নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব by মনসুর আহমদ
সমাজের মানুষ নিঃসঙ্গ ও সম্পর্কহীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষ পরস্পরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকে। সপ্তদশ শতকের অনন্যসাধারণ ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবস (ঞযড়সধং ঐড়ননবং) তার খবারধ ঃযধহ গ্রন্থে বলেন, প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে সম্মত হয়।
তারা প্রত্যেকেই এ কথা বলে চুক্তি করে : আমি আমার নিজের শাসন করার সব অধিকার ত্যাগ করে এই ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সংসদের হাতে অর্পণ করছি। এই শর্তে যে, তুমিও তোমার সব অধিকার তাকে অর্পণ করবে এবং অনুরূপভাবে তার যাবতীয় কার্যের কর্তৃত্ব প্রদান করবে। প্রতিটি রাষ্ট্রের নাগরিক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারের কাছে কর্তৃত্ব প্রদান করেন এ উদ্দেশ্যে যে, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের কল্যাণ সাধনে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। কিন্তু বর্তমানকালে লক্ষ্য করা যায় যে, তারা বিভিন্ন ওয়াদা দিয়ে গণতন্ত্রের লগি ঠেলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে নিজ দল ও নিজ স্বার্থে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এই আচরণের জন্য যে তারা অতি শিগগির জনগণের ঘৃণা কুড়ান। তা-ই নয়, বরং তাদের জন্য রয়েছে পরকালীন ভয়ানক শাস্তি। এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল ফরমান যে, মুসলমানদের কোনো বিষয় ও ব্যাপারে দায়িত্বশীল হয়ে বসল কিন্তু অতঃপর তাদের খেদমত ও কল্যাণের জন্য ততটুকু চেষ্টাও করল না, যতটুকু সে নিজের জন্য করে থাকে। তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। জন লকের মতে, জীবন স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে কেবল স্বাভাবিক আইন কার্যকর করার অধিকার ও দায়িত্ব জনগণ সরকারকে অর্পণ করে। মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার অস্তিত্ব থাকে তখনই যখন রাষ্ট্রনৈতিক সংগঠন এই সুবিধাগুলো সুরক্ষিত রাখে। সরকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে নাগরিক শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ভোটদানের মাধ্যমে হতে পারে, আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব পালনের সম্মতি ব্যক্তি তার অজ্ঞাতসারেই দিয়ে থাকে। যেভাবেই সম্মতি দেয়া হোক না কেন সরকারের দায়িত্ব নাগরিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যারা এই কল্যাণধর্মী দায়িত্ব পালন করে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। এ সম্পর্কে একটি হাদিস হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন : হে খোদা যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনো প্রকার দায়িত্বশীল হয়ে তাদের অশান্তি ও দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করল তুমি তার উপর দুঃখ-কষ্ট ও সংকীর্ণতা চাপিয়ে দাও, আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের দায়িত্বশীল হয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করে তুমি তার প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করো। (মুসলিম)
যে সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ হয় তারা ইহকালে লাঞ্ছিত হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। জন লকের মতে, সরকারের প্রধান কাজ হলো সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা। সরকারের কাছে গচ্ছিত স্বাভাবিক অধিকার রক্ষিত না হলে কিংবা তার অপব্যবহার ঘটলে জনগণের পক্ষে সরকার পরিবর্তনের কোনো আইনসঙ্গত বাধা থাকবে না। জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে জনগণ চুক্তি করে সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। জনগণের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হলে অযোগ্য সরকারকে অপসারণ করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সরকারের কার্যকলাপ যদি উদ্দেশ্যবিরোধী হয় সে ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার চরম দায়িত্ব জনগণের। সুতরাং লকের মতানুসারে আইনসঙ্গতভাবেই সরকার পরিবর্তনের অধিকার জনগণের রয়েছে। তাই জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ সরকার শুধু জনগণ প্রত্যাক্ষিতই হয় না, বরং রাষ্ট্রপ্রধান ও দায়িত্বশীলরা পরকালীন জীবনে জান্নাতের সুখ থেকেও বঞ্চিত হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরমান, আমার উম্মতের কেউ যদি মুসলমানদের কোনো প্রকার দায়িত্বশীল হয়ে ঠিক সেভাবে তাদের হেফাজত না করে যেভাবে সে নিজের ও নিজ পরিবার-পরিজনের হেফাজত করে, সে জান্নাতের সৌরভ পর্যন্ত পাবে না।
রাষ্ট্রপ্রধানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অর্থাত্ জনগণের সামনে চিত্তহারী ওয়াদা করে, যার কারণে জনগণ তাদের বিশ্বাস করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। কিন্তু এসব ক্ষমতাশীন ব্যক্তি তাদের ওয়াদা ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়, কেন এমন আচরণ করে তার জওয়াব দিয়েছেন ম্যাকিয়াভেলি। আধুনিক রাষ্ট্রপ্রধানরা অধিকাংশই তার দর্শনে বিশ্বাসী। ম্যাকিয়াভেলির মতে, নেতাবিহীন অনিয়ন্ত্রিত জনতা একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর, অপরদিকে তেমনই তারা কাপুরুষ। তাদের প্রথম উত্তেজনা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারলে সশস্ত্র জনতার হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।
উত্তেজনা প্রশমিত হলে যখন তারা ঘরে ফিরে আসে তখন পরস্পরকে তারা আর বিশ্বাস করে না। পলায়ন বা বশ্যতা স্বীকারের মধ্যেই তারা নিজেদের নিরাপত্তা খোঁজে। এরকম পরিণতির হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যই উত্তেজিত জনতা দ্রুত নেতা নিযুক্ত করে। এমন পরিবেশে নিযুক্ত নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধানই জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা অন্যায় মনে করে না। তারা আরও মনে করে, সিংহের শক্তি এবং শৃগালের বুদ্ধির সংযোগ না হলে সাফল্য স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না।
যে সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ হয় তারা ইহকালে লাঞ্ছিত হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। জন লকের মতে, সরকারের প্রধান কাজ হলো সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা। সরকারের কাছে গচ্ছিত স্বাভাবিক অধিকার রক্ষিত না হলে কিংবা তার অপব্যবহার ঘটলে জনগণের পক্ষে সরকার পরিবর্তনের কোনো আইনসঙ্গত বাধা থাকবে না। জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে জনগণ চুক্তি করে সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। জনগণের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হলে অযোগ্য সরকারকে অপসারণ করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সরকারের কার্যকলাপ যদি উদ্দেশ্যবিরোধী হয় সে ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার চরম দায়িত্ব জনগণের। সুতরাং লকের মতানুসারে আইনসঙ্গতভাবেই সরকার পরিবর্তনের অধিকার জনগণের রয়েছে। তাই জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ সরকার শুধু জনগণ প্রত্যাক্ষিতই হয় না, বরং রাষ্ট্রপ্রধান ও দায়িত্বশীলরা পরকালীন জীবনে জান্নাতের সুখ থেকেও বঞ্চিত হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরমান, আমার উম্মতের কেউ যদি মুসলমানদের কোনো প্রকার দায়িত্বশীল হয়ে ঠিক সেভাবে তাদের হেফাজত না করে যেভাবে সে নিজের ও নিজ পরিবার-পরিজনের হেফাজত করে, সে জান্নাতের সৌরভ পর্যন্ত পাবে না।
রাষ্ট্রপ্রধানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে অর্থাত্ জনগণের সামনে চিত্তহারী ওয়াদা করে, যার কারণে জনগণ তাদের বিশ্বাস করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। কিন্তু এসব ক্ষমতাশীন ব্যক্তি তাদের ওয়াদা ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়, কেন এমন আচরণ করে তার জওয়াব দিয়েছেন ম্যাকিয়াভেলি। আধুনিক রাষ্ট্রপ্রধানরা অধিকাংশই তার দর্শনে বিশ্বাসী। ম্যাকিয়াভেলির মতে, নেতাবিহীন অনিয়ন্ত্রিত জনতা একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর, অপরদিকে তেমনই তারা কাপুরুষ। তাদের প্রথম উত্তেজনা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারলে সশস্ত্র জনতার হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।
উত্তেজনা প্রশমিত হলে যখন তারা ঘরে ফিরে আসে তখন পরস্পরকে তারা আর বিশ্বাস করে না। পলায়ন বা বশ্যতা স্বীকারের মধ্যেই তারা নিজেদের নিরাপত্তা খোঁজে। এরকম পরিণতির হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যই উত্তেজিত জনতা দ্রুত নেতা নিযুক্ত করে। এমন পরিবেশে নিযুক্ত নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধানই জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা অন্যায় মনে করে না। তারা আরও মনে করে, সিংহের শক্তি এবং শৃগালের বুদ্ধির সংযোগ না হলে সাফল্য স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না।
No comments