তিতাসের অর্থ লোপাট-রহস্য উদ্‌ঘাটন করে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত জেলা শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস গ্যাস ও তিতাস নদী অবস্থিত এবং এ দুইয়ের চিত্রই বড় বিবর্ণ। তিতাস নদীর যেমন অস্তিত্ব হুমকির মুখে, তেমনি অবস্থা তিতাস গ্যাস কম্পানিরও। সরকারি গ্যাস বিতরণ কম্পানি তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ এলাকা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কাছে।


কিন্তু বিস্ময়কর হলো, এই বিক্রি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিতাসের প্রায় সাড়ে ৯ শ কোটি টাকা 'নাই' হয়ে গেছে! এই 'নাই' হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষতি প্রকারান্তে জনগণেরই বিপুল ক্ষতি। ২৫ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠের শীর্ষ প্রতিবেদনে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিতাসের অডিট করা হিসাব বাদ রেখে পেট্রোবাংলা নিজেরা অডিট করে ওই সম্পদের মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।
পেট্রোবাংলাও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। তিতাস পেট্রোবাংলার অধীন একটি কম্পানি। পেট্রোবাংলার এমন কম্পানি আরো আছে। তিতাস অতীতেও নেতিবাচক অর্থে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। তিতাসের গেটুপাটের চিত্র নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিতাসের এত বিপুল অঙ্কের টাকা পেট্রোবাংলা তাদের নিজস্ব অডিটের মাধ্যমে 'নাই' করে দিল কিংবা কম দেখালো কেন? এটা কি ভবিষ্যতের কোনো রাস্তা তৈরি করে রাখা হলো? কোনো সময় যদি বাখরাবাদকে কম টাকায় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো? তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ অঞ্চল শুধু বিক্রিই নয়, ইতিমধ্যে হস্তান্তরও হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর আগে কি তিতাসের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে? কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরও স্পষ্ট উল্লেখ আছে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার চাপ রয়েছে দাতা ও ঋণদাতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে। যদি বলা হয় সেই চাপেরই একটি পদক্ষেপ এটি, তাহলে কি অত্যুক্তি হবে? তিতাসে নানারকম দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আছে বটে, কিন্তু এর পরও প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক। সরকারি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এমন সমীকরণ বহুবিধ প্রশ্নের জন্ম দেয়। রাষ্ট্রীয় কিংবা জনগণের সম্পদ নিয়ে এমন সমীকরণের খেসারত ভিন্নভাবে দিতে হতে পারে, যার ফল শুভ হবে না।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পেট্রোবাংলার এসব বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য প্রয়োজন। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ তিতাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। জনগণের সম্পদ নিয়ে কোনো রকম লুকোচুরি কিংবা রাখঢাকের কোনো অবকাশ নেই। আমরা মনে করি, এসব বিষয় জনগণকে অবহিত করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি তিতাসের সাড়ে ৯ শ কোটি টাকা 'নাই' হয়ে যাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটনও জরুরি। তিতাস কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দাবি করেছে, যে হিসাবনিকাশ পেট্রোবাংলা সম্পন্ন করল, তা করার কোনো আইনি অধিকার কিংবা এখতিয়ার তাদের নেই। নিয়ম অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেবে, তাদেরও অডিট হতে হবে। কিন্তু বাখরাবাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এসব বিষয় সঙ্গতই নানাবিধ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.