চারদিক-ভোলা শহর পাখির শহর by নেয়ামতউল্যাহ
মেঘনায় মাছ ধরে জেলে। সে মাছে ভাগ বসাচ্ছে পাখি। এক-দুটি পাখি নয়, শত শত পাখি। মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা সবুজ ফসলের চরে যেতে ইঞ্জিনের নৌকায় যেতে দেখা যায় সে পাখির ঝাঁক। উড়ালপাখি সাঁতরে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। ডুবোচরে জেলেরা খুঁটি জাল আর মশারি জালে মাছ ধরে।
জেলে যখন জাল টেনে পানি ছেঁকে মাছেদের একত্র করে, পাখি নির্বিকারচিত্তে জালের ভেতর থেকে খুঁটে আনে মাছ, খায়। লাখ লাখ মাছের ভেতর দু-এক শ মাছ খেলে কার কী? শত শত বকপক্ষী আর গাংচিলের মাছ খাওয়ার দৃশ্য ভোলাবাসী চোখে দেখে নিত্যদিন।
নদী থেকে যখন ভোলার জমিতে আসবেন, দেখবেন খেত ভরা শাক-সবজি। কৃষক লাঙল-ট্রাক্টরে জমি চাষ করছে। খেতে ও ফসলে পোকা। পোকা নিধনে কৃষকের প্রিয় বন্ধু পাখি। একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার পাখি। সদর উপজেলার ধনিয়া তুলাতুলি এলাকার দক্ষিণ বিলের কৃষক আসলাম গোলদার জানালেন, বক, শালিক, চড়ুই, পানকৌড়িসহ হাজার হাজার পাখি সারা দিন ফসলের খেতে থাকে। কখনো কৃষকের লাঙল ঘিরে, কখনো ফসলের ভেতরে পোঁতা ডালে। কখনো নদীর জালে ও নৌকায় পাখিরা পোকা খায়, খায় জল-কাদায় ভেসে ওঠা মাছ। কৃষক-জেলে ওদের মারে না। পাখিও ভয় পায় না, যেন বন্ধু। তবে বাইরের লোক দেখলে উড়ে পালায়। খাবার শেষে পাখি ফিরে আসে নিরাপদ আশ্রয় ভোলা শহরে। এ জন্য শত শত মাইল নীলাকাশ পাড়ি দেয়। শহরে বসে পাখির কলকাকলি।
শীতে দেশি-বিদেশি পাখিতে ভোলা হয়ে ওঠে পাখির জেলা। শীতে শূন্য শুকনো গাছের শাখা ফাগুনে সবুজ পাতায় পল্লবিত। সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা বক বসত করে, শান্তি!
পাখির অভয়ারণ্য দ্বীপ জেলা ভোলা ছেড়ে সে শীতের অতিথি পাখি চলে গেছে। উঠান-বাগান এখনো মুখরিত ঘরের পাখির কলকাকলিতে। ওরা নদী ও খেতে সারা দিন আহার শেষে শহরে রাতযাপন করে। ভোলা শহরবাসীর এখনো ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে, ঘুম আসে পাখির ডাকে। এ শহর পাখির শহর, এখানে শীত-গ্রীষ্ম-বৃষ্টি-রোদে নিরাপদে কাটছে পাখিদের বছর বছর।
কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা ও ভোলা আবৃত্তি সংসদের সভাপতি সামস উল আলম বলেন, ভোলার জলে-খালে-বিলে শুধু পাখি আর পাখি। শহরে বসেই হাজার পাখির কলকাকলি শোনা যায়, আর দেখা যায় পাখিদের উড়াল সাঁতার। ভোলার নাগরিক প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে উঠেছে সবুজ গাছ আর পাখিদের জন্যই। ২০০৪-০৫ সালেও ভোলা শহরে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি করতে দেখা গেলেও এখন সেটি শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় ভোলার নাগরিক সমাজ পাখিশিকারিদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাখিগুলোকে চরে উন্মুক্ত করে দিত। এভাবে পরপর কয়েক বছর পাখি ছেড়ে দেওয়ার পর ভোলা শহরে এখন কোনো পাখি বিক্রেতা আসে না, শিকারিদেরও তেমন দেখা যায় না।
ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শারমিন জাহান বলেন, ভোলা শহরের ওয়েস্টার্নপাড়া, কালীবাড়ি রোড, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় বাগানসহ শহরের গাছে গাছে বছরের সাত-আট মাস পাখিরা বসত করে। ওরা শহরকে নিরাপদ মনে করে গ্রাম ছেড়ে শহরে বসত করে। বিকেল হলে আকাশের দিকে তাকালে দেখবেন, হাজার হাজার বক, পানকৌড়ি, শামুকভাঙ্গা, গাংচিল শালিক, চড়ুই প্রভৃতি পাখি ভরপেটে উড়ে আসছে দল বেঁধে। ভোলার মানুষকে পাখি ভালোবেসে মানুষের কাছেই থাকে।
কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা ও নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব এস এম বাহাউদ্দিন বলেন, বছর দশেক ধরে হাজার হাজার দেশি প্রজাতির পাখি বছরের আট মাস তাঁদের বাড়ির গাছে বসবাস করছে। এক সময় রাতে পাখির ডাকে এলাকাবাসীর ঘুম হতো না। এখন পাখির ডাক ছাড়া ঘুম হয় না।
মা পাখিদের যখন ডিম পাড়ার সময় হয়, তখন তারা বাসা তৈরির জন্য রাতযাপনের স্থানটি ত্যাগ করে। কারণ, মা পাখি নিজের খাবারের জন্য ১০ কিলোমিটার দূরে যেতে পারে, কিন্তু বাচ্চার জন্য বারবার খাবার সংগ্রহ করতে বাসার কাছে থাকে। এ জন্য পাখিরা ওই স্থানেই বাসা বানায়, যেখানে বাচ্চার খাদ্য নিরাপত্তা আছে। তখন পাখিদের মধ্যেও বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়।
ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ভোলা খাল, আছে শহরতলিতে বিল-পুকুর আর অদূরে নদী। তাই পাখিরা ভোলা ছেড়ে যায় না।
নেয়ামতউল্যাহ
ভোলা
নদী থেকে যখন ভোলার জমিতে আসবেন, দেখবেন খেত ভরা শাক-সবজি। কৃষক লাঙল-ট্রাক্টরে জমি চাষ করছে। খেতে ও ফসলে পোকা। পোকা নিধনে কৃষকের প্রিয় বন্ধু পাখি। একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার পাখি। সদর উপজেলার ধনিয়া তুলাতুলি এলাকার দক্ষিণ বিলের কৃষক আসলাম গোলদার জানালেন, বক, শালিক, চড়ুই, পানকৌড়িসহ হাজার হাজার পাখি সারা দিন ফসলের খেতে থাকে। কখনো কৃষকের লাঙল ঘিরে, কখনো ফসলের ভেতরে পোঁতা ডালে। কখনো নদীর জালে ও নৌকায় পাখিরা পোকা খায়, খায় জল-কাদায় ভেসে ওঠা মাছ। কৃষক-জেলে ওদের মারে না। পাখিও ভয় পায় না, যেন বন্ধু। তবে বাইরের লোক দেখলে উড়ে পালায়। খাবার শেষে পাখি ফিরে আসে নিরাপদ আশ্রয় ভোলা শহরে। এ জন্য শত শত মাইল নীলাকাশ পাড়ি দেয়। শহরে বসে পাখির কলকাকলি।
শীতে দেশি-বিদেশি পাখিতে ভোলা হয়ে ওঠে পাখির জেলা। শীতে শূন্য শুকনো গাছের শাখা ফাগুনে সবুজ পাতায় পল্লবিত। সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা বক বসত করে, শান্তি!
পাখির অভয়ারণ্য দ্বীপ জেলা ভোলা ছেড়ে সে শীতের অতিথি পাখি চলে গেছে। উঠান-বাগান এখনো মুখরিত ঘরের পাখির কলকাকলিতে। ওরা নদী ও খেতে সারা দিন আহার শেষে শহরে রাতযাপন করে। ভোলা শহরবাসীর এখনো ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে, ঘুম আসে পাখির ডাকে। এ শহর পাখির শহর, এখানে শীত-গ্রীষ্ম-বৃষ্টি-রোদে নিরাপদে কাটছে পাখিদের বছর বছর।
কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা ও ভোলা আবৃত্তি সংসদের সভাপতি সামস উল আলম বলেন, ভোলার জলে-খালে-বিলে শুধু পাখি আর পাখি। শহরে বসেই হাজার পাখির কলকাকলি শোনা যায়, আর দেখা যায় পাখিদের উড়াল সাঁতার। ভোলার নাগরিক প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে উঠেছে সবুজ গাছ আর পাখিদের জন্যই। ২০০৪-০৫ সালেও ভোলা শহরে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি করতে দেখা গেলেও এখন সেটি শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় ভোলার নাগরিক সমাজ পাখিশিকারিদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাখিগুলোকে চরে উন্মুক্ত করে দিত। এভাবে পরপর কয়েক বছর পাখি ছেড়ে দেওয়ার পর ভোলা শহরে এখন কোনো পাখি বিক্রেতা আসে না, শিকারিদেরও তেমন দেখা যায় না।
ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শারমিন জাহান বলেন, ভোলা শহরের ওয়েস্টার্নপাড়া, কালীবাড়ি রোড, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় বাগানসহ শহরের গাছে গাছে বছরের সাত-আট মাস পাখিরা বসত করে। ওরা শহরকে নিরাপদ মনে করে গ্রাম ছেড়ে শহরে বসত করে। বিকেল হলে আকাশের দিকে তাকালে দেখবেন, হাজার হাজার বক, পানকৌড়ি, শামুকভাঙ্গা, গাংচিল শালিক, চড়ুই প্রভৃতি পাখি ভরপেটে উড়ে আসছে দল বেঁধে। ভোলার মানুষকে পাখি ভালোবেসে মানুষের কাছেই থাকে।
কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা ও নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব এস এম বাহাউদ্দিন বলেন, বছর দশেক ধরে হাজার হাজার দেশি প্রজাতির পাখি বছরের আট মাস তাঁদের বাড়ির গাছে বসবাস করছে। এক সময় রাতে পাখির ডাকে এলাকাবাসীর ঘুম হতো না। এখন পাখির ডাক ছাড়া ঘুম হয় না।
মা পাখিদের যখন ডিম পাড়ার সময় হয়, তখন তারা বাসা তৈরির জন্য রাতযাপনের স্থানটি ত্যাগ করে। কারণ, মা পাখি নিজের খাবারের জন্য ১০ কিলোমিটার দূরে যেতে পারে, কিন্তু বাচ্চার জন্য বারবার খাবার সংগ্রহ করতে বাসার কাছে থাকে। এ জন্য পাখিরা ওই স্থানেই বাসা বানায়, যেখানে বাচ্চার খাদ্য নিরাপত্তা আছে। তখন পাখিদের মধ্যেও বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়।
ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ভোলা খাল, আছে শহরতলিতে বিল-পুকুর আর অদূরে নদী। তাই পাখিরা ভোলা ছেড়ে যায় না।
নেয়ামতউল্যাহ
ভোলা
No comments