সদরে অন্দরে-ওরা কবে মানুষ হবে by মোস্তফা হোসেইন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে রক্তগঙ্গা বয়ে গেল চুয়াত্তরে। কী অবাক কাণ্ড! বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছাত্রলীগ নেতারাই খুনের আসামি! শফিউল আলম প্রধান, আনিসুর রহমান, বাবু, মণ্ডল, আব্বাসউদ্দিন আফসারী, ইশতিয়াক চৌধুরী সেলিম, বগুড়ার সেলিম, মোস্তফা আলী খোকন, কবিরুল ইসলাম কাঞ্চন, মুজিবুল হাসান কিসলু, হেমায়েতউদ্দিন মোল্লা,
ফরহাদ আহমেদ, সোহেল চৌধুরী, শেখ রফিকউদ্দিন, মহসিনউদ্দিন নিরু, রঞ্জু, বিটু, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ ও তাজুল ইসলামসহ মুহসীন হলের দুই নাইটগার্ড খুনের মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন শেখ রফিকউদ্দিন ও মহসিনউদ্দিন নিরু। খুন হয়েছিলেন কোহিনূর, জিন্নাহ, এবাদ, সোহেল, বাবান, ইদ্রিস ও হোসেন। মুহসীন হলের সেই সেভেন মার্ডার মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ২২ জন। আদালত প্রথমে তাদের মৃত্যুদণ্ড দিলেও পরে রায়টি পুনর্বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। টলে যাননি জাতির পিতা। অপরাধী যেই হোক_শাস্তি তাকে পেতেই হবে। অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিল এসব ছেলে। কিন্তু যে অপরাধ তারা করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি পেল অপরাধীরা।
তবে যাবজ্জীবন যে আড়াই-তিন বছরেই শেষ হয়ে যাবে তা কি জানতেন বঙ্গবন্ধু? কোহিনূরদের পরিবারের চোখের পানি মিশতে না মিশতেই সেই খুনিরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এল। জেলমুক্তিই শুধু নয়_পালের গোদাটি হয়ে গেল রাজনৈতিক দলের নেতা। নেতা বানালেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। মুক্তিদাতাও যে তিনিই। প্রথম সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এবং পরবর্তী সামরিক সরকার ক্ষমতায় এলে সেই নেতা ঠিকই দাবড়ে বেড়াতে লাগল রাজনীতির মাঠ। কারণ সামরিক সরকারের প্রয়োজন ছিল খুনি ও তস্কর রাজনীতিবিদদের। ছাত্রদের মধ্যে এটি আরো বেশি প্রয়োজন ছিল। কারণ সামরিক শাসকরা ছাত্রদের কাছ থেকেই প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। শফিউল আলম প্রধানকে তো তার প্রয়োজন হবেই। পাঠকদের মনে আছে নিশ্চয়ই ইমদুর কথা, অভি কিংবা নীরুর কথা। পাগলা শহীদ তো মারা গেল তার নেতারই সামনে। এসব অস্ত্রবাজকে সুপথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলো অভিভাবক মহল থেকে। যেমনটি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালেও হয়েছিল। প্রত্যেকের অভিভাবকই চান তাঁর সন্তান যেন মানুষ হয়।
সত্তরের দশকের শুরুতে খান আতার ঐতিহাসিক সৃষ্টি 'আবার তোরা মানুষ হ'র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। কলেজ অধ্যক্ষ খান আতাউর রহমান তাঁর ছাত্রদের বখে যাওয়া দেখে কী যন্ত্রণায়ই না ভুগছিলেন! যেই তারুণ্য একসময় অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই তরুণরাই কি না চাঁদাবাজি, গুলিবিনিময় ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। খান আতাউর রহমান সেই সিনেমা তৈরি করে যুবসমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল সেই ছবি। হয়তোবা কুপথে যাওয়া কারো কারো সুমতিও হতে পারে এসব ছবি দেখার পর। কিন্তু এত দিন পর আবারও কি আমাদের সেই একই কথা বলতে হবে_'আবার তোরা মানুষ হ'।
কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তা ছাড়া সামরিক শাসনামলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দলীয় হীন স্বার্থে ব্যবহার করার যে সংস্কৃতি তৈরি করা হলো, এখনো সেই ধারাই যেন নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্ররাজনীতি। খুব প্রচলিত সেই কথা এবং সত্যও বটে, জিয়াউর রহমান চষে বেড়াতে লাগলেন গ্রামে গ্রামে। সরকারের অর্থ ব্যয় করে সরকারি ভ্রমণের নামে কর্মী বাহিনী তৈরি করলেন একতরফা। কারণ তখন সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নিজের দল গোছানোর কাজ তিনি ঠিকই করে যেতে থাকলেন। সে সময়ই প্রয়োজন হলো তরুণদের। নৌভ্রমণে নিয়ে মেধা শিকারের কথাটি নিশ্চয় মনে আছে। সে সময় কথাটি বহুল প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র অভিকেও বাগিয়ে এনে তার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল, খুনি বানানো হয়েছিল।
কিন্তু এত করেও সামরিক শাসকরা তাদের শেষ রক্ষা করতে পারেনি। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মানুষ হঠাৎই ভুলে যেতে চাইল ছাত্র রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা দখলদারি নয়। তারা সত্যের পক্ষেও লড়াই করতে পারে, যেমনি তারা করেছিল একাত্তরে। কিন্তু কদিন আর। আমাদের রাজনীতি যেন সামরিক রাজনীতিরই উত্তরসূরি হয়ে গেল। ছাত্ররাজনীতিতেও খুন-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির সেই একই ধারা প্রবাহিত হতে থাকল। মনে আছে কি ২০০১ সালের কথা? কী দুর্বিষহ অবস্থা শুরু হলো। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। যার অন্যতম শরিক দল ছিল একাত্তরে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে খুনখারাবির মতো মানবতাবিরোধী কাজের জন্য অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। অত্যন্ত সুন্দর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট তাণ্ডব শুরু করে সারা দেশে। মনে আছে কি সে সময় সারা দেশে ছাত্রদল-শিবির কিভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছিল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব কটি বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মী ও সমর্থকদের বের করে দিয়ে সেখানে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। ঢাকা শহরের অনেক ব্যবসায়ীকে হলে আটক করে অর্থ আদায় করেছে ছাত্রদল নেতারা। এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হামলা হয়নি। কিন্তু তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাত্রদলের এই অনাচারের ব্যাপারে টুঁ-শব্দটিও করেননি। এর করুণ পরিণতি কিন্তু সবাই জানে।
তার পরও কি ছাত্রদের সেই কলঙ্কময় অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ২০০৯ সালে কেবল নামের পালাবদল হয়েছে। ছাত্রদলের জায়গায় এসেছে ছাত্রলীগ। আবারও দুর্ভাবনায় পড়েছে দেশের মানুষ। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এমন কোনো পরিবেশ তারা তৈরি করবে না_এমনটিই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু এবারও সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো না। এই সোনার ছেলেরা হল দখল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত টেন্ডার কাজে অংশ নিয়ে বাঙ্ ছিনতাই করতে শুরু করে।
মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগকে সেই দায় বহন করতে হচ্ছে। কারণ সরকারেও তাদেরই অংশগ্রহণ বেশি। সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। ছাত্রলীগের ছেলেরা নিজেরাই নিজেদের কুপিয়েছে, রড দিয়ে পিটিয়েছে। কেউ বলতেই পারেন, সেও তো ছাত্রদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে কিছুটা ভালো। কারণ ওরা তো নিজেরা মারামারি করতে গিয়ে অনেককে খুনই করে ফেলেছিল। প্রশ্নটা তো এমনও হতে পারে_এই আঘাত তো মৃত্যুও ঘটাতে পারত। আওয়ামী লীগের কোনো সমর্থক হয়তো বলতে পারেন, খালেদা জিয়া তখন তাঁর সোনার ছেলেদের নেতৃত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এতেই কি সব শেষ হয়ে গেল? আওয়ামী লীগ তো ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব এখনো অস্বীকার করেনি। স্বতন্ত্র সংগঠন মুখে বললেই কি আর স্বতন্ত্র হয়ে যাবে ছাত্রলীগ? প্রধানমন্ত্রী একবার রেগে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সাক্ষাৎ দেননি। তাতেও কি আওয়ামী লীগের দায়মুক্তি ঘটবে? স্যার এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র আবু বকরের কথা এত তাড়াতাড়ি আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কী নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন তিনি! সেও তো ছাত্র অপরাজনীতিরই পরিণতি। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পথ ধরলেই দায়মুক্তি পেতে পারে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অন্তত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যদি পায় কিছু অপরাধী তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। তা না হলে আমাদের প্রশ্ন করতে করতেই সময় যাবে_ওরা কবে মানুষ হবে?
mhussain_71@yahoo.com
তবে যাবজ্জীবন যে আড়াই-তিন বছরেই শেষ হয়ে যাবে তা কি জানতেন বঙ্গবন্ধু? কোহিনূরদের পরিবারের চোখের পানি মিশতে না মিশতেই সেই খুনিরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এল। জেলমুক্তিই শুধু নয়_পালের গোদাটি হয়ে গেল রাজনৈতিক দলের নেতা। নেতা বানালেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। মুক্তিদাতাও যে তিনিই। প্রথম সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এবং পরবর্তী সামরিক সরকার ক্ষমতায় এলে সেই নেতা ঠিকই দাবড়ে বেড়াতে লাগল রাজনীতির মাঠ। কারণ সামরিক সরকারের প্রয়োজন ছিল খুনি ও তস্কর রাজনীতিবিদদের। ছাত্রদের মধ্যে এটি আরো বেশি প্রয়োজন ছিল। কারণ সামরিক শাসকরা ছাত্রদের কাছ থেকেই প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। শফিউল আলম প্রধানকে তো তার প্রয়োজন হবেই। পাঠকদের মনে আছে নিশ্চয়ই ইমদুর কথা, অভি কিংবা নীরুর কথা। পাগলা শহীদ তো মারা গেল তার নেতারই সামনে। এসব অস্ত্রবাজকে সুপথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলো অভিভাবক মহল থেকে। যেমনটি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালেও হয়েছিল। প্রত্যেকের অভিভাবকই চান তাঁর সন্তান যেন মানুষ হয়।
সত্তরের দশকের শুরুতে খান আতার ঐতিহাসিক সৃষ্টি 'আবার তোরা মানুষ হ'র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। কলেজ অধ্যক্ষ খান আতাউর রহমান তাঁর ছাত্রদের বখে যাওয়া দেখে কী যন্ত্রণায়ই না ভুগছিলেন! যেই তারুণ্য একসময় অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই তরুণরাই কি না চাঁদাবাজি, গুলিবিনিময় ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। খান আতাউর রহমান সেই সিনেমা তৈরি করে যুবসমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল সেই ছবি। হয়তোবা কুপথে যাওয়া কারো কারো সুমতিও হতে পারে এসব ছবি দেখার পর। কিন্তু এত দিন পর আবারও কি আমাদের সেই একই কথা বলতে হবে_'আবার তোরা মানুষ হ'।
কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তা ছাড়া সামরিক শাসনামলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দলীয় হীন স্বার্থে ব্যবহার করার যে সংস্কৃতি তৈরি করা হলো, এখনো সেই ধারাই যেন নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্ররাজনীতি। খুব প্রচলিত সেই কথা এবং সত্যও বটে, জিয়াউর রহমান চষে বেড়াতে লাগলেন গ্রামে গ্রামে। সরকারের অর্থ ব্যয় করে সরকারি ভ্রমণের নামে কর্মী বাহিনী তৈরি করলেন একতরফা। কারণ তখন সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নিজের দল গোছানোর কাজ তিনি ঠিকই করে যেতে থাকলেন। সে সময়ই প্রয়োজন হলো তরুণদের। নৌভ্রমণে নিয়ে মেধা শিকারের কথাটি নিশ্চয় মনে আছে। সে সময় কথাটি বহুল প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র অভিকেও বাগিয়ে এনে তার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল, খুনি বানানো হয়েছিল।
কিন্তু এত করেও সামরিক শাসকরা তাদের শেষ রক্ষা করতে পারেনি। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মানুষ হঠাৎই ভুলে যেতে চাইল ছাত্র রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা দখলদারি নয়। তারা সত্যের পক্ষেও লড়াই করতে পারে, যেমনি তারা করেছিল একাত্তরে। কিন্তু কদিন আর। আমাদের রাজনীতি যেন সামরিক রাজনীতিরই উত্তরসূরি হয়ে গেল। ছাত্ররাজনীতিতেও খুন-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির সেই একই ধারা প্রবাহিত হতে থাকল। মনে আছে কি ২০০১ সালের কথা? কী দুর্বিষহ অবস্থা শুরু হলো। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। যার অন্যতম শরিক দল ছিল একাত্তরে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে খুনখারাবির মতো মানবতাবিরোধী কাজের জন্য অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। অত্যন্ত সুন্দর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট তাণ্ডব শুরু করে সারা দেশে। মনে আছে কি সে সময় সারা দেশে ছাত্রদল-শিবির কিভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছিল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব কটি বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মী ও সমর্থকদের বের করে দিয়ে সেখানে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। ঢাকা শহরের অনেক ব্যবসায়ীকে হলে আটক করে অর্থ আদায় করেছে ছাত্রদল নেতারা। এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হামলা হয়নি। কিন্তু তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাত্রদলের এই অনাচারের ব্যাপারে টুঁ-শব্দটিও করেননি। এর করুণ পরিণতি কিন্তু সবাই জানে।
তার পরও কি ছাত্রদের সেই কলঙ্কময় অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ২০০৯ সালে কেবল নামের পালাবদল হয়েছে। ছাত্রদলের জায়গায় এসেছে ছাত্রলীগ। আবারও দুর্ভাবনায় পড়েছে দেশের মানুষ। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এমন কোনো পরিবেশ তারা তৈরি করবে না_এমনটিই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু এবারও সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো না। এই সোনার ছেলেরা হল দখল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত টেন্ডার কাজে অংশ নিয়ে বাঙ্ ছিনতাই করতে শুরু করে।
মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগকে সেই দায় বহন করতে হচ্ছে। কারণ সরকারেও তাদেরই অংশগ্রহণ বেশি। সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। ছাত্রলীগের ছেলেরা নিজেরাই নিজেদের কুপিয়েছে, রড দিয়ে পিটিয়েছে। কেউ বলতেই পারেন, সেও তো ছাত্রদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে কিছুটা ভালো। কারণ ওরা তো নিজেরা মারামারি করতে গিয়ে অনেককে খুনই করে ফেলেছিল। প্রশ্নটা তো এমনও হতে পারে_এই আঘাত তো মৃত্যুও ঘটাতে পারত। আওয়ামী লীগের কোনো সমর্থক হয়তো বলতে পারেন, খালেদা জিয়া তখন তাঁর সোনার ছেলেদের নেতৃত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এতেই কি সব শেষ হয়ে গেল? আওয়ামী লীগ তো ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব এখনো অস্বীকার করেনি। স্বতন্ত্র সংগঠন মুখে বললেই কি আর স্বতন্ত্র হয়ে যাবে ছাত্রলীগ? প্রধানমন্ত্রী একবার রেগে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সাক্ষাৎ দেননি। তাতেও কি আওয়ামী লীগের দায়মুক্তি ঘটবে? স্যার এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র আবু বকরের কথা এত তাড়াতাড়ি আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কী নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন তিনি! সেও তো ছাত্র অপরাজনীতিরই পরিণতি। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পথ ধরলেই দায়মুক্তি পেতে পারে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অন্তত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যদি পায় কিছু অপরাধী তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। তা না হলে আমাদের প্রশ্ন করতে করতেই সময় যাবে_ওরা কবে মানুষ হবে?
mhussain_71@yahoo.com
No comments