১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফেরত যাওয়ার চক্রান্তমূলক প্রহসন by বদরুদ্দীন উমর
বাংলাদেশে এখন ভাষা, সংস্কৃতি, জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও তার ঐতিহ্য, এক কথায় মহান বলতে যা কিছু বোঝায়, তার বাণিজ্যিকীকরণ যেভাবে হয়েছে তার চরিত্র ভয়াবহ। একুশে ফেব্রুয়ারি ও বাংলা একাডেমীর বইমেলাকে নিয়ে যা শুরু হয়েছে তাতে বোঝা যায় জনগণের উত্সাহ-উদ্দীপনাকে ব্যবহার করে ঘৃণিত আত্মপ্রচারণা ও বাণিজ্যস্বার্থ সমগ্র পরিবেশকে কি পরিমাণে কলুষিত করেছে।
১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭১ এবং তার পরবর্তী কিছু কাল পর্যন্তও যে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রতীক, এখন তাকে পরিণত করা হয়েছে ভাঁড়ামির ব্যাপারে। আত্মপ্রচারণা এবং সেই সঙ্গে অন্য স্বার্থে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অল্প-বিস্তর জড়িত কিছু ব্যক্তি একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে কীভাবে ব্যবহৃত হতে দিয়েছেন তার সব থেকে নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো, একুশে ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক প্রথম আলো’ এবং ‘গ্রামীণফোন’ -এর উদ্যোগে কয়েকজনকে তত্কালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় নিয়ে গিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির মতো এক মহান দিবসের ঘটনাবলির মহড়া দেয়া। এই প্রহসনের কাজ যদি কিছু ছাত্র এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন করত, তাহলেও এর একটা অর্থ থাকত, যদিও সে অর্থের মূল্যও হতো সামান্য। কিন্তু বাস্তবত এটা করেছে দুই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষত গ্রামীণফোনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব থেকে উচ্চহারে কল চার্জ নিয়ে আমাদের দেশের জনগণের পকেট মেরে কোটি কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করছে।
এটা অবশ্য কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। বহুজাতিক বিভিন্ন করপারেশন এখন হয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সাংস্কৃতিক সংগঠন, অনুষ্ঠান ও তত্পরতার পৃষ্ঠপোষক। এক কথায় বলা চলে, এ দেশের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক সংগঠন বহুজাতিক করপোরেশন এবং এনজিওদের অর্থ সাহায্যপ্রাপ্ত ও তাদের হাতে জিম্মি। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, এই পরিস্থিতিতে একটি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্য চর্চার স্বাধীন বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সেটা ঘটছেও না।
একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো ও গ্রামীণফোনের যৌথ উদ্যোগে ‘১৯৫২ সালের ঘটনাবলিতে ফেরত যাওয়ার’ যে মহড়া দেয়া হয়েছে তাতে সজ্ঞানে অথবা অসচেতনভাবে যোগদান করে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলির সঙ্গে অল্পবিস্তর সম্পর্কিত, এমনকি নামমাত্র সম্পর্কিত কয়েক ব্যক্তি নিজেদের যেটুকু ভাবমূর্তি ছিল তা কীভাবে সচেতন লোকজনের সামনে ভূলুণ্ঠিত করেছেন এ উপলব্ধি তাদের আছে বলে মনে হয় না।
এ কথা বিস্তারিতভাবে বলার প্রয়োজন হয় না যে, বহুজাতিক করপোরেশনগুলো যেভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে, যেভাবে এখানকার সাংস্কৃতিক মহলের লোকজনকে নানা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে হাতের মুঠোয় রাখছে, এটা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনেরই দৃষ্টান্ত। বিগত একুশে ফেব্রুয়ারি ‘১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফেরত যাওয়ার’ যে অনুষ্ঠান তারা করেছে তার বিজ্ঞাপন প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোনের যৌথ নামে কয়েক দিন ধরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রেই বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, কি বিপুল পরিমাণ অর্থ এর জন্য ব্যয় হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে কয়েক ব্যক্তি আত্মপ্রচারণার জন্য গেলেও কয়েকজনের পকেটে যে ভালো টাকা-পয়সা ফেলা হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ এসব ব্যাপারে টাকা-পয়সার লেনদেনের জন্য ইতোমধ্যেই সচেতন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে ধিকৃত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমতলার উপরিউক্ত অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোন যৌথ উদ্যোগে একটি ব্রোশিয়ার বা পুস্তিকা বের করেছে। এই পুস্তিকায় আমার একটি লেখা তারা পুনর্মুদ্রণ করেছে। এ কাজ করা হয়েছে প্রতারণামূলকভাবে। আমাকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাদের এক সাংবাদিক সোহরাব হোসেন (যুগান্তরে থাকার সময় তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো) বলেন যে, তারা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তাদের পত্রিকার একটি সাপ্লিমেন্টে আমার একটি লেখা পুনর্মুদ্রিত করতে চান। আমি এতে আপত্তির কোনো কারণ না দেখে অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে আমাকে এ কথা বলে প্রথম আলোর সাপ্লিমেন্টে নয়, ‘প্রথম আলো’ এবং সেই সঙ্গে গ্রামীণফোনের মতো একটি বহুজাতিক করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগ প্রকাশিত পুস্তিকাটিতে আমার লেখাটি ছাপা হয়েছে। প্রথম আলোর এই প্রতারণামূলক কাজের জন্য যেমন আমি বিস্মিত, তেমনি বিক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি যে ‘গ্রামীণফোন’-এর কোনো ব্রোশিয়ারে লেখা দিতে পারি না, এটা এ দেশের সচেতন এবং ওয়াকিবহাল লোকদের জানা আছে। কাজেই একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের জায়গায় তাতে আমার লেখা দেখে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ও মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে একে চিহ্নিত করেছেন। এটাই স্বাভাবিক। প্রথম আলো এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে যে প্রতারণা করেছে এটা বুঝতেও তাদের অসুবিধা হয়নি। বাংলাদেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে যেমন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও তেমনি, আগেকার থেকেও বেশি ভয়াবহ নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারে বহুজাতিক করপোরেশন, এনজিও ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু দেশীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েই এ কাজ করছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফেরত যাওয়া উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হয়েছে সেটিও এই চক্রান্তেরই এক দৃষ্টান্ত।
এই চক্রান্ত প্রতিরোধের প্রয়োজন আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক গণতান্ত্রিক ও জাতীয় কর্তব্য। যে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সাল থেকে বছরের পর বছর ধরে শোষক-শাসক শ্রেণী ও সাম্রাজ্যবাদের তত্পরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দিবস হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে, সেই একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান আজ বিকৃতভাবে সংগঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী এজেন্সির দ্বারা। এটা যে একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের এবং যারা ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের জন্য কতখানি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার ব্যাপার, এটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এর সব থেকে ট্র্যাজিক দিক হলো, ভাষা আন্দোলনের কয়েকজন নেতা-কর্মী এই চক্রান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত থেকে একে ষবমরঃরসধপু প্রদান বা সঙ্গতকরণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দেশে আজ উচ্চমার্গের লোকজনের চরিত্রের অবক্ষয় আজ কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, এ হলো তারই এক অভ্রান্ত উদাহরণ।
এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য সমাজের নতুন প্রজন্মের এবং গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন এখন বড় আকারে দেখা দিয়েছে। এই চক্রান্ত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যদি এই মুহূর্তে প্রতিরোধের জন্য তারা এগিয়ে না আসেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে গড়িয়ে দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্মের আরও ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনবে।
এটা অবশ্য কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। বহুজাতিক বিভিন্ন করপারেশন এখন হয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সাংস্কৃতিক সংগঠন, অনুষ্ঠান ও তত্পরতার পৃষ্ঠপোষক। এক কথায় বলা চলে, এ দেশের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক সংগঠন বহুজাতিক করপোরেশন এবং এনজিওদের অর্থ সাহায্যপ্রাপ্ত ও তাদের হাতে জিম্মি। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, এই পরিস্থিতিতে একটি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্য চর্চার স্বাধীন বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সেটা ঘটছেও না।
একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো ও গ্রামীণফোনের যৌথ উদ্যোগে ‘১৯৫২ সালের ঘটনাবলিতে ফেরত যাওয়ার’ যে মহড়া দেয়া হয়েছে তাতে সজ্ঞানে অথবা অসচেতনভাবে যোগদান করে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলির সঙ্গে অল্পবিস্তর সম্পর্কিত, এমনকি নামমাত্র সম্পর্কিত কয়েক ব্যক্তি নিজেদের যেটুকু ভাবমূর্তি ছিল তা কীভাবে সচেতন লোকজনের সামনে ভূলুণ্ঠিত করেছেন এ উপলব্ধি তাদের আছে বলে মনে হয় না।
এ কথা বিস্তারিতভাবে বলার প্রয়োজন হয় না যে, বহুজাতিক করপোরেশনগুলো যেভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে, যেভাবে এখানকার সাংস্কৃতিক মহলের লোকজনকে নানা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে হাতের মুঠোয় রাখছে, এটা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনেরই দৃষ্টান্ত। বিগত একুশে ফেব্রুয়ারি ‘১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফেরত যাওয়ার’ যে অনুষ্ঠান তারা করেছে তার বিজ্ঞাপন প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোনের যৌথ নামে কয়েক দিন ধরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রেই বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, কি বিপুল পরিমাণ অর্থ এর জন্য ব্যয় হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে কয়েক ব্যক্তি আত্মপ্রচারণার জন্য গেলেও কয়েকজনের পকেটে যে ভালো টাকা-পয়সা ফেলা হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ এসব ব্যাপারে টাকা-পয়সার লেনদেনের জন্য ইতোমধ্যেই সচেতন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে ধিকৃত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমতলার উপরিউক্ত অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোন যৌথ উদ্যোগে একটি ব্রোশিয়ার বা পুস্তিকা বের করেছে। এই পুস্তিকায় আমার একটি লেখা তারা পুনর্মুদ্রণ করেছে। এ কাজ করা হয়েছে প্রতারণামূলকভাবে। আমাকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাদের এক সাংবাদিক সোহরাব হোসেন (যুগান্তরে থাকার সময় তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো) বলেন যে, তারা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তাদের পত্রিকার একটি সাপ্লিমেন্টে আমার একটি লেখা পুনর্মুদ্রিত করতে চান। আমি এতে আপত্তির কোনো কারণ না দেখে অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে আমাকে এ কথা বলে প্রথম আলোর সাপ্লিমেন্টে নয়, ‘প্রথম আলো’ এবং সেই সঙ্গে গ্রামীণফোনের মতো একটি বহুজাতিক করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগ প্রকাশিত পুস্তিকাটিতে আমার লেখাটি ছাপা হয়েছে। প্রথম আলোর এই প্রতারণামূলক কাজের জন্য যেমন আমি বিস্মিত, তেমনি বিক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি যে ‘গ্রামীণফোন’-এর কোনো ব্রোশিয়ারে লেখা দিতে পারি না, এটা এ দেশের সচেতন এবং ওয়াকিবহাল লোকদের জানা আছে। কাজেই একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের জায়গায় তাতে আমার লেখা দেখে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ও মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে একে চিহ্নিত করেছেন। এটাই স্বাভাবিক। প্রথম আলো এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে যে প্রতারণা করেছে এটা বুঝতেও তাদের অসুবিধা হয়নি। বাংলাদেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে যেমন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও তেমনি, আগেকার থেকেও বেশি ভয়াবহ নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারে বহুজাতিক করপোরেশন, এনজিও ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু দেশীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েই এ কাজ করছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফেরত যাওয়া উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হয়েছে সেটিও এই চক্রান্তেরই এক দৃষ্টান্ত।
এই চক্রান্ত প্রতিরোধের প্রয়োজন আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক গণতান্ত্রিক ও জাতীয় কর্তব্য। যে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সাল থেকে বছরের পর বছর ধরে শোষক-শাসক শ্রেণী ও সাম্রাজ্যবাদের তত্পরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দিবস হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে, সেই একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান আজ বিকৃতভাবে সংগঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী এজেন্সির দ্বারা। এটা যে একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের এবং যারা ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের জন্য কতখানি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার ব্যাপার, এটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এর সব থেকে ট্র্যাজিক দিক হলো, ভাষা আন্দোলনের কয়েকজন নেতা-কর্মী এই চক্রান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত থেকে একে ষবমরঃরসধপু প্রদান বা সঙ্গতকরণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দেশে আজ উচ্চমার্গের লোকজনের চরিত্রের অবক্ষয় আজ কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, এ হলো তারই এক অভ্রান্ত উদাহরণ।
এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য সমাজের নতুন প্রজন্মের এবং গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন এখন বড় আকারে দেখা দিয়েছে। এই চক্রান্ত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যদি এই মুহূর্তে প্রতিরোধের জন্য তারা এগিয়ে না আসেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে গড়িয়ে দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্মের আরও ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনবে।
No comments