বিনম্র চরিত্রের রাজনীতিক by এনামুল হক
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার_ বিনম্র চরিত্রের এই রাজনীতিক কোনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। আজ ৭ মে। ৮ বছর আগে শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষের এ নেতা ঘাতকচক্রের ব্রাশফায়ারে শহীদ হন। সমাজকে বড় করে দেখতে হলে মানুষকে বড় করে দেখতে হবে আর সেই মানুষই বড় সম্মান করে আহসান উল্লাহকে তার নামের সঙ্গে একটি বিশেষণ জুড়ে দিয়েছিল 'মাস্টার'।
পেশা-পরিচয় ও শিক্ষকতার আদর্শই তার সমগ্র জীবনাচরণের অঙ্কুর ও শিকড়কে ধারণ করেছিল। তার সব মানবিক গুণ, ধ্যান-পবিত্রতা, কর্তব্য-পরায়ণতা, দৃষ্টিভঙ্গির উদারতা, সাহসিকতা ও ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর সমুদয় সত্যনিষ্ঠায় যথার্থই হয়ে উঠেছিল তার পরিচয় এবং সম্মানসূচক বিশেষণ।
শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করা এবং তাদের স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টায় কোনোদিনই তাকে পিছপা হতে দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে মেহনতি মানুষ তাদের এই দরদি নেতার এমন অন্ধ-অনুসারী হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, তার আহ্বানে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ হওয়ার বিচিত্র দৃশ্য অবাক বিস্ময়ে ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুরের সবাই বারবার প্রত্যক্ষ করেছে। শ্রম বিষয়ক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে, সেই মামলার আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ ও মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল গঠনসহ বহুবিধ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার পরিচিত হয়েছেন। অসাধারণ বন্ধুপ্রীতি ও অনুগতজনের প্রতি গভীর সৌহার্দ্য ও অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অন্যতম গুণ।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনে যতবার প্রার্থী হয়েছেন জনগণের নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার একটিবারের জন্য হারেননি। ১৯৮৩ সালে পূবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি গাজীপুর-২ আসন (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি বস্ত্রশিল্পের মালিকানা হস্তান্তরের মাধ্যমে মিলগুলো বেসরকারিকরণে যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনে যার অক্লান্ত পরিশ্রম বাস্তবে কাজে লেগেছে, তিনি হচ্ছেন শ্রমিকদের পরীক্ষিত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। শ্রমিক অসন্তোষ যেখানে দেখা দিয়েছে, সেখানেই নিজে ছুটে গিয়েছেন। শ্রমিক অসন্তোষের সময় খেয়াল রেখেছেন, শ্রমিক কেউ অসন্তোষকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নিজের ফায়দা হাসিল না করতে পারে। দরকষাকষির মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করার নিরন্তর চেষ্টাকে তাকে সফল নেতায় পরিণত করেছে। প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে বন্ধ ও রুগ্ণ কলকারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া, পাটসহ জাতীয় শিল্প রক্ষা ও কৃষকদের স্বার্থে কাঁচাপাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ শ্রমিক-কৃষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছেন ভাওয়ালের এই কৃতী সন্তান আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা, নারী শ্রমিক স্বার্থ সংবলিত দাবি বাস্তবায়ন এবং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করার জন্য দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সচেতনতা বৃদ্ধি করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন দশের মধ্যে একক। তাকে মানুষ ভক্তি করত, তিনিও মানুষকে ভক্তি করতেন। স্বাতন্ত্র্যে ও বৈশিষ্ট্যে আর দশজন থেকে তাকে পৃথক করা যায় এবং তিনি দীপ্যমান হয়ে ওঠেন জ্যোতির্ময় সূর্যের মতো। এ রকম ব্যক্তিকে বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ২০০৪ সালের ৭ মে। দেশ হারায় জনগণমন নন্দিত অধিনায়ককে, যিনি ছিলেন সহস্র তরুণের আদর্শ, যিনি ছিলেন জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারার একজন রাজনীতিবিদ ও একজন মানুষ গড়ার কারিগর। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মরেননি; যুদ্ধ করেন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই পাকিস্তানি বাহিনী তাকে হত্যা করতে পারেনি। তাকে হত্যা করে স্বাধীন দেশের মাটিতে ঘাতকচক্র।
তবে তিনি বেঁচে থাকবেন তার কর্মে ও আদর্শে সমুজ্জ্বল হয়ে। সে কারণেই দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করি তিনি ছিলেন জনগণমন অধিনায়ক। সেই নন্দিত অধিনায়কের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এনামুল হক : বিভাগীয় প্রধান
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর
শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করা এবং তাদের স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টায় কোনোদিনই তাকে পিছপা হতে দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে মেহনতি মানুষ তাদের এই দরদি নেতার এমন অন্ধ-অনুসারী হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, তার আহ্বানে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার লোকের সমাবেশ হওয়ার বিচিত্র দৃশ্য অবাক বিস্ময়ে ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুরের সবাই বারবার প্রত্যক্ষ করেছে। শ্রম বিষয়ক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে, সেই মামলার আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ ও মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল গঠনসহ বহুবিধ কর্মযজ্ঞের সঙ্গে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার পরিচিত হয়েছেন। অসাধারণ বন্ধুপ্রীতি ও অনুগতজনের প্রতি গভীর সৌহার্দ্য ও অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অন্যতম গুণ।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনে যতবার প্রার্থী হয়েছেন জনগণের নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার একটিবারের জন্য হারেননি। ১৯৮৩ সালে পূবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি গাজীপুর-২ আসন (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি বস্ত্রশিল্পের মালিকানা হস্তান্তরের মাধ্যমে মিলগুলো বেসরকারিকরণে যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনে যার অক্লান্ত পরিশ্রম বাস্তবে কাজে লেগেছে, তিনি হচ্ছেন শ্রমিকদের পরীক্ষিত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। শ্রমিক অসন্তোষ যেখানে দেখা দিয়েছে, সেখানেই নিজে ছুটে গিয়েছেন। শ্রমিক অসন্তোষের সময় খেয়াল রেখেছেন, শ্রমিক কেউ অসন্তোষকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নিজের ফায়দা হাসিল না করতে পারে। দরকষাকষির মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করার নিরন্তর চেষ্টাকে তাকে সফল নেতায় পরিণত করেছে। প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে বন্ধ ও রুগ্ণ কলকারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া, পাটসহ জাতীয় শিল্প রক্ষা ও কৃষকদের স্বার্থে কাঁচাপাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ শ্রমিক-কৃষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছেন ভাওয়ালের এই কৃতী সন্তান আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা, নারী শ্রমিক স্বার্থ সংবলিত দাবি বাস্তবায়ন এবং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করার জন্য দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সচেতনতা বৃদ্ধি করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন দশের মধ্যে একক। তাকে মানুষ ভক্তি করত, তিনিও মানুষকে ভক্তি করতেন। স্বাতন্ত্র্যে ও বৈশিষ্ট্যে আর দশজন থেকে তাকে পৃথক করা যায় এবং তিনি দীপ্যমান হয়ে ওঠেন জ্যোতির্ময় সূর্যের মতো। এ রকম ব্যক্তিকে বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ২০০৪ সালের ৭ মে। দেশ হারায় জনগণমন নন্দিত অধিনায়ককে, যিনি ছিলেন সহস্র তরুণের আদর্শ, যিনি ছিলেন জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারার একজন রাজনীতিবিদ ও একজন মানুষ গড়ার কারিগর। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মরেননি; যুদ্ধ করেন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই পাকিস্তানি বাহিনী তাকে হত্যা করতে পারেনি। তাকে হত্যা করে স্বাধীন দেশের মাটিতে ঘাতকচক্র।
তবে তিনি বেঁচে থাকবেন তার কর্মে ও আদর্শে সমুজ্জ্বল হয়ে। সে কারণেই দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করি তিনি ছিলেন জনগণমন অধিনায়ক। সেই নন্দিত অধিনায়কের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এনামুল হক : বিভাগীয় প্রধান
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর
No comments