আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের উদ্যোগ সরকারের by হাবিবুর রহমান
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
আপিল বিভাগে এখন প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয়
সদস্যের বেঞ্চ রয়েছে।
বর্তমানে
আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার বিধান রয়েছে। এই সংখ্যক বিচারপতি দিয়ে
আপিল বিভাগে দু’টি বা তিনটি বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার
অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আপিল বিভাগে আরো তিন থেকে পাঁচজন বিচারপতি
নিয়োগ দিয়ে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য সর্বশেষ আপিল
বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন করা হয়। আলোচিত আরো কয়েকটি মামলা ওই বেঞ্চে
শুনানি হয়। তবে আপিল বিভাগ থেকে বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর
আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দু’টি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের আরো কয়েকটি মামলার রায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করে রায় দ্রুত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন একই ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাও রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের আরো কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
আপিল বিভাগে বর্তমানে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নতুন কোনো মামলার আপিল করা হলে তা আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় আসতেই কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান করেছে সরকার। দেশের প্রচলিত আইনে আপিল করার সময় দুই মাস। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবেÑ এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের পক্ষে। তবে সরকার অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন করে সেখানে ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির উদ্যোগ নিতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী জানান। আগামী রোববার এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হবে বলে জানা গেছে।
আপিল বিভাগে ২০১০ সাল থেকে বেঞ্চ অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এই শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া হবে। সরকার আরো তিন থেকে পাঁচজন বিচারপতি আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়ার পরই দ্বিতীয় বেঞ্চ যাত্রা শুরু করবে। আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন হলে প্রধান বিচারপতির পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বে ওই বেঞ্চ গঠন করার রেওয়াজ থাকলেও এ ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের আপিল শুনানি করতে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। তবে হাইকোর্ট থেকে কাদের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হবে সরকার সেই হিসাব-নিকাশ করছে। হিসাব-নিকাশে মিললেই এ নিয়োগের ঘোষণা আসবে। এ ক্ষেত্রে সরকার আস্থাভাজনদেরই প্রাধান্য দিয়ে চিন্তা করছে। নিয়মানুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিদের থেকে আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে সরকার যাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে, তাদেরকেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের রায় আপিল বিভাগেও যাতে বহাল থাকে, সে চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরাও আপিল বিভাগে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগের তালিকায় যে ১০ জন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে তালিকার অনেক নিচে থেকে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিদের মধ্য থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ করা হতে পারে। তবে ওই তালিকা গ্রহণযোগ্য করার উদ্দেশ্যে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ ১০ বিচারপতির তালিকা থেকেও একজন বা দু’জন নিয়োগের তালিকায় আনা হতে পারে।
আপিল বিভাগে বর্তমানে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। এই ছয়জন বিচারপতি হলেন প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো: ইমান আলী।
বর্তমান সরকার আপিল বিভাগে ইতোপূর্বে (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের) জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি মো: মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি মো: শামসুল হুদাকে নিয়োগ দেন। ইতোমধ্যে এই দুই বিচারপতি অবসরে গেছেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর আপিল বিভাগের বিচারপতি শাহ আবু নাইম মমিনুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারকের পদ থেকে ইস্তেফার ঘটনাও ঘটে। সরকার এবারো হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ বিচারপতিদের আবারো আপিল বিভাগে নিয়োগ দিতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা। যে তালিকায় থাকতে পারেন হাইকোর্টের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতি। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের বিচারপতিদের ক্রমানুসারে ৪২ থেকে ৪৫ পর্যন্ত তালিকার চারজন বিচারপতি থাকতে পারেন বলে আইনজীবীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।
অন্য দিকে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরা সব দিক থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও আগের মতো এবারো তারা উপেক্ষিত হতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ রেজোয়ান গত ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। ইতোপূর্বে তার থেকে জুনিয়র বিচারপতিরা আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেও উপেক্ষিত হন অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য এই বিচারপতি। বর্তমানে হাইকোর্টের ১০ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, বিচারপতি আবদুল আউয়াল, বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার, বিচারপতি মো: মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগে অবশ্যই জ্যেষ্ঠতা ও মেধার বিচার করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকার অজ্ঞাত কারণে আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রাধান্য দেন বলে অনেকের ধারণা। এটি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ুণœ করে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিচার বিভাগকে দলীয়করণের একটি অশুভ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এম কে রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে আমরা উদ্যোগ নেবো। আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমরা সব উদ্যোগ নেবো। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে কি নাÑ প্রশ্নের জবাবে এম কে রহমান বলেন, আমরা স্টেপ নেবো। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন করতেও পারেন।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দু’টি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের আরো কয়েকটি মামলার রায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করে রায় দ্রুত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন একই ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাও রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের আরো কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
আপিল বিভাগে বর্তমানে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নতুন কোনো মামলার আপিল করা হলে তা আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় আসতেই কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান করেছে সরকার। দেশের প্রচলিত আইনে আপিল করার সময় দুই মাস। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবেÑ এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের পক্ষে। তবে সরকার অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন করে সেখানে ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির উদ্যোগ নিতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী জানান। আগামী রোববার এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হবে বলে জানা গেছে।
আপিল বিভাগে ২০১০ সাল থেকে বেঞ্চ অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এই শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেয়া হবে। সরকার আরো তিন থেকে পাঁচজন বিচারপতি আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়ার পরই দ্বিতীয় বেঞ্চ যাত্রা শুরু করবে। আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন হলে প্রধান বিচারপতির পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বে ওই বেঞ্চ গঠন করার রেওয়াজ থাকলেও এ ক্ষেত্রেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের মামলার রায়ের আপিল শুনানি করতে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। তবে হাইকোর্ট থেকে কাদের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হবে সরকার সেই হিসাব-নিকাশ করছে। হিসাব-নিকাশে মিললেই এ নিয়োগের ঘোষণা আসবে। এ ক্ষেত্রে সরকার আস্থাভাজনদেরই প্রাধান্য দিয়ে চিন্তা করছে। নিয়মানুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিদের থেকে আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে সরকার যাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে, তাদেরকেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের রায় আপিল বিভাগেও যাতে বহাল থাকে, সে চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরাও আপিল বিভাগে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগের তালিকায় যে ১০ জন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে তালিকার অনেক নিচে থেকে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিদের মধ্য থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ করা হতে পারে। তবে ওই তালিকা গ্রহণযোগ্য করার উদ্দেশ্যে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ ১০ বিচারপতির তালিকা থেকেও একজন বা দু’জন নিয়োগের তালিকায় আনা হতে পারে।
আপিল বিভাগে বর্তমানে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। এই ছয়জন বিচারপতি হলেন প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো: ইমান আলী।
বর্তমান সরকার আপিল বিভাগে ইতোপূর্বে (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের) জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি মো: মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি মো: শামসুল হুদাকে নিয়োগ দেন। ইতোমধ্যে এই দুই বিচারপতি অবসরে গেছেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর আপিল বিভাগের বিচারপতি শাহ আবু নাইম মমিনুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারকের পদ থেকে ইস্তেফার ঘটনাও ঘটে। সরকার এবারো হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ বিচারপতিদের আবারো আপিল বিভাগে নিয়োগ দিতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা। যে তালিকায় থাকতে পারেন হাইকোর্টের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতি। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের বিচারপতিদের ক্রমানুসারে ৪২ থেকে ৪৫ পর্যন্ত তালিকার চারজন বিচারপতি থাকতে পারেন বলে আইনজীবীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।
অন্য দিকে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরা সব দিক থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও আগের মতো এবারো তারা উপেক্ষিত হতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ রেজোয়ান গত ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। ইতোপূর্বে তার থেকে জুনিয়র বিচারপতিরা আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেও উপেক্ষিত হন অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য এই বিচারপতি। বর্তমানে হাইকোর্টের ১০ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, বিচারপতি আবদুল আউয়াল, বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার, বিচারপতি মো: মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগে অবশ্যই জ্যেষ্ঠতা ও মেধার বিচার করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকার অজ্ঞাত কারণে আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রাধান্য দেন বলে অনেকের ধারণা। এটি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ুণœ করে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিচার বিভাগকে দলীয়করণের একটি অশুভ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এম কে রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে আমরা উদ্যোগ নেবো। আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমরা সব উদ্যোগ নেবো। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠনে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে কি নাÑ প্রশ্নের জবাবে এম কে রহমান বলেন, আমরা স্টেপ নেবো। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগে দ্বিতীয় বেঞ্চ গঠন করতেও পারেন।
No comments