ইতিউতি-কালো মেঘ গেলো না by আতাউস সামাদ
বাংলাদেশের আকাশ গতকালও (শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১) কালো মেঘে ঢাকা ছিল। আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, তবুও রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের আলো-বাতাসে শরৎকালের লক্ষণগুলো ফুটে উঠল না। গত সপ্তাহে 'ইতিউতি' কলামে তার দুই দিন আগে তাল-পাকানো, গা-পোড়ানো রোদ আর তার এক দিন পর থেকে কালো মেঘের আনাগোনার কথা লিখেছিলাম।
দেশের অর্থনীতিতে অসুস্থতার কিছু আলামত এবং আইনশৃঙ্খলার নাজুক অবস্থাসহ জীবনধারণের কিছু কঠিন সমস্যা উল্লেখ করে এই উপসংহারে এসেছিলাম যে বাংলাদেশের আকাশকে এই শরতেও দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ছেয়ে ফেলছে।
ওই কলামটা লেখার সময় আমার মনে বারবার সন্দেহ হচ্ছিল, একটা ছন্দপতন ঘটছে। কারণ তার আগের কয়েক সপ্তাহের লেখা ছিল বাংলাদেশের এমন কিছু বিষয় নিয়ে, যা সম্পর্কে তর্ক আর ঝগড়াঝাটি আছে। তবে খানিকটা গালমন্দ এড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং কিছুটা বিষয়-বিশ্লেষণে সহায়তা হবে চিন্তা করে, দেশি-বিদেশি সূত্র থেকে নেওয়া তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছিলাম। অন্যদিকে গত সপ্তাহের লেখায় 'মানুষ' উপস্থিত করতে গিয়ে এক বৃদ্ধ রিকশাচালকের কষ্ট আর নিজের কিছু বিপজ্জনক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলাম। তবে অনেক দিন ওই ধরনের লেখা লিখিনি বলে গত সপ্তাহের কলামটা একটু খাপছাড়া ধরনের হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম, পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ সন্দেহ করবেন নেহাত যে লিখতে হয় বলে লিখেছি, আসলে ফাঁকিবাজি করেছি। কালের কণ্ঠ পত্রিকার স্নেহাস্পদ দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু বললেন, 'মনে হয়, আপনার প্রস্তুতি ছিল না।' বস্তুতপক্ষে, তা নয়। আমি গভীরভাবে চিন্তান্বিত হয়েই ওই লেখাটা ধরেছিলাম; কিন্তু বিষয়টা ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। সেটা আমার ব্যর্থতা। তবে উপসংহারে যে বলেছিলাম, শরতেও বাংলাদেশের আকাশে সমস্যার কালো মেঘ (যেমনটা ছিল প্রকৃতিতে) তা সঠিক ছিল এবং সেটা বলা প্রয়োজন বলে মনে করেছিলাম। চেয়েছিলাম, অন্য কেউও যেন এ কথাটা ভাবেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০১১) কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম_'বাঁচব কী করে' দেখে বুঝলাম, কেউ না কেউ চিন্তা করছেন ব্যাপারটা। না করেই বা উপায় কী? কঠিন আর্থিক সংকটে পড়ে দেশের অসংখ্য মানুষের জীবন তো আসলেই চলতে চায় না। এরই মধ্যে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এসবের দাম কমেছে; এমনকি গত পরশুও তা বেশ খানিকটা পড়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় ব্যবসায়ীরা এই মূল্যহ্রাসের ফলে তাঁদের বিনিয়োগ করা পুঁজির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনকি কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে দোষারোপ করছেন এই বলে যে তারা বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ছাড়ছে না, ফলে বড় ব্যবসা চাঙ্গা হতে পারছে না। যার দরুন তেলের বিক্রিও কমে গেছে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়া মজুদদারদের জন্য দুঃসংবাদ তো বটেই। এখানে উল্লেখ করি, ডাউ জোন্স নিউজওয়্যার এবং ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা খবর দিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জ্বালানি তেলের পাইকারি বাজারে লাইট সুইট অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের দাম আগের দিনের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ৬.২৬ মার্কিন ডলার বা শতকরা ৭.৩ শতাংশ হারে কমে ৮০.৫ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। আর ব্রেন্ট শ্রেণীর পেট্রোলিয়ামের ব্যারেলপ্রতি দাম কমে ১০৫.৪৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। আগামী নভেম্বরে যে চালান হবে, ব্রেন্টের এই দাম তার জন্য প্রযোজ্য। মোট কথা, জ্বালানি তেলের দাম অনেক দিন ধরেই কমছিল এবং তা গত পরশুও কমেছে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববাজারে যখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমছে তখন বাংলাদেশ সরকার কেন প্রক্রিয়াজাত জ্বালানি, যথা_পেট্রল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দাম হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিল গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১)! এর পর পরই বাড়াল সিএনজির দামও। বাংলাদেশে জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটল তিন মাসের মধ্যে দুবার। এ দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক ও পরিবেশক হচ্ছে সরকার (পেট্রোবাংলার মাধ্যমে)। কেন এভাবে দাম বাড়ানো হলো, সরকার তার ব্যাখ্যা দিতে পারত; কিন্তু দেয়নি। তা কেন? জনগণকে কোনো বিষয়েই আস্থায় না নেওয়া সরকারের দুরারোগ্য বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেই কি কোনো ব্যাখ্যা এল না? নাকি গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা সরকারের কাছে নেই?
তবে সরকার আচমকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদে বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির ডাকা দেশজুড়ে হরতালের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনে, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে এই তেলের দাম বেড়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারও দাম বাড়িয়েছে। টেলিভিশনে তাঁর ব্রিফিং যেটুকু দেখতে পেয়েছি, তাতে মনে হলো না যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছু বললেন। তবে তিনি এ বিষয়ে সরকারের যুক্তি কী, তা প্রকাশ করলে ভালো হতো। কারণ শুধু বিএনপি নয়, দেশের সংবাদপত্রেও (দৈনিক যুগান্তর এবং আমার দেশ) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসার বিষয়ে বিশ্লেষণাত্মক খবর প্রকাশ হয়েছে। দৈনিক যুগান্তর দাবি করেছে, সরকার জ্বালানি তেল থেকে মুনাফা তুলছে কয়েক মাস ধরে। তাহলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের একটা কারণ হতে পারে যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন, খোলাবাজারে চাল বিক্রি এবং অতি দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দিতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী তা কমিয়ে আনতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। যদি এ কথাটাই ঠিক হয়, তা হলেও সরকার তা জনগণকে জানাতে পারত এবং তখন আমাদের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারতেন যে জ্বালানি তেলে আসলেই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কি না এবং তা কমিয়ে আনতে তেলের দাম বাড়ানোই একমাত্র উপায় কি না। আর সে রকমই যদি হয়, তাহলে এর যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ কী হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা গেল, তেমন কিছু হওয়ার সুযোগও ঘটল না। এই অবস্থায় কারো কাছে যদি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিকল্প কোনো প্রস্তাব বা বুদ্ধি থাকে এবং তিনি যদি সরকারকে ধাপ্পাবাজ বা স্বেচ্ছাচারী বলেন, তাহলে সরকার তাঁকে পাল্টা গালি দেওয়া অথবা রাতের বেলা তাঁকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ঢোকানো ছাড়া আর কী করতে পারবে?
তবে বিষয়টা ঠাট্টা-মশকরা করার মতো নয়। কারণ বাংলাদেশে সরকারি কোষাগার থেকে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি খুব পরিচ্ছন্ন নয়। জনগণের কাছ থেকে কর হিসেবে আদায় করা টাকায় এখানে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তার সঙ্গে দুর্নীতির সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আছে। যেমন_বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে যে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে আমদানি করা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে। সেই ভর্তুকি থেকে নাকি মুনাফা লোটে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবার যাদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর ব্যবসা দিয়েছে, তাদের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন এই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা আছেন। লক্ষণীয় যে টেন্ডার ছাড়া এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র জোগাড় করলেও সে জন্য দুর্নীতির অভিযোগ আনা যাবে না_এই সরকার সেই মর্মে আইন পাস করে নিয়েছে জাতীয় সংসদে। তবে আশা থাকবে, এসব ক্ষেত্রে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আবিষ্কারের সঙ্গে দুর্নীতি বা অনিয়ম ছিল কি না, এসবের ছিদ্র গলিয়ে জনগণের দেওয়া ট্যাঙ্রে টাকা কারো পকেটে জমেছে কি না তা নিয়ে কোনো না কোনো দিন সঠিক তদন্ত হবে। ইনডেমনিটির পরও কথা থাকে। এদিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশে নয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পদে মনোনীত ড্যান মোজেনা তাঁর দেশের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বলেছেন, দুর্নীতি এখন বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকে দেশজুড়ে হরতাল হয়েছে। বিএনপি এই হরতাল আহ্বান করেছিল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে। জামায়াতে ইসলামীও একই দিন হরতাল ডাকে। অবশ্য তাদের দাবি ছিল, তাদের আটক ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বিচারাধীন নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে। ওই হরতালের রূপ কেমন ছিল এবং তার ফলাফলই বা কী হতে পারে, তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দিনভর যেসব মন্তব্য হতে লক্ষ করা গেছে সেগুলো সম্পর্কে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে।
হরতালের সময় টেলিভিশনের স্ক্রলে, সন্ধ্যায় ও রাতে টেলিভিশন সংবাদ ও পরদিন শুক্রবার বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা ও বলা হয়েছে যে হরতাল ছিল ঢিলেঢালা। এ প্রসঙ্গে আমার মনে প্রশ্ন, কেমন হরতাল ঢিলেঢালা বা তার বিপরীতে কখন হরতাল খুব আঁটসাঁট হবে? উত্তর কি এই যে কোনো হরতালে যদি সহিংসতা না হয়, পিকেটাররা আগুন না লাগায়, পিটিয়ে মারাত্মক জখম না করে, পুলিশকে বোমা না মারে_তাহলে সেটাকে বলতে হবে ঢিলেঢালা হরতাল। আর তার বিপরীতে যদি হরতালকারীরা চারদিকে সহিংসতা করে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে মানুষ খুন বা জখম করে কারফিউ জারি করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করে তবেই বলা যাবে, হরতাল দারুণ টাইট বটে! তাহলে তো ঢিলেঢালা হরতালই ভালো।
আমার মনের দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে যাওয়ার আগে বলে নিই, ঘর থেকে সামান্য একটু বাইরে বেরিয়ে এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ছবিতে হরতাল কেমন দেখেছি। বিশ্ব রোড ও রাজধানীর অন্যান্য মহাসড়ক ছিল প্রায় ফাঁকা, আবাসিক এলাকার ভেতরের রাস্তাগুলো দিনের বেশির ভাগ সময়ই ছিল জনশূন্য, বারিধারা-গুলশান এলাকার রাস্তায় মোটরগাড়ি চলেছে কদাচিৎ আর রিকশা দেখা গেছে মাঝেমধ্যে। নিয়মিত বাস সার্ভিসগুলো অচল ছিল। দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি, তবে ট্রেন ও প্লেন চলেছে। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল সর্বত্র। ব্যাংক খোলা থাকলেও গ্রাহক বা সেবা নিতে এসেছেন খুব কম মানুষ। ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ খোলা থাকলেও সেখানে আরেক দফা দর পতন হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পথঘাট ছিল পিকেটারবিহীন। বিএনপিকর্মীরা মিছিল করতে গেলেই পুলিশের তাড়া ও পিটুনি খেয়েছেন। তাঁরা দৌড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁরা অকথ্য পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যেমন_মতিঝিলে এক পুলিশ এক নাগরিককে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাঁর বুক চেপে রেখেছে বুট দিয়ে। এ ছিল নৃশংসতা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা নিশ্চিন্তে এবং পুলিশের নিরাপত্তায় মিছিল করেছেন। অর্থাৎ পুলিশ ও আইন ছিল একচোখা। তবে অনেক মফম্বল শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছেন। দু-তিন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ডাকা হরতালের সময় দেশ কার্যত স্থবিরই ছিল।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই হরতালকে ১০০ ভাগ ব্যর্থ বলেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, হরতাল আহ্বানকারী দল বিএনপির নেতা ও কর্মীরা মাঠে ছিলেন না। তাঁরা পিকেটিং করেননি। ওই দলের নেতাদের কোথাও দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, বিএনপি হরতাল ডেকেও রাজপথে থাকেনি বা থাকতে পারেনি, কিন্তু তবু যে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকল এবং সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলল না, লোকজন ঘর থেকে বাইরে বের হলো না এবং এসবের ফলে হরতালও হলো, তাহলে এই হরতাল করল কে? এর একটাই উত্তর, তাহলে হরতাল করেছে জনগণ। আওয়ামী লীগের নেতারা এই উত্তরটা ভেবে দেখবেন। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি চ্যানেলের টক শোতে এক দর্শকের যে ফোন-মন্তব্য শুনেছি, তা উল্লেখ করি। টক শোতে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ভাই আপনারা বারবার বিএনপির হরতাল বলছেন কেন? এ হরতাল তো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে। এই দাম বাড়ানোয় তো আপনি-আমিও চলাচল করতে পারব না। তাই প্লিজ বলুন, এটা আমাদের সবার হরতাল। অবশ্য এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, ভবিষ্যতে হরতাল ডেকে তারপর গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে যদি বিএনপির নেতারা রাস্তায় না নামেন, তাহলে কী বারবার আমাদের সবার হরতাল বলার মতো শুভাকাঙ্ক্ষী পাবেন?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ওই কলামটা লেখার সময় আমার মনে বারবার সন্দেহ হচ্ছিল, একটা ছন্দপতন ঘটছে। কারণ তার আগের কয়েক সপ্তাহের লেখা ছিল বাংলাদেশের এমন কিছু বিষয় নিয়ে, যা সম্পর্কে তর্ক আর ঝগড়াঝাটি আছে। তবে খানিকটা গালমন্দ এড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং কিছুটা বিষয়-বিশ্লেষণে সহায়তা হবে চিন্তা করে, দেশি-বিদেশি সূত্র থেকে নেওয়া তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছিলাম। অন্যদিকে গত সপ্তাহের লেখায় 'মানুষ' উপস্থিত করতে গিয়ে এক বৃদ্ধ রিকশাচালকের কষ্ট আর নিজের কিছু বিপজ্জনক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলাম। তবে অনেক দিন ওই ধরনের লেখা লিখিনি বলে গত সপ্তাহের কলামটা একটু খাপছাড়া ধরনের হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম, পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ সন্দেহ করবেন নেহাত যে লিখতে হয় বলে লিখেছি, আসলে ফাঁকিবাজি করেছি। কালের কণ্ঠ পত্রিকার স্নেহাস্পদ দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু বললেন, 'মনে হয়, আপনার প্রস্তুতি ছিল না।' বস্তুতপক্ষে, তা নয়। আমি গভীরভাবে চিন্তান্বিত হয়েই ওই লেখাটা ধরেছিলাম; কিন্তু বিষয়টা ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। সেটা আমার ব্যর্থতা। তবে উপসংহারে যে বলেছিলাম, শরতেও বাংলাদেশের আকাশে সমস্যার কালো মেঘ (যেমনটা ছিল প্রকৃতিতে) তা সঠিক ছিল এবং সেটা বলা প্রয়োজন বলে মনে করেছিলাম। চেয়েছিলাম, অন্য কেউও যেন এ কথাটা ভাবেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০১১) কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম_'বাঁচব কী করে' দেখে বুঝলাম, কেউ না কেউ চিন্তা করছেন ব্যাপারটা। না করেই বা উপায় কী? কঠিন আর্থিক সংকটে পড়ে দেশের অসংখ্য মানুষের জীবন তো আসলেই চলতে চায় না। এরই মধ্যে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এসবের দাম কমেছে; এমনকি গত পরশুও তা বেশ খানিকটা পড়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় ব্যবসায়ীরা এই মূল্যহ্রাসের ফলে তাঁদের বিনিয়োগ করা পুঁজির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনকি কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে দোষারোপ করছেন এই বলে যে তারা বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ছাড়ছে না, ফলে বড় ব্যবসা চাঙ্গা হতে পারছে না। যার দরুন তেলের বিক্রিও কমে গেছে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়া মজুদদারদের জন্য দুঃসংবাদ তো বটেই। এখানে উল্লেখ করি, ডাউ জোন্স নিউজওয়্যার এবং ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা খবর দিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জ্বালানি তেলের পাইকারি বাজারে লাইট সুইট অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের দাম আগের দিনের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ৬.২৬ মার্কিন ডলার বা শতকরা ৭.৩ শতাংশ হারে কমে ৮০.৫ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। আর ব্রেন্ট শ্রেণীর পেট্রোলিয়ামের ব্যারেলপ্রতি দাম কমে ১০৫.৪৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। আগামী নভেম্বরে যে চালান হবে, ব্রেন্টের এই দাম তার জন্য প্রযোজ্য। মোট কথা, জ্বালানি তেলের দাম অনেক দিন ধরেই কমছিল এবং তা গত পরশুও কমেছে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববাজারে যখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমছে তখন বাংলাদেশ সরকার কেন প্রক্রিয়াজাত জ্বালানি, যথা_পেট্রল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দাম হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিল গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১)! এর পর পরই বাড়াল সিএনজির দামও। বাংলাদেশে জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটল তিন মাসের মধ্যে দুবার। এ দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক ও পরিবেশক হচ্ছে সরকার (পেট্রোবাংলার মাধ্যমে)। কেন এভাবে দাম বাড়ানো হলো, সরকার তার ব্যাখ্যা দিতে পারত; কিন্তু দেয়নি। তা কেন? জনগণকে কোনো বিষয়েই আস্থায় না নেওয়া সরকারের দুরারোগ্য বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেই কি কোনো ব্যাখ্যা এল না? নাকি গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা সরকারের কাছে নেই?
তবে সরকার আচমকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদে বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির ডাকা দেশজুড়ে হরতালের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি তেল কেনে, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে এই তেলের দাম বেড়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারও দাম বাড়িয়েছে। টেলিভিশনে তাঁর ব্রিফিং যেটুকু দেখতে পেয়েছি, তাতে মনে হলো না যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছু বললেন। তবে তিনি এ বিষয়ে সরকারের যুক্তি কী, তা প্রকাশ করলে ভালো হতো। কারণ শুধু বিএনপি নয়, দেশের সংবাদপত্রেও (দৈনিক যুগান্তর এবং আমার দেশ) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসার বিষয়ে বিশ্লেষণাত্মক খবর প্রকাশ হয়েছে। দৈনিক যুগান্তর দাবি করেছে, সরকার জ্বালানি তেল থেকে মুনাফা তুলছে কয়েক মাস ধরে। তাহলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের একটা কারণ হতে পারে যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন, খোলাবাজারে চাল বিক্রি এবং অতি দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দিতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী তা কমিয়ে আনতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। যদি এ কথাটাই ঠিক হয়, তা হলেও সরকার তা জনগণকে জানাতে পারত এবং তখন আমাদের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে আলোচনা করতে পারতেন যে জ্বালানি তেলে আসলেই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কি না এবং তা কমিয়ে আনতে তেলের দাম বাড়ানোই একমাত্র উপায় কি না। আর সে রকমই যদি হয়, তাহলে এর যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ কী হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা গেল, তেমন কিছু হওয়ার সুযোগও ঘটল না। এই অবস্থায় কারো কাছে যদি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিকল্প কোনো প্রস্তাব বা বুদ্ধি থাকে এবং তিনি যদি সরকারকে ধাপ্পাবাজ বা স্বেচ্ছাচারী বলেন, তাহলে সরকার তাঁকে পাল্টা গালি দেওয়া অথবা রাতের বেলা তাঁকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ঢোকানো ছাড়া আর কী করতে পারবে?
তবে বিষয়টা ঠাট্টা-মশকরা করার মতো নয়। কারণ বাংলাদেশে সরকারি কোষাগার থেকে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি খুব পরিচ্ছন্ন নয়। জনগণের কাছ থেকে কর হিসেবে আদায় করা টাকায় এখানে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তার সঙ্গে দুর্নীতির সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আছে। যেমন_বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে যে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে আমদানি করা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে। সেই ভর্তুকি থেকে নাকি মুনাফা লোটে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবার যাদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর ব্যবসা দিয়েছে, তাদের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন এই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা আছেন। লক্ষণীয় যে টেন্ডার ছাড়া এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র জোগাড় করলেও সে জন্য দুর্নীতির অভিযোগ আনা যাবে না_এই সরকার সেই মর্মে আইন পাস করে নিয়েছে জাতীয় সংসদে। তবে আশা থাকবে, এসব ক্ষেত্রে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আবিষ্কারের সঙ্গে দুর্নীতি বা অনিয়ম ছিল কি না, এসবের ছিদ্র গলিয়ে জনগণের দেওয়া ট্যাঙ্রে টাকা কারো পকেটে জমেছে কি না তা নিয়ে কোনো না কোনো দিন সঠিক তদন্ত হবে। ইনডেমনিটির পরও কথা থাকে। এদিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশে নয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত পদে মনোনীত ড্যান মোজেনা তাঁর দেশের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বলেছেন, দুর্নীতি এখন বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এদিকে গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকে দেশজুড়ে হরতাল হয়েছে। বিএনপি এই হরতাল আহ্বান করেছিল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে। জামায়াতে ইসলামীও একই দিন হরতাল ডাকে। অবশ্য তাদের দাবি ছিল, তাদের আটক ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বিচারাধীন নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে। ওই হরতালের রূপ কেমন ছিল এবং তার ফলাফলই বা কী হতে পারে, তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দিনভর যেসব মন্তব্য হতে লক্ষ করা গেছে সেগুলো সম্পর্কে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে।
হরতালের সময় টেলিভিশনের স্ক্রলে, সন্ধ্যায় ও রাতে টেলিভিশন সংবাদ ও পরদিন শুক্রবার বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা ও বলা হয়েছে যে হরতাল ছিল ঢিলেঢালা। এ প্রসঙ্গে আমার মনে প্রশ্ন, কেমন হরতাল ঢিলেঢালা বা তার বিপরীতে কখন হরতাল খুব আঁটসাঁট হবে? উত্তর কি এই যে কোনো হরতালে যদি সহিংসতা না হয়, পিকেটাররা আগুন না লাগায়, পিটিয়ে মারাত্মক জখম না করে, পুলিশকে বোমা না মারে_তাহলে সেটাকে বলতে হবে ঢিলেঢালা হরতাল। আর তার বিপরীতে যদি হরতালকারীরা চারদিকে সহিংসতা করে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে মানুষ খুন বা জখম করে কারফিউ জারি করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করে তবেই বলা যাবে, হরতাল দারুণ টাইট বটে! তাহলে তো ঢিলেঢালা হরতালই ভালো।
আমার মনের দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে যাওয়ার আগে বলে নিই, ঘর থেকে সামান্য একটু বাইরে বেরিয়ে এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ছবিতে হরতাল কেমন দেখেছি। বিশ্ব রোড ও রাজধানীর অন্যান্য মহাসড়ক ছিল প্রায় ফাঁকা, আবাসিক এলাকার ভেতরের রাস্তাগুলো দিনের বেশির ভাগ সময়ই ছিল জনশূন্য, বারিধারা-গুলশান এলাকার রাস্তায় মোটরগাড়ি চলেছে কদাচিৎ আর রিকশা দেখা গেছে মাঝেমধ্যে। নিয়মিত বাস সার্ভিসগুলো অচল ছিল। দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি, তবে ট্রেন ও প্লেন চলেছে। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল সর্বত্র। ব্যাংক খোলা থাকলেও গ্রাহক বা সেবা নিতে এসেছেন খুব কম মানুষ। ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ খোলা থাকলেও সেখানে আরেক দফা দর পতন হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পথঘাট ছিল পিকেটারবিহীন। বিএনপিকর্মীরা মিছিল করতে গেলেই পুলিশের তাড়া ও পিটুনি খেয়েছেন। তাঁরা দৌড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁরা অকথ্য পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যেমন_মতিঝিলে এক পুলিশ এক নাগরিককে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাঁর বুক চেপে রেখেছে বুট দিয়ে। এ ছিল নৃশংসতা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা নিশ্চিন্তে এবং পুলিশের নিরাপত্তায় মিছিল করেছেন। অর্থাৎ পুলিশ ও আইন ছিল একচোখা। তবে অনেক মফম্বল শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছেন। দু-তিন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ডাকা হরতালের সময় দেশ কার্যত স্থবিরই ছিল।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই হরতালকে ১০০ ভাগ ব্যর্থ বলেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, হরতাল আহ্বানকারী দল বিএনপির নেতা ও কর্মীরা মাঠে ছিলেন না। তাঁরা পিকেটিং করেননি। ওই দলের নেতাদের কোথাও দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, বিএনপি হরতাল ডেকেও রাজপথে থাকেনি বা থাকতে পারেনি, কিন্তু তবু যে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকল এবং সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলল না, লোকজন ঘর থেকে বাইরে বের হলো না এবং এসবের ফলে হরতালও হলো, তাহলে এই হরতাল করল কে? এর একটাই উত্তর, তাহলে হরতাল করেছে জনগণ। আওয়ামী লীগের নেতারা এই উত্তরটা ভেবে দেখবেন। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি চ্যানেলের টক শোতে এক দর্শকের যে ফোন-মন্তব্য শুনেছি, তা উল্লেখ করি। টক শোতে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ভাই আপনারা বারবার বিএনপির হরতাল বলছেন কেন? এ হরতাল তো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে। এই দাম বাড়ানোয় তো আপনি-আমিও চলাচল করতে পারব না। তাই প্লিজ বলুন, এটা আমাদের সবার হরতাল। অবশ্য এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, ভবিষ্যতে হরতাল ডেকে তারপর গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে যদি বিএনপির নেতারা রাস্তায় না নামেন, তাহলে কী বারবার আমাদের সবার হরতাল বলার মতো শুভাকাঙ্ক্ষী পাবেন?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments