ইতিউতি-সন্ত্রাসী কে ও কেন? by আতাউস সামাদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল প্রচলিত একটি উক্তি 'Not all Muslims are terrorists but all the terrorists happen to be Mulsim.' (সব মুসলমান সন্ত্রাসী নয়, তবে দেখা যাচ্ছে সব সন্ত্রাসীই মুসলিম)। এই উক্তির প্রণেতা হচ্ছেন মাইকেল স্যাভেজ। ইনি একটি রেডিও টক শোর সঞ্চালক।
'২০১০ সালে সারা ইউরোপে ২৪৯টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এর তিনটি হুমকি এসেছিল ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের কাছ থেকে। এই তিনটির মধ্যে দুটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল একসঙ্গে বহু লোক হতাহতের লক্ষ্য নিয়ে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এলাকায় ২০১০ সালে ২০০৯-এর তুলনায় কম সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার প্রধান কারণ হলো, স্পেন ও ফ্রান্সের বাস্ক ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গড়া গোপন সংগঠন ETA বা এটা-র হামলার সংখ্যা কমে এসেছে।' এটি একটি প্রতিবেদন। এই তথ্য বিবরণী একটি প্রতিবেদনের অংশ। প্রতিবেদনটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পেশ করেছে ওই প্রতিষ্ঠানের সন্ত্রাসবাদ দমন সংক্রান্ত একটি সংস্থা। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে তেমন প্রচার করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাস-সংক্রান্ত বার্ষিক (২০০৯) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ২৪৯টি হামলায় নিহত হয়েছেন সাতজন, আর আহত হয়েছেন বেশ কিছু। এতে আরো জানানো হয়, ২০১০ সালে সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রেপ্তার করা হয় ৬১১ জনকে। এর মধ্যে ১৭৯ জন ইসলামী জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বা তাদের সঙ্গে জড়িত। এ সংখ্যা ২০০৯-এর তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ২০১০ সালে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তরফ থেকে হুমকি প্রদানের সংখ্যাও একই রকম বেশি ছিল (তবে দেখা যাচ্ছে, কার্যত এসব হুমকি বাস্তবিক হামলায় রূপান্তরিত হয়েছে কম। ২০১০-এ সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গি বেশি সংখ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ায় এই ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জঙ্গি প্রতিরোধ করতে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরা বেশি সাফল্য অর্জন করছেন)। সূত্র : www.infolog.com.
এই লেখার শুরুতেই মাইকেল স্যাভেজ নামে মার্কিন টক শো উপস্থাপক সন্ত্রাসী মানেই মুসলমান মর্মে যে কথাটি বারবার বলে আসছেন, সেই উক্তিটি উদ্ধৃত করেছি। এ কথাটি তিনি বলেছিলেন নিউ ইয়র্ক টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর। মাইকেল স্যাভেজ একই সঙ্গে বলেছিলেন, 'আমরা যখন এ কথা বিবেচনা করি যে সব মুসলিম সন্ত্রাসী নয়, কিন্তু সব সন্ত্রাসীকেই মুসলিম হতে দেখা যাচ্ছে এবং যে ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন ধ্বংস করেছিল, তারা সবাই মুসলিম আর তাদের অনেকেই সৌদি আরব থেকে এসেছিল, তখন এই তথ্যগুলো স্মরণ রাখা আমাদের জন্য বিশেষ কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।'
এই মাইকেল স্যাভেজ বছরের পর বছর তাঁর টক শোতে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছেন। বিশেষত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বী অভিবাসী আসার ঘোর বিরোধী তিনি। সব দক্ষিণ এশীয়কেও সন্ত্রাসী হিসেবে সন্দেহ করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও 'মুসলমান-ভক্ত' বলে দাবি করে তাঁর 'বাপ-বাপান্ত' করেছেন এই ভয়ংকর মিস্টার স্যাভেজ। এদিক থেকে তিনি তাঁর নামের মর্যাদা রেখেছেন, কারণ স্যাভেজ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে 'জংলি'। তবে 'টক রেডিও নেটওয়ার্ক' নামে যে প্রতিষ্ঠানটি মাইকেল স্যাভেজের অনুষ্ঠানটি বিক্রি করে, তাদের দাবি, এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৩৫০টি রেডিও স্টেশনে এটি প্রচারিত হয়।
ওপরের তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে আমাকে দিয়েছেন সাংবাদিক জাকির হোসেন। তিনি লক্ষ করেছেন যে মাইকেল স্যাভেজ মুসলমানদের সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে কটূক্তি করেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে, তার পক্ষে-বিপক্ষে ইন্টারনেটে অতিসম্প্রতিও তর্কযুদ্ধ হতে দেখা গেছে। স্যাভেজ সাহেবের মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গির মতো একই ধারণা পোষণ করেন এমন লোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আছেন এখনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সে দেশের কট্টর দক্ষিণপন্থীরা দেশটির অর্থনীতির দুর্গতির পাশাপাশি 'সন্ত্রাস', 'জঙ্গিবাদ' বিষয়গুলোও তাদের মতো করে তুলে ধরবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ঘায়েল করার জন্য। এ লক্ষ্যে তারা মার্কিন জনসাধারণকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে দেবে না যে তাদের সাবেক জঙ্গি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবি্লউ বুশ আফগানিস্তান ও ইরাকের ওপর হামলা করে ওই দুই দেশে যে যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন, সেগুলো আজও চলছে এবং সেই যুদ্ধের খরচ মেটাতে মার্কিন সরকারের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা তাদের অর্থনৈতিক দুর্গতির একটা মহা কারণ। এই প্রচারে তারা তাদের পাশে পাবে ইহুদিবাদী রুপার্ট মারডকের মিডিয়া সাম্রাজ্যকে।
তিন. এত দিন জানতাম আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু হাল আমলের বিশ্বায়নের ধাক্কায় জাহাজ আর আদার কারবার একাকার হয়ে গেছে। জাহাজের কারবারি এখন মাঝেমধ্যে আদার ব্যাপারীকে ডেকে পাশে বসায়। ফলে একসময়ের অপাঙ্ক্তেয় বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের 'দেখভাল' করার তালিকায় জায়গা পেয়ে গেছে। তবে এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে। কারণ দেখভালটা আসলে নজরদারি। আমার সন্দেহ এ জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় কোনো দেশ থেকে কোনো সরকারি সফরকারী এলে তিনি এখানে যে বৈঠক বা সলাপরামর্শ করেন, সেই বিষয়ে যে খবর প্রচার করা হয় তাতে অবধারিতভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ থাকেই। বলা হয় যে বাংলাদেশ ও অতিথির দেশ একসঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলা করবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে অধিকতর ক্রিয়াশীল দেখতে চায়, সে দেশের মন্ত্রী ও নেতারা এ দেশে সফরে এলেও ভ্রমণান্তের বিবৃতিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মোকাবিলায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা বলতে হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার পর তাঁরা যা আলাপ করেছিলেন, তার মধ্যে 'জঙ্গিবাদ মোকাবিলা' বিষয়টি ছিল বলে সরকারিভাবেই জানানো হয় সাংবাদিকদের। তবে এসব তথ্য প্রদানকারীরা তেমন কিছু বলেন না বিধায় আমরা জানতে পারলাম না যে তাঁরা কে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ কী ও কার সন্ত্রাস এই মুহূর্তে বেশি দুশ্চিন্তার বিষয়, তা আলোচনা করেছেন কি না। এই প্রশ্নগুলো করা এখন আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের মনে আছে যে মাত্র কিছুদিন আগে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, তাঁর সরকার চায় বাংলাদেশ আফগানিস্তানে সেনা পাঠাক। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তালেবান বাংলাদেশকে ওই ফাঁদে পা দিতে বারণ করে বিবৃতি দিয়েছিল। এদিকে ভারতের শক্তিশালী ও ধর্মভিত্তিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা শ্রী সুব্রামনিয়াম একটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছেন, ভারতে জঙ্গি হামলা চিরতরে বন্ধ করার জন্য তাঁর দেশের উচিত হবে পশ্চিমে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পূর্বে বাংলাদেশের সিলেট থেকে খুলনা পর্যন্ত দখল করে নেওয়া, ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং তাদের হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে উৎসাহী করা। ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান করতে উৎসাহী করা। ভারতের একটি মুসলিম প্রতিষ্ঠান সে দেশের একটি কমিশনকে সুব্রামনিয়ামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ)। এই জাহাজের কারবারিদের শিলনোড়ায় পেষাই হয়ে বাংলাদেশি আদার ব্যাপারীরা যে কোথায় যাবে, কিভাবে জান বাঁচাবে, তা এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বটে।
চার. গত ২২ জুলাই নরওয়ের রাজধানী অসলোতে দুটি নারকীয় ঘটনায় অন্তত ৭৬ জন খুন হয়েছেন। এর একটি হলো, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। তাতে সাতজন নিহত হয়েছেন। ক্ষতি হয়েছে অনেক। অন্য ঘটনাটি একেবারেই অকল্পনীয়। সেদিনই অসলোর অদূরে এক দ্বীপে ক্ষমতাসীন লেবার দলের যুব শাখার উদ্যোগে তরুণদের যে সম্মেলন চলছিল, এক অস্ত্রধারী সেখানে গিয়ে একনাগাড়ে গুলি চালিয়ে অন্তত ৬৯ তরুণ-তরুণীকে হত্যা করে। সে সম্মেলনস্থলে গিয়েছিল পুলিশের বেশে। এই লোকটি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। তার নাম অ্যান্দারস বেরিং ব্রেভিক। বয়স ৩১। সবাইকে হতবাক করে সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, দুটি ঘটনাই সে ঘটিয়েছে। অসলোতে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ব্যবস্থা করে একটা স্পিডবোট চালিয়ে সে নিকটস্থ দ্বীপে গিয়ে নিরস্ত্র তরুণ-তরুণীদের হত্যা করে।
এই নৃশংস গণঘাতক ব্রেভিক দাবি করেছে, সে ইউরোপকে কলুষমুক্ত করার জন্য সংগ্রামে নেমেছে। তার লড়াইয়ের একটা লক্ষ্য হলো, ইউরোপ থেকে সব মুসলিম অভিবাসীকে তাড়াতে হবে। সে চায় ইউরোপে শুদ্ধ শ্বেতবর্ণের শাসন কায়েম হোক। ব্রেভিক বলেছে, সে অসলোর মতো আরো অন্তত দুটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তৈরি ছিল। তার উদ্দেশ্য, এসব করে ইউরোপে অভিবাসীদের প্রতি সদয় যেসব সরকার আছে তাদের নীতি বদলাতে বাধ্য করা। প্রথমে সে একাই সব কিছু করছে বললেও পরে ইঙ্গিত দিয়েছে, তার সঙ্গে আরো কয়েকজন আছে। নরওয়ের পুলিশ তার ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে নরওয়ের একটি নাৎসিবিরোধী প্রতিষ্ঠান বলেছে, সে দেশে নব্য নাৎসি বেশি না হলেও তাদের কথাবার্তায় উত্তাপ বাড়ছিল কিছুদিন ধরে। নরওয়ে পুলিশ স্বীকার করেছে, প্রায় তিন মাস আগে তারা একজন রাসায়নিক বিক্রেতার কাছ থেকে ব্রেভিকের সন্দেহজনক গতিবিধি সম্পর্কে খবর পেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে নজরদারিতে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বা বিপজ্জনক মনে করেনি।
দুঃখের ব্যাপার হলো, ইউরোপে বেশ কিছু লোক ব্রেভিককে 'উম্মাদ' বলে বরং নরমেধযজ্ঞকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করছেন। এমনকি ২৩ জুলাই বিবিসি টেলিভিশনে তাদের সাংবাদিকদের অসলোয় নানাজনকে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে, 'আপনি কী মনে করেন, ব্রেভিক কি একজন সন্ত্রাসবাদী নাকি উন্মাদ?' তার আগের দিন অসলোয় বোমা বিস্ফোরণের পরপরই বিবিসি বারবার বলেছে, নরওয়ের যে পত্রিকা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন ছেপেছিল, সে পত্রিকাটির কার্যালয় যেখানে গাড়িবোমা ফেটেছে তার কাছেই অবস্থিত। সঙ্গে এও বলেছে, আফগানিস্তানে নরওয়ের সেনা আছে এবং লিবিয়ায় ন্যাটো বিমান হামলায়ও নরওয়ে অংশ নিচ্ছে। অর্থাৎ তাদের সন্দেহ ছিল, মুসলিম জঙ্গিরাই বোমা হামলা করেছে। অতঃপর এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে ব্রেভিকের স্বীকারোক্তির পর নরওয়েতে বসবাসরত মুসলিমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
পাঁচ. সন্ত্রাসী ব্রেভিকের রক্তাক্ত হামলা এবং সন্ত্রাস সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনের পর এ কথা চিন্তা করার সময় এসেছে যে বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর উচিত হবে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অবস্থান নেওয়া এবং সন্ত্রাসী মোকাবিলায় নিজস্ব নীতি গ্রহণ করা। সময় এসেছে এ কথা বলার যে মানলাম বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সন্ত্রাসী আছে, কিন্তু নব্য নাৎসি ও বর্ণবাদী সন্ত্রাসীরাও আছে বহু দেশে। তার চেয়েও বড় কথা, সন্ত্রাসী হুমকির সম্মুখীন অনেক দেশে এমন সব রাজনৈতিক ও আদর্শিক সমস্যা বিদ্যমান, যার কারণে সন্ত্রাসী সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সব দেশের উচিত তাদের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলা করা। আমার এ কথার সমর্থনে উল্লেখ করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচ্য প্রতিবেদনে আছে, ২০১০ সালে সদস্য দেশগুলোতে যে ২৪৯টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগই করেছে সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী, জাতীয়তাবাদী ও নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠীরা।
এরা সবাই যে একেবারে অযৌক্তিকভাবে এসব করছে, তাও নয়। যেমন_স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্র্যাংকো বাস্ক অধ্যুষিত গুয়ের্নিকা শহর ধ্বংস করেছিলেন জার্মান বিমানবাহিনীর সহায়তায়। সে মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েই বিশ্বখ্যাত শিল্পী পিকাসো 'গুয়ের্নিকা' নামের চিত্রটি এঁকেছিলেন। ফ্র্যাংকো বাস্ক ভাষায় কথা বলা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এসব থেকেই বাস্কভূমির আন্দোলনের উৎপত্তি। এসব কথা আমাদের আশপাশের বেলায়ও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার।
লেখক : সাংবাদিক
এই লেখার শুরুতেই মাইকেল স্যাভেজ নামে মার্কিন টক শো উপস্থাপক সন্ত্রাসী মানেই মুসলমান মর্মে যে কথাটি বারবার বলে আসছেন, সেই উক্তিটি উদ্ধৃত করেছি। এ কথাটি তিনি বলেছিলেন নিউ ইয়র্ক টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর। মাইকেল স্যাভেজ একই সঙ্গে বলেছিলেন, 'আমরা যখন এ কথা বিবেচনা করি যে সব মুসলিম সন্ত্রাসী নয়, কিন্তু সব সন্ত্রাসীকেই মুসলিম হতে দেখা যাচ্ছে এবং যে ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগন ধ্বংস করেছিল, তারা সবাই মুসলিম আর তাদের অনেকেই সৌদি আরব থেকে এসেছিল, তখন এই তথ্যগুলো স্মরণ রাখা আমাদের জন্য বিশেষ কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।'
এই মাইকেল স্যাভেজ বছরের পর বছর তাঁর টক শোতে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছেন। বিশেষত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বী অভিবাসী আসার ঘোর বিরোধী তিনি। সব দক্ষিণ এশীয়কেও সন্ত্রাসী হিসেবে সন্দেহ করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও 'মুসলমান-ভক্ত' বলে দাবি করে তাঁর 'বাপ-বাপান্ত' করেছেন এই ভয়ংকর মিস্টার স্যাভেজ। এদিক থেকে তিনি তাঁর নামের মর্যাদা রেখেছেন, কারণ স্যাভেজ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে 'জংলি'। তবে 'টক রেডিও নেটওয়ার্ক' নামে যে প্রতিষ্ঠানটি মাইকেল স্যাভেজের অনুষ্ঠানটি বিক্রি করে, তাদের দাবি, এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৩৫০টি রেডিও স্টেশনে এটি প্রচারিত হয়।
ওপরের তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে আমাকে দিয়েছেন সাংবাদিক জাকির হোসেন। তিনি লক্ষ করেছেন যে মাইকেল স্যাভেজ মুসলমানদের সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে কটূক্তি করেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে, তার পক্ষে-বিপক্ষে ইন্টারনেটে অতিসম্প্রতিও তর্কযুদ্ধ হতে দেখা গেছে। স্যাভেজ সাহেবের মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গির মতো একই ধারণা পোষণ করেন এমন লোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আছেন এখনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সে দেশের কট্টর দক্ষিণপন্থীরা দেশটির অর্থনীতির দুর্গতির পাশাপাশি 'সন্ত্রাস', 'জঙ্গিবাদ' বিষয়গুলোও তাদের মতো করে তুলে ধরবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ঘায়েল করার জন্য। এ লক্ষ্যে তারা মার্কিন জনসাধারণকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে দেবে না যে তাদের সাবেক জঙ্গি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবি্লউ বুশ আফগানিস্তান ও ইরাকের ওপর হামলা করে ওই দুই দেশে যে যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন, সেগুলো আজও চলছে এবং সেই যুদ্ধের খরচ মেটাতে মার্কিন সরকারের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা তাদের অর্থনৈতিক দুর্গতির একটা মহা কারণ। এই প্রচারে তারা তাদের পাশে পাবে ইহুদিবাদী রুপার্ট মারডকের মিডিয়া সাম্রাজ্যকে।
তিন. এত দিন জানতাম আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু হাল আমলের বিশ্বায়নের ধাক্কায় জাহাজ আর আদার কারবার একাকার হয়ে গেছে। জাহাজের কারবারি এখন মাঝেমধ্যে আদার ব্যাপারীকে ডেকে পাশে বসায়। ফলে একসময়ের অপাঙ্ক্তেয় বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের 'দেখভাল' করার তালিকায় জায়গা পেয়ে গেছে। তবে এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে। কারণ দেখভালটা আসলে নজরদারি। আমার সন্দেহ এ জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় কোনো দেশ থেকে কোনো সরকারি সফরকারী এলে তিনি এখানে যে বৈঠক বা সলাপরামর্শ করেন, সেই বিষয়ে যে খবর প্রচার করা হয় তাতে অবধারিতভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ থাকেই। বলা হয় যে বাংলাদেশ ও অতিথির দেশ একসঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলা করবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে অধিকতর ক্রিয়াশীল দেখতে চায়, সে দেশের মন্ত্রী ও নেতারা এ দেশে সফরে এলেও ভ্রমণান্তের বিবৃতিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মোকাবিলায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা বলতে হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার পর তাঁরা যা আলাপ করেছিলেন, তার মধ্যে 'জঙ্গিবাদ মোকাবিলা' বিষয়টি ছিল বলে সরকারিভাবেই জানানো হয় সাংবাদিকদের। তবে এসব তথ্য প্রদানকারীরা তেমন কিছু বলেন না বিধায় আমরা জানতে পারলাম না যে তাঁরা কে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ কী ও কার সন্ত্রাস এই মুহূর্তে বেশি দুশ্চিন্তার বিষয়, তা আলোচনা করেছেন কি না। এই প্রশ্নগুলো করা এখন আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের মনে আছে যে মাত্র কিছুদিন আগে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছিলেন, তাঁর সরকার চায় বাংলাদেশ আফগানিস্তানে সেনা পাঠাক। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তালেবান বাংলাদেশকে ওই ফাঁদে পা দিতে বারণ করে বিবৃতি দিয়েছিল। এদিকে ভারতের শক্তিশালী ও ধর্মভিত্তিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা শ্রী সুব্রামনিয়াম একটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছেন, ভারতে জঙ্গি হামলা চিরতরে বন্ধ করার জন্য তাঁর দেশের উচিত হবে পশ্চিমে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পূর্বে বাংলাদেশের সিলেট থেকে খুলনা পর্যন্ত দখল করে নেওয়া, ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং তাদের হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে উৎসাহী করা। ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান করতে উৎসাহী করা। ভারতের একটি মুসলিম প্রতিষ্ঠান সে দেশের একটি কমিশনকে সুব্রামনিয়ামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ)। এই জাহাজের কারবারিদের শিলনোড়ায় পেষাই হয়ে বাংলাদেশি আদার ব্যাপারীরা যে কোথায় যাবে, কিভাবে জান বাঁচাবে, তা এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বটে।
চার. গত ২২ জুলাই নরওয়ের রাজধানী অসলোতে দুটি নারকীয় ঘটনায় অন্তত ৭৬ জন খুন হয়েছেন। এর একটি হলো, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। তাতে সাতজন নিহত হয়েছেন। ক্ষতি হয়েছে অনেক। অন্য ঘটনাটি একেবারেই অকল্পনীয়। সেদিনই অসলোর অদূরে এক দ্বীপে ক্ষমতাসীন লেবার দলের যুব শাখার উদ্যোগে তরুণদের যে সম্মেলন চলছিল, এক অস্ত্রধারী সেখানে গিয়ে একনাগাড়ে গুলি চালিয়ে অন্তত ৬৯ তরুণ-তরুণীকে হত্যা করে। সে সম্মেলনস্থলে গিয়েছিল পুলিশের বেশে। এই লোকটি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। তার নাম অ্যান্দারস বেরিং ব্রেভিক। বয়স ৩১। সবাইকে হতবাক করে সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, দুটি ঘটনাই সে ঘটিয়েছে। অসলোতে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ব্যবস্থা করে একটা স্পিডবোট চালিয়ে সে নিকটস্থ দ্বীপে গিয়ে নিরস্ত্র তরুণ-তরুণীদের হত্যা করে।
এই নৃশংস গণঘাতক ব্রেভিক দাবি করেছে, সে ইউরোপকে কলুষমুক্ত করার জন্য সংগ্রামে নেমেছে। তার লড়াইয়ের একটা লক্ষ্য হলো, ইউরোপ থেকে সব মুসলিম অভিবাসীকে তাড়াতে হবে। সে চায় ইউরোপে শুদ্ধ শ্বেতবর্ণের শাসন কায়েম হোক। ব্রেভিক বলেছে, সে অসলোর মতো আরো অন্তত দুটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তৈরি ছিল। তার উদ্দেশ্য, এসব করে ইউরোপে অভিবাসীদের প্রতি সদয় যেসব সরকার আছে তাদের নীতি বদলাতে বাধ্য করা। প্রথমে সে একাই সব কিছু করছে বললেও পরে ইঙ্গিত দিয়েছে, তার সঙ্গে আরো কয়েকজন আছে। নরওয়ের পুলিশ তার ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে নরওয়ের একটি নাৎসিবিরোধী প্রতিষ্ঠান বলেছে, সে দেশে নব্য নাৎসি বেশি না হলেও তাদের কথাবার্তায় উত্তাপ বাড়ছিল কিছুদিন ধরে। নরওয়ে পুলিশ স্বীকার করেছে, প্রায় তিন মাস আগে তারা একজন রাসায়নিক বিক্রেতার কাছ থেকে ব্রেভিকের সন্দেহজনক গতিবিধি সম্পর্কে খবর পেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে নজরদারিতে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বা বিপজ্জনক মনে করেনি।
দুঃখের ব্যাপার হলো, ইউরোপে বেশ কিছু লোক ব্রেভিককে 'উম্মাদ' বলে বরং নরমেধযজ্ঞকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করছেন। এমনকি ২৩ জুলাই বিবিসি টেলিভিশনে তাদের সাংবাদিকদের অসলোয় নানাজনকে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে, 'আপনি কী মনে করেন, ব্রেভিক কি একজন সন্ত্রাসবাদী নাকি উন্মাদ?' তার আগের দিন অসলোয় বোমা বিস্ফোরণের পরপরই বিবিসি বারবার বলেছে, নরওয়ের যে পত্রিকা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন ছেপেছিল, সে পত্রিকাটির কার্যালয় যেখানে গাড়িবোমা ফেটেছে তার কাছেই অবস্থিত। সঙ্গে এও বলেছে, আফগানিস্তানে নরওয়ের সেনা আছে এবং লিবিয়ায় ন্যাটো বিমান হামলায়ও নরওয়ে অংশ নিচ্ছে। অর্থাৎ তাদের সন্দেহ ছিল, মুসলিম জঙ্গিরাই বোমা হামলা করেছে। অতঃপর এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে ব্রেভিকের স্বীকারোক্তির পর নরওয়েতে বসবাসরত মুসলিমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
পাঁচ. সন্ত্রাসী ব্রেভিকের রক্তাক্ত হামলা এবং সন্ত্রাস সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনের পর এ কথা চিন্তা করার সময় এসেছে যে বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর উচিত হবে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অবস্থান নেওয়া এবং সন্ত্রাসী মোকাবিলায় নিজস্ব নীতি গ্রহণ করা। সময় এসেছে এ কথা বলার যে মানলাম বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সন্ত্রাসী আছে, কিন্তু নব্য নাৎসি ও বর্ণবাদী সন্ত্রাসীরাও আছে বহু দেশে। তার চেয়েও বড় কথা, সন্ত্রাসী হুমকির সম্মুখীন অনেক দেশে এমন সব রাজনৈতিক ও আদর্শিক সমস্যা বিদ্যমান, যার কারণে সন্ত্রাসী সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সব দেশের উচিত তাদের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলা করা। আমার এ কথার সমর্থনে উল্লেখ করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচ্য প্রতিবেদনে আছে, ২০১০ সালে সদস্য দেশগুলোতে যে ২৪৯টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগই করেছে সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী, জাতীয়তাবাদী ও নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠীরা।
এরা সবাই যে একেবারে অযৌক্তিকভাবে এসব করছে, তাও নয়। যেমন_স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্র্যাংকো বাস্ক অধ্যুষিত গুয়ের্নিকা শহর ধ্বংস করেছিলেন জার্মান বিমানবাহিনীর সহায়তায়। সে মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েই বিশ্বখ্যাত শিল্পী পিকাসো 'গুয়ের্নিকা' নামের চিত্রটি এঁকেছিলেন। ফ্র্যাংকো বাস্ক ভাষায় কথা বলা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এসব থেকেই বাস্কভূমির আন্দোলনের উৎপত্তি। এসব কথা আমাদের আশপাশের বেলায়ও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার।
লেখক : সাংবাদিক
No comments