স্বপ্ন by ইসতিয়াক আহমেদ
তার সাথে আমার দেখা কাঁটাবন ঢালে। ঢালের পাশে অষ্টব্যঞ্জন হোটেল। সেখানে
২০১২-এর ১ এপ্রিল তার সাথে দেখা হওয়াটা এপ্রিল ফুলের মতোই এক বিরাট
সারপ্রাইজ ছিল।
কেননা তাকে দেখে আমি এতই মুগ্ধ হয়ে যা-ই
যে, তা আমার কাছে বিরাট এপ্রিল ফুল বলে মনে হয়। তার উপস্থিতি এমন এক আবহের
জš§ দেয়Ñ যাকে একটা গোলাপ বাগানের মতো সৌন্দর্য ও মুগ্ধকর বলয় ছাড়া বলে
মনে হয়। তার চোখ দুটো গাড়ির হেডলাইট মতো তীব্র আলো ছড়িয়ে আমাকে দগ্ধ
করে দিচ্ছিল। আর তার হাসি যেন শরতের সকাল আর শিউলি একত্র হলে যে নির্মলতা
ছড়ায় তেমনি। যতবার সে হেসে উঠছিল, ততবার মনে হচ্ছিলÑ একতোড়া শিউলি ফুটে
তা ছড়িয়ে পড়ছে।
দেখা হওয়ার আগে অনেক দিন তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কথা শুনলেই মনে হতো, একটা আদুরে বিড়াল কথা দিয়ে হাত আঁচড়ে দিচ্ছে। এসব নানা অনুভূতি তাকে ঘিরে আমার ভেতর খেলা করে। ফলে দেখা হওয়ার বিষয়টা আমার জন্য বিরাট সুখস্মৃতি। এই শরতের সকাল, শিউলি বা আমার মুগ্ধতার নাম লামিসা রেজা, পড়ে ভিকারুন্নিসায়। এইচএসসি পরীার্থী।
আমি চাই তার সাথে প্রতিদিন দেখা হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তা ঘটে না। আমি চাই, আমরা দু’জন কোথাও হারিয়ে যাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের হারানোর মতো ঘটনা ঘটে না। এসব ভেবে ভেবে দিন কাটাই। লামিসার সাথে আমার ফোনে কথা হয়, কিন্তু দেখা হবে হবে করেও হয় না। এমন যখন গল্প তখন মনে হয় একদিন যদি আমি ওকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলি? মনে হয় একদিন যদি সে কোথায় তা আর খুঁজে না পাই, তখন?
এভাবে দিন যেতে থাকে। তার সাথে আমার কখনো-সখনো ফোনে কথা হয়। দেখা হয় মাঝে মধ্যে। কিন্তু হঠাৎ সত্যি সত্যি তার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার ফোন বন্ধ। ফেসবুকে গিয়ে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। লামিসা নামটা সার্চ দেয়ার সাথে সাথে অগণিত অচেনা মুখ এসে হাজির হয় এবং এসব মুখকে মনে হয় আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছে।
আমি লামিসাকে খুঁজে বেড়াই। বাসা এলিফ্যান্ট রোড। একবার ভাবি তার বাসায় গিয়ে হাজির হবো, তারপর…। কিন্তু যাবো কেন? সে কি বুঝতে পারে না? সে কি টের পায় না, আমি তাকে কতটুকু বাসি ভালো। তার কাছের দুই বান্ধবী, তানিশা ও পূর্ণাকে মনে হয় একবার খুঁজে বের করি। বের করে আমার মনের সব কথা খুলে বলি। কিন্তু কেন জানি হয়ে ওঠে না।
এর মধ্যে এক রাতে স্বপ্ন দেখি, একটা বনের পাশে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। বন মানে গহিন বন। যত দূর দৃষ্টি যায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল গাছের সারি। আর অনেক লতাপাতা। সব কিছুর রঙ নীল। কোথাও কোথাও দগদগে লাল রঙ, দেখলেই ভয় লাগে। এমন একটা বনের ভেতর আমি ঢুকে যাচ্ছি। কিছু দূর যাওয়ার পর চমকে উঠি। একটা হরিণ। কিন্তু মুখটা মানুষের এবং সে মুখ লামিসার। কী আশ্বর্য! আমি বিরাট বিস্ময় নিয়ে হরিণটার দিকে এগোতে থাকি। প্রথমে হরিণটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও আমি তার কাছাকাছি হওয়ার আগেই সে সরে যায়। আমি আবার তার কাছাকাছি হতে চাই। কিন্তু সে আরো ভেতর বনে চলে যায়। আমি আবারো তার দিকে যেতে থাকি। তখন হঠাৎ কোথায় থেকে একটা চিতাবাঘ এসে হরিণটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি বিরাট বিস্ময় আর হতাশা নিয়ে হরিণটার দিকে দৌড়াতে শুরু করি। তখন দেখতে পাই বাঘটা লামিসাকে কামড়ে ধরেছে। মনে হলো এখনি ওকে হত্যা করবে। মনে হলো এখনি ওকে গিলে ফেলবে। কিন্তু তার কিছুই ঘটল না। হরিণটা বাঘের সাথে নিঃশব্দে বনের ভেতর ঢুকে গেল। যাওয়ার সময় মনে হলো, হরিণটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেল। এরপর ঘুম ভেঙে যায়। আমি জেগে ওঠে খুবই অবাক হয়ে ভাবতে থাকলামÑ এই যে স্বপ্ন, এর মানে কী!
ঘুম ভাঙার পর আমি আরো একা হয়ে যাই। মনে পড়ে তার জন্য এত যে উপহার কিনে কিনে আমার ঘর ভরে রেখেছি, এ সব কিছু আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি হাসছে। ভাবি, হাসে হাসুক। কিন্তু আমি তো তার দিকে আমার মুগ্ধ পলক দিয়ে রেখেছি। মনে হয়, এই মানুষটার জন্য অনন্তকাল ধরে যে অপো, তা ফুরাতে কি?
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেখা হওয়ার আগে অনেক দিন তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কথা শুনলেই মনে হতো, একটা আদুরে বিড়াল কথা দিয়ে হাত আঁচড়ে দিচ্ছে। এসব নানা অনুভূতি তাকে ঘিরে আমার ভেতর খেলা করে। ফলে দেখা হওয়ার বিষয়টা আমার জন্য বিরাট সুখস্মৃতি। এই শরতের সকাল, শিউলি বা আমার মুগ্ধতার নাম লামিসা রেজা, পড়ে ভিকারুন্নিসায়। এইচএসসি পরীার্থী।
আমি চাই তার সাথে প্রতিদিন দেখা হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তা ঘটে না। আমি চাই, আমরা দু’জন কোথাও হারিয়ে যাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের হারানোর মতো ঘটনা ঘটে না। এসব ভেবে ভেবে দিন কাটাই। লামিসার সাথে আমার ফোনে কথা হয়, কিন্তু দেখা হবে হবে করেও হয় না। এমন যখন গল্প তখন মনে হয় একদিন যদি আমি ওকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলি? মনে হয় একদিন যদি সে কোথায় তা আর খুঁজে না পাই, তখন?
এভাবে দিন যেতে থাকে। তার সাথে আমার কখনো-সখনো ফোনে কথা হয়। দেখা হয় মাঝে মধ্যে। কিন্তু হঠাৎ সত্যি সত্যি তার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার ফোন বন্ধ। ফেসবুকে গিয়ে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। লামিসা নামটা সার্চ দেয়ার সাথে সাথে অগণিত অচেনা মুখ এসে হাজির হয় এবং এসব মুখকে মনে হয় আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছে।
আমি লামিসাকে খুঁজে বেড়াই। বাসা এলিফ্যান্ট রোড। একবার ভাবি তার বাসায় গিয়ে হাজির হবো, তারপর…। কিন্তু যাবো কেন? সে কি বুঝতে পারে না? সে কি টের পায় না, আমি তাকে কতটুকু বাসি ভালো। তার কাছের দুই বান্ধবী, তানিশা ও পূর্ণাকে মনে হয় একবার খুঁজে বের করি। বের করে আমার মনের সব কথা খুলে বলি। কিন্তু কেন জানি হয়ে ওঠে না।
এর মধ্যে এক রাতে স্বপ্ন দেখি, একটা বনের পাশে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। বন মানে গহিন বন। যত দূর দৃষ্টি যায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল গাছের সারি। আর অনেক লতাপাতা। সব কিছুর রঙ নীল। কোথাও কোথাও দগদগে লাল রঙ, দেখলেই ভয় লাগে। এমন একটা বনের ভেতর আমি ঢুকে যাচ্ছি। কিছু দূর যাওয়ার পর চমকে উঠি। একটা হরিণ। কিন্তু মুখটা মানুষের এবং সে মুখ লামিসার। কী আশ্বর্য! আমি বিরাট বিস্ময় নিয়ে হরিণটার দিকে এগোতে থাকি। প্রথমে হরিণটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও আমি তার কাছাকাছি হওয়ার আগেই সে সরে যায়। আমি আবার তার কাছাকাছি হতে চাই। কিন্তু সে আরো ভেতর বনে চলে যায়। আমি আবারো তার দিকে যেতে থাকি। তখন হঠাৎ কোথায় থেকে একটা চিতাবাঘ এসে হরিণটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি বিরাট বিস্ময় আর হতাশা নিয়ে হরিণটার দিকে দৌড়াতে শুরু করি। তখন দেখতে পাই বাঘটা লামিসাকে কামড়ে ধরেছে। মনে হলো এখনি ওকে হত্যা করবে। মনে হলো এখনি ওকে গিলে ফেলবে। কিন্তু তার কিছুই ঘটল না। হরিণটা বাঘের সাথে নিঃশব্দে বনের ভেতর ঢুকে গেল। যাওয়ার সময় মনে হলো, হরিণটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে গেল। এরপর ঘুম ভেঙে যায়। আমি জেগে ওঠে খুবই অবাক হয়ে ভাবতে থাকলামÑ এই যে স্বপ্ন, এর মানে কী!
ঘুম ভাঙার পর আমি আরো একা হয়ে যাই। মনে পড়ে তার জন্য এত যে উপহার কিনে কিনে আমার ঘর ভরে রেখেছি, এ সব কিছু আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি হাসছে। ভাবি, হাসে হাসুক। কিন্তু আমি তো তার দিকে আমার মুগ্ধ পলক দিয়ে রেখেছি। মনে হয়, এই মানুষটার জন্য অনন্তকাল ধরে যে অপো, তা ফুরাতে কি?
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments