রসকীয়-আহ! ভালোবাসা

কদিন পরই ভালোবাসা দিবস। আহা! ভালোবাসা, প্রেম—এ শব্দগুলো শুনলেই কেমন কেমন যেন লাগে। ভালোবাসা না থাকলে তো কোনো কিছুই হতো না। এই ভালোবাসা নিয়ে কবিতা লিখতে লিখতে কত কবির ঝাঁকড়া চুলভর্তি মাথা যে স্টেডিয়ামে পরিণত হয়েছে তার কোনো হিসাবই নেই। সারা জীবন প্রেমের গল্প লিখে নিজের জন্য একটা প্রেমও জোগাড় করতে পারেনি, এমন লেখকের সংখ্যাও খুব একটা কম নয়।


ভালোবাসার তীব্র টানে নিজেদের ভালো বাসা ছেড়ে প্রেমিক-প্রেমিকা আশ্রয় নেয় পরিবেশবন্ধু গাছতলায়। দারুণ ব্যস্ত শিক্ষক সিলেবাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ছাত্রীকে তিন-চার ঘণ্টা পড়ান, সেটার কারণও ভালোবাসা! অথচ ভালোবাসা দিবস নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই। কত দিবসেই তো সরকার ছুটি দেয়, অথচ ভালোবাসা দিবসের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ একটা দিবসে কোনো ছুটি দেওয়া হয় না। ‘স্যার, আমার পেটে ট্রাবল’—এই টাইপের অজুহাত দিয়ে কোনোমতে ছুটি নিতে হয়। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? তবে কি আমরা ধরে নেব সরকার সাধারণ মানুষকে ভালোবাসে না? তাহলে কি বিরোধী দলের কথাই ঠিক? অথচ, পুরো ব্যাপারটা কত সুন্দর হতে পারত। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হতো, ১২টা এক মিনিটে সর্বস্তরের প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের হাত ধরে ‘প্রেমের মড়া জলে ডোবে না...’ টাইপের গান গেয়ে দিবসটি উদ্যাপন করত। দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করত, যার সব পাতা থাকত বিজ্ঞাপনে পরিপূর্ণ! টিভি সংবাদে বলা হতো, ‘আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বিশ্বের কোটি কোটি প্রেমিক-প্রেমিকার সবচেয়ে বড় উত্সব। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন এবং সর্বস্তরের প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তাদের সুখী জীবন কামনা করেছেন।’ টক শোগুলোতে সরকারি ও বিরোধীদলীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতো, তাঁরা চা খেতে খেতে কার আমলে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য কেমন সুবিধা ছিল তা নিয়ে তুমুল তর্কে লিপ্ত হতেন...ইস! ভাবতেই কত ভালো লাগছে। অথচ, বাস্তবে এসবের কিছুই হয় না! সবার ভাব দেখে মনে হয়, প্রেম-ভালোবাসা বিরাট অপরাধমূলক কর্ম। প্রেম করলেই একেবারে ক্রসফায়ার! আসলে কেউ ভালোবাসার মূল্য বোঝে না। এ জন্যই দেশে এত সমস্যা! ধুর, ভালোই লাগে না। তবু সবাইকে ভ্যালেন্টাইনস দিবসের অনেক অনেক ভালোবাসা।

No comments

Powered by Blogger.