গার্মেন্টস কারখানায় মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডঃ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কবে?
আবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জীবন দিতে হলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের। এর আগে যেসব অব্যবস্থাপনার জন্য অগ্নিকাণ্ডের অসহায় শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক শ্রমিককে, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল গাজীপুরের একটি গার্মেন্ট কারখানায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ভোগড়া এলাকার গরিব অ্যান্ড গরিব সোয়েটার কারখানায় আগুন লেগে মারা গেছেন ২১ জন শ্রমিক।
মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী। আহত হয়েছেন অনেকে। এ ব্যাপারে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিজনকে দুই লাখ করে নগদ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কিন্তু সেই পুরনো প্রশ্নটিই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সবাইকে—আর কতদিন এভাবে খেটে খাওয়া শ্রমিকরা আগুনের নির্মম শিকার হবে?
অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার সবগুলো জরুরি বহির্গমন দরজা বন্ধ ছিল। তালাবদ্ধ ছিল প্রতিতলার কলাপসিবল গেট। দোতলায় আগুন লাগার পর কর্মরত শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু ছয়তলার ওপর তৈরি ছাপরায় আটকে পড়া ২০ জন শ্রমিক বেরিয়ে আসতে পারেননি। তারা সবাই মারা যান বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও তাপের শিকার হয়ে। একজন মারা যান তৃতীয়তলায়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় আলো-বাতাসবিহীন ছাপরাটিই অগ্নিকাণ্ডের সময় মৃত্যুফাঁদ হয়ে দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত ঘটে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, দরজা বন্ধ ছাড়াও কারখানাটিতে আগুন নেভানোর কোনো নিজস্ব যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক ছিল না। আগুন লাগার সময় একটি শিফটের ছুটি হয়ে গিয়েছিল। তারা আগেভাগে বেরিয়ে না পড়লে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন অত্যন্ত কম। তারা কাজ করেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং প্রায়ই মারা যান দুর্ঘটনায়। একমাত্র মৃত্যুর পরই লাখ টাকার মুখ দেখতে পায় মৃতের পরিবার। এই দুঃখবহ ঘটনাকে এখন আর নিছক দুর্ঘটনা বলার পরিস্থিতি নেই। কেননা, সংশ্লিষ্ট কারখানাটিতে আগস্ট ও ডিসেম্বরেও দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত দু’দশকে দেশে গার্মেন্টস কারখানায় দেড়শ’রও বেশি আগুন লেগে মারা গেছেন প্রায় তিনশ’ শ্রমিক। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কারখানার সার্বিক মান বৃদ্ধি, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর এবং কাজের পরিবেশ ভালো করার কথা বলা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে অবনতি হয়েছে বলা যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। শুধু জীবনের মূল্য শোধ করা হয়েছে নগদ কিছু টাকা দিয়ে।
গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্ট কারখানার অগ্নিকাণ্ড ফের প্রমাণ করলো, অভিজ্ঞতা থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নেয়নি। ইতিপূর্বেও বহিগর্মন দরজা ও প্রতিতলার কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় আগুনের কবলে অসহায়ভাবে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। সরু সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শ্রমিকরা পদপিষ্ট হয়েছে। শুধু ফায়ার সার্ভিসের ওপর ভরসা করে নিজেদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকেও পোক্ত করা হয়নি। এর প্রতিটি অভিযোগই উদ্বেগজনক। এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার উপায় নেই। তাছাড়া এ দায় থেকে সরকার তো বটেই, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকেও অব্যাহতি দেয়া যায় না। কারণ, অব্যবস্থাপনা থেকে শুধু জীবনহানির মতো অপূরণীয় ক্ষতিই হয় না, গোটা শিল্পটির বিকাশমানতাও কমবেশি স্থবিরতায় ভোগে। এও তো মিথ্যা নয় যে, এভাবে অগ্নিকাণ্ডে দফায় দফায় মৃত্যু বিশেষ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একুশজন শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে এবং সারাবিশ্বের পাঠক-দর্শকরা তা জেনেছে। ফলে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক শিল্প আবারও পড়েছে ভাবমূর্তি সঙ্কটে। এভাবে চলতে পারে না। মানতেই হবে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা উপেক্ষা করলে নিজের পায়েই কুড়াল পড়বে। আমরা মনে করি, ঘিঞ্জি এলাকা থেকে গার্মেন্ট সরিয়ে তার সার্বিক মান বাড়াতে হবে, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি বিবেচনায় নিতে হবে, কাজের পরিবেশ উন্নত করে দুর্ঘটনারোধের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আবার সেই তাগিদই দিয়ে গেল। আমরা শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, গাজীপুর সোয়েটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও জীবনহানি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। চাই দৃষ্টান্তমূলক প্রতিকার।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার সবগুলো জরুরি বহির্গমন দরজা বন্ধ ছিল। তালাবদ্ধ ছিল প্রতিতলার কলাপসিবল গেট। দোতলায় আগুন লাগার পর কর্মরত শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু ছয়তলার ওপর তৈরি ছাপরায় আটকে পড়া ২০ জন শ্রমিক বেরিয়ে আসতে পারেননি। তারা সবাই মারা যান বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও তাপের শিকার হয়ে। একজন মারা যান তৃতীয়তলায়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় আলো-বাতাসবিহীন ছাপরাটিই অগ্নিকাণ্ডের সময় মৃত্যুফাঁদ হয়ে দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত ঘটে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, দরজা বন্ধ ছাড়াও কারখানাটিতে আগুন নেভানোর কোনো নিজস্ব যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক ছিল না। আগুন লাগার সময় একটি শিফটের ছুটি হয়ে গিয়েছিল। তারা আগেভাগে বেরিয়ে না পড়লে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন অত্যন্ত কম। তারা কাজ করেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং প্রায়ই মারা যান দুর্ঘটনায়। একমাত্র মৃত্যুর পরই লাখ টাকার মুখ দেখতে পায় মৃতের পরিবার। এই দুঃখবহ ঘটনাকে এখন আর নিছক দুর্ঘটনা বলার পরিস্থিতি নেই। কেননা, সংশ্লিষ্ট কারখানাটিতে আগস্ট ও ডিসেম্বরেও দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত দু’দশকে দেশে গার্মেন্টস কারখানায় দেড়শ’রও বেশি আগুন লেগে মারা গেছেন প্রায় তিনশ’ শ্রমিক। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কারখানার সার্বিক মান বৃদ্ধি, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর এবং কাজের পরিবেশ ভালো করার কথা বলা হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে অবনতি হয়েছে বলা যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। শুধু জীবনের মূল্য শোধ করা হয়েছে নগদ কিছু টাকা দিয়ে।
গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্ট কারখানার অগ্নিকাণ্ড ফের প্রমাণ করলো, অভিজ্ঞতা থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নেয়নি। ইতিপূর্বেও বহিগর্মন দরজা ও প্রতিতলার কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় আগুনের কবলে অসহায়ভাবে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। সরু সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শ্রমিকরা পদপিষ্ট হয়েছে। শুধু ফায়ার সার্ভিসের ওপর ভরসা করে নিজেদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকেও পোক্ত করা হয়নি। এর প্রতিটি অভিযোগই উদ্বেগজনক। এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার উপায় নেই। তাছাড়া এ দায় থেকে সরকার তো বটেই, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকেও অব্যাহতি দেয়া যায় না। কারণ, অব্যবস্থাপনা থেকে শুধু জীবনহানির মতো অপূরণীয় ক্ষতিই হয় না, গোটা শিল্পটির বিকাশমানতাও কমবেশি স্থবিরতায় ভোগে। এও তো মিথ্যা নয় যে, এভাবে অগ্নিকাণ্ডে দফায় দফায় মৃত্যু বিশেষ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একুশজন শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে এবং সারাবিশ্বের পাঠক-দর্শকরা তা জেনেছে। ফলে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক শিল্প আবারও পড়েছে ভাবমূর্তি সঙ্কটে। এভাবে চলতে পারে না। মানতেই হবে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা উপেক্ষা করলে নিজের পায়েই কুড়াল পড়বে। আমরা মনে করি, ঘিঞ্জি এলাকা থেকে গার্মেন্ট সরিয়ে তার সার্বিক মান বাড়াতে হবে, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি বিবেচনায় নিতে হবে, কাজের পরিবেশ উন্নত করে দুর্ঘটনারোধের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আবার সেই তাগিদই দিয়ে গেল। আমরা শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, গাজীপুর সোয়েটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও জীবনহানি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। চাই দৃষ্টান্তমূলক প্রতিকার।
No comments