সময়ের প্রতিবিম্ব-বিরোধী দলের সংসদে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় by এবিএম মূসা

‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আওয়াজটি একেবারে প্রথমবার অর্থাত্ আদিতে কে তুলেছিলেন তা নির্দিষ্টভাবে জানা ও বলা সম্ভব নয়। আবার নির্দিষ্টভাবে কে, কবে ও কোথায় প্রথম বলেছিলেন যে পাকিস্তানের অন্যতম অথবা একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা—এই প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর জানা নেই।


এসব প্রসঙ্গে শত শত কথা বলা হয়েছে। হাজারো শব্দ ইতিমধ্যে লেখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ না হলেও একটু-আধটু গবেষণাও হয়েছে। সেসব পড়ে ধারণা করা যায়, সেই ১৯৪৮ সাল থেকে অথবা উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার আগে থেকেই পাকিস্তানের এমনকি ভারতের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে গুনগুনানি হয়েছে। তখনো সামগ্রিক বিবেচনায় বিচ্ছিন্নভাবে সম্মেলন বা পত্রপত্রিকার পাতায় রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষার স্থান নির্ণয় নিয়ে অনেকের বক্তব্য আলোচনায় এসেছে। বাংলাভাষার গুণকীর্তনও হয়েছে। এমনভাবে পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষা সেই ভাষাভাষীর এত ভালোবাসা পেয়েছে, এমনটি আমার জানা নেই। অন্যদের কথা থাক। সেই কবে কবি আবদুল হাকিম বলেছিলেন, ‘যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সেই জন কাহার জন্ম নির্ণয়ে না জানি।’ মাইকেল বাংলাভাষার মাহাত্ম্য কীর্তনে মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চার সূচনায় লিখেছিলেন, ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।’ এ সবই জ্ঞানীগুণী যা বলেছেন, সেসবই তাত্ত্বিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মাতৃভাষাপ্রীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু সংস্কৃতির বলয়ের বাইরে ‘বাংলাভাষা’ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের বিষয়বস্তু, পলিটিক্যাল ইস্যু হলো কবে থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বুঝতে হবে, বাহান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলি হঠাত্ করে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়। মূলত ১৯৪৮ সালে উচ্চারিত একটি মিনমিনে আওয়াজ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের, বিস্ময়করভাবে একটি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সূচনা করেছিল। সেই রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্রমবিকাশ, এ কথাটি সবাই জানেন এবং বলেছেনও।
বাংলাকে পাকিস্তানের একমাত্র নয়, অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাতের ইতিবৃত্ত বিভিন্ন পর্বে আলোচিত হয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় সাংস্কৃতিক চেতনায় অভ্যুদয়ের কথাও অনেকে বলেছেন। অন্য যে একটি ‘বাক্য’ ক্ষীণভাবে উল্লিখিত হওয়া উচিত, সেটিকে প্রাধান্য দিতেই আমি ভাষা আন্দোলনের আদ্যোপান্ত আলোচনায় একটি বিশেষ সূচনা আজকের মূল প্রতিবেদনের প্রারম্ভে উল্লেখ করছি। সেই ‘কথাটি’ তথা একটিমাত্র বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই দাবিটিকে তখন মূল্যায়ন করা হয়নি। এখন ভিন্ন প্রেক্ষিতে স্মরণ করছি, কারণ তা ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্রের পরিচায়ক, আমাদের পরবর্তী গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার পথপ্রদর্শক। আমি ধীরেন দত্তের এই একক ভূমিকাটিকে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের নিয়মতান্ত্রিক সূচনা বলব। জাতীয় পরিষদ, গণপরিষদ, সংসদ বা প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য প্রদানকে বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে চাই। বাংলা ভাষা অথবা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে আলোচনা, দাবি উত্থাপন ও রক্তদানের সূচনালগ্নটি ছিল, ধীরেন দত্ত যেদিন মুহূর্তটিতে পাকিস্তানের গণপরিষদে একক কণ্ঠে দাবিটি ছিল নতুন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণা সৃষ্টির পথিকৃত্।
পাকিস্তানের সেই গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালের অখণ্ড ভারতের নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে। সেই নির্বাচন নিয়ে ভিন্নতর আলোচনা করা যায়। উল্লেখ করতে চাই, ভারত বিভাগের পর দুই রাষ্ট্রে গণপরিষদ তথা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শুধু দুই অংশের নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে। ভারত ও পাকিস্তানের দুটি পরিষদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল নিজস্ব সংবিধান রচনার। ভারত মাত্র চার বছরে তাদের সংবিধান রচনা করল। পাকিস্তানের গণপরিষদ একটি সংবিধান রচনা করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে লাগল। আজকে বিস্ময়ের সঙ্গে স্মরণ করছি, নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংবিধান রচনার পথযাত্রায় ছোট্ট অথচ সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল ছোট্ট একটি সমস্যা। সংবিধান রচনার পথে যে ছোট্ট পাথরখণ্ডে পাকিস্তান গণপরিষদের একক কর্তৃত্বের অধিকারী মুসলিম লীগের সদস্যবর্গ বারবার হোঁচট খেয়েছিলেন, সেটির নামকরণ করা যেতে পারে ‘বাংলাভাষা’। পাকিস্তানের গণপরিষদে পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মূলত পূর্ববাংলা, পাঞ্জাব, সিন্দু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশের ন্যূনাধিক আড়াই শ সরকারি পরিষদ সদস্যের গণপরিষদে বিরোধিতাকারী অথবা অতি ক্ষুদ্র বিরোধী দলের সদস্য ছিলেন মাত্র ডজনখানেক। তাও তাঁরা ছিলেন পূর্ব বাংলার কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত সদস্য। তবে তাঁদের নেপথ্য শক্তি ছিল পূর্ববাংলার সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের নৈতিক সমর্থন। এ কারণে হাতে গোনা কয়েকজন পরিষদ সদস্য প্রস্তাবিত সংবিধানে ‘বাংলাকে’ অস্বীকার অথবা বিলুপ্ত করার সরকারদলীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিলেন। সেদিন ক্ষুদ্র বিরোধী দলের একক প্রচেষ্টার কারণেই পূর্ববাংলায় লিয়াকত আলী খানের সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ইহাই কালক্রমে উদ্দাম ভাষার জন্য সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল।
উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে আমি ভাষা প্রসঙ্গটি দিয়ে সূত্রপাত করেছি আজকের মূল আলোচনার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনে। মূল প্রসঙ্গটি হচ্ছে, যেকোনো গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে অথবা জনগণের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণে গণআন্দোলনের পাশাপাশি অথবা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে বিরোধী দলের সদস্যদের উপস্থিতির তথা জনমতের প্রতিফলনের গুরুত্ব। নির্বাচিত একজন সাংসদ বা জনপ্রতিনিধির সামান্যতম ভূমিকাও কীভাবে সাধারণ্যে অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা বোঝাতেই পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে গুটিকয়েক সদস্যের ভূমিকাটি উল্লেখ করেছি। অতীতের উদাহরণটি দিয়েছি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনতার কণ্ঠের বিশেষত্ব আলোচনার প্রয়োজনীয়তায়। বস্তুত, বর্তমান সংসদে বিরোধী দলকে কেন চাই, সেই বক্তব্যটি ব্যাখ্যার সূচনা করেছি। পূর্ববর্তী আলোচনায় আমি পাকিস্তান গণপরিষদে ডজনখানেক বিরোধীদলীয় আর দুই শতাধিক সরকারি সদস্যের সমন্বিত একটি গণপ্রতিনিধিমূলক পরিষদের যে কথা বলেছি, তার সারমর্ম ছিল—সংখ্যা দিয়ে গণপরিষদ, সংসদ তথা পার্লামেন্টের বিরোধী দলের শক্তি বিবেচনা করা যায় না। সংসদকক্ষে তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক কর্তব্য পালনের বিষয়টিও সংখ্যার পঠভূমিতে পরিলক্ষিত হয় না। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবটি পরিলক্ষিত হয় যখন জনমনে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যের অসীম প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই কথাটিই আমি বলেছি গত সোমবার বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রীতি সম্মিলনীতে। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেই সম্মিলনীতে সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিকদের ‘নানা জনের নানা মতের’ কথায় একবাক্যে একটি অনুরোধ, দাবিও বলা যেতে পারে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘আপনারা সংসদে যান’।
আমি পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদের প্রেক্ষাপটে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে ‘বিরোধী কণ্ঠের’ প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করলাম। আমার এই বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে প্রদত্ত যুক্তি। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সম্পাদক-সম্পাদকেরা কেন সেদিন অথবা দেশের জনগণের ব্যাপক অংশ কেন আজকে বিরোধী দলকে সংসদে দেখতে চান? তা-ও আবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধি যাঁরা প্রতিনিয়ত জনগণের চাহিদার কথা পত্রিকায় লিখছেন, টেলিভিশনে বলছেন। লাখ লাখ পাঠক পড়ছেন আর কোটি কোটি শ্রোতা প্রতিদিন শুনছেন চাঁদাবাজি/ দখলদারি ও টেন্ডারবাজির কাহিনী, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার নিরঙ্কুশ দৌড়ের প্রতিদিনের অঙ্কের হিসাব। বিদ্যুত্-গ্যাসের ভোগান্তির কাহিনী এই সব সম্পাদক ও সাংবাদিক তাঁদের মিডিয়ায় প্রতিদিনই সরকারকে বলছেন। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ, এলাকাভিত্তিক দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী নিয়ে কড়া ভাষায় লেখালেখি, বলাবলি হচ্ছে প্রচুর। ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতার জন্য, তাদের অনেক ক্ষেত্রে দাপট ও বাড়াবাড়ি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে দলীয় অংশীদারিত্বের খবর ছাপা হচ্ছে অসংখ্য প্রতিবেদনে। সংবাদপত্রের প্রতিটি পাতায় টেলিভিশনের প্রতিদিনের আলোচনায় কঠোরভাবে সমালোচিত হচ্ছে কতিপয় ক্ষমতাসীনের যথেচ্ছাচারের কাহিনী। সরকারের ঊর্ধ্বতম ক্ষমতাধারীর নিষ্ক্রিয়তা অথবা অসহায়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তার পরও কেন এসব নিয়ে সংসদে গোটা ত্রিশেক মাননীয় সংসদ সদস্যকে কথা বলতে হবে? গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কেন সেদিন বললেন আর দিনের পর দিন লিখেছেন, ‘সংসদে বিরোধী দলকে চাই?’ এই প্রশ্নটির উত্তর পেতে হলে প্রতিবেদনের সূচনায় আমি যে ধীরেন দত্তের গণপরিষদে উচ্চারিত বাক্যটি উদ্ধৃত করেছি, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। সেই সময়ে এমন শক্তিশালী গণমাধ্যম ছিল না। তাই সংসদ বা জনপরিষদে উচ্চারিত প্রতিবাদকলির প্রয়োজন ছিল। এখন তো গণমাধ্যমকে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রকও বলা যায়। তাহলে তাঁরাও কেন একটি কার্যকর সংসদের দাবিতে সোচ্চার। সেখানেই বহুল কথিত বাক্যটির মাজেজা ‘সংসদই হতে হবে সকল রাষ্ট্রীয় ও সরকারি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল।’ অর্থাত্ কেন্দ্র বা মূল যদি শক্ত না হয়, ডালপালা যতই বিস্তার করুক, গণতন্ত্র নামক বৃক্ষটি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। সেই মূল বা কাণ্ডটি হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিদের প্রতিষ্ঠান সংসদ।
আলোচনার বিস্তারে আরেকটি উদাহরণ দেব, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব কতখানি হতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর প্রথম জাতীয় সংসদে ৩০০ সদস্যের ২৯৩ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয়। বাকি সাতজন ছিলেন ভিন্ন গুরুত্বহীন রাজনৈতিক দলের ও স্বতন্ত্র সদস্য। এই সাতজনই পুরো সংসদ কাঁপিয়ে তুলতেন, আলোচনার ঝড় বইয়ে দিতেন সংসদকক্ষে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিরোধী দলের সমালোচনা ও ক্ষুরধার যেটুকু ছাপা হতো তত্কালীন গুটিকয়েক সংবাদপত্রে, সরকারকে বিব্রত করার জন্য তাই ছিল অপরিসীম। সাড়ে সাত কোটি জনগণের মতামত প্রতিফলিত হতো সাতজনের কণ্ঠে। সেদিন রাজপথে কোনো হরতাল, মিছিল বা জ্বালাও-পোড়াও ছিল না। জনগণের ক্ষোভ অথবা অভিযোগের প্রতিফলন ঘটত সংসদ অধ্যক্ষের বাঁ পাশের আসনগুলো থেকে। সেদিন সংবাদপত্রের কণ্ঠ রুদ্ধ না হলেও স্তিমিত ছিল ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা অথবা প্রতিবাদ করতেন শুধু তারা সাতজন এবং তাই সই।
আজকে পরিস্থিতি একেবারে বিপরীত। জনগণের যেসব প্রতিনিধি জনতার ক্ষোভ ও দুর্দশার প্রতিবিধান দাবি করতে রাস্তায় নেই, সংসদেও নেই, আছেন শুধু গণমাধ্যমে; সেই অসীম প্রভাবশালী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাই এক বছর ধরে বলেই যাচ্ছেন, সেদিন সরাসরি বললেন, ‘ম্যাডাম, আমাদের লেখালেখি বা বলাবলিতে কিস্যু হবে না। আপনারা বলুন, বলার জন্য সংসদে যান।’ গণমাধ্যমে লিখিত ও আলোচিত সংসদে সরকারের একতরফা কথার তুবড়ি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অশালীন ও অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যের চেয়ে বিরোধী দলের সংবাদ সম্মেলনে আর সন্ধ্যারাতে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি কম গুরুত্ব পাচ্ছে? তাঁদের বলা কথাগুলোর উত্তেজক ও চমকপ্রদ শিরোনামের অক্ষরগুলোর আকার কি ছোট মনে হয়? মোটেও না, তার পরও তা হলে তাঁরাই ভাবছেন, উচ্চারিত শত লেখায় ও বলায় কিছু হবে না। সংসদে বিরোধী দলের দু-চারজনের একটি কথায় তাঁদের এক লাখ ছাপা বা অক্ষর বা নির্ধারিত শব্দের চেয়ে হাজারো গুণ বেশি গুরুত্ব রয়েছে।
বেগম জিয়া সেদিনের সম্মিলনীর পর যা বললেন, তাতে বুঝতে পেরেছি, তিনি গণমাধ্যমের এই ভাবনা এখন অনুধাবন করছেন। জনমনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাঁদের সংসদে যেতে হবে। হয়তো আজ কালের মধ্যে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি, সদস্যপদ হারানোর নব্বই দিনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নয়, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ নির্ধারণের ও জনপ্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের সংসদে ‘বলতে হবে’। আমরা অতীব আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করে আছি, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত একটি গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের প্রাণবন্ত কার্যকরী রূপ দেখতে পাব। আমাদের একান্ত কামনা পূরণ হতে যাচ্ছে, এই আভাস পেয়ে আমরা আনন্দিত। প্রতীক্ষায় আছি, কবে থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার হবে বিরোধী দল।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.