কালান্তরের কড়চা-চাণক্যপুরীর কূটকৌশল এবং বাংলাদেশের বিদেশনীতি-৩ by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উন্নত ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দিলি্লর আধিপত্যবাদী অবাঙালি আমলাতন্ত্র দাদাগিরি শুরু করার চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। এ ব্যাপারে ভারতের বিগ বিজনেসের দ্বারা পরিচালিত মিডিয়াগুলোও দুই দেশের সম্পর্কের জল কম ঘোলা করেনি।


বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসকে সর্বপ্রকার বিকৃতিমুক্ত করার লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রমনার মাঠে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের পরাজিত হানাদার বাহিনী মূলত ভারতের সেনাপ্রধানের কাছে কেন আত্মসমর্পণ করল এবং বাংলাদেশের সেনাপ্রধান কেন অনুপস্থিত ছিলেন (কেবল তাঁর একজন প্রতিনিধির উপস্থিতির প্রকৃত স্ট্যাটাস ছিল একজন অবজার্ভারের) তারও প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়া প্রয়োজন।
এ ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানেও অনেক লেখালেখি হয়েছে। তার মধ্যে ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের নামে এক পাকিস্তানি সেনা অফিসারের বর্ণিত কাহিনী আমি পড়েছি। তিনি '৭১ সালে হানাদার বাহিনীর অফিসার হিসেবে ঢাকায় ছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে আটক ছিলেন। সেখান থেকেই মুক্ত হয়ে তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। পরে লন্ডনে কূটনৈতিক চাকরি নিয়ে আসেন এবং দীর্ঘকাল লন্ডনে ছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার কাদেরের বিবরণ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করে আরো রক্তপাত না ঘটিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেতারে প্রচার করছিলেন, তখন পিন্ডির নির্দেশে হানাদার বাহিনীর জেনারেল নিয়াজি এবং রাও ফরমান আলী ভারতের সেনাপ্রধানকে জানান, তাঁরা শুধু ভারতের সেনা কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের কাছে তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে পারেন না। ভেতো বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণ তাঁদের কাছে আত্ম-অবমাননার শামিল। তাঁরা যুদ্ধে ভারতের কাছে পরাজিত হয়েছেন এবং আত্মসমর্পণ করেছেন_এটা মেনে নিতে প্রস্তুত।
অনেক বিবেচনার পর জেনারেল মানেকশ এই দাবি মেনে নেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওসমানী আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আপত্তি টেকেনি। তিনি রাগ করে ১৬ ডিসেম্বরের হানাদারদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আসেননি অথবা তাঁকে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যুদ্ধ পরিচালনার সময় জেনারেল ওসমানীর বহু পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে তখন থেকেই ভারতের সেনাপতিদের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের শুরু এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা তীব্র ভারতবিরোধী মনোভাবে পরিণত হয়। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের ভেতরেই একটি শক্তিশালী ভারতবিরোধী গ্রুপ তৈরি হয়। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ভেতরে ভারতবিরোধী একটি রাজনৈতিক গ্রুপ তো ছিলই; এবার জেনারেল ওসমানীসহ একটি সামরিক গ্রুপও গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু অনেক চেষ্টা করেও তাঁর দলে এবং মন্ত্রিসভায় ভারতের প্রতি মিত্র মনোভাবের ও ভারতের প্রতি অসন্তুষ্ট মনোভাবের গ্রুপ দুটির মধ্যে বিবাদ মেটাতে পারেননি।
১৬ ডিসেম্বরের ('৭১) এই কাহিনী শুধু ব্রিগেডিয়ার কাদেরের বৃত্তান্তে নয়, আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে ছিলেন এমন দু-একজন এবং ভারতীয় সূত্র থেকেও জেনেছি। তা ছাড়া পাকিস্তান যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই এ পরাজয়ের গ্লানি ঢাকার জন্য দেশ-বিদেশে প্রচার শুরু করে যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটা মিথ; এটা ছিল ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের আরেকটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গনে তারা পরাজিত হয়েছে এবং তাদের পরাজিত সেনাবাহিনী বহু গুণ শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। এতে অগৌরবের কিছু নেই। এই যুক্তি আমি ১৯৭৪ সালে লন্ডনে এসে তৎকালীন বিখ্যাত বাম ছাত্রনেতা (পাকিস্তানি) তারিক আলীর মুখেও শুনেছি। বাংলাদেশে এখন জামায়াতিদের মুখেও এই যুক্তি শোনা যায়।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একটি ঘটনার কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের চীনপন্থী বামরা মওলানা ভাসানীকে ছয় দফা আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ-রাজনীতির বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, এমনকি আইয়ুবের সঙ্গে তাঁর গোপন সাক্ষাৎ ঘটিয়ে ভাসানী-আইয়ুব মিতালি ঘটানোর মাধ্যমে দেশের স্বাধিকার আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে। মওলানা ভাসানী তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দ্বারা চালিত হয়ে এই তথাকথিত বামদের কবলমুক্ত হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শেষদিক থেকেই শেখ মুজিব ও তাঁর আন্দোলনে সাহায্য ও সমর্থন দিতে থাকেন এবং ২৬ মার্চের গণহত্যা শুরু হওয়ার প্রাক্কালেই তিনি সর্বপ্রথম সম্ভাব্য মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনদানে নিজেকে প্রস্তুত রাখার জন্য ভারতে চলে যান।
তিনি প্রথমে যান আসামে, তারপর কলকাতায়। ভারত সরকার তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে। তাজউদ্দীন আহমদের প্রধানমন্ত্রিত্বে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তিনি এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সমর্থন এবং মুজিবনগর সরকারকে নানা সংকট থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর দৃঢ় ভূমিকা ছাড়া দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। ভারতে অবস্থানকালে অবশ্যই বাংলাদেশের এই বর্ষীয়ান নেতার তত্ত্ব-তালাশ ইন্দিরা সরকার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী সব সময় নিয়েছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই মওলানা ভাসানী অত্যন্ত উপেক্ষিতভাবে দেশে ফেরেন (বঙ্গবন্ধু দেশে থাকলে অবশ্যই এ ঘটনা ঘটতে পারত না)। মওলানা ভাসানীর প্রয়োজন ঘুরিয়ে যাওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী নেতারা তাঁর সামান্য খোঁজখবর নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। মওলানা সাহেবের বাড়িঘর পাকিস্তানি হানদাররা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তখন সিমেন্ট, ঢেউটিন ইত্যাদি খুবই দুষ্প্রাপ্য। নতুন সরকার মওলানা ভাসানীকে এসব সংগ্রহ করে বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে না পারায় অথবা না চাওয়ায় তিনি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে সরাসরি চিঠি লিখে সাহায্য চান এবং ইন্দিরা গান্ধীও সঙ্গে সঙ্গে সেই সাহায্য দিতে এগিয়ে আসেন।
কিস্সাটি এখানেই খতম হলে ভালো ছিল। না, তা হলো না। ইন্দিরা গান্ধী গোপনে মওলানা ভাসানীকে যে সাহায্য দিয়েছিলেন, তা প্রকাশ্যে 'চাউর' না করা পর্যন্ত দিলি্লর আমলাদের পেটের ভাত হজম হচ্ছিল না। তাঁরা মিডিয়াকে টিপস দিলেন ভাসানী-ইন্দিরা পত্রালাপ এবং মওলানার ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে ইন্দিরার সাহায্যের কথা। সেই সঙ্গে মওলানা সাহেবের ভারতে অবস্থানকালে ভারত সরকার তাঁর খরচপত্র বহনের জন্য মাসে মাসে তাঁকে যে অর্থ সাহায্য দিয়েছে, সে কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলো। সাজানো খেলায় যা হয়, দিলি্লর পার্লামেন্টে এই নিয়ে এক এমপি প্রশ্ন তুললেন। সেই প্রশ্নের জবাব দানের নামে মওলানা ভাসানীর জন্য ভারত সরকারের কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার একটা বিশদ বিবরণ দেওয়া হলো। দিলি্ল তো খরচ বহন করেছিল গোটা মুজিবনগর সরকারেরই। তাহলে কেবল মওলানা ভাসানীকে সিঙ্গেলে আউট করে তা নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটানো হলো কেন?
এই নেপথ্য খেলাটি ছিল কাদের? পরে জানা গেছে, খেলাটি ছিল দিলি্লর শক্তিশালী একটি আমলাচক্রের এবং তাদের অনুগ্রহভোগী এক শ্রেণীর পার্লামেন্ট সদস্য-রাজনীতিকের; এক শ্রেণীর বিগ মিডিয়াও তাতে মদদ জোগায়। বাংলাদেশে তখন ভারতের রাষ্ট্রদূত (হাইকমিশনার) ছিলেন সুবিমল দত্ত। এই প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ বাঙালি কূটনীতিক জওহরলাল নেহরুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সচিব ছিলেন। বিদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সদ্যমুক্ত বাংলাদেশে তখন ভারতবিদ্বেষী এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র পরাজিত ও কোণঠাসা। তারা উপায়ান্তর না দেখে মওলানা ভাসানীকে দিলি্লর প্রচার-প্রপাগান্ডা অতিরঞ্জিত করে জানিয়ে তাঁকে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ করে তুলে তাদের দলে টানার চেষ্টা শুরু করে। এ ব্যাপারে জাদু মিয়া, আনোয়ার জাহিদ প্রমুখ তৎকালীন পাকিস্তান ও চীনপন্থী তথাকথিত বামরাই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন।
সুবিমল দত্তের মতো প্রাজ্ঞ কূটনীতিকের এটা দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি সম্ভবত ব্যাপারটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে জানান। আমার অনুমান, ইন্দিরার নির্দেশেই তিনি মওলানা ভাসানীর কাছে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি দেন। আর যায় কোথায়? মৌচাকে যেন ঢিল পড়ল! দিলি্ল, মুম্বাই, কলকাতায় একদল আমলা, রাজনীতিকের সঙ্গে মিডিয়াও গর্জে উঠল_বাংলাদেশের কাছে সুবিমল দত্ত ক্ষমা চেয়ে ভারতের মানসম্মান সব বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁকে এখনই ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করা হোক।
কলকাতায় আনন্দবাজার পত্রিকাও ছিল এই ক্রুদ্ধ ভারতীয় মিডিয়ার দলে। সুবিমল দত্তকে শুধু ঢাকা থেকে প্রত্যাহার নয়, চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা এক দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। তার শিরোনাম ছিল_'ধিক্ এই নতজানু কূটনীতিককে'।
আনন্দবাজার এবং তার সমমনা দিলি্ল, মুম্বাই, কলকাতার কাগজগুলোতে যা বলা হলো, তার সারমর্ম হচ্ছে, 'যে বাংলাদেশকে আমরাই স্বাধীন করেছি, ১০ মাস খাইয়েছি-পরিয়েছি, যার নেতা ভাসানী ১০ মাস ভারতের অন্নেই পালিত হয়েছেন, সেই দেশ, সেই নেতার কাছে ভারতের মতো দেশের ক্ষমা প্রার্থনা? ছিঃ ছিঃ ছিঃ, বহির্বিশ্বে ভারতের সম্মান ও মর্যাদা বলতে আর কিছুই রইল না। সুবিমল বাবুর মতো আত্মমর্যাদাহীন নতজানু কূটনীতিককে এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যাহার করা হোক।'
সুবিমল দত্তকে তখনই না হোক, এর অল্প কিছুদিন পরই ঢাকা থেকে বদলি করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে আমি যখন আমার স্ত্রীর চিকিৎসা উপলক্ষে কলকাতায় যাই, তখন সুবিমল বাবু অবসরে গেছেন। তাঁর কলকাতার বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমমর্যাদার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী মৈত্রী গড়ে উঠুক_এটাই তিনি চেয়েছিলেন। তা তিনি পারলেন না। এ জন্য বাংলাদেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিক, মিডিয়া ও আমলাতন্ত্র যতটা দায়ী, ততটাই দায়ী ভারতের এক শ্রেণীর নাকউঁচু রাজনীতিক, শীর্ষপদের অবাঙালি আমলা, বড় ব্যবসায়ী ও বিগ মিডিয়া। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে যে চক্রান্তের জাল বোনা হচ্ছে, সে সম্পর্কেও তাঁর ভীতি ও আশঙ্কার কথা আমাকে জানিয়েছিলেন এবং বলতে বলতে একসময় কেঁদে ফেলেছিলেন।
এর পরও দেখেছি বাংলাদেশকে নিয়ে দিলি্লর আমলাচক্রের ঘোঁট পাকানো। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময় চুক্তি করার জন্য ১৯৭৪ সালে যে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ থেকে কলকাতা ও দিলি্লতে গিয়েছিল, সেই প্রতিনিধিদলে আমিও একজন বেসরকারি প্রতিনিধি ছিলাম। সেই চুক্তিটি যে সেবার সম্পাদিত হতে পারেনি, তার মূল কারণ ছিল ভারতীয় প্রতিনিধিদলের আমলা সদস্যদের ভূমিকা। সে কাহিনীও একটু বলতে চাই।
(অসমাপ্ত)
লন্ডন, ২৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার, ২০১১

No comments

Powered by Blogger.