এভাবে বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষা হয় না by মোঃ মামুনুর রশীদ

বিএসএফ হলো ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তাদের প্রধান কাজ হলো সীমান্তে কোনো ধরনের অবৈধ মালামাল পাচার ও চোরাচালান না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কিন্তু বর্তমানে বিএসএফের কাজ হলো নিরীহ গরিব, যারা জীবিকার সন্ধানে সীমান্ত দিয়ে গরুর ব্যবসা করে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা।


অথচ গরু ব্যবসায় জড়িত থাকা ভারতীয় ক্রেতা, মহাজনদের কখনও এ রকম নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায় না। শুধু বাংলাদেশের গরিব রাখাল হত্যার কাহিনী শুনতে পাওয়া যায়। যারা সীমান্তে মারা যায় তাদের অবস্থা হলো 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়'। অর্থাৎ যাদের একদিন সীমান্তে না গেলে সেদিনের খাবার জোটে না। বিএসএফ এখন শুধুই আতঙ্কের নাম। বিএসএফের নাম শুনলে সীমান্তের মানুষ ভয়ে আঁতকে ওঠে। বিএসএফ নিজেদের মতো করে সীমান্ত শাসন করছে। বর্তমানে সীমান্তে হত্যা আর নিরীহ জনগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই ঘটছে না।
কয়েক বছর ধরে সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, গত এক দশকে বিএসএফ এক হাজার নিরীহ বাংলাদেশি হত্যা করেছে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে ৩২৫ বার। এ আক্রমণে নিহত হয়েছে ১১৪ জন। আহতের সংখ্যা ১৩৯। মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা অধিকারের তথ্যমতে, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ৪০৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৮৪ জন। অপহৃত হয়েছে ৫০১ জন।
জনগণের আশা ছিল, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ হবে। এমনকি মহাজোট সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতেও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সরকারের এক বছরের মাথায় ৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে দেশবাসীসহ সারাবিশ্ব দেখতে পেল সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলছে ফেলানী নামে ১৫ বছরের এক কিশোরীর লাশ। ২০১০ সালে বিএসএফ হত্যা করেছে ৭৪ জন বাংলাদেশিকে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন ও ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে । ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ২০১২ সাল শুরু হতে না হতেই দেখা গেল বিএসএফের নতুন কাণ্ড। ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বিজিবির এক সদস্য হাবিলদার লুৎফর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় এবং তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। ২১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখ শনিবার যশোরের বেনাপোল সীমান্তে রাশেদুজ্জামান নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। গত বছর ২২ আগস্ট তারিখে শিবগঞ্জ উপজেলার বোগলাউড়ি গ্রামের সিরাজুল নামে এক যুবককেও একইভাবে বিএসএফ পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়। গত বছর ৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর বোয়ালিয়ার খানপুরের হাবিবুর নামে এক তরুণকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটরশিয়া সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ৫ ঘণ্টাব্যাপী তাকে উলঙ্গ করে অমানুষিক নির্যাতন করে। দীর্ঘ ৪০ দিন পর সে ঘটনা প্রকাশ পায়।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, সীমান্তের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, এখনও ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদের একজন মন্ত্রী এমন কথা বলতে পারেন কীভাবে! এদিকে ভারতের প্রণব মুখার্জী বলেন, বিএসএফের নির্যাতনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখে লাভ নেই। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ রকম কাহিনী জনগণ অনেক শুনেছে। যে আলোচনায় শুধু নিজেদের স্বার্থ প্রাধান্য পায়, সে আলোচনা জনগণ আর শুনতে চায় না।
বিএসএফের হত্যা ও নির্যাতনে দেশের জনগণ অতিষ্ঠ। সুতরাং বিএসএফের এ প্রহসনমূলক হত্যা ও নির্যাতনের একটা সঠিক বিহিত করে দেশের জনগণের মুখে একটু হাসি কি ফোটানো যায় না?
য় শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.