ঝড়ের স্রোতে হাল ধরল তরুণ প্রজন্ম
বুধবার জামায়াতের ডাকা হরতাল বিফল করে
দিয়ে বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারীর নেতৃত্বে মহাজোট
সরকারের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিয়ে আগামীর জন্য যে ইঙ্গিত বয়ে আনল তা দেখে
হতাশ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের মানুষ প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছে।
বগুড়ার প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা খন্দকার
গোলাম কাদের (৯০) ফের একবার বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে বললেন- ‘ওরে ভয়
নাই...ঝড়ের মধ্যে স্রোতের প্রতিকূলে শক্ত হাতে বৈঠা ধরে যে মাঝি তরীকে তীরে
ভিড়িয়ে কূলে ওঠে সেই সাহসী মাঝিই তো তোরা...এগিয়ে যা। দেখলি না তোদের পথে
নামা দেখে কিভাবে পালাবার পথ খুঁজে নিচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবির
চক্র। ড্রাকুলার যেমন রাতের আঁধারে বের হয়ে ভোর হওয়ার আগেই সূর্যালোকের ভয়ে
কফিনে গিয়ে ঢোকে ওরাও তেমনই প্রজন্মের তারুণ্যের রৌদ্রের আগেই কফিনে ঢুকতে
শুরু করেছে।’ আরেক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল বারী (৯১) বললেন
‘মঙ্গলবার কসাই রাজাকার কাদের মোল্লার রায় শুনে হতাশ হয়েছিলাম। আজ (বুধবার)
প্রজন্মের তরুণদের রাজপথে সাহসী প্রতিবাদ দেখে ইচ্ছে করছে ওদের কপোলে
আর্শীবাদের চুমু দিয়ে বলি বাংলার আকাশ থেকে শকুনিদের তাড়িয়ে দে। যা আমরা
পারিনি তা তোরা নিশ্চয়ই পারবি।’ আনন্দের শ্বাস নিয়ে বললেন ‘এখন ওপারে গিয়েও
শান্তি পাবো।’ এ যুগের তরুণ চিকিৎসক সামির হোসেন মিশু বললেন ‘আমরা
মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে পূর্বসুরিদের কাছ থেকে ইতিহাস জেনেছি। আমরা কোন
অবস্থাতেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও জামায়াত-শিবির চক্রকে এ দেশের মাটিতে
আর আস্ফালন করতে দেব না। অনেক হয়েছে। আর নয়। বিচার যখন শুরু হয়েছে বিচারের
রায় যেন অবশ্যই কার্যকর হয় আমরা প্রজন্মের তরুণরা সে পর্যন্ত মাঠে থাকবো।
মায়ের (দেশ) ঋণ শোধ করেতই হবে।’ এ যুগের তরুণী আওয়ামী লীগ শাজাহানপুর
উপজেলার নারী নেত্রী মীরা বেগম বললেন ‘প্রজন্মের আমিও একজন নারী।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনেছি। দরকার হলে আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ করবো। নারী
মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজাকারেদের এ মাটি থেকে তাড়িয়ে দেবো। বাংলার মাটিতে
স্থান দেবো না।’ মাঠ পর্যায়ে যেখানেই খোঁজ খবর করা হয়েছে সেখানেই মিলেছে
তারুণ্যের উদ্ভাসিত হওয়ার এমন অসাধারণ অনেক খবর। এতকাল যারা প্রজন্মের
তারুণ্যকে বুঝতে পারেনি তারা এবার প্রকাশ্যে দেখছে স্বাধীনতা বিরোধী
রাজাকারদের ওপর কতটা ঘৃনা লুকিয়ে আছে এই প্রজন্মের মনে। একটি রায় কিভাবে
ওদের কয়েক মিনিটেই সংগঠিত করল। সাধারণের ধারণা ছিল- জামায়াত-শিবির যেভাবে
লম্বা মিছিল করে ও হুঙ্কার দেয় তাতে কে পারবে শিবিরের সঙ্গে! এখন তারাই
দেখছে, বর্তমান প্রজন্ম বাঘ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার একবার বন থেকে বের হয়ে এসে
থাবা দেয়া শুরু করলে ওই মেষশাবকের দল কোথায় পালাবে তার খোঁজ থাকবে না।
এমন প্রতিক্রিয়া সরকারকে যে বারতা দিল তাতে আর পেছনে ফেরার কোন পথ নেই।
দেশের মানুষ কি চাইল সেই আশার সঙ্গে সবচেয়ে বড় কথা প্রজন্ম কি দেখতে চায়।
মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস তা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- ১৯৭১ এ সেদিনের তরুণরাই
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চে ৩২ মিনিটের ঐতিহাসিক
ভাষণের পথ অনুসরণ করেই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল। ২৫ মার্চ কাল রাতে
আমাদের পুলিশ বাহিনীই প্রথমে রাজারবাগ থেকে বিদ্রোহ করে জীবন দিয়ে হানাদার
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রুখে-দেয়। ৪২ বছর পর বুধবারও দেখা গেল প্রজন্মের
তারুণ্য কী ভাবে প্রতিবাদের শান্ত ঢেউয়ে মাঠে নেমেছে। বাংলার নদীর মতো এ
শান্ত ঢেউ যে সুপ্ত নয় তা জানে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবহিনীর জওয়ানরা।
দরকার হলে এবার শান্ত ঢেউ কতটা অশান্ত হয়ে ঝড় জলোচ্ছ্বাস তুলে রাজাকারদের
তছনছ করে দিতে পারে তাও দেখিয়ে দেবে।
No comments