ভালোবাসা by আহসান হাবীব
মামুনের প্রেমে পড়াটা এ মুহূর্তে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কী করা যায় বল তো? সে তার ছোট ভাই আবু হেনার কাছে পরামর্শ চায়। তারা পিঠেপিঠি দুই ভাই বলে বেশ বন্ধুর মতোই। এত তাড়াহুড়োর কী আছে!
বাহ, ১৪ ফেব্রুয়ারি চলে এল...বন্ধুরা সবাই বান্ধবী নিয়ে ঘুরবে আর আমি...।
বাহ, ১৪ ফেব্রুয়ারি চলে এল...বন্ধুরা সবাই বান্ধবী নিয়ে ঘুরবে আর আমি...।
হুম! ছোট ভাইকেও চিন্তিত মনে হয়।
এক কাজ কর...। কী? মলিকেই তো তোর টার্গেট...নাকি? হু।
ওকে পাঁচটা গোলাপ ফুল দে...আজই দে...দিয়ে রি-অ্যাকশন দেখ।
পাঁচটা কেন?
মলির মুখটা অনেকটা বাংলা পাঁচের মতো না?
ফাজিল! গেলি...!!
ফাজিল আবু হেনা হে হে করে হাসতে হাসতে উঠে যায়। উঠে না গিয়ে উপায় নেই, মোবাইল ফোনে তার গার্লফ্রেন্ডের কল চলে এসেছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফ্রি হলেও এ ব্যাপারটা সে গোপন রেখেছে!
তবে মামুন বিষয়টা নিয়ে ভাবে। গোলাপ ফুল সত্যিই দেবে? দিয়ে দেখাই যাক না। তবে পাঁচটা না, সাতটা দেবে, লাকি সেভেন। তা ছাড়া তার জন্ম ১৬ তারিখ। ৬ যোগ ১ সাত...লাকি নাম্বার।
মামুন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সাতটা গোলাপ। একটু টেনশন লাগছে। এই পথ দিয়েই কলেজের বাসে উঠবে মলি। আবু হেনা অবশ্য শেষে একটা কথা বলেছে, ফুল দেওয়ার পর যদি মলি মুখের ওপর ফুলগুলো ছুড়ে মারে তবে বুঝতে হবে কেস পজিটিভ। আর ফুলগুলো মাটিতে ফেলে পায়ে পিশে ফেললে বুঝতে হবে কেস পুরোই খারাপ। ছোট ভাই আবু হেনা একটু ফাজিল টাইপের হলেও মাঝেমধ্যে ভালো পরামর্শই দেয়। মামুনের সন্দেহ, আবু হেনা প্রেমট্রেম করে, নইলে এত কিছু জানে কীভাবে!
এই সময় রঙ্গমঞ্চে মলিকে দেখা গেল। আসছে...বুকের ভেতর গুড় গুড় করে উঠল মামুনের। গলা শুকিয়ে আসছে, একটু পানি খেলে ভালো হতো। আশপাশে মিনারেল ওয়াটার...।
আরে মামুন ভাই? হাতে এত গোলাপ নিয়ে কার জন্য? আমাকে দেবেন?
তু-তুমি নেবে? নাও...
ওহ্, সো সুইট! ফুলগুলো একরকম ছিনিয়ে নিয়ে মলি এগিয়ে গেল। তার কলেজের মাইক্রোবাস হর্ন দিচ্ছে।
একেই বোধহয় বলে মেঘ না চাইতেই ছাতিসহ জল। মলিকে আসল কথাটা বলা হলো না। তবে প্রাথমিক বিজয় তো হয়েছে! ফুল তার হাতে পৌঁছানো গেছে। দেখি, আবু হেনার সঙ্গে একটা সিটিং দিতে হবে বিষয়টা নিয়ে, পরবর্তী সময়ে করণীয় কী?
ভাই, খবর তো খারাপ।
মানে? মামুনকে উদ্বিগ্ন মনে হয়।
খবর পেয়েছি, তোর গোলাপ শিল-পাটায় বেটে মলি মুখে লাগিয়ে শুয়ে আছে। মানে রূপচর্চা...গোলাপ বেটে মুখে প্রলেপ দিলে চামড়ায় উজ্জ্বলতা আসে!
তুই জানলি কীভাবে?
বাহ্, জানব না? আমাদের ঠিকা ঝি মনোয়ারার মা ওদের বাসায়ও ঠিকা ঝির কাজ করে না? ও-ই বলেছে। সে-ই তো বেটে দিয়েছে তোর সাত গোলাপ!
উফ! বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে মামুন।
না, ঘাবড়ানোর কারণ নেই। তুই আবার ফুল দে। আবু হেনা আশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে। এবার এমন ফুল দিবি যেন বাটতে না পারে। প্লাস্টিকের ফুল।
আমার সঙ্গে ফাজলামো করিস? রেগে ওঠে মামুন।
আরে না, সত্যি বলছি। বাণিজ্য মেলায় মালয়েশিয়ান স্টলে নতুন এক ধরনের ফুল এসেছে...প্লাস্টিকের, ব্লেন্ডারে ফেললেও ওই ফুলের কিছু হবে না।
তাই? তুই বলছিস?
সত্যি সত্যিই আবার একদিন মামুনকে দেখা যায়। সেই বিশেষ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে। আজ একটা কিছু বলতেই হবে, ১৪ তারিখ চলে এসেছে। ঘড়ি দেখে মামুন। মলির আসার সময় হয়ে গেছে...এবং মলি আসছে! বুকের ভেতর গুড় গুড় করে ওঠে মামুনের...
আরে মামুন ভাই, আজও ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে কার জন্য?
তো-তোমার জন্যই।
ওহ্, কী সুইট! কী ফুল এটা?
তোমার সঙ্গে একটা জরুরি কথা ছিল।
বলুন। ফুলটা হাতে নিয়ে বলে মলি।
পরশু ভ্যালেন্টাইনস ডেতে কি তোমার একটু সময় হবে?
উ...হবে, কেন?
ওই দিন রমনা পার্কের ফার্স্ট গেটে একটু আসতে পারবে?
কেন পারব না?
তাহলে ফার্স্ট গেটের ফার্স্ট বেঞ্চটায় বিকেল পাঁচটায় আমি অপেক্ষা করব।
নো প্রবলেম! বাই...। বাস এসে গেছে। এগিয়ে যায় মলি।
ভ্যালেন্টাইনস ডে। রমনা পার্কের ফার্স্ট গেটের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে আছে মামুন। সাড়ে চারটায় এসেছে। এখন বাজে সাড়ে পাঁচটা। মলি আসবে তো? অবশ্য ঢাকায় আজ খুব জ্যাম। বসে থাকতে থাকতে মামুন যে কখন ঘুমিয়ে পড়ে, টের পায় না। অবশ্য চমত্কার একটা স্বপ্ন দেখে...তার সঙ্গে মলির বিয়ে হচ্ছে। মলির হাত ধরে নিজের বাড়ি থেকে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি...ঠিক তখন পুলিশের লাঠির গুঁতায় তার ঘুম ভাঙে। এই, ওঠ। ওই মাইয়া, ওঠ! মামুন অবাক হয়ে দেখে তার পাশে অতিরিক্ত সাজগোজ করা একটা মেয়ে। এ মেয়েটা কে? এখানে কেন?
সন্ধ্যা রাইতে পার্কে বাজে মাইয়া লইয়া মৌজ কর? চল, শ্বশুরবাড়ি...
ভাই, আপনারা ভুল করছেন।
আবার কথা কয়। ঘোরের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ওঠে মামুন। মেয়েটাকেও ওঠানো হয়। মেয়েটার চেহারা ভাবলেশহীন। তার দিকে ফিরে হঠাত্ ফিসফিস করে বলে, ‘তোমার কোনো দোষ নাই। তোমার বেঞ্চে আইসা বসায় তুমি ধরা খাইছ আমার লগে।’
পুলিশের ওয়াকিটকি বেজে ওঠে—
—হ্যালো? কী? ১০০ জন হয়া গেছে? তাইলে এদের ছাইড়া দিই...ধুত্! খালি ঝামেলা! এই, গাড়ি থামাও।
গাড়ি থামল। অফিসার মামুনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই, তোমরা নামো... যাও, বাড়ি যাও... জলদি।’
মামুন নেমে আসে। কী মনে করে মেয়েটার হাত ধরে নামায়। মেয়েটাকে হঠাত্ মলির চেয়েও সুন্দর লাগে মামুনের। মেয়েটা হাসে। মুক্তির হাসি! মামুন কী মনে করে পকেট থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে মেয়েটাকে দেয়।
এইটা কী?
একটা গিফট। তোমার জন্য...তুমিই রাখো।
বাক্সটা খোলে মেয়েটি। একটা টকটকে লাল কাচের হার্ট। হার্ট তো আসলে কাচেরই হয়! আর তখন অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল কিউপিড। কী মনে করে ছুড়ে দিল তার শেষ তীরটা ওদের দিকে। ওরা টেরই পেল না!
এক কাজ কর...। কী? মলিকেই তো তোর টার্গেট...নাকি? হু।
ওকে পাঁচটা গোলাপ ফুল দে...আজই দে...দিয়ে রি-অ্যাকশন দেখ।
পাঁচটা কেন?
মলির মুখটা অনেকটা বাংলা পাঁচের মতো না?
ফাজিল! গেলি...!!
ফাজিল আবু হেনা হে হে করে হাসতে হাসতে উঠে যায়। উঠে না গিয়ে উপায় নেই, মোবাইল ফোনে তার গার্লফ্রেন্ডের কল চলে এসেছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফ্রি হলেও এ ব্যাপারটা সে গোপন রেখেছে!
তবে মামুন বিষয়টা নিয়ে ভাবে। গোলাপ ফুল সত্যিই দেবে? দিয়ে দেখাই যাক না। তবে পাঁচটা না, সাতটা দেবে, লাকি সেভেন। তা ছাড়া তার জন্ম ১৬ তারিখ। ৬ যোগ ১ সাত...লাকি নাম্বার।
মামুন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সাতটা গোলাপ। একটু টেনশন লাগছে। এই পথ দিয়েই কলেজের বাসে উঠবে মলি। আবু হেনা অবশ্য শেষে একটা কথা বলেছে, ফুল দেওয়ার পর যদি মলি মুখের ওপর ফুলগুলো ছুড়ে মারে তবে বুঝতে হবে কেস পজিটিভ। আর ফুলগুলো মাটিতে ফেলে পায়ে পিশে ফেললে বুঝতে হবে কেস পুরোই খারাপ। ছোট ভাই আবু হেনা একটু ফাজিল টাইপের হলেও মাঝেমধ্যে ভালো পরামর্শই দেয়। মামুনের সন্দেহ, আবু হেনা প্রেমট্রেম করে, নইলে এত কিছু জানে কীভাবে!
এই সময় রঙ্গমঞ্চে মলিকে দেখা গেল। আসছে...বুকের ভেতর গুড় গুড় করে উঠল মামুনের। গলা শুকিয়ে আসছে, একটু পানি খেলে ভালো হতো। আশপাশে মিনারেল ওয়াটার...।
আরে মামুন ভাই? হাতে এত গোলাপ নিয়ে কার জন্য? আমাকে দেবেন?
তু-তুমি নেবে? নাও...
ওহ্, সো সুইট! ফুলগুলো একরকম ছিনিয়ে নিয়ে মলি এগিয়ে গেল। তার কলেজের মাইক্রোবাস হর্ন দিচ্ছে।
একেই বোধহয় বলে মেঘ না চাইতেই ছাতিসহ জল। মলিকে আসল কথাটা বলা হলো না। তবে প্রাথমিক বিজয় তো হয়েছে! ফুল তার হাতে পৌঁছানো গেছে। দেখি, আবু হেনার সঙ্গে একটা সিটিং দিতে হবে বিষয়টা নিয়ে, পরবর্তী সময়ে করণীয় কী?
ভাই, খবর তো খারাপ।
মানে? মামুনকে উদ্বিগ্ন মনে হয়।
খবর পেয়েছি, তোর গোলাপ শিল-পাটায় বেটে মলি মুখে লাগিয়ে শুয়ে আছে। মানে রূপচর্চা...গোলাপ বেটে মুখে প্রলেপ দিলে চামড়ায় উজ্জ্বলতা আসে!
তুই জানলি কীভাবে?
বাহ্, জানব না? আমাদের ঠিকা ঝি মনোয়ারার মা ওদের বাসায়ও ঠিকা ঝির কাজ করে না? ও-ই বলেছে। সে-ই তো বেটে দিয়েছে তোর সাত গোলাপ!
উফ! বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে মামুন।
না, ঘাবড়ানোর কারণ নেই। তুই আবার ফুল দে। আবু হেনা আশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে। এবার এমন ফুল দিবি যেন বাটতে না পারে। প্লাস্টিকের ফুল।
আমার সঙ্গে ফাজলামো করিস? রেগে ওঠে মামুন।
আরে না, সত্যি বলছি। বাণিজ্য মেলায় মালয়েশিয়ান স্টলে নতুন এক ধরনের ফুল এসেছে...প্লাস্টিকের, ব্লেন্ডারে ফেললেও ওই ফুলের কিছু হবে না।
তাই? তুই বলছিস?
সত্যি সত্যিই আবার একদিন মামুনকে দেখা যায়। সেই বিশেষ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে। আজ একটা কিছু বলতেই হবে, ১৪ তারিখ চলে এসেছে। ঘড়ি দেখে মামুন। মলির আসার সময় হয়ে গেছে...এবং মলি আসছে! বুকের ভেতর গুড় গুড় করে ওঠে মামুনের...
আরে মামুন ভাই, আজও ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে কার জন্য?
তো-তোমার জন্যই।
ওহ্, কী সুইট! কী ফুল এটা?
তোমার সঙ্গে একটা জরুরি কথা ছিল।
বলুন। ফুলটা হাতে নিয়ে বলে মলি।
পরশু ভ্যালেন্টাইনস ডেতে কি তোমার একটু সময় হবে?
উ...হবে, কেন?
ওই দিন রমনা পার্কের ফার্স্ট গেটে একটু আসতে পারবে?
কেন পারব না?
তাহলে ফার্স্ট গেটের ফার্স্ট বেঞ্চটায় বিকেল পাঁচটায় আমি অপেক্ষা করব।
নো প্রবলেম! বাই...। বাস এসে গেছে। এগিয়ে যায় মলি।
ভ্যালেন্টাইনস ডে। রমনা পার্কের ফার্স্ট গেটের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে আছে মামুন। সাড়ে চারটায় এসেছে। এখন বাজে সাড়ে পাঁচটা। মলি আসবে তো? অবশ্য ঢাকায় আজ খুব জ্যাম। বসে থাকতে থাকতে মামুন যে কখন ঘুমিয়ে পড়ে, টের পায় না। অবশ্য চমত্কার একটা স্বপ্ন দেখে...তার সঙ্গে মলির বিয়ে হচ্ছে। মলির হাত ধরে নিজের বাড়ি থেকে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি...ঠিক তখন পুলিশের লাঠির গুঁতায় তার ঘুম ভাঙে। এই, ওঠ। ওই মাইয়া, ওঠ! মামুন অবাক হয়ে দেখে তার পাশে অতিরিক্ত সাজগোজ করা একটা মেয়ে। এ মেয়েটা কে? এখানে কেন?
সন্ধ্যা রাইতে পার্কে বাজে মাইয়া লইয়া মৌজ কর? চল, শ্বশুরবাড়ি...
ভাই, আপনারা ভুল করছেন।
আবার কথা কয়। ঘোরের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ওঠে মামুন। মেয়েটাকেও ওঠানো হয়। মেয়েটার চেহারা ভাবলেশহীন। তার দিকে ফিরে হঠাত্ ফিসফিস করে বলে, ‘তোমার কোনো দোষ নাই। তোমার বেঞ্চে আইসা বসায় তুমি ধরা খাইছ আমার লগে।’
পুলিশের ওয়াকিটকি বেজে ওঠে—
—হ্যালো? কী? ১০০ জন হয়া গেছে? তাইলে এদের ছাইড়া দিই...ধুত্! খালি ঝামেলা! এই, গাড়ি থামাও।
গাড়ি থামল। অফিসার মামুনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই, তোমরা নামো... যাও, বাড়ি যাও... জলদি।’
মামুন নেমে আসে। কী মনে করে মেয়েটার হাত ধরে নামায়। মেয়েটাকে হঠাত্ মলির চেয়েও সুন্দর লাগে মামুনের। মেয়েটা হাসে। মুক্তির হাসি! মামুন কী মনে করে পকেট থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে মেয়েটাকে দেয়।
এইটা কী?
একটা গিফট। তোমার জন্য...তুমিই রাখো।
বাক্সটা খোলে মেয়েটি। একটা টকটকে লাল কাচের হার্ট। হার্ট তো আসলে কাচেরই হয়! আর তখন অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল কিউপিড। কী মনে করে ছুড়ে দিল তার শেষ তীরটা ওদের দিকে। ওরা টেরই পেল না!
No comments