হেলেন কুপার ও স্টিভেন লি মেয়ার-জাতিসংঘে ফিলিস্তিন এবং ওবামা
ফিলিস্তিন যাতে জাতিসংঘের সদস্যপদ না পায় সেই উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পদক্ষেপটি ভণ্ডুল হয়ে যায়। এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি অনেকটা বাধ্য হয়েই আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু গত বুধবার জাতিসংঘে নাটকীয়ভাবে নতুন একটি বাস্তবতা দেখে সাধারণ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য স্থপতি হিসেবে এক দশক পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের লালিত প্রত্যাশা এখন অনিশ্চয়তার মুখে। জাতিসংঘে বারাক ওবামার আসন নেওয়ার আগেও আশাবাদী ছিল সবাই। অত্যন্ত কঠোর বক্তব্য দেওয়ার সময়ও তিনি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। এতে করে ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো এবং রাশিয়ার যে প্রচেষ্টা ছিল তাও ভেস্তে যেতে বসেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা তাঁদের দৃষ্টি এখন ভিন্ন খাতে ঘুরিয়েছেন। বিশ্ব কূটনীতির মাত্রাকে ঠিক রেখে কিভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকেও নজর দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা বিশ্ব কূটনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে এ বিষয়টিকে মূল্যায়ন করছেন। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তিনটি সূত্রকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফিলিস্তিন। আরেকটি ইসরায়েল এবং সর্বশেষ সূত্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনে ইসরায়েলের একগুঁয়েমি এবং ইসরায়েলের অনড় অবস্থান ইসরায়েলকে একঘরে করে রেখেছে। ফিলিস্তিনের বিষয়টিকে তাঁরা এমনিতেও গুরুত্বহীন ভেবেছেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনের রাজনীতিও বারাক ওবামার শক্তিকে টেনে ধরেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার কোনো প্রচেষ্টা সে নিতে পারছে না, এটাই বড় কথা। সেখানকার রাজনীতিতে ইহুদিদের ভূমিকা বিশাল। কিছু ইহুদি নেতা ওবামার ভূমিকাকে সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের মতে ইসরায়েলকে শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করতে ওবামাই বাধ্য করেছেন। ফলে আড়াই বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া থেমে যায়। এতে করে আরব বিশ্বের অনেক নেতাই হতাশ হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ ১৯৭০ সাল থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যস্থতার যে ধারা তৈরি হয়েছে তা পরিবর্তনের কথাও চিন্তা করেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো বিষয় যদি নির্ধারিত হয়ে যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সেই বিষয়টির বাইরে যেতে পারে না। এমন বক্তব্য এহুদ বারাক মন্ত্রিসভায় ইসরায়েল সম্পর্কিত শান্তি প্রচেষ্টার অন্যতম মধ্যমণি ডেনিয়েল লেবির। যে কারণে দুই রাষ্ট্রনীতির উদ্যোগটিও ঝিমিয়ে পড়ে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র স্থবির হয়ে যায়। আর অন্যরা কিছু এগিয়ে যায়।
আমেরিকান-ইসরায়েলবিষয়ক কমিটিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় বারাক ওবামা গত মে মাসে হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি তখন বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্থাপনের কাজটি এগিয়ে না যায় তাহলে এই অঞ্চলেও এর রাজনৈতিক কুপ্রভাব পড়বে। ওবামা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বার্থের বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপনেরও একটা কারণ রয়েছে। তারা মনে করছে শান্তি প্রচেষ্টায় আন্তরিকতার অভাব দেখা গেছে। কিংবা এশিয়া, ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার কোনো পক্ষ প্রচেষ্টা থেকে দূরে সরে গেছে। আর এই অধৈর্য এবং অভাববোধ বিশ্বব্যাপীও বিস্তৃত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হুমকি সম্পর্কে তাঁর ভাষণ প্রদান করেছেন। তিনি শুক্রবার তাঁর ভাষণে বলেছেন, যদি জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি সম্ভব না হয় তাহলে তিনি নিরাপত্তা পরিষদেও যেতে প্রস্তুত। এর বিপক্ষে অবস্থান নেন ওবামা এবং কংগ্রেসের মধ্যে যেসব সদস্য নেতানিয়াহুর সমর্থক আছেন তাঁরা। কার্নেজিক এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ফেলো এবং ক্লিনটন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ডেভিড রথকোফ বলেন, গত বুধবার বারাক ওবামা তাঁর কর্তব্যটিই সম্পাদন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের যথার্থ অবস্থান সম্পর্কে একটি মন্তব্যই করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ রাখে না এটা ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাস করে। প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে বলেছেন, যেকোনো কারণেই হোক যুক্তরাষ্ট্র দুটি পক্ষের সঙ্গে সেতু হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা সেটা যথাযথভাবে করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মায়েন রশিদ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি হতাশায় ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের প্রতিটি মানুষই হতাশাগ্রস্ত। এটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এ অবস্থার যে আরো অবনতি হতে পারে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে বলা উচিত কোন কারণে ব্যর্থ হলো।
বারাক ওবামা তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, আসুন আমরা আমাদের আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত করে আনি। কিন্তু তিনি জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় ফিলিস্তিনিদের বিষয়টিকে সাধারণ সভার আলোকে নিয়ে আসার কথা ভাবেননি। আবারও তিনি বললেন, আসুন সমঝোতায় আসা যাক। ফিলিস্তিনের এখন জাতিসংঘের সদস্যপদপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। তবে নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। জাতিসংঘের বর্তমান অবস্থাও নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপের মুখে রাখতে পারে। ইসরায়েল এই পর্যায়ে বুঝতে পারছে আরব বিশ্বও শক্ত অবস্থানে চলে যেতে পারে। এতে করে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক উত্তেজনা বেড়ে যাবে।
লেখকদ্বয় : সাংবাদিক। দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর এম হোসেইন সরকার
অন্যদিকে ওয়াশিংটনের রাজনীতিও বারাক ওবামার শক্তিকে টেনে ধরেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার কোনো প্রচেষ্টা সে নিতে পারছে না, এটাই বড় কথা। সেখানকার রাজনীতিতে ইহুদিদের ভূমিকা বিশাল। কিছু ইহুদি নেতা ওবামার ভূমিকাকে সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের মতে ইসরায়েলকে শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করতে ওবামাই বাধ্য করেছেন। ফলে আড়াই বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া থেমে যায়। এতে করে আরব বিশ্বের অনেক নেতাই হতাশ হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ ১৯৭০ সাল থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যস্থতার যে ধারা তৈরি হয়েছে তা পরিবর্তনের কথাও চিন্তা করেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো বিষয় যদি নির্ধারিত হয়ে যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সেই বিষয়টির বাইরে যেতে পারে না। এমন বক্তব্য এহুদ বারাক মন্ত্রিসভায় ইসরায়েল সম্পর্কিত শান্তি প্রচেষ্টার অন্যতম মধ্যমণি ডেনিয়েল লেবির। যে কারণে দুই রাষ্ট্রনীতির উদ্যোগটিও ঝিমিয়ে পড়ে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র স্থবির হয়ে যায়। আর অন্যরা কিছু এগিয়ে যায়।
আমেরিকান-ইসরায়েলবিষয়ক কমিটিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় বারাক ওবামা গত মে মাসে হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি তখন বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্থাপনের কাজটি এগিয়ে না যায় তাহলে এই অঞ্চলেও এর রাজনৈতিক কুপ্রভাব পড়বে। ওবামা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বার্থের বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপনেরও একটা কারণ রয়েছে। তারা মনে করছে শান্তি প্রচেষ্টায় আন্তরিকতার অভাব দেখা গেছে। কিংবা এশিয়া, ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার কোনো পক্ষ প্রচেষ্টা থেকে দূরে সরে গেছে। আর এই অধৈর্য এবং অভাববোধ বিশ্বব্যাপীও বিস্তৃত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হুমকি সম্পর্কে তাঁর ভাষণ প্রদান করেছেন। তিনি শুক্রবার তাঁর ভাষণে বলেছেন, যদি জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি সম্ভব না হয় তাহলে তিনি নিরাপত্তা পরিষদেও যেতে প্রস্তুত। এর বিপক্ষে অবস্থান নেন ওবামা এবং কংগ্রেসের মধ্যে যেসব সদস্য নেতানিয়াহুর সমর্থক আছেন তাঁরা। কার্নেজিক এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ফেলো এবং ক্লিনটন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ডেভিড রথকোফ বলেন, গত বুধবার বারাক ওবামা তাঁর কর্তব্যটিই সম্পাদন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের যথার্থ অবস্থান সম্পর্কে একটি মন্তব্যই করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ রাখে না এটা ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাস করে। প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে বলেছেন, যেকোনো কারণেই হোক যুক্তরাষ্ট্র দুটি পক্ষের সঙ্গে সেতু হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা সেটা যথাযথভাবে করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মায়েন রশিদ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি হতাশায় ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের প্রতিটি মানুষই হতাশাগ্রস্ত। এটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এ অবস্থার যে আরো অবনতি হতে পারে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে বলা উচিত কোন কারণে ব্যর্থ হলো।
বারাক ওবামা তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, আসুন আমরা আমাদের আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত করে আনি। কিন্তু তিনি জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় ফিলিস্তিনিদের বিষয়টিকে সাধারণ সভার আলোকে নিয়ে আসার কথা ভাবেননি। আবারও তিনি বললেন, আসুন সমঝোতায় আসা যাক। ফিলিস্তিনের এখন জাতিসংঘের সদস্যপদপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। তবে নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। জাতিসংঘের বর্তমান অবস্থাও নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপের মুখে রাখতে পারে। ইসরায়েল এই পর্যায়ে বুঝতে পারছে আরব বিশ্বও শক্ত অবস্থানে চলে যেতে পারে। এতে করে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক উত্তেজনা বেড়ে যাবে।
লেখকদ্বয় : সাংবাদিক। দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর এম হোসেইন সরকার
No comments