বাংলাদেশের সঙ্গে হিলারির সম্পর্ক নতুন নয় by আবুল হাসান চৌধুরী
প্রথম কথা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচিতি নতুন নয়। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৭ বছর আগে। এ সময়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম দেখতে এসেছিলেন।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে প্রথম গ্লোবাল মাইক্রোক্রেডিট সম্মেলনে কো-চেয়ার হয়েছিলেন শেখ হাসিনা, হিলারি ক্লিনটন এবং স্পেনের রানি সোফিয়া। শুধু তাই নয়, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের রয়েছে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব। অধ্যাপক ইউনূসের মডেলকে অনুসরণ করেই ক্লিনটন আরকানসাসে গুড ফেইথ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের আশা ছিল অতি দ্রুতই হিলারি এ দেশ সফর করবেন। কিন্তু নানা কারণেই হয়তো তা হয়ে ওঠেনি। বিলম্বে হলেও এ সফরকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ইট টেকস এ ভিলেজ-এ তিনি বাংলাদেশ ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে অনেক কথা বলেছেন।
একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো খুবই উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে আমরা আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলতে পারি, এ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছি। বাংলাদেশকে তারা মডারেট এবং সহনশীল জাতি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে একটি কথা উল্লেখ করতে হয়। সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির সঙ্গে অর্থনীতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- গার্মেন্ট শিল্পে আমরা অনেক অগ্রগতি এনেছি। এ অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। এ বিষয়ে একটি কথা তাদের বোঝাতে হবে যে যদি আমাদের অর্থনীতিতে কোনোরকম ধাক্কা লাগে তাহলে হয়তো আমাদের অনেক কঠিন সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে হতে পারে। সুতরাং আমরা দান-অনুদান চাই না। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহযোগিতা চাই বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে, সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনি রয়েছে তাঁদের দেশে। সেই খুনিকে ফেরত দেওয়াটাও জরুরি।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আমাদের নিজেদের সমাধান করা উচিত। এসব বিষয়ে তাদের দ্বারস্থ হওয়াটা আমাদের জন্য আত্মমর্যাদা হানিকর। একথা ঠিক যে গণমাধ্যমের কল্যাণে এখন আর কোনো কিছু চাপা থাকে না। সবাই সবকিছু জেনে যায়। তাই কেউ নালিশ করুক আর না করুক, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাভাবিক কারণেই। তিনি আমাদের গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রার জন্য বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে বাই-পার্টি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পত্র-পত্রিকা দেখে মনে হয়েছে, হিলারি ক্লিনটন আমাদের গণতন্ত্র সুসংহত করতে যা যা বলেছেন তা বহুদিন ধরেই দেশের সুশীল সমাজ বলে আসছে। এই সুশীল সমাজের কথা শুনলে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলে আজ আর তাঁর মুখে এ পরামর্শ শুনতে হতো না। তাঁর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে এমন বিষয়গুলো আরো যত সম্ভব আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। যত বেশি সম্ভব আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কিছু কিছু ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতার নিরিখে যতটা সম্ভব শ্রমিকবান্ধব করে তুলতে হবে শিল্পকে। আমি আবারও বলছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিতে পেরেছে। তাই বাংলাদেশ একটি সহনশীল দেশ হিসেবেই পরিচিত। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে, অর্থাৎ সন্ত্রাসকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন বিভেদ তৈরি না হয় সেটা দেশের নেতাদের মনে রাখতে হবে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কে একটা নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। কঠিন অবস্থা গলতে শুরু করেছে। ইটসের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত এসেছে সে ব্যাপারে এবং আরো কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হতে পারে। তবে সেটা আমাদের সার্বভৌমত্ব হানি করে নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার সঙ্গে সম্পর্ক, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। সেই নীতিকেই এখন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। মোদ্দাকথা, বাংলাদেশকে অপরাপর দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আগাতে হবে।
লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
অনুলিখন : মহসীন হাবিব
স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের আশা ছিল অতি দ্রুতই হিলারি এ দেশ সফর করবেন। কিন্তু নানা কারণেই হয়তো তা হয়ে ওঠেনি। বিলম্বে হলেও এ সফরকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ইট টেকস এ ভিলেজ-এ তিনি বাংলাদেশ ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে অনেক কথা বলেছেন।
একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো খুবই উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে আমরা আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলতে পারি, এ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমরা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছি। বাংলাদেশকে তারা মডারেট এবং সহনশীল জাতি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে একটি কথা উল্লেখ করতে হয়। সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির সঙ্গে অর্থনীতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- গার্মেন্ট শিল্পে আমরা অনেক অগ্রগতি এনেছি। এ অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। এ বিষয়ে একটি কথা তাদের বোঝাতে হবে যে যদি আমাদের অর্থনীতিতে কোনোরকম ধাক্কা লাগে তাহলে হয়তো আমাদের অনেক কঠিন সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে হতে পারে। সুতরাং আমরা দান-অনুদান চাই না। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহযোগিতা চাই বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে, সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনি রয়েছে তাঁদের দেশে। সেই খুনিকে ফেরত দেওয়াটাও জরুরি।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আমাদের নিজেদের সমাধান করা উচিত। এসব বিষয়ে তাদের দ্বারস্থ হওয়াটা আমাদের জন্য আত্মমর্যাদা হানিকর। একথা ঠিক যে গণমাধ্যমের কল্যাণে এখন আর কোনো কিছু চাপা থাকে না। সবাই সবকিছু জেনে যায়। তাই কেউ নালিশ করুক আর না করুক, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাভাবিক কারণেই। তিনি আমাদের গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রার জন্য বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে বাই-পার্টি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পত্র-পত্রিকা দেখে মনে হয়েছে, হিলারি ক্লিনটন আমাদের গণতন্ত্র সুসংহত করতে যা যা বলেছেন তা বহুদিন ধরেই দেশের সুশীল সমাজ বলে আসছে। এই সুশীল সমাজের কথা শুনলে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলে আজ আর তাঁর মুখে এ পরামর্শ শুনতে হতো না। তাঁর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে এমন বিষয়গুলো আরো যত সম্ভব আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। যত বেশি সম্ভব আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কিছু কিছু ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতার নিরিখে যতটা সম্ভব শ্রমিকবান্ধব করে তুলতে হবে শিল্পকে। আমি আবারও বলছি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বাংলাদেশ নিতে পেরেছে। তাই বাংলাদেশ একটি সহনশীল দেশ হিসেবেই পরিচিত। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে, অর্থাৎ সন্ত্রাসকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন বিভেদ তৈরি না হয় সেটা দেশের নেতাদের মনে রাখতে হবে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কে একটা নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। কঠিন অবস্থা গলতে শুরু করেছে। ইটসের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত এসেছে সে ব্যাপারে এবং আরো কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হতে পারে। তবে সেটা আমাদের সার্বভৌমত্ব হানি করে নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার সঙ্গে সম্পর্ক, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। সেই নীতিকেই এখন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। মোদ্দাকথা, বাংলাদেশকে অপরাপর দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আগাতে হবে।
লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
অনুলিখন : মহসীন হাবিব
No comments