এই বৈশাখে-তপন তাপে গ্রীষ্ম-বন্দনা by মাহবুব আলম
এই গরমের দেশে বসন্ত এসেই যাই-যাই করে। না গিয়ে যে উপায়ও নেই। চৈত্রের শুরুতেই আকাশ থেকে আগুন ঝরে। ‘আল্লাহ ম্যাঘ দে, পানি দে...’ এমনি দহন দিনের শেষে বিকেলের ছায়া নামে ঘন হয়ে। ঝোড়ো বাতাস, বজ্র গর্জন আর বৃষ্টির গন্ধ মেখে তখন এসে ছড়ায় বৈশাখ।
শুরু হয় স্নিগ্ধ ধারা বর্ষণ, সঙ্গে মেঘেরা বাজায় ঢোলক। সেই বর্ষণের মধ্য দিয়ে আসে নতুন বছর। জীর্ণ-দীর্ণ সবকিছুকে ফেলে দিয়ে শুরু হয় নতুনের অভিষেক। নতুন বছরকে ঘিরে মানুষের মনে জাগে নবজীবনের আশ্বাস।
সেই কবে থেকে এমনি করে বয়ে চলেছে ঋতুচক্রের ধারা; প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিতালির চিরন্তন কাহিনি। সেই কাহিনির বিচিত্র ছবি এঁকে গেছেন বহু বর্ষ আগে কবি কালিদাস তাঁর ‘ঋতু সংহার’ কাব্যে।
সেখানে গ্রীষ্ম-বর্ণনার সূচনাতেই তিনি বলেছেন, ‘প্রিয়ে। এখন গ্রীষ্মকাল। সূর্য এখন ভয়ংকর, চন্দ্র প্রীতিপদ, অপরাহ্ন নমনীয় আর কামদেবের প্রভাব এখন স্তিমিত।’ গ্রীষ্মের দাবদাহে বিলাসী নাগরিক। গ্রীষ্ম-বিলাসের উপকরণের যে কমতি ঘটে না, তাও তিনি বলেছেন সালংকারে।
এ যুগে বড় মানুষের ‘গরম হঠাও’-এর জন্য রয়েছে কালিদাসের কল্পনার অগম্য উন্নত প্রযুক্তির নানা উপকরণ, যা ‘ধারাগৃহ’কে ম্লান করে দেয়। তবে সাধারণ মানুষ এখনো রয়ে গেছে কালিদাসের কালেই। তাদের ভরসা মাটির কলসির পানি, ভেজা গামছা, তালপাতার পাখা বা সিক্ত মাদুর।
রাজকবি কালিদাসের চেয়ে মধ্য যুগের বাঙ্গলার কবি মুকুন্দরাম অধিক জীবন-ঘনিষ্ঠ। মাটির মানুষের অনেক কাছাকাছি। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণী, বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী-পুরুষেরা গ্রীষ্মের দাপটে জীবিকাহানির উল্লেখ করেছেন তিনি ব্যাধ রমণী ফুল্লরার কাহিনিতে। গরমের কারণে শিকারের পশুর মাংস বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে দারিদ্র্যপীড়িত ফুল্লরা স্বামী-পুত্রের মুখে অন্ন জোগানোর দুশ্চিন্তায় ‘পাপিষ্টা জ্যৈষ্ঠ, পাপিষ্ট জৈষ্ঠ্য’ বলে গ্রীষ্মকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন। সংগ্রামী ফুল্লরারা আজও আছেন। গ্রীষ্মের খর রোদে পাড়ায় পাড়ায় যে মহিলারা ক্লান্ত দেহে গেরস্থালির সামগ্রী ফেরি করে বেড়ান, তারাই তো আজকের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুকুন্দরামের ফুল্লরারা।
এই তাপদগ্ধ শহরের রাস্তাঘাট, দোকানপাট, সভা-সমিতি, অফিস-আদালতে অহরহ শোনা যায় একটি কাতর উক্তি—কী গরম! আর পারি না। বিদ্যুতের অভাব এই কাতর উক্তি আরও বেগবান করে তুলেছে। ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে গ্রীষ্ম-বন্দনা শেষ হতে না হতেই শুরু হয় গ্রীষ্ম-গঞ্জনা। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা পরীক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি আতঙ্কের উৎস, যা অভিভাবকদের মধ্যেও সংক্রমিত হতে সময় লাগে না। মনে হয় বসন্ত নয়, এই তাপক্লিষ্ট শহরে গ্রীষ্মই ‘রোদন ভরা’ যতক্ষণ না কালবৈশাখী সাগর থেকে মেঘ উড়িয়ে এনে আমাদের সিক্ত করে।
কেমন ছিল এই বাংলাদেশে বরফ, বিদ্যুৎ, ফ্রিজ ও পাখাবিহীন ঘর-সংসারের চেহারা? ঠান্ডা ঘর আর ঠান্ডা গাড়ি-বিবর্জিত সেদিনের গার্হস্থ্য জীবন? সে যুগের গ্রীষ্ম সংবাদ সবচেয়ে ভালো লিখেছেন সাংবাদিক সম্পাদক ঈশ্বর গুপ্ত, তাঁর পয়ারে লেখা দুটি দীর্ঘ কবিতায়। বাবুগণ কাবু হন কেহ নন সুখী বোকা হয়ে খোকা ভাব বিবি সব খুকী/ মলিনা মাসির প্রায় যত চাঁদমুখী/ ঘাড়ে আর নাহি লয় মদনের ঝুঁকি ইত্যাদি। গুপ্ত কবি এরপর দম্পতির শোবার ঘরেও উঁকি দিয়েছিলেন। আমাদের অবশ্য তার সঙ্গে সেখানে প্রবেশ সমুচিত হবে না।
সাহেবদের নাকি গরম সহ্য করার ক্ষমতা কানা আদমিদের চেয়ে কম। মেকলে সাহেব এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমরা এখানে তিন মাস গরমে ভাজা হই, তিন মাস পুড়ি, তিন মাস সিদ্ধ হই আর বাকি তিন মাস ধরে জুড়াই।’
বরফ বাংলায় প্রথম আসে ১৮৩৩ সালে। এসেছিল মার্কিন মুলুক থেকে। এক জাহাজবোঝাই করে। খাদ্যশস্য পাঠানোর অনেক আগেই আমেরিকা এ দেশে বরফ পাঠিয়েছিল। এ তথ্যটিও গ্রীষ্ম-বন্দনার ইতিহাসে উল্লেখ হওয়ার মতো।
বৈশাখ মাসের এক খরদিনে বাঙালি জীবনে যে অসাধারণ প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছিল, সেই রবীন্দ্রনাথ গ্রীষ্ম-বন্দনায় উচ্ছ্বসিত। কেবল মধু বসন্ত নয়, ঝরো ঝরো বাদল দিনের বর্ষণের, তপন তাপে রিদ্ধ গ্রীষ্ম ও কবির বড় প্রিয় ঋতু। তবে গ্রীষ্ম তাঁর চোখে তাপসরূপী, সে রুদ্র সন্ন্যাসী। গড়পড়তা বাঙালির কাছে গ্রীষ্মকে গ্রহণীয় করতে কবির ব্যাকুলতা তাঁর লেখায়ই ধরা রয়েছে। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নের নিবিড় ভাব সৌন্দর্য বাঙালি উপভোগ করতে জানে না বলে তাঁর যথেষ্ট খেদ ছিল। কবির বিচারে গরমের দুপুরে পেট ভরে খাওয়ার মতো এমন জড়ত্বজনক আর কিছুই নেই। কারণ, এতে মানুষের কল্পনাশক্তি একেবারে অভিভূত করে ফেলে।
কবি নিজেই লিখেছেন, রোদের সঙ্গে তাঁর মিতালি সেই ছেলেবেলা থেকে, যখন তেতালার খোলা বারান্দায় গরমের দিনের তপ্ত বাতাস একলাটি সময় কাটাতে আনন্দ পেতেন। কবি-কন্যা মীরাও উল্লেখ করেছেন, যতই গরম হোক, কবি কখনো ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতেন না।
আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় গ্রীষ্মদূষণের ছড়াছড়ি। এর অনেকটাই একতরফা এবং অতি সরলীকরণ নয় কি? ভুলে যাই যে প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম সৃজনশীলতার ঋতু। এই সময়ই চারদিকে ফুল-ফলের ঘটে উচ্ছসিত সমারোহ। যুগপৎ দহন আর তৃপ্তি—এই দুই মেরুরেখায় গ্রীষ্মের মতো স্বচ্ছন্দ বিহার আর কোন্ ঋতুর? আমরা তো প্রকৃতিরই অংশ। অথচ অনেক সময়ই প্রকৃতির ঔদার্য এবং অবারিত দাক্ষিণ্য উপলব্ধি করি না আমরা প্রকৃতির অপব্যয়ী সন্তানেরা।
সন্দেহ নেই, পানির কষ্ট গরমের দিনের একটি বড় সংকট। এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম যুগটি পেরিয়ে গেলেও আমাদের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষের বাঁচা-মরা এখনো আকাশের করুণার ওপর নির্ভরশীল। শুধু গ্রামেই নয়, একই শহরের নানা এলাকায় রয়েছে তীব্র পানির বৈষম্য। মনে রাখা ভালো যে পৃথিবীজুড়েই পানির দামে পানি পাওয়ার দিন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ঋতুচক্রকে দোষারোপ না করে এখনই পানির সংরক্ষণ, সংগ্রহ ও বিতরণে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূ-উপরিস্থিত পানির সদ্ব্যবহারে মনোযোগী হতে ক্ষতি কী? সজাগ না হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্যত কুঠার আর বেশি দিন আমাদের ছাড় নাও দিতে পারে।
মাহবুব আলম: প্রাবন্ধিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত।
mahboob1122@hotmail.com.
সেই কবে থেকে এমনি করে বয়ে চলেছে ঋতুচক্রের ধারা; প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিতালির চিরন্তন কাহিনি। সেই কাহিনির বিচিত্র ছবি এঁকে গেছেন বহু বর্ষ আগে কবি কালিদাস তাঁর ‘ঋতু সংহার’ কাব্যে।
সেখানে গ্রীষ্ম-বর্ণনার সূচনাতেই তিনি বলেছেন, ‘প্রিয়ে। এখন গ্রীষ্মকাল। সূর্য এখন ভয়ংকর, চন্দ্র প্রীতিপদ, অপরাহ্ন নমনীয় আর কামদেবের প্রভাব এখন স্তিমিত।’ গ্রীষ্মের দাবদাহে বিলাসী নাগরিক। গ্রীষ্ম-বিলাসের উপকরণের যে কমতি ঘটে না, তাও তিনি বলেছেন সালংকারে।
এ যুগে বড় মানুষের ‘গরম হঠাও’-এর জন্য রয়েছে কালিদাসের কল্পনার অগম্য উন্নত প্রযুক্তির নানা উপকরণ, যা ‘ধারাগৃহ’কে ম্লান করে দেয়। তবে সাধারণ মানুষ এখনো রয়ে গেছে কালিদাসের কালেই। তাদের ভরসা মাটির কলসির পানি, ভেজা গামছা, তালপাতার পাখা বা সিক্ত মাদুর।
রাজকবি কালিদাসের চেয়ে মধ্য যুগের বাঙ্গলার কবি মুকুন্দরাম অধিক জীবন-ঘনিষ্ঠ। মাটির মানুষের অনেক কাছাকাছি। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণী, বিশেষ করে শ্রমজীবী নারী-পুরুষেরা গ্রীষ্মের দাপটে জীবিকাহানির উল্লেখ করেছেন তিনি ব্যাধ রমণী ফুল্লরার কাহিনিতে। গরমের কারণে শিকারের পশুর মাংস বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে দারিদ্র্যপীড়িত ফুল্লরা স্বামী-পুত্রের মুখে অন্ন জোগানোর দুশ্চিন্তায় ‘পাপিষ্টা জ্যৈষ্ঠ, পাপিষ্ট জৈষ্ঠ্য’ বলে গ্রীষ্মকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন। সংগ্রামী ফুল্লরারা আজও আছেন। গ্রীষ্মের খর রোদে পাড়ায় পাড়ায় যে মহিলারা ক্লান্ত দেহে গেরস্থালির সামগ্রী ফেরি করে বেড়ান, তারাই তো আজকের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুকুন্দরামের ফুল্লরারা।
এই তাপদগ্ধ শহরের রাস্তাঘাট, দোকানপাট, সভা-সমিতি, অফিস-আদালতে অহরহ শোনা যায় একটি কাতর উক্তি—কী গরম! আর পারি না। বিদ্যুতের অভাব এই কাতর উক্তি আরও বেগবান করে তুলেছে। ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে গ্রীষ্ম-বন্দনা শেষ হতে না হতেই শুরু হয় গ্রীষ্ম-গঞ্জনা। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা পরীক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি আতঙ্কের উৎস, যা অভিভাবকদের মধ্যেও সংক্রমিত হতে সময় লাগে না। মনে হয় বসন্ত নয়, এই তাপক্লিষ্ট শহরে গ্রীষ্মই ‘রোদন ভরা’ যতক্ষণ না কালবৈশাখী সাগর থেকে মেঘ উড়িয়ে এনে আমাদের সিক্ত করে।
কেমন ছিল এই বাংলাদেশে বরফ, বিদ্যুৎ, ফ্রিজ ও পাখাবিহীন ঘর-সংসারের চেহারা? ঠান্ডা ঘর আর ঠান্ডা গাড়ি-বিবর্জিত সেদিনের গার্হস্থ্য জীবন? সে যুগের গ্রীষ্ম সংবাদ সবচেয়ে ভালো লিখেছেন সাংবাদিক সম্পাদক ঈশ্বর গুপ্ত, তাঁর পয়ারে লেখা দুটি দীর্ঘ কবিতায়। বাবুগণ কাবু হন কেহ নন সুখী বোকা হয়ে খোকা ভাব বিবি সব খুকী/ মলিনা মাসির প্রায় যত চাঁদমুখী/ ঘাড়ে আর নাহি লয় মদনের ঝুঁকি ইত্যাদি। গুপ্ত কবি এরপর দম্পতির শোবার ঘরেও উঁকি দিয়েছিলেন। আমাদের অবশ্য তার সঙ্গে সেখানে প্রবেশ সমুচিত হবে না।
সাহেবদের নাকি গরম সহ্য করার ক্ষমতা কানা আদমিদের চেয়ে কম। মেকলে সাহেব এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমরা এখানে তিন মাস গরমে ভাজা হই, তিন মাস পুড়ি, তিন মাস সিদ্ধ হই আর বাকি তিন মাস ধরে জুড়াই।’
বরফ বাংলায় প্রথম আসে ১৮৩৩ সালে। এসেছিল মার্কিন মুলুক থেকে। এক জাহাজবোঝাই করে। খাদ্যশস্য পাঠানোর অনেক আগেই আমেরিকা এ দেশে বরফ পাঠিয়েছিল। এ তথ্যটিও গ্রীষ্ম-বন্দনার ইতিহাসে উল্লেখ হওয়ার মতো।
বৈশাখ মাসের এক খরদিনে বাঙালি জীবনে যে অসাধারণ প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছিল, সেই রবীন্দ্রনাথ গ্রীষ্ম-বন্দনায় উচ্ছ্বসিত। কেবল মধু বসন্ত নয়, ঝরো ঝরো বাদল দিনের বর্ষণের, তপন তাপে রিদ্ধ গ্রীষ্ম ও কবির বড় প্রিয় ঋতু। তবে গ্রীষ্ম তাঁর চোখে তাপসরূপী, সে রুদ্র সন্ন্যাসী। গড়পড়তা বাঙালির কাছে গ্রীষ্মকে গ্রহণীয় করতে কবির ব্যাকুলতা তাঁর লেখায়ই ধরা রয়েছে। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নের নিবিড় ভাব সৌন্দর্য বাঙালি উপভোগ করতে জানে না বলে তাঁর যথেষ্ট খেদ ছিল। কবির বিচারে গরমের দুপুরে পেট ভরে খাওয়ার মতো এমন জড়ত্বজনক আর কিছুই নেই। কারণ, এতে মানুষের কল্পনাশক্তি একেবারে অভিভূত করে ফেলে।
কবি নিজেই লিখেছেন, রোদের সঙ্গে তাঁর মিতালি সেই ছেলেবেলা থেকে, যখন তেতালার খোলা বারান্দায় গরমের দিনের তপ্ত বাতাস একলাটি সময় কাটাতে আনন্দ পেতেন। কবি-কন্যা মীরাও উল্লেখ করেছেন, যতই গরম হোক, কবি কখনো ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতেন না।
আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় গ্রীষ্মদূষণের ছড়াছড়ি। এর অনেকটাই একতরফা এবং অতি সরলীকরণ নয় কি? ভুলে যাই যে প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম সৃজনশীলতার ঋতু। এই সময়ই চারদিকে ফুল-ফলের ঘটে উচ্ছসিত সমারোহ। যুগপৎ দহন আর তৃপ্তি—এই দুই মেরুরেখায় গ্রীষ্মের মতো স্বচ্ছন্দ বিহার আর কোন্ ঋতুর? আমরা তো প্রকৃতিরই অংশ। অথচ অনেক সময়ই প্রকৃতির ঔদার্য এবং অবারিত দাক্ষিণ্য উপলব্ধি করি না আমরা প্রকৃতির অপব্যয়ী সন্তানেরা।
সন্দেহ নেই, পানির কষ্ট গরমের দিনের একটি বড় সংকট। এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম যুগটি পেরিয়ে গেলেও আমাদের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষের বাঁচা-মরা এখনো আকাশের করুণার ওপর নির্ভরশীল। শুধু গ্রামেই নয়, একই শহরের নানা এলাকায় রয়েছে তীব্র পানির বৈষম্য। মনে রাখা ভালো যে পৃথিবীজুড়েই পানির দামে পানি পাওয়ার দিন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ঋতুচক্রকে দোষারোপ না করে এখনই পানির সংরক্ষণ, সংগ্রহ ও বিতরণে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূ-উপরিস্থিত পানির সদ্ব্যবহারে মনোযোগী হতে ক্ষতি কী? সজাগ না হলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্যত কুঠার আর বেশি দিন আমাদের ছাড় নাও দিতে পারে।
মাহবুব আলম: প্রাবন্ধিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত।
mahboob1122@hotmail.com.
No comments