বরাদ্দ তিনবার, কাজ হয়নি একবারও by কাজী নুরুল ইসলাম

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের ঘুঘুয়া বেসরকারি রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘর মেরামতের নামে দুবার এবং মাঠ সংস্কারের নামে একবার বরাদ্দ দেওয়া দেখানো হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের গম ও টাকায় বিদ্যালয়ের ঘর মেরামত কিংবা মাঠের কোনো সংস্কারই করা হয়নি।


বরাদ্দের গম ও টাকা তুলে নিয়ে পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। কখনো বিদ্যালয়ের সঠিক নামে, আবার কখনো বিদ্যালয়ের বিকৃত নামে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলটির করুণ দশা দেখে এমনিতেই মায়া হয়। অথচ স্কুলের নামে গম তুলে খেয়ে ফেলেছে শুনে আমি অবাক হয়েছি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে টিআরের আওতায় স্কুলটির ঘর মেরামত প্রকল্প (প্রকল্প নম্বর ১১) বাস্তবায়নের জন্য আড়াই টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। আড়াই টন গমের সরকার-নির্ধারিত দাম ৫৪ হাজার ৪০৫ টাকা। একই অর্থবছরে একই এলাকার কামরাঙ্গীতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার নামে প্রকল্প (প্রকল্প নম্বর ১৯) দেখিয়ে একই কর্মসূচির আওতায় ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ হাফিজ উদ্দিন। অথচ ওই নামের কোনো বিদ্যালয় নেই। এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে টিআরের আওতায় ওই বিদ্যালয়ের ঘর সংস্কারের নামে এক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছিল। সে সময়ও কোনো কাজ হয়নি।
পিআইওর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কোষারানীগঞ্জ ইউপির সাবেক সদস্য শামসুল হক ১১ ও ১৯ নম্বর প্রকল্পের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি পৃথক দুটি প্রকল্প কমিটি দাখিল করে গত বছরের মে মাসেই দুই দফায় বরাদ্দের সব গম ও টাকা তুলে নিয়েছেন।
শামসুল হক বলেন, ‘আমি আড়াই টনের প্রকল্প চেয়ারম্যান হলেও সবকিছু করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম। তিনি আমাকে ভোটের আগে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ওই টাকা আমি ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছি।’ ১৯ নম্বর প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেবের লোক ভোটের আগে আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন কারণে আমি মাঠ ভরাটের কাজ করতে পারিনি।’
ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রকল্পের টাকা সে সময় বিভিন্ন খাতে খরচ হয়ে গেছে। এখন খামাখা এসব প্রকল্পের রিপোর্ট লিখে মেম্বারের ক্ষতি করে কী লাভ? বরং আপনাকে অন্য ভালো খবর দিচ্ছি, ওইগুলো নিয়ে রিপোর্ট লেখেন।’
উপজেলা পিআইও মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি অল্প দিন হলো এখানে যোগদান করেছি। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিষয়গুলো বুঝে নিচ্ছি। প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

No comments

Powered by Blogger.