গাছের পাতায় নিকেল
নিউ ক্যালিডোনিয়া দ্বীপপুঞ্জে এমন সব গাছপালা আছে, যারা মাটি থেকে নিকেল শুষে পাতায় জমা করতে পারে৷ এখন নিকেলের খনির ‘ক্ষত’ বা কলঙ্ক সারানোর চেষ্টা চলেছে ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ করে৷ সুদূর নিউ ক্যালিডোনিয়া দ্বীপপুঞ্জে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের এক উদ্ভিদ জগৎ গড়ে উঠেছে৷ এখানে যা কিছু জন্মায়, তার সব কিছু এখানকার, বিশ্বের অন্যত্র তা পাওয়া যাবে না৷ মুখ্য দ্বীপটির নাম ‘গ্রঁদ ত্যার’৷ পরিবেশবিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফ্যান ডের এন্ট এখানকার কিছু উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করছেন, যাদের আশ্চর্য সব বৈশিষ্ট্য আছে৷ অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টনি ফ্যান ডের এন্ট বলেন, ‘‘এটা হলো একটা বড় ‘পিকেনান্দ্রা আকুমিনাতে’, এর নীল-সবুজ কষের ২৫ শতাংশই হল নিকেল৷ কষে যে সবুজ রঙটা দেখা যায়, সেটাই হলো নিকেল৷ এটা হল মানুষের চেনা সবচেয়ে আশ্চর্য জৈবিক তরল পদার্থ৷ সত্যিই অসাধারণ যে, একটি জীবন্ত, সজীব গাছের কষে এই পরিমাণ ধাতু থাকতে পারে৷’’ নিকেল সাধারণত উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর পক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত, এমনকি মানুষের পক্ষেও৷ কাজেই এ ধরনের কোনো গাছের বেঁচে থাকারই কথা নয়৷ অথচ পিকেনান্দ্রা ছাড়া এখানকার অন্যান্য গাছেও নিকেল আছে৷ এই গাছগুলো মাটি থেকে সরাসরি নিকেল শুষে নেয় ও তাদের কোষে তা জমা করে৷ ফ্যান ডের এন্ট এই সব গাছেদের ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ বলেন ও তাদের নমুনা তরল নাইট্রোজেনে ধরে রেখে পরে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করেন৷
‘পাতায় কতটা নিকেল আছে’
ফ্যান ডের এন্ট জানালেন, ‘‘আমরা পর্যায়ক্রমে নিউ ক্যালেডোনিয়ার সর্বত্র সংগৃহীত বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা পরীক্ষা করে দেখি, তাদের পাতায় কতটা নিকেল আছে৷ এভাবে আমরা তাদের শনাক্ত ও সংগ্রহ করে, পরে ওই ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ করে ফসল ঘরে তুলতে পারি৷ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালা নিয়ে গবেষণা করার জন্য নিউ ক্যালিডোনিয়াই সম্ভবত বিশ্বের সেরা জায়গা, কেননা এখানে ৬৫টির বেশি প্রজাতির ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ উদ্ভিদ পাওয়া যায়৷’’ এই গাছগুলো এখানে গজাতে পেরেছে দ্বীপটির ভূতাত্ত্বিক উপাদানের কারণে৷ এখানকার মাটিতে এত নিকেল ও অন্যান্য ধাতু আছে যে, অধিকাংশ গাছপালা এখানে বাড়তে পারে না৷ কিন্তু ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’-রা ভালোই থাকে৷
নিকেলের রীতিনীতি
নিউ ক্যালিডোনিয়ার মাটি এমনই নিকেল-সমৃদ্ধ যে, নিকেলের খনি হলো নিউ ক্যালিডোনিয়ার অর্থনীতির একটা বড় অংশ৷ এর ফলে দ্বীপপুঞ্জটির নৈসর্গিক দৃশ্য যেন নানা প্রকাশ্য ক্ষতে ভরা৷ মাইনিং কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে৷ এই সব কর্মসূচির উদ্দেশ্য বিশেষ বিশেষ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’-এর সাহায্যে খনির চারপাশের জমির নবায়ন করা৷ কিন্তু এই বিধ্বস্ত এলাকায় এই জাদুকরি গাছপালাগুলোও দাঁত ফোটাতে কষ্ট পায়৷ মাটিতে এত লোহা আর নিকেল আছে যে, এই মাটি পাথরের মতো শক্ত৷ গাছ লাগানোর জন্য কর্মীরা স্পেশাল ড্রিল দিয়ে মাটিতে গর্ত করেন৷ নিউ ক্যালিডোনিয়ার বৃহত্তম খনিতে ওপেনকাস্ট বা খোলা খনি পদ্ধতিতে আকর সংগ্রহ করা হয়, যার অর্থ, ক্ষেত্রবিশেষে গোটা পাহাড় কেটে খনির কাজ চলে৷ পড়ে থাকে বিষাক্ত হেভি মেটালের ভাঙাচোরা স্তূপ৷ গবেষকরা এই খনিতে একটি চমকপ্রদ পরীক্ষা চালাচ্ছেন: তারা এখানে ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালা লাগানোর পরিকল্পনা করছেন – শুধু মাটিকে বিষমুক্ত করার জন্যই নয়, বরং তাদের পাতা সংগ্রহ করে তা থেকে নিকেল বের করার জন্যে৷
খনি বর্জ্যের উপর ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ
ফ্যান ডের এন্ট বললেন, ‘‘আমি এখানে নিউ ক্যালিডোনিয়ান অ্যাগ্রোনমিক ইনস্টিটিউটের ব্রুনো ফোলিয়ানির সাথে কাজ করছি, যিনি খনি বর্জ্যের উপর নিকেল ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ বসানোর এই পরীক্ষার আয়োজন করেছেন৷ আমরা খনি বর্জ্য ফেলার একটা জায়গার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি – দেখছেনই তো, গাছপালাগুলো ভালোই বাড়ছে৷’’ ফোলিয়ানি জানালেন, ‘‘এই গাছটি নিকেল সংগ্রহ করে৷ এর পাতায় যে নিকেল আছে, আমরা সে বিষয়ে আগ্রহী৷ অর্থনৈতিক বিচারে পোষাতে গেলে, আমাদের সর্বোচ্চ পরিমাণ ‘বায়োমাস’ সংগ্রহের পন্থা বার করতে হবে৷ আমরা একাধিক ধরনের সার ব্যবহার করছি, অন্যান্য গাছপালার সঙ্গে ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ করার চেষ্টা করছি৷ শুধু এই একটি প্রজাতি নয়, বরং সব ধরনের গাছ লাগালে প্রকৃতি বাকিটা করে দেয়, প্রাকৃতিকভাবেই সারিয়ে দেয়৷’’ এই প্রযুক্তিকে বলে ‘ফাইটোমাইনিং’, অর্থাৎ গাছপালা ব্যবহার করে খনির কাজ৷ এটা যদি কার্যকরি হয়, তাহলে মাইনিং কোম্পানিগুলো সম্ভবত এই ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালায় বিনিয়োগ করতে রাজি হবে – লাভের জন্যও বটে আবার তারা পরিবেশের যে ক্ষতি করেছে, তার কিছুটা পূরণ করার জন্যও বটে৷ কিন্তু ফাইটোমাইনিং প্রথাগত মাইনিং-এর বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিকেল পাওয়া যায় না৷ যার অর্থ, নিকেল মাইনিং-এর ধ্বংসলীলা আরো কিছুদিন ধরে চলবে৷ মাইনিং কোম্পানিগুলো মাটি খুঁড়ে ও পাথরের স্তর সরিয়ে আকরিক নিকেল বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ কিন্তু নিকেল শুষে নেয়া ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছগুলোর কল্যাণে পরিবেশের ক্ষতি অন্তত কিছুটা লাঘব হবে৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে
‘পাতায় কতটা নিকেল আছে’
ফ্যান ডের এন্ট জানালেন, ‘‘আমরা পর্যায়ক্রমে নিউ ক্যালেডোনিয়ার সর্বত্র সংগৃহীত বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা পরীক্ষা করে দেখি, তাদের পাতায় কতটা নিকেল আছে৷ এভাবে আমরা তাদের শনাক্ত ও সংগ্রহ করে, পরে ওই ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ করে ফসল ঘরে তুলতে পারি৷ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালা নিয়ে গবেষণা করার জন্য নিউ ক্যালিডোনিয়াই সম্ভবত বিশ্বের সেরা জায়গা, কেননা এখানে ৬৫টির বেশি প্রজাতির ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ উদ্ভিদ পাওয়া যায়৷’’ এই গাছগুলো এখানে গজাতে পেরেছে দ্বীপটির ভূতাত্ত্বিক উপাদানের কারণে৷ এখানকার মাটিতে এত নিকেল ও অন্যান্য ধাতু আছে যে, অধিকাংশ গাছপালা এখানে বাড়তে পারে না৷ কিন্তু ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’-রা ভালোই থাকে৷
নিকেলের রীতিনীতি
নিউ ক্যালিডোনিয়ার মাটি এমনই নিকেল-সমৃদ্ধ যে, নিকেলের খনি হলো নিউ ক্যালিডোনিয়ার অর্থনীতির একটা বড় অংশ৷ এর ফলে দ্বীপপুঞ্জটির নৈসর্গিক দৃশ্য যেন নানা প্রকাশ্য ক্ষতে ভরা৷ মাইনিং কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে৷ এই সব কর্মসূচির উদ্দেশ্য বিশেষ বিশেষ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’-এর সাহায্যে খনির চারপাশের জমির নবায়ন করা৷ কিন্তু এই বিধ্বস্ত এলাকায় এই জাদুকরি গাছপালাগুলোও দাঁত ফোটাতে কষ্ট পায়৷ মাটিতে এত লোহা আর নিকেল আছে যে, এই মাটি পাথরের মতো শক্ত৷ গাছ লাগানোর জন্য কর্মীরা স্পেশাল ড্রিল দিয়ে মাটিতে গর্ত করেন৷ নিউ ক্যালিডোনিয়ার বৃহত্তম খনিতে ওপেনকাস্ট বা খোলা খনি পদ্ধতিতে আকর সংগ্রহ করা হয়, যার অর্থ, ক্ষেত্রবিশেষে গোটা পাহাড় কেটে খনির কাজ চলে৷ পড়ে থাকে বিষাক্ত হেভি মেটালের ভাঙাচোরা স্তূপ৷ গবেষকরা এই খনিতে একটি চমকপ্রদ পরীক্ষা চালাচ্ছেন: তারা এখানে ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালা লাগানোর পরিকল্পনা করছেন – শুধু মাটিকে বিষমুক্ত করার জন্যই নয়, বরং তাদের পাতা সংগ্রহ করে তা থেকে নিকেল বের করার জন্যে৷
খনি বর্জ্যের উপর ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ
ফ্যান ডের এন্ট বললেন, ‘‘আমি এখানে নিউ ক্যালিডোনিয়ান অ্যাগ্রোনমিক ইনস্টিটিউটের ব্রুনো ফোলিয়ানির সাথে কাজ করছি, যিনি খনি বর্জ্যের উপর নিকেল ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ বসানোর এই পরীক্ষার আয়োজন করেছেন৷ আমরা খনি বর্জ্য ফেলার একটা জায়গার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি – দেখছেনই তো, গাছপালাগুলো ভালোই বাড়ছে৷’’ ফোলিয়ানি জানালেন, ‘‘এই গাছটি নিকেল সংগ্রহ করে৷ এর পাতায় যে নিকেল আছে, আমরা সে বিষয়ে আগ্রহী৷ অর্থনৈতিক বিচারে পোষাতে গেলে, আমাদের সর্বোচ্চ পরিমাণ ‘বায়োমাস’ সংগ্রহের পন্থা বার করতে হবে৷ আমরা একাধিক ধরনের সার ব্যবহার করছি, অন্যান্য গাছপালার সঙ্গে ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছের চাষ করার চেষ্টা করছি৷ শুধু এই একটি প্রজাতি নয়, বরং সব ধরনের গাছ লাগালে প্রকৃতি বাকিটা করে দেয়, প্রাকৃতিকভাবেই সারিয়ে দেয়৷’’ এই প্রযুক্তিকে বলে ‘ফাইটোমাইনিং’, অর্থাৎ গাছপালা ব্যবহার করে খনির কাজ৷ এটা যদি কার্যকরি হয়, তাহলে মাইনিং কোম্পানিগুলো সম্ভবত এই ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছপালায় বিনিয়োগ করতে রাজি হবে – লাভের জন্যও বটে আবার তারা পরিবেশের যে ক্ষতি করেছে, তার কিছুটা পূরণ করার জন্যও বটে৷ কিন্তু ফাইটোমাইনিং প্রথাগত মাইনিং-এর বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিকেল পাওয়া যায় না৷ যার অর্থ, নিকেল মাইনিং-এর ধ্বংসলীলা আরো কিছুদিন ধরে চলবে৷ মাইনিং কোম্পানিগুলো মাটি খুঁড়ে ও পাথরের স্তর সরিয়ে আকরিক নিকেল বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ কিন্তু নিকেল শুষে নেয়া ‘হাইপার-অ্যাকিউমুলেটর’ গাছগুলোর কল্যাণে পরিবেশের ক্ষতি অন্তত কিছুটা লাঘব হবে৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে
No comments