হিলারির আহ্বান-জনপ্রত্যাশারই প্রতিধ্বনি
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের ঢাকা সফরে অংশীদারিত্ব সংলাপের যৌথ ঘোষণাটিই আনুষ্ঠানিক অর্জন_ সন্দেহ নেই। এ সংলাপের আওতায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বার্ষিক বৈঠকের বিষয়টিও দুই দেশের ক্রমনিবিড়মান সম্পর্কে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
কিন্তু তিনি রাজনীতিকদের প্রতি সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটা স্বভাবতই সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এর কারণ কেবল এই নয় যে, তার সফর যখন চূড়ান্ত হচ্ছিল, তখন প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট রাজপথে মুখোমুখি হয়েছে। বরং রাজনৈতিক সংঘাতমুখর পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েই নানা মহলে শঙ্কা উচ্চারিত হচ্ছিল। সম্প্রতি খোদ প্রধানমন্ত্রীকে সমুদ্র বিজয় সংক্রান্ত নাগরিক সংবর্ধনা সভায় গণতান্ত্রিক শাসনের সুফল সম্পর্কে আলোকপাত করতে হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হিলারি ক্লিনটন যথার্থই বলেছেন যে, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে সংলাপের বিকল্প নেই। এখন আর কেউ অস্বীকার করেন না যে, দুই প্রধান দলের মধ্যে সমঝোতার অভাবেই বহুল আলোচিত 'ওয়ান-ইলেভেন' জাতির কাঁধে জগদ্দল হয়ে বসেছিল। এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি কারও জন্যই মঙ্গলকর হবে না। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো অতিথির আহ্বানে সাড়া দেবে। বস্তুত একই কথা মিসেস ক্লিনটনের এই সফরের আগে থেকেই এ দেশের নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে বারংবার বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ দেশের জনপ্রত্যাশারই প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনীতিকরা সংলাপ ও সহাবস্থানের ব্যাপারে আমাদের আবেদন-নিবেদন সামান্যই গ্রাহ্য করেছেন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ যদিও প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা দেখতে চেয়েছে; পক্ষান্তরে তারা সংঘাতের পথকেই শ্রেয়তর মনে করেছে। এখন যখন প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই আহ্বান জানালেন, তখন অগ্রাহ্য করা বোধহয় ততটা সহজ হবে না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ে অতিথির গুরুত্ব বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে; কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের জন্য এটাই বাস্তবতা। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোও এমন পরিস্থিতি প্রকট করে তোলার জন্য বহুলাংশে দায়ী। আশার কথা হচ্ছে, সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সংলাপের আহ্বান যেদিক থেকেই আসুক না কেন, তাতে সাড়া দেওয়াই হবে এই মুহূর্তের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া একটি সরকারেরই দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখা। বিরোধী দলকেও মনে রাখা জরুরি যে, হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক ও অজনপ্রিয় কর্মসূচি আর যাই হোক, গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে না। নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা তাদের জন্যও যে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে_ এর প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলেছে। তারা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরলে জনসমর্থনের পাল্লাও ভারী হবে_ আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের জন্য সংসদে যাওয়াই হবে সব দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত। তাতে নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও পালিত হবে। দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের যে আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিধ্বনিত করে গেলেন, তারও উপযুক্ত স্থান হচ্ছে সংসদ।
No comments