বিশেষ সাক্ষাৎকার : সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম-সারা পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের দাম কমছে আর সরকার বাড়িয়েছে
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কালের কণ্ঠ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ, লেখক, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন কালের কণ্ঠ : সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা ঢাকার রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও করেছে।
বলা হয়েছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে ধংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছে তারা। আপনার মন্তব্য কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : একটি রাজনৈতিক দল তাদের নেতাদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিচারপ্রক্রিয়া থেমে যাবে। অর্থাৎ সরকার তার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাবে। তবে এ ধরনের কাজে সর্বাধিক স্বচ্ছতা ও সততা থাকা দরকার। তাহলেই জনগণ বুঝতে পারবে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক।
কালের কণ্ঠ : গাড়ি ভাঙচুর এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি কি আপনি সমর্থন করেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আসলে টেলিভিশনের ক্যামেরায় দেখে শতকরা ১০০ ভাগ বলা যাবে না, প্রথম আক্রমণাত্মক ভূমিকা কে নিয়েছে। কারণ এর আগে রাজনৈতিক আন্দোলনে দেখা গেছে, পুলিশই লাঠি হাতে মারমুখী ভূমিকা নিয়েছে। তারা নিরীহ মানুষকে মেরেছে। সুতরাং আগামী দিনের আন্দোলনে যদি জনগণও লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকে, তাহলে জনগণকে দোষ দিতে পারবেন না।
কালের কণ্ঠ : একাত্তরের মানবাধিকারবিরোধীদের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সরকার ইতিপূর্বে তার অবস্থান একাধিকবার পরিবর্তন করেছে। নাম পরিবর্তন করেছে। আইনেও সংশোধন এনেছে। হয়তো তাদের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। সম্ভবত আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। আরেকটা বিষয় এই যে সরকার যদি মনে করে, সারা পৃথিবী এমনকি সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের সমর্থন করবে_সেটা ভুল হবে। ১৯৭১ সালেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কিছুসংখ্যক লোক এর বিরোধিতা অবশ্যই করেছে। এখন বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন এবং স্বাভাবিক আইনগত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
কালের কণ্ঠ : এটা কি শুধু অভ্যন্তরীণ অবস্থা?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : না। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত ছিল, কেউ আমাদের সমর্থন করেছে, কেউ বিরোধিতা করেছে, কেউ চুপচাপ ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো অবস্থান থাকে না, তাই এখন পরিস্থিতি বদলেছে। অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে, একাত্তরে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধ দেখেছেন তাঁরা এখন জনসংখ্যার শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ হাইজ্যাক করে একটা দলের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষ তো এত বোকা নয়। ১৯৭২-৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য বা নিজের বলে স্বীকার করার জন্য ঐক্যবদ্ধ জনগণ ছিল এবং একক নেতৃত্ব ছিল; এখন কিন্তু তেমন নেই। এটা মনে রাখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এই মুহূর্তে হরতালকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আমি শান্তিপূর্ণ হরতালের পক্ষে। শান্তিপূর্ণ হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। জনগণ যদি মনে করে তারা অংশগ্রহণ করবে, তাহলে করবে, না হলে করবে না। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তা করতেই পারে।
কালের কণ্ঠ : হরতাল প্রতিবাদের চূড়ান্ত ভাষা। এটা ঘন ঘন প্রয়োগ করা কি ঠিক বলে মনে করেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : এটা নির্ভর করে যারা প্রয়োগ করে, তাদের ওপর। ডাক্তার যেমন রোগী দেখে নির্ধারণ করেন, কতবার ইনজেকশন দেবেন; তেমনি বলতে পারেন, রোগের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত হবে, কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের কণ্ঠ : সরকার বলছে, জ্বালানির মূল্য না বাড়িয়ে উপায় ছিল না।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সরকার বলতেই পারে। তবে সরকার আগে কেন এত কমিয়েছিল? ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সরকার দেশ চালাচ্ছিল। দেশকে তো দেউলিয়া করে ছাড়বে। আগামী তিন বছর পর দেশের কী হবে? তার দায় কে নেবে? এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে নাজুক করে ফেলছে। সরকার জ্বালানির দাম কমিয়ে দিয়েছিল সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য। যাদের জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারা কিন্তু সেই সুবিধা পায়নি। সস্তা জনপ্রিয়তা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে ব্যালেন্স করার কথা, সেটা সরকার করতে পারেনি। পৃথিবীব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমছে। সরকার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বলুন, জনগণকে এই বড়িটা কিভাবে খাওয়াবেন? দুর্নীতি কমানোর দিকে নজর দেন না কেন? দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারলে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে না। এটা করতে পারলে যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা দিয়ে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে।
কালের কণ্ঠ : বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ঈদের আগ মুহূর্তে ৬৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলো রাস্তা সংস্কারের জন্য। জনগণ বলছে, এই টাকার ৯০ শতাংশই দুর্নীতি হয়েছে। এমন সময় টাকা দেওয়া হয়েছে এবং এমন পরিস্থিতিতে টাকা ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে, যার কোনো প্রমাণই পাওয়া যাবে না যে টাকাটা আদৌ খরচ হয়েছে কি না। আইএমএফকে বলার সুযোগও নেই আপনাদের। আপনারা বলতে পারতেন, অমুক জায়গা থেকে আমরা এই ভর্তুকির টাকার ব্যবস্থা করব। সেটাও তারা পারছে না।
কালের কণ্ঠ : দুর্মূল্যের বাজারে মানুষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ থেকে বাঁচার পথ কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : উত্তরণের পথ হচ্ছে সরকার নির্বাচনের পরপর অনেক প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। জনগণের প্রত্যাশাকে আকাশচুম্বী করে দিয়েছে। তার জন্য কিন্তু পাইপলাইনে আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নোট ছাপিয়ে দেশ চালাতে শুরু করেছে। খালি বড় বড় অর্থনীতিবিদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে দেশ পরিচালনা করা যায় না। রপ্তানি বাড়ছে না। সরকার বাস্তবতা অনুসরণ করছে না। মানুষ আসলেই ক্ষুব্ধ। আর উত্তরণের কথা বলছেন? বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে সরকার, যেগুলো এই মুহূর্তে চালানোর মতো অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের নেই। সেগুলো পিছিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, অদক্ষ মন্ত্রী যাঁরা আছেন, তাঁদের বাদ দিন। দক্ষ মানুষকে সেখানে স্থলাভিষিক্ত করুন। তার পরও কথা থেকে যায়। পরিবর্তনের সময় যদি দক্ষতা বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাহলে সেই একই অবস্থা হবে।
কালের কণ্ঠ : শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : ১২ বছর আগে একবার, এখন আরেকবার ঘটল একই ধরনের কেলেঙ্কারি। শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচার কোনো পথ সরকারের সামনে নেই। যে টাকা এখান থেকে হাতিয়ে নেওয়ার, তা কিন্তু হাতিয়ে নেওয়া হয়ে গেছে। এখন সেই টাকা কি আর ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব? সুতরাং এর মূল্য আওয়ামী লীগকে কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে। পিঠের চামড়া দিয়ে না হলেও অবশ্যই ভোটের চামড়া দিয়ে উসুল করতে হবে। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর মনে যে ক্ষত তৈরি করা হয়েছে, তার মূল্য সরকারকে দিতেই হবে। এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।
কালের কণ্ঠ : নিত্যপণ্যের বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আবাসন শিল্প থমকে আছে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে। ইস্পাত শিল্প থেমে গেছে। রড-সিমেন্ট-বালু ব্যবসায় আঘাত এসেছে। ইট উৎপাদনকারীরা থেমে গেছেন। একটার সঙ্গে আরেকটার যোগ আছে। মানুষ নগদ আয় করতে পারছে না। যা করছে, তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। সার্বিকভাবে বলতে গেলে জীবনযাত্রাই যেন থেমে যাচ্ছে। সরকারকে মানুষের আয় বৃদ্ধি করার পথ বের করতে হবে। এখানে বিশ্বব্যাংকের দরকার নেই। আন্তরিক ও দক্ষ দু-চারজন পেশাজীবী লোকের প্রয়োজন।
কালের কণ্ঠ : সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাব। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে, তার জন্য অভিনন্দন দেব। শিক্ষা বিভাগে, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুলে ও উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাব।
কালের কণ্ঠ : যোগাযোগব্যবস্থা, বিশেষ করে সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : ঈদের দিন শহীদ মিনারে চার ঘণ্টাব্যাপী যে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে আমি ছিলাম। আমি তাঁদের দাবি এবং আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। আমি মনে করি, বর্তমান সরকারের প্রধান দুর্বল দিক হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারের ব্যর্থতা। আমি চট্টগ্রামের ছেলে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যাঁরা শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছেন তাঁরা যেহেতু নিজ নিজ বাড়িতে যাননি, তাহলে তাঁরা কেমন করে জানেন রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিও তো ঈদের দিন সড়কপথে ঢাকার বাইরে দূরে যাননি, অতএব আপনি কেমন করে জানলেন রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো? আমি ঈদের দুদিন পর নিজে গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছি এবং দুদিন পর ফিরে এসেছি। আমি সাক্ষী দিচ্ছি, এ রাস্তাকে কোনোমতেই ভালো বলা যাবে না। ঈদের আগে যে বিরাট অঙ্কের টাকা সড়ক মেরামতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটা যথাসম্ভব অপব্যবহার হয়েছে বা অপচয় হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আদিবাসী ইস্যু নিয়ে বিতর্ক চলছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তারা যথাসম্ভব আদিবাসী তথা সবচেয়ে পুরনো অধিবাসী নয়। ইতিহাসবিদ বা নৃতত্ত্ববিদরা চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারবেন। কালের কণ্ঠ পত্রিকা তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে। কিন্তু তাদের যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বা আইনগতভাবে আদিবাসী বলেন, তাহলে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার কনভেনশন বা প্রটোকল অথবা ঘোষণা অনুযায়ী তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য বড় রকমের হুমকি। জাতিসংঘ কর্তৃক এ বিধানগুলো করা হয়েছিল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে অত্যন্ত নিগৃহীত ও নিপীড়িত সুনির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী কিছুসংখ্যক মানুষের জন্য। আমি বলব, বাংলাদেশের সংবিধানকে প্রয়োজনে আবারও সংশোধন করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকারকে আরো সম্প্রসারিত ও সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের মনে যে ক্ষোভ আছে, তা দূর করতে হবে এবং সেই ক্ষোভ দূর করার রাস্তা বাংলাদেশের সংবিধান। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালি জনগোষ্ঠীও কষ্টে আছে। সব জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
কালের কণ্ঠ : তাদের উন্নয়নের জন্য কি সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজন আছে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায়। তাদের অধিকার কি দিতে পেরেছি আমরা? এই যে একটা চুক্তি হলো ১৯৯৭ সালে, সেই চুক্তি অনুযায়ী কি তাদের সব অধিকার দেওয়া হয়েছে? উদাহরণস্বরূপ, কথা ছিল তাদের থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হবে? দেওয়া হয়েছে কি মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে মাত্র। এটা কি ঠিক?
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে দুটি রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে। তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক ফ্রন্টকে বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করছে না কেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : এ থেকে উত্তরণের কোনো সহজ পথ নেই। বাংলাদেশের জনগণ সঠিক কারণেই হোক বা বেঠিক কারণেই হোক, দুটি প্রধান দল বা দুটি সুপরিচিত মার্কার বাইরে যেতে চাইছে না।
কালের কণ্ঠ : অন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারছে না কেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তাদের ব্যর্থতা কেন বলবেন? এটা জাতির তথা ভোটারদের ব্যর্থতা। এমন একটি পরিবেশ দরকার, যেখানে জনগণ ছোট দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে, অন্যদের সম্পর্কে জানতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে অন্যদের ভোট দিয়ে শক্তিশালী করতে পারে। ছোট দলগুলোকে মিডিয়া যথেষ্ট সমর্থন করে না, হয়তোবা সব ছোট দল সমর্থন পাওয়ার মতো অবস্থানে নেইও। ছোট দলগুলো বড় হলে সম্ভবত মিডিয়া সমর্থন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমর্থন না হলে বড় হবে কিভাবে? উদাহরণস্বরূপ_আমার আর্থিক সামর্থ্য নেই, অতএব প্রচারসুবিধাও নেই। কিন্তু আমি প্রচণ্ডভাবে আত্মবিশ্বাসী যে বাংলাদেশে অন্য আরো যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলেমিশে নেতৃত্ব দিতে পারব। কিন্তু আমার বক্তব্য জনগণের কাছে পেঁৗছানো কষ্টকর। গুরুত্বপূর্ণ একটি নিবেদন, প্রধান দল দুটি অবশ্যই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু ছোট দলগুলো যদি এগোতে পারে, তাহলে প্রধান দলগুলোও উপকৃত হবে।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও অস্থিরতা ও সংকটের আভাস দেখতে পাচ্ছি। ব্যক্তিজীবনে আমি বাঙালি, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন বাংলাদেশি এবং একজন অভ্যাসরত মুসলমান। এই চার চেতনার সমন্বয় প্রয়োজন। তার কোনোটি বাদ দিয়ে চলা যাবে না। অধিকন্তু মনে রাখতে হবে, বর্তমান পৃথিবীতে আবেগের স্থান কমে গেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব বেড়েছে এবং এর ওপর তথা আপনার ও আপনার দেশের মূল্যায়ন হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : একটি রাজনৈতিক দল তাদের নেতাদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিচারপ্রক্রিয়া থেমে যাবে। অর্থাৎ সরকার তার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাবে। তবে এ ধরনের কাজে সর্বাধিক স্বচ্ছতা ও সততা থাকা দরকার। তাহলেই জনগণ বুঝতে পারবে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক।
কালের কণ্ঠ : গাড়ি ভাঙচুর এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি কি আপনি সমর্থন করেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আসলে টেলিভিশনের ক্যামেরায় দেখে শতকরা ১০০ ভাগ বলা যাবে না, প্রথম আক্রমণাত্মক ভূমিকা কে নিয়েছে। কারণ এর আগে রাজনৈতিক আন্দোলনে দেখা গেছে, পুলিশই লাঠি হাতে মারমুখী ভূমিকা নিয়েছে। তারা নিরীহ মানুষকে মেরেছে। সুতরাং আগামী দিনের আন্দোলনে যদি জনগণও লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকে, তাহলে জনগণকে দোষ দিতে পারবেন না।
কালের কণ্ঠ : একাত্তরের মানবাধিকারবিরোধীদের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সরকার ইতিপূর্বে তার অবস্থান একাধিকবার পরিবর্তন করেছে। নাম পরিবর্তন করেছে। আইনেও সংশোধন এনেছে। হয়তো তাদের প্রস্তুতির ঘাটতি আছে। সম্ভবত আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। আরেকটা বিষয় এই যে সরকার যদি মনে করে, সারা পৃথিবী এমনকি সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের সমর্থন করবে_সেটা ভুল হবে। ১৯৭১ সালেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কিছুসংখ্যক লোক এর বিরোধিতা অবশ্যই করেছে। এখন বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন এবং স্বাভাবিক আইনগত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
কালের কণ্ঠ : এটা কি শুধু অভ্যন্তরীণ অবস্থা?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : না। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত ছিল, কেউ আমাদের সমর্থন করেছে, কেউ বিরোধিতা করেছে, কেউ চুপচাপ ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো অবস্থান থাকে না, তাই এখন পরিস্থিতি বদলেছে। অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে, একাত্তরে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধ দেখেছেন তাঁরা এখন জনসংখ্যার শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ হাইজ্যাক করে একটা দলের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষ তো এত বোকা নয়। ১৯৭২-৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য বা নিজের বলে স্বীকার করার জন্য ঐক্যবদ্ধ জনগণ ছিল এবং একক নেতৃত্ব ছিল; এখন কিন্তু তেমন নেই। এটা মনে রাখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এই মুহূর্তে হরতালকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আমি শান্তিপূর্ণ হরতালের পক্ষে। শান্তিপূর্ণ হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। জনগণ যদি মনে করে তারা অংশগ্রহণ করবে, তাহলে করবে, না হলে করবে না। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তা করতেই পারে।
কালের কণ্ঠ : হরতাল প্রতিবাদের চূড়ান্ত ভাষা। এটা ঘন ঘন প্রয়োগ করা কি ঠিক বলে মনে করেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : এটা নির্ভর করে যারা প্রয়োগ করে, তাদের ওপর। ডাক্তার যেমন রোগী দেখে নির্ধারণ করেন, কতবার ইনজেকশন দেবেন; তেমনি বলতে পারেন, রোগের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত হবে, কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের কণ্ঠ : সরকার বলছে, জ্বালানির মূল্য না বাড়িয়ে উপায় ছিল না।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সরকার বলতেই পারে। তবে সরকার আগে কেন এত কমিয়েছিল? ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সরকার দেশ চালাচ্ছিল। দেশকে তো দেউলিয়া করে ছাড়বে। আগামী তিন বছর পর দেশের কী হবে? তার দায় কে নেবে? এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে নাজুক করে ফেলছে। সরকার জ্বালানির দাম কমিয়ে দিয়েছিল সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য। যাদের জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারা কিন্তু সেই সুবিধা পায়নি। সস্তা জনপ্রিয়তা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে ব্যালেন্স করার কথা, সেটা সরকার করতে পারেনি। পৃথিবীব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমছে। সরকার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বলুন, জনগণকে এই বড়িটা কিভাবে খাওয়াবেন? দুর্নীতি কমানোর দিকে নজর দেন না কেন? দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারলে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে না। এটা করতে পারলে যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা দিয়ে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে।
কালের কণ্ঠ : বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ঈদের আগ মুহূর্তে ৬৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলো রাস্তা সংস্কারের জন্য। জনগণ বলছে, এই টাকার ৯০ শতাংশই দুর্নীতি হয়েছে। এমন সময় টাকা দেওয়া হয়েছে এবং এমন পরিস্থিতিতে টাকা ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে, যার কোনো প্রমাণই পাওয়া যাবে না যে টাকাটা আদৌ খরচ হয়েছে কি না। আইএমএফকে বলার সুযোগও নেই আপনাদের। আপনারা বলতে পারতেন, অমুক জায়গা থেকে আমরা এই ভর্তুকির টাকার ব্যবস্থা করব। সেটাও তারা পারছে না।
কালের কণ্ঠ : দুর্মূল্যের বাজারে মানুষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ থেকে বাঁচার পথ কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : উত্তরণের পথ হচ্ছে সরকার নির্বাচনের পরপর অনেক প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। জনগণের প্রত্যাশাকে আকাশচুম্বী করে দিয়েছে। তার জন্য কিন্তু পাইপলাইনে আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নোট ছাপিয়ে দেশ চালাতে শুরু করেছে। খালি বড় বড় অর্থনীতিবিদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে দেশ পরিচালনা করা যায় না। রপ্তানি বাড়ছে না। সরকার বাস্তবতা অনুসরণ করছে না। মানুষ আসলেই ক্ষুব্ধ। আর উত্তরণের কথা বলছেন? বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে সরকার, যেগুলো এই মুহূর্তে চালানোর মতো অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের নেই। সেগুলো পিছিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, অদক্ষ মন্ত্রী যাঁরা আছেন, তাঁদের বাদ দিন। দক্ষ মানুষকে সেখানে স্থলাভিষিক্ত করুন। তার পরও কথা থেকে যায়। পরিবর্তনের সময় যদি দক্ষতা বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাহলে সেই একই অবস্থা হবে।
কালের কণ্ঠ : শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : ১২ বছর আগে একবার, এখন আরেকবার ঘটল একই ধরনের কেলেঙ্কারি। শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচার কোনো পথ সরকারের সামনে নেই। যে টাকা এখান থেকে হাতিয়ে নেওয়ার, তা কিন্তু হাতিয়ে নেওয়া হয়ে গেছে। এখন সেই টাকা কি আর ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব? সুতরাং এর মূল্য আওয়ামী লীগকে কড়ায়-গণ্ডায় দিতে হবে। পিঠের চামড়া দিয়ে না হলেও অবশ্যই ভোটের চামড়া দিয়ে উসুল করতে হবে। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর মনে যে ক্ষত তৈরি করা হয়েছে, তার মূল্য সরকারকে দিতেই হবে। এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।
কালের কণ্ঠ : নিত্যপণ্যের বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আবাসন শিল্প থমকে আছে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে। ইস্পাত শিল্প থেমে গেছে। রড-সিমেন্ট-বালু ব্যবসায় আঘাত এসেছে। ইট উৎপাদনকারীরা থেমে গেছেন। একটার সঙ্গে আরেকটার যোগ আছে। মানুষ নগদ আয় করতে পারছে না। যা করছে, তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। সার্বিকভাবে বলতে গেলে জীবনযাত্রাই যেন থেমে যাচ্ছে। সরকারকে মানুষের আয় বৃদ্ধি করার পথ বের করতে হবে। এখানে বিশ্বব্যাংকের দরকার নেই। আন্তরিক ও দক্ষ দু-চারজন পেশাজীবী লোকের প্রয়োজন।
কালের কণ্ঠ : সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাব। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে, তার জন্য অভিনন্দন দেব। শিক্ষা বিভাগে, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুলে ও উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাব।
কালের কণ্ঠ : যোগাযোগব্যবস্থা, বিশেষ করে সম্প্রতি যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : ঈদের দিন শহীদ মিনারে চার ঘণ্টাব্যাপী যে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে আমি ছিলাম। আমি তাঁদের দাবি এবং আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। আমি মনে করি, বর্তমান সরকারের প্রধান দুর্বল দিক হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারের ব্যর্থতা। আমি চট্টগ্রামের ছেলে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যাঁরা শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছেন তাঁরা যেহেতু নিজ নিজ বাড়িতে যাননি, তাহলে তাঁরা কেমন করে জানেন রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিও তো ঈদের দিন সড়কপথে ঢাকার বাইরে দূরে যাননি, অতএব আপনি কেমন করে জানলেন রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো? আমি ঈদের দুদিন পর নিজে গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছি এবং দুদিন পর ফিরে এসেছি। আমি সাক্ষী দিচ্ছি, এ রাস্তাকে কোনোমতেই ভালো বলা যাবে না। ঈদের আগে যে বিরাট অঙ্কের টাকা সড়ক মেরামতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটা যথাসম্ভব অপব্যবহার হয়েছে বা অপচয় হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আদিবাসী ইস্যু নিয়ে বিতর্ক চলছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তারা যথাসম্ভব আদিবাসী তথা সবচেয়ে পুরনো অধিবাসী নয়। ইতিহাসবিদ বা নৃতত্ত্ববিদরা চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারবেন। কালের কণ্ঠ পত্রিকা তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে। কিন্তু তাদের যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বা আইনগতভাবে আদিবাসী বলেন, তাহলে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার কনভেনশন বা প্রটোকল অথবা ঘোষণা অনুযায়ী তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য বড় রকমের হুমকি। জাতিসংঘ কর্তৃক এ বিধানগুলো করা হয়েছিল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে অত্যন্ত নিগৃহীত ও নিপীড়িত সুনির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী কিছুসংখ্যক মানুষের জন্য। আমি বলব, বাংলাদেশের সংবিধানকে প্রয়োজনে আবারও সংশোধন করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকারকে আরো সম্প্রসারিত ও সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের মনে যে ক্ষোভ আছে, তা দূর করতে হবে এবং সেই ক্ষোভ দূর করার রাস্তা বাংলাদেশের সংবিধান। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালি জনগোষ্ঠীও কষ্টে আছে। সব জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
কালের কণ্ঠ : তাদের উন্নয়নের জন্য কি সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজন আছে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায়। তাদের অধিকার কি দিতে পেরেছি আমরা? এই যে একটা চুক্তি হলো ১৯৯৭ সালে, সেই চুক্তি অনুযায়ী কি তাদের সব অধিকার দেওয়া হয়েছে? উদাহরণস্বরূপ, কথা ছিল তাদের থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হবে? দেওয়া হয়েছে কি মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে মাত্র। এটা কি ঠিক?
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে দুটি রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে। তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক ফ্রন্টকে বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করছে না কেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : এ থেকে উত্তরণের কোনো সহজ পথ নেই। বাংলাদেশের জনগণ সঠিক কারণেই হোক বা বেঠিক কারণেই হোক, দুটি প্রধান দল বা দুটি সুপরিচিত মার্কার বাইরে যেতে চাইছে না।
কালের কণ্ঠ : অন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারছে না কেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : তাদের ব্যর্থতা কেন বলবেন? এটা জাতির তথা ভোটারদের ব্যর্থতা। এমন একটি পরিবেশ দরকার, যেখানে জনগণ ছোট দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে, অন্যদের সম্পর্কে জানতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে অন্যদের ভোট দিয়ে শক্তিশালী করতে পারে। ছোট দলগুলোকে মিডিয়া যথেষ্ট সমর্থন করে না, হয়তোবা সব ছোট দল সমর্থন পাওয়ার মতো অবস্থানে নেইও। ছোট দলগুলো বড় হলে সম্ভবত মিডিয়া সমর্থন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমর্থন না হলে বড় হবে কিভাবে? উদাহরণস্বরূপ_আমার আর্থিক সামর্থ্য নেই, অতএব প্রচারসুবিধাও নেই। কিন্তু আমি প্রচণ্ডভাবে আত্মবিশ্বাসী যে বাংলাদেশে অন্য আরো যোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলেমিশে নেতৃত্ব দিতে পারব। কিন্তু আমার বক্তব্য জনগণের কাছে পেঁৗছানো কষ্টকর। গুরুত্বপূর্ণ একটি নিবেদন, প্রধান দল দুটি অবশ্যই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু ছোট দলগুলো যদি এগোতে পারে, তাহলে প্রধান দলগুলোও উপকৃত হবে।
কালের কণ্ঠ : রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় কী?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও অস্থিরতা ও সংকটের আভাস দেখতে পাচ্ছি। ব্যক্তিজীবনে আমি বাঙালি, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন বাংলাদেশি এবং একজন অভ্যাসরত মুসলমান। এই চার চেতনার সমন্বয় প্রয়োজন। তার কোনোটি বাদ দিয়ে চলা যাবে না। অধিকন্তু মনে রাখতে হবে, বর্তমান পৃথিবীতে আবেগের স্থান কমে গেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব বেড়েছে এবং এর ওপর তথা আপনার ও আপনার দেশের মূল্যায়ন হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments