আরো এক সাক্ষীকে জেরা করলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বন্দী বিএনপি নেতা বিশিষ্ট
পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার বিরুদ্ধে ১৮তম সাক্ষীকে
জেরা করেছেন।
গতকাল
দিনব্যাপী সাক্ষীকে তিনি জেরা করেন ও তার জেরা শেষ হয়েছে। এর আগে
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আরেকজন সাক্ষীকে জেরা করেন। তবে সে
জেরা ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে হওয়ায় তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
গতকাল গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাক্ষীকে
জেরা করেন ও ট্রাইব্যুনাল তার জেরার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন।
সংসদ অধিবেশন চলাকালে একজন এমপি হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিচারকার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সে আবেদন খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজের অধিকার রক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রমে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার আইনজীবীদের নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দেন। এ অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৭তম সাক্ষীর জেরার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে সেই সাক্ষীকে জেরা করেন। গতকাল ১৮তম সাক্ষী দেবব্রত সরকারকেও জেরা করেন তিনি। গত চার ফেব্রুয়ারি তিনি জবানবন্দী প্রদান করেন ট্রাইব্যুনালে। জেরার সময় তার পাশে ছিলেন ট্রাইব্যুনাল নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় আইনজীবী সালমা হাই।
জেরা :
প্রশ্ন : আইডি কার্ডে আপনার জন্ম তারিখ কত?
উত্তর : ১৬/৪/১৯৬৪
প্রশ্ন : তাহলে ১৯৭১ সালে আপনার বয়স ছিল সাত বছর।
উত্তর : আমার আসল জন্ম তারিখ ৫/১/১৯৬৩। (সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল অনুমান ১০ বছর। গতকাল তিনি জেরায় বললেন তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৫/১/১৯৬৩। সে হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরুর সময় তার প্রকৃত বয়স ছিল আট বছর ২ মাস ২১ দিন)।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন ১৯৭১ সালে আপনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন। কোন স্কুলে পড়তেন?
উত্তর : আঁধারমানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
প্রশ্ন : আপনি ওই সময় তাহলে গ্রামে থেকে স্কুলে পড়ালেখা করতেন।
উত্তর : হ্যাঁ। তবে মাঝে মধ্যে শহরের বাসায় বেড়াতে যেতাম।
প্রশ্ন : আপনি জবানবন্দীতে বলেছেন আপনারা যুদ্ধ শুরুর পর শহর ছেড়ে গ্রামে গেলেন। তো শহরে কবে গেলেন?
উত্তর : যুদ্ধ শুরুর চার-পাঁচ দিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : কারা কারা গেলেন বেড়াতে?
উত্তর : আমি, আমার ফুফু ও ঠাকুরমা।
প্রশ্ন : কোন বাসায় গেলেন?
উত্তর : দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসায়।
প্রশ্ন : আঁধারমানিক থেকে কোন পথে কিভাবে শহরে গেলেন?
উত্তর : সাম্পানে করে গশ্চিনয়ারহাট, এরপর বাসে চড়ে শহরের আন্দরকিল্লা হয়ে বাসায় গেলাম।
প্রশ্ন : বাসের রুট কোনটা?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : শহরের বাড়ি ছেড়ে যখন গ্রামে গেলেন তখন কারা কারা গেলেন?
উত্তর : সবাই। ঠাকুরমা, ফুফু, বাবা, চাচা।
প্রশ্ন : কবে গেলেন?
উত্তর : সম্ভবত ২৮/২৯ মার্চ।
প্রশ্ন : আসার সময় কোন দিক দিয়ে কিভাবে এলেন?
উত্তর : সাম্পানে করে চাকতাই কর্ণফুলী হয়ে।
প্রশ্ন : শহরে তখন যুদ্ধ ও গোলাগুলি চলছিল?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : শহর থেকে পালিয়ে গ্রামে আসার পর পাঁচজন আবার শহরে গেল একজনকে আনার জন্য?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসাটি তখন কোনমুখী ছিল?
উত্তর : পশ্চিমমুখী।
প্রশ্ন : সুনীল কোথায় থাকত?
উত্তর : জেঠুর সাথে স্থায়ীভাবে থাকত তার পাচক হিসেবে।
প্রশ্ন : সুনীল চট্টগ্রাম থেকে কিভাবে এলো?
উত্তর : সাম্পানে করে নিয়ে এলো।
প্রশ্ন : এখানে আপনি যে ঘটনার কথা বললেন তা সব সুনীলের কাছে শোনা?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : সুনীলকে কে নিয়ে এলো?
উত্তর : তাদের নাম মনে নেই। একজনের নাম গৌরাঙ্গ মনে আছে। তবে সে জীবিত নেই।
প্রশ্ন : সুনীল বাবু এখন কোথায়?
উত্তর : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার খোঁজ পাইনি।
প্রশ্ন : খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন?
উত্তর : করেছি, পাইনি।
প্রশ্ন : তার বাবার নাম কী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : তার বাড়ির ঠিকানা কী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনি যে সুনীলের কথা বলেছেন তা কল্পিত। আপনার কল্পিত এই সুনীল নামে ইহজগতে কারো জন্ম হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : তার মতো বিশ্বস্ত একজন লোককে খোঁজার জন্য কোনো জিডিও করেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এই তথাকথিত কাহিনী নিয়ে থানায় কোনো জিডি বা মামলাও করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক বই রয়েছে। অন্তত একটি বইয়ের নাম বলুন, যেখানে আপনার বর্ণিত ঘটনা উল্লেখ আছে।
উত্তর : বলতে পারব না। তবে ম্যাগাজিনে আছে।
প্রশ্ন : একটি ম্যাগাজিনের নাম বলেন।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : সোবহানকে চিনতেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার বর্ণনা দেন।
উত্তর : লম্বাটে ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের বাসার পাশে কোনো সোবহান ছিল না।
উত্তর : সত্য। তবে সে খাতুনগঞ্জের জেঠুর বাসার পাশে ছিল।
প্রশ্ন : সুনীলকে যে দিন নিয়ে এলো গ্রামের বাড়ি, সে দিন বাড়িতে কে কে ছিল।
উত্তর : আমার ঠাকুরদাদা বীরেন্দ্র লাল সরকার এবং ধীরেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন।
প্রশ্ন : আপনারা শুধু এই তিনজন ঘটনা শুনলেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার মধ্যে শুধু আপনি জীবিত আছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনার ঠাকুরদাদাদের সাথে শুধু আপনি তখন ওই বাড়িতে ছিলেন এবং আপনার বয়স ছিল তখন সাত-আট বছর।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনারা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ানপুর যাওয়ার কথা বললেন। দেওয়ানপুর কোনো অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনের কথা শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনারা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিনাজুরিতে ছিলেন। ১৩ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত পুরো রাউজানে এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনেছেন?
উত্তর : ১১ এপ্রিল আমাদের উপস্থিতিতে উত্তর গুজরায় আমার নানার বাড়ি লুট হয়। সে কারণে আমরা নানার বাড়ি ছেড়ে বিনাজুরি স্কুলে আশ্রয় নেই।
প্রশ্ন : রাউজানে ধর্মান্তর করা হয়েছে বা জোর করে কোনো মেয়েকে বিয়ে করা হয়েছে এমন একজনের নাম অন্তত বলেন।
উত্তর : আমার কাছে তথ্য নেই। কারণ আমরা ভারতে চলে যাই।
প্রশ্ন : ভারত থেকে আসার পর এ ধরনের ঘটনা শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সোবহানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেছিলেন?
উত্তর : জানা নেই। সে পালিয়ে যায় স্বাধীনতার পর।
প্রশ্ন : সোবহান আপনার কল্পিত ব্যক্তির নাম।
উত্তর : সত্য নয়। শুনেছি সে অনেক আগে মারা গেছে।
প্রশ্ন : বিনাজুরি থেকে ভারত যেতে হলে রাঙ্গামাটি রোড ক্রস করতে হয়।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : বিনাজুরিতে থাকা অবস্থায়ই শোনেন নূতন বাবুকে হত্যার ঘটনা?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তত দিনে পাকিস্তান আর্মি রাউজানে এসেছে এ কথা শুনেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : এ অবস্থায় আপনারা রাঙ্গামাটি রোড ক্রস করে ভারতে যান?
উত্তর : হ্যাঁ। রাতে যাই আমরা।
প্রশ্ন : ওই সময় অর্থাৎ চার-পাঁচ এপ্রিল কেউ গ্রাম থেকে শহরে যায়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কাপ্তাই থেকে শহরের উদ্দেশে কোনো বাস ছাড়েনি।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ২৬ মার্চ থেকে কর্ণফুলী নদীতে আর্মি টহল শুরু করে। কোনো নৌযান কর্ণফুলী নদীতে তখন চলাচল করেনি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনলেন তা কি শুধু আপনি জানেন, না রাউজানের আর কেউ জানে?
উত্তর : রাউজানবাসী সবাই জানে। (পরে সাক্ষী বলেন) অনেকেই জানে।
প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ কে ছিলেন জানেন?
উত্তর : আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি আব্দুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই।
প্রশ্ন : এ নির্বাচনে আমি প্রতিপক্ষের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করি তা জানেন?
উত্তর : জিতেছেন তা জানি, দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন কি না জানি না।
প্রশ্ন : ওই নির্বাচনে আমি সরকারি দলের প্রার্থী ছিলাম না জানেন (সরকারি দলের প্রার্থীর জামানত খোয়া গিয়েছিল)?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালে আমি রাউজানের পাশের থানা রাঙ্গুনিয়া থেকেও নির্বাচিত হয়েছিলাম তা জানেন?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : রাউজান থেকে পরে আমি আরো দুইবার নির্বাচন করি ও সেই দুইবারও নির্বাচিত হই।
উত্তর : সত্য।
এ প্রশ্নের পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, সবাই আপনার ঘটনা জানে; আর তারা আমাকে ভোট দিলো। তারা বোকা নাকি?
জেরা শেষ হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আইনজীবীদের পুনরায় নিয়োগের জন্য ওকালতনামা জমা দেন ট্রাইব্যুনালে।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মি. চৌধুরী আপনি তো উকিল ছাড়া খুব ভালো করেছেন। আইনজীবীর দরকার কী। আপনি তো দেখা যায় এক্সপার্টদেরও এক্সপার্ট।
জবাবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমি জেরা করতে পারব। কিন্তু বন্দী থাকার কারণে আমি তো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। হোমওয়ার্কও করতে পারছি না সেভাবে। তাই ওকালতনামা দিলাম।
গোলাম আযমের মামলা : হরতালজনিত কারণে গতকাল অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে কোনো সিনিয়র আইনজীবী ও সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তার মামলা আজ বৃহস্পতিবার মুলতবি করা হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন আজ তার মামলায় আসামি পক্ষে দু’জন সাক্ষী হাজির করতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির এবং সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সংসদ অধিবেশন চলাকালে একজন এমপি হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিচারকার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সে আবেদন খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজের অধিকার রক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রমে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার আইনজীবীদের নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দেন। এ অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৭তম সাক্ষীর জেরার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে সেই সাক্ষীকে জেরা করেন। গতকাল ১৮তম সাক্ষী দেবব্রত সরকারকেও জেরা করেন তিনি। গত চার ফেব্রুয়ারি তিনি জবানবন্দী প্রদান করেন ট্রাইব্যুনালে। জেরার সময় তার পাশে ছিলেন ট্রাইব্যুনাল নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় আইনজীবী সালমা হাই।
জেরা :
প্রশ্ন : আইডি কার্ডে আপনার জন্ম তারিখ কত?
উত্তর : ১৬/৪/১৯৬৪
প্রশ্ন : তাহলে ১৯৭১ সালে আপনার বয়স ছিল সাত বছর।
উত্তর : আমার আসল জন্ম তারিখ ৫/১/১৯৬৩। (সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল অনুমান ১০ বছর। গতকাল তিনি জেরায় বললেন তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৫/১/১৯৬৩। সে হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরুর সময় তার প্রকৃত বয়স ছিল আট বছর ২ মাস ২১ দিন)।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন ১৯৭১ সালে আপনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন। কোন স্কুলে পড়তেন?
উত্তর : আঁধারমানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
প্রশ্ন : আপনি ওই সময় তাহলে গ্রামে থেকে স্কুলে পড়ালেখা করতেন।
উত্তর : হ্যাঁ। তবে মাঝে মধ্যে শহরের বাসায় বেড়াতে যেতাম।
প্রশ্ন : আপনি জবানবন্দীতে বলেছেন আপনারা যুদ্ধ শুরুর পর শহর ছেড়ে গ্রামে গেলেন। তো শহরে কবে গেলেন?
উত্তর : যুদ্ধ শুরুর চার-পাঁচ দিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : কারা কারা গেলেন বেড়াতে?
উত্তর : আমি, আমার ফুফু ও ঠাকুরমা।
প্রশ্ন : কোন বাসায় গেলেন?
উত্তর : দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসায়।
প্রশ্ন : আঁধারমানিক থেকে কোন পথে কিভাবে শহরে গেলেন?
উত্তর : সাম্পানে করে গশ্চিনয়ারহাট, এরপর বাসে চড়ে শহরের আন্দরকিল্লা হয়ে বাসায় গেলাম।
প্রশ্ন : বাসের রুট কোনটা?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : শহরের বাড়ি ছেড়ে যখন গ্রামে গেলেন তখন কারা কারা গেলেন?
উত্তর : সবাই। ঠাকুরমা, ফুফু, বাবা, চাচা।
প্রশ্ন : কবে গেলেন?
উত্তর : সম্ভবত ২৮/২৯ মার্চ।
প্রশ্ন : আসার সময় কোন দিক দিয়ে কিভাবে এলেন?
উত্তর : সাম্পানে করে চাকতাই কর্ণফুলী হয়ে।
প্রশ্ন : শহরে তখন যুদ্ধ ও গোলাগুলি চলছিল?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : শহর থেকে পালিয়ে গ্রামে আসার পর পাঁচজন আবার শহরে গেল একজনকে আনার জন্য?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসাটি তখন কোনমুখী ছিল?
উত্তর : পশ্চিমমুখী।
প্রশ্ন : সুনীল কোথায় থাকত?
উত্তর : জেঠুর সাথে স্থায়ীভাবে থাকত তার পাচক হিসেবে।
প্রশ্ন : সুনীল চট্টগ্রাম থেকে কিভাবে এলো?
উত্তর : সাম্পানে করে নিয়ে এলো।
প্রশ্ন : এখানে আপনি যে ঘটনার কথা বললেন তা সব সুনীলের কাছে শোনা?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : সুনীলকে কে নিয়ে এলো?
উত্তর : তাদের নাম মনে নেই। একজনের নাম গৌরাঙ্গ মনে আছে। তবে সে জীবিত নেই।
প্রশ্ন : সুনীল বাবু এখন কোথায়?
উত্তর : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার খোঁজ পাইনি।
প্রশ্ন : খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছেন?
উত্তর : করেছি, পাইনি।
প্রশ্ন : তার বাবার নাম কী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : তার বাড়ির ঠিকানা কী?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনি যে সুনীলের কথা বলেছেন তা কল্পিত। আপনার কল্পিত এই সুনীল নামে ইহজগতে কারো জন্ম হয়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : তার মতো বিশ্বস্ত একজন লোককে খোঁজার জন্য কোনো জিডিও করেননি?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : এই তথাকথিত কাহিনী নিয়ে থানায় কোনো জিডি বা মামলাও করেননি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক বই রয়েছে। অন্তত একটি বইয়ের নাম বলুন, যেখানে আপনার বর্ণিত ঘটনা উল্লেখ আছে।
উত্তর : বলতে পারব না। তবে ম্যাগাজিনে আছে।
প্রশ্ন : একটি ম্যাগাজিনের নাম বলেন।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : সোবহানকে চিনতেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার বর্ণনা দেন।
উত্তর : লম্বাটে ছিল।
প্রশ্ন : আপনাদের বাসার পাশে কোনো সোবহান ছিল না।
উত্তর : সত্য। তবে সে খাতুনগঞ্জের জেঠুর বাসার পাশে ছিল।
প্রশ্ন : সুনীলকে যে দিন নিয়ে এলো গ্রামের বাড়ি, সে দিন বাড়িতে কে কে ছিল।
উত্তর : আমার ঠাকুরদাদা বীরেন্দ্র লাল সরকার এবং ধীরেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন।
প্রশ্ন : আপনারা শুধু এই তিনজন ঘটনা শুনলেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার মধ্যে শুধু আপনি জীবিত আছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনার ঠাকুরদাদাদের সাথে শুধু আপনি তখন ওই বাড়িতে ছিলেন এবং আপনার বয়স ছিল তখন সাত-আট বছর।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আপনারা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ানপুর যাওয়ার কথা বললেন। দেওয়ানপুর কোনো অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনের কথা শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনারা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিনাজুরিতে ছিলেন। ১৩ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত পুরো রাউজানে এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনেছেন?
উত্তর : ১১ এপ্রিল আমাদের উপস্থিতিতে উত্তর গুজরায় আমার নানার বাড়ি লুট হয়। সে কারণে আমরা নানার বাড়ি ছেড়ে বিনাজুরি স্কুলে আশ্রয় নেই।
প্রশ্ন : রাউজানে ধর্মান্তর করা হয়েছে বা জোর করে কোনো মেয়েকে বিয়ে করা হয়েছে এমন একজনের নাম অন্তত বলেন।
উত্তর : আমার কাছে তথ্য নেই। কারণ আমরা ভারতে চলে যাই।
প্রশ্ন : ভারত থেকে আসার পর এ ধরনের ঘটনা শুনেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : সোবহানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেছিলেন?
উত্তর : জানা নেই। সে পালিয়ে যায় স্বাধীনতার পর।
প্রশ্ন : সোবহান আপনার কল্পিত ব্যক্তির নাম।
উত্তর : সত্য নয়। শুনেছি সে অনেক আগে মারা গেছে।
প্রশ্ন : বিনাজুরি থেকে ভারত যেতে হলে রাঙ্গামাটি রোড ক্রস করতে হয়।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : বিনাজুরিতে থাকা অবস্থায়ই শোনেন নূতন বাবুকে হত্যার ঘটনা?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তত দিনে পাকিস্তান আর্মি রাউজানে এসেছে এ কথা শুনেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : এ অবস্থায় আপনারা রাঙ্গামাটি রোড ক্রস করে ভারতে যান?
উত্তর : হ্যাঁ। রাতে যাই আমরা।
প্রশ্ন : ওই সময় অর্থাৎ চার-পাঁচ এপ্রিল কেউ গ্রাম থেকে শহরে যায়নি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কাপ্তাই থেকে শহরের উদ্দেশে কোনো বাস ছাড়েনি।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ২৬ মার্চ থেকে কর্ণফুলী নদীতে আর্মি টহল শুরু করে। কোনো নৌযান কর্ণফুলী নদীতে তখন চলাচল করেনি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনলেন তা কি শুধু আপনি জানেন, না রাউজানের আর কেউ জানে?
উত্তর : রাউজানবাসী সবাই জানে। (পরে সাক্ষী বলেন) অনেকেই জানে।
প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ কে ছিলেন জানেন?
উত্তর : আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি আব্দুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই।
প্রশ্ন : এ নির্বাচনে আমি প্রতিপক্ষের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করি তা জানেন?
উত্তর : জিতেছেন তা জানি, দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন কি না জানি না।
প্রশ্ন : ওই নির্বাচনে আমি সরকারি দলের প্রার্থী ছিলাম না জানেন (সরকারি দলের প্রার্থীর জামানত খোয়া গিয়েছিল)?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালে আমি রাউজানের পাশের থানা রাঙ্গুনিয়া থেকেও নির্বাচিত হয়েছিলাম তা জানেন?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : রাউজান থেকে পরে আমি আরো দুইবার নির্বাচন করি ও সেই দুইবারও নির্বাচিত হই।
উত্তর : সত্য।
এ প্রশ্নের পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, সবাই আপনার ঘটনা জানে; আর তারা আমাকে ভোট দিলো। তারা বোকা নাকি?
জেরা শেষ হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আইনজীবীদের পুনরায় নিয়োগের জন্য ওকালতনামা জমা দেন ট্রাইব্যুনালে।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মি. চৌধুরী আপনি তো উকিল ছাড়া খুব ভালো করেছেন। আইনজীবীর দরকার কী। আপনি তো দেখা যায় এক্সপার্টদেরও এক্সপার্ট।
জবাবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমি জেরা করতে পারব। কিন্তু বন্দী থাকার কারণে আমি তো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। হোমওয়ার্কও করতে পারছি না সেভাবে। তাই ওকালতনামা দিলাম।
গোলাম আযমের মামলা : হরতালজনিত কারণে গতকাল অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে কোনো সিনিয়র আইনজীবী ও সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তার মামলা আজ বৃহস্পতিবার মুলতবি করা হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন আজ তার মামলায় আসামি পক্ষে দু’জন সাক্ষী হাজির করতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির এবং সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
No comments