পবিত্র কোরআনের আলো-কোনো দৃষ্টিই তাঁকে দেখতে পায় না, অথচ তিনি সব কিছুই দেখেন

১০০. ওয়া জাআ'লূ লিল্লাহি শুরাকা-আল জিন্না ওয়া খালাক্বাহুম ওয়া খারাক্বূ লাহূ বানীনা ওয়া বানাতিম্ বিগাইরি ই'লমিন; ছুবহা-নাহূ ওয়া তাআ'-লা আ'ম্মা- ইয়াসিফূন। ১০১. বাদীউ'চ্ছামাওয়াতি ওয়ালআরদ্বি; আন্না ইয়াকূনু লাহূ ওয়ালাদুন ওয়ালাম তাকুল্ লাহূ সা-হিবাহ; ওয়া খালাক্বা কুল্লা শাইয়িন ওয়া হুয়া বিকুলি্ল শাইয়িন আ'লীম।


১০২. যালিকুমুল্লাহু রাব্বুকুম; লা ইলাহা ইল্লা হুয়া; খালিক্বু কুলি্ল শাইয়িন ফা'বুদূহু ওয়া হুয়া আ'লা কুলি্ল শাইয়িন ওয়াক্বীল।
১০৩. লা-তুদরিকুহুল্ আবসারু ওয়া হুয়া ইউদ্রিকুল আবসারা ওয়া হুয়াল্লাতীফুল খাবীর। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ১০০-১০৩]
অনুবাদ : ১০০. তারা জিনকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক বানায়, অথচ জিনদেরও আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টি করেছেন। অজ্ঞতার কারণে তারা আল্লাহর পুত্র-কন্যা আছে বলেও অপবাদ চাপায়। অথচ তারা যা বলে, এর চেয়ে আল্লাহ অনেক ঊধর্ে্ব ও পবিত্র।
১০১. তিনি আকাশমণ্ডল ও জমিনের উদ্ভাবক। (আপনি তাদের বলে দিন) তাঁর সন্তান হবে কী করে, তাঁর তো স্ত্রী নেই। সব কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সব কিছু সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল রয়েছেন।
১০২. তিনিই আল্লাহ তায়ালা_তিনিই তোমাদের প্রভু। তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। সব কিছুর স্রষ্টা তিনি। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত করো, তিনি সব কিছুর ওপর চূড়ান্ত তত্ত্বাবধায়ক।
১০৩. কোনো দৃষ্টিই তাঁকে দেখতে পায় না, তিনি সব কিছুই দেখতে পান। তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সব কিছু সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন।
ব্যাখ্যা : ১০০ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে শিরককে আবারও খণ্ডন করা হয়েছে। এ আয়াতে জিনদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলা হয়েছে, কাফেররা জিনদের আল্লাহর সঙ্গে শরিক বানাত এবং এদের পূজা করত। অথচ জিনরাও মানুষের মতোই আল্লাহর সৃষ্টি। প্রাচীনকালের বিভ্রান্ত মানুষরা অশরীরী ও রহস্যময় জিনদের অসীম ক্ষমতার মালিক মনে করে তাদের পূজা করত। তারা প্রাচীন পয়গম্বর মহাপুরুষ ও পীর-আউলিয়াদের আত্মা অনেক ক্ষমতাধর বলে বিশ্বাস করত এবং তারা অশরীরীভাবে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় বলেও বিশ্বাস করত। এভাবে জিনদেরও তারা এ জাতীয় অশরীরী আত্মা বলে বিশ্বাস করত। এ কারণে তারা জিনদেরও পূজা করত। এ ছাড়া মুশরিকরা আল্লাহ সম্পর্কে আরেকটা মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করত যে আল্লাহর সন্তান-সন্ততি আছে।
এটি আল্লাহ সম্পর্কে মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা। এই আয়াতের মাধ্যমে এ ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তো মানুষের মতো বা অন্য কোনো জীবের মতো সত্তা নন। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতের সব কিছুকে ধারণকারী পবিত্র চৈতন্য। পরবর্তী ১০২ ও ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
মানুষ যদি পৃথিবীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং সত্য ও ন্যায়ের ওপর জীবন প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তবে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া উচিত এবং এক আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করা উচিত। কারণ তিনি বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও মালিক এবং তিনিই সত্য ও ন্যায়। আল্লাহ তায়ালাকে মূর্তভাবে কেউ দেখে না। তিনি কিন্তু সব কিছু দেখেন এবং মানুষের অন্তরের খবর রাখেন। আল্লাহ তায়ালাকে মূর্তভাবে দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে তাঁকে উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহর সৃষ্টিজগতের অনুপম শৃঙ্খল বুঝতে চেষ্টা করলেও তাঁকে উপলব্ধি করা যায়। তিনি মানুষের অন্তরের সূক্ষ্মতম অনুভূতিরও খবর রাখেন এবং সত্য ও অসত্য বা ন্যায় ও অন্যায়কে ফারাক করার মানদণ্ড নিরূপণ করে রাখেন। তিনি চান মানুষ সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হোক।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.