যায়। আর জরুরি বিষয় হলো, যে তিনটি গ্রামে একেবারেই ফুল ছিল না আর ভিন্ন উপায়ে বাগান করা হচ্ছিল সে গ্রামগুলো থেকে বয়স্ক স্ত্রী মশা একেবারে নির্মূল হয়ে গেল। ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হচ্ছে, মশাগুলো ক্ষুধায় মারা গেছে। প্রফেসর জো লাইনস বলছেন "এর মাধ্যমে এটাই বুঝা গেল কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার না করে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি"। সূত্র: বিবিসি।
No comments