সম্পত্তির হিসাব-একটা পদের আশায়! by শাহদীন মালিক
‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন পদের ধান্দায় চলি।’ বহু কাল পদের ধান্দায় চলছি। ‘পদ’যাত্রা তো কম হলো না, কিন্তু ‘পদের দেখা পাইলাম না রে’। মান-সম্মান, লজ্জা-শরম সব বিসর্জন দিয়ে বলছি, আমার একটা বড়সড় পদ দরকার।
কারণ দর্শাচ্ছি। তবে তার আগে আমার দৃষ্টিতে আমার অযোগ্যতার বয়ান বোধ হয় আবশ্যক, যাতে পাঠক সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন—অর্থাত্ আমার কোনো পদ পাওয়ার যোগ্যতা আছে কি না। অযোগ্যতাটা এতই বড় মাপের যে সেটা জাহির করার জন্য খুব বেশি বাক্য ব্যয় করতে হবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভাবে আমি বিএনপি-জামায়াতের লোক, আর বিএনপি ক্ষমতাধর হলে আমি চলে যাই অওয়ামী লীগে। অর্থাত্ আমার ‘টাইমিং’টা কখনো ঠিক হচ্ছে না। সজোরে ব্যাট হাঁকাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু ব্যাট হাঁকানোর আগেই বল স্ট্যাম্পে লেগে যায়।
অবশ্য একটা পথ বোধ হয় খোলা আছে। নেত্রীর নাম উচ্চারণের আগে বিশেষণের তোড়ে মুখে অনবরত ফেনা তোলার চেষ্টা করতে পারি। এ কর্মে কেউ যদি অধিকতর পারদর্শিতা অর্জন করতে চান, তাহলে যেকোনো মোগল সম্রাটের জীবনবৃত্তান্ত পড়তে পারেন। ইহকাল—তামাম মুল্লুক, সাম্রাজ্য সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি বহু বিশ্বাস তাঁদের নামের আগে ব্যবহূত হতো। সেখান থেকে তালিম নেওয়া যায়।
কেন পদ চাই, এখন তার ব্যাখ্যা। পদ পেলে আমার সম্পত্তির বিবরণ জনসমক্ষে প্রচার করব। বহু দিন ধরেই এই খায়েশ আছে মনে মনে। কিন্তু পদ ছাড়া তো আর সম্পত্তির হিসাব দেওয়া যায় না। আমার মতো রাম-শ্যাম-যদু-মধুর বিবরণীর তো কেউ তোয়াক্কাই করবেন না।
(২)
খায়েশটা জেগেছে ততবধি যতবধি সব পদধারী বলছেন সম্পত্তির হিসাব দেবেন। এই হুমকি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। হিসাব নেওয়া হয়েছে, হিসাব আছে, হিসাব অচিরেই প্রকাশ করা হবে, প্রয়োজনে জাতি জানতে পারবে, জাতিকে জানানো হবে ইত্যাদি আশ্বাসবাণী শোনেননি এমন বান্দা তো দেশে বোধ হয় আর নেই। হিসাবের হুমকির কাতারে শেষ সংস্করণ দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি।
কেউ কথা রাখেননি। অন্তত আজতক। দেন না আমাকে একটা পদ, আগামীকালই হিসাব দিয়ে দেব।
কথাটা বোধহয় ‘বেফাঁস’ গোছের হয়ে গেল। সম্পত্তির হিসাব দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে হম্বিতম্বি করা উচিত, কিন্তু আসলেই হিসাব জাহির করাটা বোধহয় অত্যন্ত অর্বাচীনের কাজ। অর্বাচীন ব্যক্তিকে কে পদ দেবে। দলীয় অর্বাচীন হলেও কিছুটা চান্স থাকত।
(৩)
সারা দেশে বড় পদে আসীন একটা ব্যক্তিও কি নেই যে জোর গলায় বলতে পারে—এই নে আমার সম্পত্তির হিসাব! পরের বছর আমার হিসাব দিবে—দেখ গত বছরে কত টাকা কামিয়েছি, কয়টা বাড়ি-গাড়ি কিনেছি।
সংবিধানের মূল কথা, অর্থাত্ সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ এখন মনে হচ্ছে কথাটা অসম্পূর্ণ। সংবিধান সংশোধন করে যোগ করা উচিত ‘এবং বিরাট বিরাট সহায়-সম্পত্তির মালিক উচ্চ পদধারী ব্যক্তিবর্গ।’
শেষের কথা: ১০ ফেব্রুয়ারি এই প্রথম আলোর প্রধান সম্পাদকীয়র শিরোনামে আছে—‘আমরা প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে’। যত দিন খুশি তত দিন ‘তাকিয়ে’ থাকেন!
শাহদীন মালিক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
অবশ্য একটা পথ বোধ হয় খোলা আছে। নেত্রীর নাম উচ্চারণের আগে বিশেষণের তোড়ে মুখে অনবরত ফেনা তোলার চেষ্টা করতে পারি। এ কর্মে কেউ যদি অধিকতর পারদর্শিতা অর্জন করতে চান, তাহলে যেকোনো মোগল সম্রাটের জীবনবৃত্তান্ত পড়তে পারেন। ইহকাল—তামাম মুল্লুক, সাম্রাজ্য সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি বহু বিশ্বাস তাঁদের নামের আগে ব্যবহূত হতো। সেখান থেকে তালিম নেওয়া যায়।
কেন পদ চাই, এখন তার ব্যাখ্যা। পদ পেলে আমার সম্পত্তির বিবরণ জনসমক্ষে প্রচার করব। বহু দিন ধরেই এই খায়েশ আছে মনে মনে। কিন্তু পদ ছাড়া তো আর সম্পত্তির হিসাব দেওয়া যায় না। আমার মতো রাম-শ্যাম-যদু-মধুর বিবরণীর তো কেউ তোয়াক্কাই করবেন না।
(২)
খায়েশটা জেগেছে ততবধি যতবধি সব পদধারী বলছেন সম্পত্তির হিসাব দেবেন। এই হুমকি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। হিসাব নেওয়া হয়েছে, হিসাব আছে, হিসাব অচিরেই প্রকাশ করা হবে, প্রয়োজনে জাতি জানতে পারবে, জাতিকে জানানো হবে ইত্যাদি আশ্বাসবাণী শোনেননি এমন বান্দা তো দেশে বোধ হয় আর নেই। হিসাবের হুমকির কাতারে শেষ সংস্করণ দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি।
কেউ কথা রাখেননি। অন্তত আজতক। দেন না আমাকে একটা পদ, আগামীকালই হিসাব দিয়ে দেব।
কথাটা বোধহয় ‘বেফাঁস’ গোছের হয়ে গেল। সম্পত্তির হিসাব দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে হম্বিতম্বি করা উচিত, কিন্তু আসলেই হিসাব জাহির করাটা বোধহয় অত্যন্ত অর্বাচীনের কাজ। অর্বাচীন ব্যক্তিকে কে পদ দেবে। দলীয় অর্বাচীন হলেও কিছুটা চান্স থাকত।
(৩)
সারা দেশে বড় পদে আসীন একটা ব্যক্তিও কি নেই যে জোর গলায় বলতে পারে—এই নে আমার সম্পত্তির হিসাব! পরের বছর আমার হিসাব দিবে—দেখ গত বছরে কত টাকা কামিয়েছি, কয়টা বাড়ি-গাড়ি কিনেছি।
সংবিধানের মূল কথা, অর্থাত্ সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ এখন মনে হচ্ছে কথাটা অসম্পূর্ণ। সংবিধান সংশোধন করে যোগ করা উচিত ‘এবং বিরাট বিরাট সহায়-সম্পত্তির মালিক উচ্চ পদধারী ব্যক্তিবর্গ।’
শেষের কথা: ১০ ফেব্রুয়ারি এই প্রথম আলোর প্রধান সম্পাদকীয়র শিরোনামে আছে—‘আমরা প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে’। যত দিন খুশি তত দিন ‘তাকিয়ে’ থাকেন!
শাহদীন মালিক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
No comments