রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা

জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পিকেটারদের পিষে গেছে সরকারি বাস।
এতে দুই শিবিরকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। মিরপুরে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন অজ্ঞাত যুবক। স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই যুবক বাসের গতিরোধ করার সময় চলন্ত বাসের নিচে পিষ্ট হয়। অপর দিকে পুলিশ বলেছে, রাস্তা পার হওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। হরতাল চলাকালে গতকাল সচিবালয়ের পাশের এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সচিবালয়ের একটি দফতরের জানালার কাচ ভেঙে যায় বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে।

হরতালে রাজপথ গতকালও কোথাও কোথাও ছিলো ফাঁকা। জামায়াত-শিবির রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। কোথাও কোথাও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠিপেটা এবং ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত শতাধিক  নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বিচারে মানুষ আটক করেছে। ঢাকায় বেড়াতে বা কাজে এসেও অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন অভিযোগ রয়েছে। হরতালে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট-বিপণিবিতান এবং দোকানপাট বেশির ভাগই বন্ধ ছিল। সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকলেও কাজ চলেছে মেইন গেট বন্ধ করে। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। গতকালও পুলিশ ছিল মারমুখো। বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে পুলিশ বলেছে, গ্রেফতার হয়েছে ২৩ জন।


মিরপুর : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় তারা ওই্ এলাকায় কয়েকটি বাসসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ হরতালকারীদের ধাওয়া করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হরতালকারীরা। সকাল ৭টায় মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের  সামনে একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় তারা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ দিকে একই সময়ে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। সেখানেও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হরতালকারীরা পুলিশের একটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। তারা রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হরতালকারীরা। এ দিকে বিকেলে হরতাল সমর্থনকারীদের মিছিলে বাস তুলে দেয়ায় একজন হরতাল সমর্থনকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জনতা ওই বাসটি আটক করে ভাঙচুর করেছে। পুলিশের বক্তব্য ওই যুবক সাধারণ পথচারী ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বিকেলে মিরপুর ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের সামনে একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় বিকল্প অটো পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-২২৭৭) মিছিলের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে দিলে অজ্ঞাত (১৮) এক তরুণ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই তরুণের পরনে ছিল ছাই রঙের ফুল প্যান্ট ও কমলা কালো রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি। এ দিকে এই ঘটনায় স্থানীয় জনতা ওই বাসটি ভাঙচুর করেছে। তবে পালিয়ে গেছে বাসের চালক।

ধানমন্ডি : সকালে ধানমণ্ডি এলাকায় মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। সেখানে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। হরতালকারীরা সেখানে একটি লেগুনা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা পালিয়ে যায়। এর কিছু সময় পরে জিগাতলায় একটি মিছিল বের হলে পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

পুরান ঢাকা-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী-শ্যামপুর : হরতাল চলাকালে সকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে রায়েরবাগ এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন। রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও র‌্যাব পিকেটারদের লাঠিচার্জ ও ধাওয়া করে। এ সময় উভয়ের মধ্যে কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাতুয়াইলে বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টাকালে বাসের ধাক্কায় দুই  মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। বাসটি তাদের ওপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের দাবি আহতরা শিবিরকর্মী।

এ ছাড়া সকালে যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীরবাগ, দোলাইপাড়, শ্যামপুরে পিকেটারেরা রাস্তায় যানবাহনে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। সকালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, ধোলাইখাল, বংশাল, লালবাগ, চকবাজার এলাকায় হরতাল চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। হরতালকারীরা পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে। সকালে হাজারীবাগে একটি মিছিল বের হলে সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়।

মতিঝিল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার : মতিঝিল, পল্টনমোড়, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। বেলা পৌনে ২টার দিকে ফকিরাপুল এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করতে গেলে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ছাত্র শিবিরের অন্তত একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস কাবের কাছে তোপখানা রোডে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রলীগের এক নেতা আহত হন।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনেও গতকাল বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল।

এ দিকে, হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ব্যাপকহারে আটক করে। সূত্র জানায়, যাকেই সন্দেহ হয়েছে পুলিশ তাকেই ধরে নিয়ে গেছে। গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে পুলিশ ব্যাপক বাণিজ্য করে। হরতালে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বিজিবি সদস্যদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে তাদের কোনো অ্যাকশনে যেতে হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.